লায়লা হায়দারী | |
---|---|
জন্ম | ১৯৭৮ (বয়স ৪৫–৪৬) কাট্টা, পাকিস্তান |
জাতীয়তা | আফগানিস্তান |
পেশা | কর্মী, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী |
লায়লা হায়দারী (জন্মঃ ১৯৭৮) আফগানিস্তানের এমন একজন নারী যার বিয়ে হয় খুব অল্প বয়সে এবং বর্তমানে তিনি সমাজ সেবক ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। তিনি একটি মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্র চালান। এর নাম "মাদার ক্যাম্প"। তিনি আফগানিস্তানের কাবুলে ২০১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়াও তিনি কাবুলে একটি রেস্তোরাঁ চালান যার নাম "তাজ বেগম"। আর এই "তাজ বেগম"এ যে আয় হয় তা দিয়ে চলে "মাদার ক্যাম্প"। লায়লা হায়দারীকে নিয়ে ২০১৮ সালে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করা হয় যার নাম "লায়লা এট দ্যা ব্রিজ"। "তাজ বেগম" নামে রেস্তোরাঁটি প্রায়ই সমালোচিত হয়। কারণ এখানে অবিবাহিত নারী ও পুরুষ একসাথে বসে খেতে পারেন, যা আফগানিস্তানের সমাজের প্রেক্ষিতে প্রথা বিরুদ্ধ। এছাড়াও তাজ বেগম রেস্তোরাঁটি একজন নারী দ্বারা পরিচালিত, এই কারণেও এটি সমালোচিত হয়েছে অনেকবার।
পাকিস্তানের কাট্টা নামক স্থানে একটি আফগান পরিবারে ১৯৭৮ সালে হায়দারী জন্মগ্রহণ করেন।[১] শিশু থাকাকালীন সময়ে, তাঁর পরিবার শরণার্থী হিসেবে ইরানে চলে যায়। [১] হায়দারীর যখন বিয়ে হয় তখন তাঁর বয়স মাত্র ১২ বছর। তাঁর বিয়ে হয় একজন মোল্লার সাথে যার বয়স ছিল ত্রিশের কাছাকাছি। ১৩ বছর বয়সে হায়দারী এক সন্তানের জন্ম দেন।[১] তাঁদের মোট ৩ টি সন্তান ছিল।[১][২]
তাঁর স্বামী শুধু তাঁকে ধর্মীয় বিষয়েই পড়াশোনা করার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গোপনে লায়লা অন্য বিষয়েও শিক্ষা নিতেন। তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেন।[৩]
যখন লায়লার বয়স ২১ বছর তখন তাঁর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়।[৪] ইসলামী আইন অনুসারে, বিচ্ছেদের পর সন্তান সবসময় তার পিতার সাথেই থাকে।[৩]
২০০৯ সালে হায়দারী আফগানিস্তানে ফিরে আসেন।[১][৫] কাবুলে ফিরে এসে হায়দারী দেখতে পায় তার ভাই, হাকিম, পুল-ই -শক্ত সেতুর নিচে শতাধিক মাদকাসক্ত ব্যক্তির সাথে বসবাস করছে এবং সে মাদকাসক্ত।[৫] তাঁর ভাইয়ের অবস্থা দেখে, এবং আফগানিস্তানে মাদকের ভয়াবহতা এবং আফগানিস্তানে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের অভাববোধ করে লায়লা ২০১০ সালে একটি মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করেন।[৩][৬] এখানে প্রথম চিকিৎসা নিতে আসা মাদসক্তরা এর নাম দেয় "মাদার ক্যাম্প"।[৬] "মাদার ক্যাম্প" সরকার থেকে অথবা বিদেশী কোন সাহায্যই পায় না।[২][৬] এবং কাবুল শহরে এটিই একমাত্র বেসরকারী মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্র।[৬]
২০১১ সালে, হায়দারী কাবুলে একটি রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম "তাজ বেগম"। যাতে করে "মাদার ক্যাম্প"কে পরিচালনা করা যায়।[৩][৬] রেস্তোরাঁটি অনেকবার সমালোচিত হয়েছে কারণ এটি নারী দ্বারা পরিচালিত, আফগানিস্তানে যা একদমই দেখা যায় না।[৭] সমালোচিত হওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে। এখানে অবিবাহিত নারী ও পুরুষ একসাথে বসে খাবার খেতে পারে। এটি আফগানিস্তানের সমাজে কিছুটা প্রথাবিরোধী কর্মকাণ্ড।[৩] আর এই রেস্তোরাঁয় তাদেরকেই চাকরি দেওয়া হয় যারা "মাদার ক্যাম্প" থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন।[৫] লায়লার রেস্তোরাঁয় অনেকবার পুলিশি তল্লাশি চলেছে বিভিন্ন কারণে। বিশেষ করে নারী-পুরুষ ঘঠিত ঝামেলায়, লায়লার মাথায় কাপড় না দেয়া এবং সর্বোপরি এটি একটি নারী দ্বারা পরিচালিত রেস্তোরাঁ তাই।[৮]
লায়লা আফগানিস্তানে তালিবানদের বিরুদ্ধেও কথা বলেন। বিশেষ করে তালিবানরা নারীদের অধিকারে যে বাধার সৃষ্টি করেছে তা নিয়ে।[৮][৯][১০][১১] তিনি আফগান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন কারণ আফগান সরকার নারীদের আফগান যুদ্ধে (২০০১-বর্তমান) অংশগ্রহণ করতে দেয়নি।[৩][৮]
২০১৯ সালে, মানবাধিকার সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত অসলো ফ্রিডোম ফোরামে লায়লাকে বক্তব্য প্রদানে আমন্ত্রিত করা হয়।[১২][১৩]
এলিজাবেথ এবং গুলিস্তান মির্জা কর্তৃক তৈরি প্রামাণ্যচিত্র "লায়লা এট দ্যা ব্রিজ"-এর মূল বিষয়বস্তু ছিল লায়লা হায়দারী।[১৪] কোপেনহেগেন ইন্টারন্যাশনাল ডকুমেন্টারি প্রতিযোগিতায় এটি তদন্তমূলক ক্যাটাগরীতে পুরস্কার জিতে নেয়।[১৪] এছাড়াও ৩৪তম সান্তা বারবারা চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় এটি সামাজিক ন্যায়বিচার পুরস্কার জিতে নেয়।[১৫]