লাংতাং উপত্যকা নেপালের বাগমতি প্রদেশের রাসুওয়া জেলায় অবস্থিত। কাঠমান্ডু উপত্যকা থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। উপত্যকাটি লাংতাং জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত, যা চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সীমান্তবর্তী। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের আগে লাংতাং উপত্যকায় ৬৬৮ জন লোক বসবাস করত বলে জানা যায়।[১]
লাংতাং জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাংতাং উপত্যকা অবস্থিত। এই জাতীয় উদ্যানটিতে উপক্রান্তীয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু অঞ্চল দেখা যায়।[২] এই জাতীয় উদ্যানের প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি। বৃক্ষরাজির মধ্যে রয়েছে পর্ণমোচী ওক এবং ম্যাপেল, পাইনের মতো চিরহরিৎ বৃক্ষ এবং বিভিন্ন ধরনের রডোডেনড্রন। প্রাণীজগতের মধ্যে রয়েছে হিমালয় ব্ল্যাক বিয়ার, হিমালয়ান তাহর, আসাম ম্যাকাক, স্নো লেপার্ড, ইয়াক, রেড পান্ডা এবং ২৫০টিরও বেশি প্রজাতির পাখি।[৩]
লাংতাং উপত্যকার স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে একে অপরকে 'লাংতাংপা' বলে উল্লেখ করেন। তারা সাধারণত তিব্বতি বৌদ্ধধর্মকে অনুসরণ করেন। তারা একটি তিব্বতি ভাষায় কথা বলেন যা দক্ষিণ তিব্বতের কিরং-এ কথিত তিব্বতি ভাষার সাথে অনেকটাই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্থানীয় মানুষেরা লাংতাং লিরুং পর্বতকে স্থানীয় দেবতা 'ইউ-লহা' বলে মনে করেন। রাজ্যের আদমশুমারিতে, লাংতাংপাসকে তামাং হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।[৪] লাংতাং উপত্যকাটিকে বেউল দাগাম নামগো বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ গুরু পদ্মসম্ভবের আশীর্বাদপ্রাপ্ত অনেকগুলি লুকানো উপত্যকার মধ্যে একটি।[৫]
লাংতাং উপত্যকার ঐতিহ্যগত জীবিকা সবই প্রায় কৃষিকাজকে কেন্দ্র করে।[৬][৭] ১৯৭০- এর দশকের মাঝামাঝি থেকে লাংতাং উপত্যকায় পর্যটন শিল্প জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে।[৮][৯][১০] ১৯৫০-এর দশকে ভার্নার শুলথেস লাংতাং-এ সুইস পনির তৈরির প্রচলন করেছিলেন। সময়ের সাথে সাথে সুইস পনির লাংতাং-এর একটি জনপ্রিয় পণ্য হয়ে ওঠে। এই উপত্যকায় সুইস পনিরের উৎপাদন আজও অব্যাহত রয়েছে।[১১]
লাংতাং উপত্যকার নিকটতম মোটরযোগ্য রাস্তা হলো শ্যাফ্রুবেসি, যেখান থেকে লাংতাং উপত্যকাযর বেশিরভাগ ট্রেকিং শুরু হয়। কাঠমান্ডু থেকে শ্যাফ্রুবেসির দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে, কাঠমান্ডু থেকে শ্যাফ্রুবেসি যেতে সাধারণত ছয় থেকে আট ঘন্টা সময় লাগে।[১২] লাংতাং ন্যাশনাল পার্কের ক্ষেত্রে, লাংতাং উপত্যকায় প্রবেশের জন্য স্থানীয়রা ছাড়া প্রত্যেকেরই টিআইএমএস পারমিট এবং লাংতাং ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশের অনুমতি প্রয়োজন।[১৩]
অন্নপূর্ণা সার্কিট এবং এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ট্রেকের পরে লাংতাং উপত্যকা ট্রেকটি নেপালের তৃতীয় জনপ্রিয় ট্র্যাক হিসাবে পরিচিত।[১৪] এখানে বেশ কয়েকটি ট্রেক রয়েছে যেগুলি লাংতাং উপত্যকার মধ্য দিয়ে গিয়ে লাংতাং উপত্যকার সাথে সংযোগ স্থাপন করে। [১৫]