লাস্ট স্টোরিজ | |
---|---|
পরিচালক | |
প্রযোজক | রনি স্ক্রুওয়ালা অসি দুয়া |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
চিত্রগ্রাহক |
|
প্রযোজনা কোম্পানি | আরএসভিপি ফ্লাইং ইউনিকর্ন এন্টারটেইনমেন্ট |
পরিবেশক | নেটফ্লিক্স |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১২০ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
লাস্ট স্টোরিজ (হিন্দি: लस्ट स्टोरीज़, অনুবাদ 'যৌনলালসাপূর্ণ গল্প') হচ্ছে ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ভারতীয় চলচ্চিত্র যেটিতে চারজন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ, জয়া আখতার, দিবাকর ব্যানার্জী এবং করণ জোহর তাদের চারটি কাহিনী পেশ করেন। চলচ্চিত্রটি সহ-প্রযোজনা করেছিলেন রনি স্ক্রুওয়ালা এবং অভিনয়ে ছিলেন কিয়ারা আদভানি, রাধিকা আপ্টে, ভূমি পেডনেকর, মনীষা কৈরালা, ভিকি কৌশল, নিল ভুপালাম, নেহা ধুপিয়া, সঞ্জয় কাপুর, জয়দ্বীপ আহলাওয়াত এবং আকাশ তুষার।
কালিন্দি (রাধিকা আপ্টে) একজন কলেজ শিক্ষক, যে তেজস নামে তারই একজন শিক্ষার্থীর সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরের সকালে সে নিজেকে প্রবোধ দেয় যে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না, কিন্তু সে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্কের প্রতি জোর দেয়। কয়েকটি দৃশ্যে তাকে সাক্ষাৎকারের মতো পর্দার বাইরে কারও সাথে কথা বলতে দেখা যায়। এই দৃশ্যের মাঝে মাঝে তাকে বলতে দেখা যায় যে সে মিহির নামে একজনের স্ত্রী, যে তার থেকে ১২ বছরের বড়ো। তার নিজের প্রেম ও অসংখ্য স্বল্পকালীন সম্পর্কের ভিত্তিতে সে তার যৌনতা প্রকাশ করতে চায়। সে তার সহকর্মী নীরজের (রণদীপ ঝা) সাথে ডেটিং করতে শুরু করে, কিন্তু নীরজের একবিবাহে বিশ্বাস ও তার যৌনতার ব্যাপারে আনাড়িপনার জন্য তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। যখন কালিন্দি বুঝতে পারে তেজস তার সহপাঠী নাতাশার (হৃদি খখর) সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে, তেজস তা তীব্রভাবে অস্বীকার করে। কালিন্দি তার স্বীকারোক্তি পাওয়ার জন্য দুজনের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এমনকি প্রমাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তেজসের কক্ষেও প্রবেশ করে। অবশেষে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কালিন্দি তেজসকে জানায় যে সে তার প্রতি আকৃষ্ট ছিলো এবং নাতাশার সাথে তার সম্পর্কের জন্য তাকে শুভকামনা জানায়। তেজস তাকে বলে সে তার স্নেহানুভূতি সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিল এবং তার জন্য নাতাশাকে ছাড়তে রাজি হয়। কালিন্দি তাকে বলে যে সে বিবাহিত এবং তেজসকে অভিভূত করে চলে যায়।
সুধা (ভূমি পেডনেকর) এবং অজিত (নীল ভুপালাম) যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় গোপনে গোপনে। পরে দেখা যায় যে সুধা হচ্ছে অজিতের ব্যাচেলর এ্যাপার্টমেন্টের কাজের মেয়ে যে প্রতিদিন আসে আর বাসার সব কাজ-রান্নাবান্না করে দিয়ে যায়। অজিতের বাবামা একদিন ঐ বাসায় আসে, সুধা পরিশ্রম করা শুরু করে, অজিত অবশ্য এটাতে পাত্তা দেয়না। একদিন একটি পরিবার আসে অজিতের সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তার জন্য, সাথে তারা একটা মেয়েও নিয়ে আসে, এটা দেখে সুধার একটু মন খারাপ হয়। সুধা যখন তাদের জন্য নাস্তা বানাতে থাকে তখন সে যেই রুমে অজিতের বাবামার সঙ্গে অজিত আর ঐ মেয়েটা বিয়ের কথাবার্তা বলছে ঐদিকে মনোযোগ দেয়। সুধা তাদেরকে নাস্তা দেয় এবং অজিত আর ঐ মেয়েটা আর একটি রুমে আলাপরত অবস্থায় ছিলো, সুধা ভেতরে ঢুকতে যেয়ে দেখে যে অজিত মেয়েটির মাথার চুল সরাচ্ছে, সুধা ভেতরে ঢুকে, অজিত তাকে পাত্তা দেয়না। মেয়েটা তার বাবামা সহ চলে যাওয়ার পর অজিতের মা সুধাকে মিষ্টি খেতে বলে। সুধা ধীরে ধীরে এক টুকরা মিষ্টি খায় আর ঐ এ্যাপার্টমেন্ট ত্যাগ করে আরেকটা এ্যাপার্টমেন্টের কাজে যায়।
রীনা (মনীষা কৈরালা) একজন গৃহিণী। তার স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুধীরের (জয়দীপ আহলাওয়াত) সাথে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। তারা তিন বছর ধরে গোপনে তাদের সম্পর্ক চালিয়ে আসছে। একবার রিনা সুধীরের বাড়িতে গেলে সালমান (সঞ্জয় কাপুর) সুধীরকে বলে যে তার সন্দেহ হচ্ছে রীনা তার সাথে প্রতারণা করছে। এর ফলে সুধীর ও রীনা আতঙ্কিত হয়, বিশেষ করে যখন সালমান সুধীরের বাড়িতে আসে। রীনা সালমানকে জানায় যে সে তাদের বিয়েতে অসুখী, কারণ সালমান বাচ্চা চায়, স্ত্রী নয়। রীনা সালমানের কাছে সুধীরের সাথে তার তিন বছরের সম্পর্কের কথা প্রকাশ করে। সালমান এতে ভেঙ্গে পড়ে এবং তার সন্তানদের জন্য হলেও তাকে থেকে যেতে বলে। পরের রাতে তারা একে অপরের সাথে মিলিত হয় এবং পরের সকালে রীনা সুধীরকে জানায় যে সে আর তার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবে না।
মেঘা (কিয়ারা আদভানি) নামের এক তরুণী যে একটি স্কুলে পড়ায়, বিয়ে ঠিক হয় পরশ (ভিকি কৌশল) নামের এক ছেলের সাথে যে একজন অফিস কর্মচারী। বিয়ে হওয়ার পরে পরশ মেঘার সাথে যৌন সম্পর্কে সন্তুষ্ট হলেও মেঘা সন্তুষ্ট হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে ভাবেনা। পরশের পরিবার পরশকে বাচ্চা নিতে বলে এবং তারা তাকে বোঝায় যে একটা মেয়ের কাছে এটাই সন্তুষ্টি। একদিন মেঘা তার স্কুলে তারই সহকর্মী রেখা (নেহা ধুপিয়া)কে স্বমেহন করতে দেখে। রেখা একটি ভাইব্রেটর দ্বারা স্বমেহন করছিলো, মেঘাও এরকম করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়, এবং বাসায় সেও ভাইব্রেটর তার শাড়ির নিচ দিয়ে যোনিতে লাগিয়ে রাখে, তখনই হঠাৎ পরশ অফিস থেকে বাসায় চলে আসে, পরশের মা মেঘাকে ডাক দিলে মেঘা যোনি থেকে ভাইব্রেটর না খুলেই পরশের কাছে চলে আসে। পরশের দাদী ভাইব্রেটরের রিমোটকে টিভি রিমোট মনে করে তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়, তিনি মূলত টিভির সাউন্ড বাড়ানোর চেষ্টা করছিলো। উত্তেজনা মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মেঘার রাগমোচন হয় এবং তার শাশুড়ি, ননদ ও পরশ তা দেখে অবাক হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরশের মা তালাক চায় এবং জানায় যে মেঘার গর্ভ তার পুত্রের সন্তান ধারণের জন্য উপযুক্ত নয়। এক মাস পরে পরশ মেঘার সাথে দেখা করে এবং তাকে জানায় যে ছোটো এই ভুলের জন্য সে তাকে তালাক দিতে চায় না। মেঘা পরশকে বলে যে সে কোন ভুল করে নি এবং একজন নারী সন্তান ধারণের চেয়েও বেশি কিছু আশা করে। পরশ প্রণয়ের সাথে তাকে আইসক্রিম খাইয়ে দেয় এবং জানায় সে তাকে সুখ দিতে আগ্রহী।
২০১৩ সালের চলচ্চিত্র অ্যান্থলজি বোম্বে টকিজের একটি সিক্যুয়েল হিসেবে এই লাস্ট স্টোরিজের বিকাশ ঘটেছিলো। রনি স্ক্রুওয়ালা এবং অশি দুয়া চলচ্চিত্রটি সহ-প্রযোজনা করেছিলেন, রনির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে আরএসভিপি আর অসির ফ্লাইং ইউনিকর্ন এন্টারটেইনমেন্ট। এই চারটি সেগমেন্ট বিশিষ্ট অ্যান্থোলজি চলচ্চিত্রের জন্য চার চার জন আলাদা আলাদা পরিচালক কাজ করেন।
চলচ্চিত্রটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি দেওয়া হয় এবং ট্রেলার মুক্তি পায় ১৮ই মে ২০১৮ তারিখে এবং এরকম প্রচারণা চালানো হয় যে নারীদের যৌন স্বাধীনতা খুবই জরুরী।[১] ২০১৮ সালের ১৫ই জুন লাস্ট স্টোরিস মুক্তি পায়।[২]
লাস্ট স্টোরিজ চলচ্চিত্রটি খুব সাহসিকতার সঙ্গে নারীদের যৌন কামনা এবং উত্তেজনার চিত্রায়ন করেছে, সত্যিই এটা বাস্তবিক এবং অতি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। যৌন কামনা প্রেমের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। -- শুকতারা ঘোষ, দ্য কোয়াইন্ট-এ ২০১৮ সালের পর্যালোচনায়।
সমালোচকগণ চলচ্চিত্রটিতে নারী ও নারীর যৌনতার অনুসন্ধানের চিত্রায়নের প্রশংসা করেন, যে বিষয়টি নিয়ে খুব অল্প সংখ্যক ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।[৩] চলচ্চিত্রবোদ্ধা অলকা সাহানী জনসাধারণের মধ্যে নারীর যৌনতা বিষয়ে আলোচনাকে ওড়না দিয়ে নারীর শরীর ঢাকার সাথে তুলনা করেন, যা এই বর্ণনার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি এই বিষয়বস্তু নিয়ে যথোপযুক্তভাবে কাজ করার প্রশংসা করেন, যাতে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে দেখানো নারী খল চরিত্রগুলোর সক্রিয় যৌন জীবনের পিছিয়ে থাকা রূপের সাথে সম্পর্কিত।[৪] চলচ্চিত্রটিতে ভাইব্রেটর ব্যবহার করে কিয়ারা আদভানির স্বমেহনের দৃশ্যে নারীর যৌনতার অকপট চিত্রায়নের প্রশংসা করেন।[৫]
দ্য নিউজ মিনিট-এর মৃদুলা চলচ্চিত্রটিতে নারীর স্বাধীনতা, চিন্তাভাবনা, ও সিদ্ধান্তের চিত্রায়নের সততার প্রশংসা করেন।[৬] অন্যান্য সমালোচকগণ "একগুঁয়ে ও শক্তভাবে লাগাম ধরে রাখা মহতী নারী"দের প্রশংসা করেন।[৭] এবং বলেন "মাঝে মাঝে পছন্দনীয় নয়, তবে যেসব নারীদের আমরা পর্দায় এড়িয়ে যাই তা অবশ্যই সম্পর্কিত।"[৮] মন্তব্যকারীগণ চলচ্চিত্রে নারী মুখ্য চরিত্রদের ব্যবহারের চাতুর্য এবং প্রতিটি গল্পে নারী মুখ্য চরিত্র "বিরক্তিকর না হওয়া"[৩] এবং "ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গল্প বলা" ও তা সঞ্চালন করার জন্য ইতিবাচক সাড়া দেন।[৯]