লিয়াকত আলি খান | |
---|---|
لیاقت علی خان | |
![]() | |
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ – ১৬ অক্টোবর ১৯৫১ | |
সার্বভৌম শাসক | ষষ্ঠ জর্জ |
গভর্নর জেনারেল | মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ খাজা নাজিমুদ্দিন |
পূর্বসূরী | রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | খাজা নাজিমুদ্দিন |
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ – ২৭ ডিসেম্বর ১৯৪৯ | |
পূর্বসূরী | পদ প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান |
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ – ১৬ অক্টোবর ১৯৫১ | |
পূর্বসূরী | পদ প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | খাজা নাজিমুদ্দিন |
ভারতের অর্থমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২৯ অক্টোবর ১৯৪৬ – ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ | |
পূর্বসূরী | পদ প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | আর. কে. শানমুখম চেট্টি |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কারণাল, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান হরিয়ানা, ভারত) | ১ অক্টোবর ১৮৯৫
মৃত্যু | ১৬ অক্টোবর ১৯৫১ রাওয়ালপিন্ডি, পাঞ্জাব, পাকিস্তান | (বয়স ৫৬)
সমাধিস্থল | মাজারে কায়েদ |
রাজনৈতিক দল | মুসলিম লীগ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এক্সেটর কলেজ, অক্সফোর্ড ইন্স অব কোর্ট স্কুল অব ল |
নবাবজাদা লিয়াকত আলি খান (২ অক্টোবর ১৮৯৬ – ১৬ অক্টোবর ১৯৫১) ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত মুসলিম রাজনীতিবিদ এবং পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে তিনি রাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। পাকিস্তানের তিনি মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ্র ডানহাত হিসেবে পরিচিত। তিনি কায়েদ-এ-মিল্লাত, শহীদ-এ-মিল্লাত উপাধিতে ভূষিত হন। লিয়াকত আলি খান আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি ব্রিটিশ ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে আসেন। তিনি মুহাম্মদ আলি জিন্নাহকে ভারতে ফিরে আসতে আগ্রহী করে তোলেন ; এরই ফলশ্রুতিতেই এক পর্যায়ে পাকিস্তান আন্দোলন শুরু হয়। চল্লিশের দশকে লাহোর প্রস্তাব পাশ হবার পরে লিয়াকত আলি খান পাকিস্তান আন্দোলন এগিয়ে নিতে জিন্নাহকে সাহায্য করেন। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশবাসীর পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেন ; বিশেষ ক'রে ভারত পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের বিষয় কাশ্মীর সমস্যাকে তিনি জাতিসংঘে উত্থাপন করেন।
লিয়াকত আলি খান ছিলেন নবাব রুস্তম আলি খানের দ্বিতীয় পুত্র। তার জন্ম ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২ অক্টোবর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের কারণালে। তার পিতা ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে রুখেন-উদ্দৌলা, শমসের জং, নবাব বাহাদুর প্রভৃতি উপাধি লাভ করেন। তার মায়ের নাম মাহমুদা বেগম।
স্কুল শিক্ষার পূর্বে তিনিঁ মায়ের কাছ থেকে কোরান ও হাদিসের শিক্ষা লাভ করেন। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আলিগড়ের মোহামডান-আংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ থেকে স্নাতক হন। একই বছর পারিবারিক আত্মীয়া জাহাঙ্গিরা বেগমকে বিয়ে করেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি যুক্তরাজ্যে যান এবং ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। অক্সফোর্ডে তিনি ইন্ডিয়ান মজলিসের সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে লিয়াকত আলি খান ভারতে ফিরে আসেন এবং রাজনীতিতে যোগ দেন। জীবনের শুরুতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু, ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তিনি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কংগ্রেসে যোগ না-দিয়ে, নিখিল ভারত মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুজাফফরনগর থেকে প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উত্তর প্রদেশ আইনসভার ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে।[১]। আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত ব্যাপারে তিনি সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করতেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত নেহেরু রিপোর্ট পর্যালোচনা কমিটিতে তিনি যোগদেন[২]। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী বেগম রানা একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ছিলেন এবং পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।[৩]। লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকগুলো ব্যর্থ হবার পর লিয়াকত আলি ও তার স্ত্রী মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর সাথে সাক্ষাৎ করেন।[১]। জিন্নাহ তখন লন্ডনে আইন পেশা চালাচ্ছিলেন। লিয়াকত আলি ও তার স্ত্রী জিন্নাহকে ভারতে ফিরে এসে এখানকার মুসলমানদের নেতৃত্ব গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। জিন্নাহ তাদের অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন।
লিয়াকত আলির আহ্ববানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারতে ফিরে এসে মুসলিম লীগ গুছিয়ে নিতে শুরু করেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে জিন্নাহ লিয়াকত আলিকে মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে মনেনীত করেন। লিয়াকত আলি খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ অবধি তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাকে মুসলিম লীগের সংসদীয় দলেরও সহসভাপতি করা হয়। তিনি সংবাদপত্র দি ডন-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন।[৪] ১৯৪৫-৪৬ এর নির্বাচনে লিয়াকত আলি মিরাট থেকে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে মুসলিম লীগ মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলোর ৮৭ শতাংশ আসনে জয়লাভ করে।[৫]। ঐ নির্বাচনের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। লিয়াকত আলি সে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন [৬]।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাগের পর লিয়াকত আলি খানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও সংবিধান রচনার উদ্যোগ নেন। তিনি পাকিস্তানের সংবিধানের রূপরেখা প্রণয়ন করেন এবং সংসদে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ তা উপস্থাপন করেন। পাকিস্তানের সংবিধানের ইতিহাসে এটা “পাকিস্তানের ম্যাগনাকার্টা” হিসেবে পরিচিত। লিয়াকত এটাকে স্বাধীনতার পর তার দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন। তার আমলে ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর সমস্যা জাতিসংঘের মাধ্যমে সমাধানে একমত হয়। তখন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এ সমস্যার গণতান্ত্রিক সমাধানের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কাশ্মীরে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। জিন্নাহ মৃত্যুর পর পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মাঝে সমস্যা দেখা দেয় এবং ভারত-পাকিস্তান দ্বিতীয় যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। লিয়াকত আলি তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সাথে লিয়াকত-নেহেরু চুক্তি করেন। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল ভারত পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়ন করা। ১৯৫১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐ একই সময় করাচিতে একটি কাগজের টাকা ছাপার কারখানাও (টাকশাল) স্থাপিত হয়[৭]। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিটিশ সেনাপ্রধান ডগলাস গ্রেসী অবসরে গেলে লিয়াকত আলি খান জেনারেল আইয়ুব খানকে সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে নিয়োগ দেন।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর ১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে তিনি এক ছাত্রসভায় ভাষণ দেন। ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে প্রদত্ত মানপত্রে বাংলা ভাষার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা হয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অন্যান্য দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা দাবি করা হয়। ডাকসুর তৎকালীন জিএস গোলাম আযম দাবীনামাটি পাঠ করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান রাষ্ট্রভাষাসংক্রান্ত দাবিটি এড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত কয়েকটি দাবি মেনে নেন। রাষ্ট্রভাষাসংক্রান্ত দাবিটি এড়িয়ে যাওয়ায় সমাবেশস্থলে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।
লিয়াকত আলী খান জনপ্রিয় নেতা হলেও তার উত্থান ও সাফল্যে ভারতের কম্যুনিষ্ট পার্টি অসন্তুষ্ট ছিল, কারণ তাদের লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় নিগড়মুক্ত একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা। ভারত বিভাগের পর পাকিস্তানের কম্যুনিষ্ট পার্টির জন্ম হয়েছিল ভারতের মাটিতে, ১৯৪৮ সালে। সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তান শক্ত ভিত্তিতে দাঁড়ানোর আগেই ১৯৪৯তে ভারতের সঙ্গে একটি যুদ্ধ হয়ে হয়ে যায়। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে কম্যুনিস্ট পার্টি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছিল। এই সাফল্যের পটভূমিতে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি একটি সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে। তারা পাকিস্তানের সামরিক বহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জেনারেল তারিক আকবর খানকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়। আকবর খান প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিলেন। ফলে ১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি সমর্থন দেন। জনপ্রিয় সাহিত্যিক ফয়েজ আহমেদ ফয়েজও এই ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছিলেন। এটি রাওয়ালপিণ্ডি ষড়যন্ত্র হিসাবে অভিহিত। এই ষড়যন্ত্র সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান ভণ্ডুল করে দেন। ব্যর্থ হলেও কমিউনিস্ট পার্টির এই ষড়যন্ত্র লিয়াকত আলী খানের প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তিকে ক্ষগ্রস্ত করেছিল।[৮][৯][১০]
১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডির পৌরসভা পার্কের এক সভায় লিয়াকত আলি খানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবার কথা ছিল। ঐ সভায় মঞ্চ থেকে মাত্র ১৫ গজ দূরে উপবিষ্ট থাকা এক আততায়ী সাদ আকবর তাকে গুলি করে। তার বুকে দুটি গুলি লেগেছিল।তিনি নিহত হন। তাকে এহেন হত্যার কারণ অদ্যাবধি জানা যায়নি[১১]। মৃত্যুর পর তাকে শহীদ-এ-মিল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। রাওয়ালপিন্ডির যে উদ্যানে তিনি নিহত হন, সে উদ্যানের নামকরণ করা হয় “লিয়াকত বাগ”। প্রায় ৫৬ বছর পর একই স্থানে পাকিস্তানের আরেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টো আততায়ীর হামলায় নিহত হন।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |