লেইলা ফোরৌহার ফার্সি: لیلا فروهر | |
---|---|
জন্ম | ইস্পাহান, ইরান | ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮
উদ্ভব | ইস্পাহান |
ধরন | |
পেশা |
|
কার্যকাল | ১৯৬১–বর্তমান |
লেইলা ফোরৌহার (ফার্সি: لیلا فروهر, Leylâ Foruhar; জন্ম: ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮) একজন ইরানি পপ এবং ধ্রপদী গায়ক এবং অভিনেত্রী। শিশু শিল্পী হিসাবে তিন বছর বয়সে তিনি অভিনয় শুরু করেছিলেন। তিনি ইরানি সমাজের অন্যতম সফল নারী শিল্পী হিসাবে বিবেচিত। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পরে ১৯৮৪ সালে তিনি তুরস্কে, এরপর প্যারিসে দেশান্তরিত হবার পর ১৯৮৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসিত হন।
লেইলার গান মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের পাশাপাশি আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কুর্দিস্তান, ইরাক, আর্মেনিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়। তিনি ২০টিরও অধিক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন।
লেইলা ফোরৌহার ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ সালে ইরানের ইস্পাহানে জন্ম নেন। তার বাবা ছিলেন ইরানি অভিনেতা জাহাঙ্গীর ফোরৌহার। শিশুকাল তেকেই তিনি চলচ্চিত্রের ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন। সে সময় তিনি সেপাহান এসফাহানের প্রেক্ষাগৃহে বাবা, মা এবং ইরানের থিয়েটারের দুর্দান্ত অভিনেতা আরহাম সদরের সাথে মঞ্চে পরিবেশন করেছিলেন। শুরুর দিকে লেইলা মূলত শাহ যুগের সামাজিক সমস্যাগুলোর উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে এবং সোলতানে গালভা চলচ্চিত্রের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কৈশোরে তিনি ফ্যাশন ম্যাগাজিনগুলোর জন্য মডেলিং শুরু করেছিলেন।[১]
১৯৭০ সালের দিকে, ১৪ বছর বয়সে লেইলা গাইতে শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে, তার প্রথম অ্যালবাম হাদিছ প্রকাশিত হয় এবং ইরান ও আফগানিস্তানে ব্যাপক সাড়া পায়। বিশেষত "চশমা-ই-নূর" এবং "এশগ মেসলে আতিশেহ" গানগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ব্যাপক সাফল্যের পাশাপশি অ্যালবামটি আফগানিস্তানে সেরা অ্যালবাম হিসাবে প্রশংসিত হয়েছিল। "চশমা-ই-নূর" গানে তার চুলের স্টাইল বহু বছর কাবুলে প্রচলিত হয়ে ওঠে।[১]
প্রতিবেশী ইরাকের সাথে যুদ্ধ ইরানের চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের কটি বিপ্লবী আদালতের আদেশে জনপ্রিয় গায়ক এবং অভিনেতাদের (পুরুষ ও মহিলা উভয়) নামের তালিকা জানিয়ে তাদেরকে আদালতের শুনানির জন্য উপস্থিত থাকার নির্দেশ জারি করে। এই তালিকায় লেইলার নাম তিন নম্বরে ছিল। তৎকালীন আইন অনুযায়ী এই তালিকাভুক্ত সকল শিল্পীদের অবশ্যই তাদের কর্মজীবন স্থগিত করতে বাধ্য হতে বা আইনি পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।[১] সে সময়ে ফোরৌহার পরিবার ইরান ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত তেহরানে অবস্থান করেছিলেন।[২] ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পরে, ১৯৮৪ সালে তারা প্রথমে তুরস্কে, এরপর পরে ফ্রান্সের প্যারিসে চলে যান।[৩]
১৯৮৮ সালে ফোরৌহার পরিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন[১] এবং সেখানে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে বসবাস শুরু করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের বছর ১৯৮৮ সালে তিনি "মাখমল-ই-নায" এ্যালবাম প্রকাশ করেন। পরবর্তী বছর ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় "হেদিয়েহ"। "ইয়ে দিল" গানটি ব্যপক জনপ্রিয়তা এবং সমালোচনা অর্জন করে। বিশেষত গানটির বিপ্লবী পূর্ববর্তী "চশমা-এ-নূর" গানের অনুরূপ উন্মাদনাকে জাগিয়ে তোলে।[১]
লেইলা তার ১৯৯৪ সালের দো পারানদে অ্যালবামে ডলি পার্টনের "জোলিন" গানটি কভার করেছিলেন। লেইলা একাধিক ভাষায় গান গাইতে সক্ষম ছিলেন এবং তার ১৯৯৭ সালের "প্ল্যানেট অব হারমনি" অ্যালবামে ইংরেজি, ইতালিয়, গ্রিক, আরবি, হিব্রু, দারি ফার্সি, আর্মেনিয়, তুর্কি এবং কুর্দি মোট নয়টি ভাষায় গান অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি ছিলো তার সর্বাধিক বিক্রি হওয়া অ্যালবামগুলোর একটি। প্রতি বছর একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে, এযাবৎ লেইলা ২০টিরও অধিক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন দেশে তিনি প্রচুর দুর্দান্ত কনসার্টে পরিবেশন করেছেন যার মধ্যে ২০০৩ সালে কোডাক থিয়েটারের কনসার্টটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ২০১০ সালের মার্চে তিনি ওয়াশিংটন ডিসির লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে নওরোজের একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে গান পরিবেশন করেন।[৪] বিশ্ব জুড়ে শ্রাইন অডিটোরিয়াম, কোডক থিয়েটার, ইউনিভার্সাল অ্যাম্ফিথিয়েটার, ওবারহাউসেন প্রভৃতি মঞ্চে তিনি গান পরিবেশন করেছেন। কোডাক থিয়েটারে তার শেষ কনসার্টটি ছিল ২০০৮ সালে। প্রথম ফার্সি গায়িকা হিসাাবে তিনি দুবাই, তাজিকিস্তান এবং জাপানে কনসার্ট করেছেন।
তিনি একাধিকবার লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়রের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন।
২০০৪ সালের আগস্টে লেইলা লস অ্যাঞ্জেলেস-ভিত্তিক ইরানি-মার্কিন ব্যবসায়ী ইসি নবীকে বিয়ে করেছিলেন।[৫] মার্কিন মুসলিম সংস্কারক রেজা আসলান লেইলার ভাতিজা।[৬]