![]() ১৯৪৬ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে লেন হাটন | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | স্যার লিওনার্ড হাটন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ফালনেক, পাডসে, ইংল্যান্ড | ২৩ জুন ১৯১৬|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯০ কিংস্টন-আপোন-টেমস, ইংল্যান্ড | (বয়স ৭৪)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি লেগ ব্রেক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক, দল নির্বাচক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | রিচার্ড হাটন (পুত্র) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৯৪) | ২৬ জুন ১৯৩৭ বনাম নিউজিল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৫ মার্চ ১৯৫৫ বনাম নিউজিল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৩৮ - ১৯৬০ | এমসিসি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৩৪ - ১৯৫৫ | ইয়র্কশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৯ জুলাই ২০১৪ |
স্যার লিওনার্ড লেন হাটন (ইংরেজি: Len Hutton; জন্ম: ২৩ জুন, ১৯১৬ - মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯০) ইয়র্কশায়ারের ফালনেক এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও দল নির্বাচক ছিলেন। ক্রিকেটবোদ্ধাদের মতে, তিনি ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। ১৯৫২ সালে বিংশ শতকের প্রথম পেশাদার ক্রিকেট অধিনায়ক হন। তার অধিনায়কত্বে ১৯ বছর পর প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজ জয় করে ইংল্যান্ড দল। টেস্ট ক্রিকেটে তার সর্বাপেক্ষা বৃহৎ অর্জন ছিল ১৯৩৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজস্ব সর্বোচ্চ ৩৬৪ রান সংগ্রহ করা। এ রান সংগ্রহ করতে তিনদিনে তাকে ১৩ ঘণ্টা ১৭ মিনিট খরচ করতে হয়েছিল। প্রায় দুই দশককাল তার এ রেকর্ড স্থায়ী ছিল। আজো ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান হিসেবে চিত্রিত আছে। অদ্যাবধি লেন হাটন অবিস্মরণীয় ব্যাটসম্যানরূপে চিহ্নিত হয়ে আছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় দূর্ঘটনায় তার বাম হাতে আঘাতপ্রাপ্তি ঘটে। এরফলে ডানহাতের তুলনায় ঐ হাত কিছুটা খাঁটো হয়ে যায়। যুদ্ধ পরবর্তীকালে মাঠে নামলে তাকে বালকদের হালকা ওজনের ব্যাট নিতে বাধ্য হতে হয়। যুদ্ধের পর তিনি ইংল্যান্ডের প্রধান ব্যাটিং চালিকাশক্তি ছিলেন। দলের সাফল্য অনেকাংশেই তার ব্যাটিংয়ের উপর নির্ভর করতো।
হেনরি হাটন ও লিলি দম্পতির পাঁচ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ লেন হাটন ফালনেকের মোরাভিয়ান সম্প্রদায়ভূক্ত।[১] পরিবারের সবাই স্থানীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন।[২] ১৯২১ সাল থেকে পাডসের লিটলমুর কাউন্সিল স্কুলে অধ্যয়ন করেন।[১][৩] অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। খেলার পাশাপাশি অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে ক্রিকেট বিষয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন।[২] ১২ বছর বয়সে পাডসে সেন্ট লরেন্স ক্রিকেট ক্লাবে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দেন ও ক্লাবের দ্বিতীয় একাদশে অংশ নেন। ১৯২৯ সালের মধ্যে দলের প্রথম একাদশে ঠাঁই পান তিনি।[৪] স্থানীয় জনগণের উৎসাহে ইয়র্কশায়ার ক্লাবে যান এবং প্রতিবেশী ও ইংরেজ ক্রিকেটার হার্বার্ট সাটক্লিফের সাথে দেখা করেন। সাটক্লিফ তার প্রতিষ্ঠানে হাটনকে কোচিং করান। সাটক্লিফ তরুন ব্যাটসম্যান হাটনের ক্রীড়াশৈলীতে চমকপ্রদ হন ও ইয়র্কশায়ারের সুন্দর ভবিষ্যৎ উন্মোচনের দ্বার তার মাধ্যমে হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন।[৫][৬]
দলীয় চুক্তিবদ্ধতা শেষে ফেব্রুয়ারি, ১৯৩০ সালে হেডিংলি স্টেডিয়ামে কাউন্টি দলের অনুশীলনীতে যান।[৫] ইয়র্কশায়ারের সাবেক ক্রিকেটার জর্জ হার্স্ট তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি হাটনের ব্যাটিং কৌশল সম্পন্ন হয়েছে বলে স্থির করেন।[৬] এ সময়েই হেডিংলিতে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ব্যাটসম্যান ডন ব্র্যাডম্যানের অপরাজিত ৩৩৪* রানের ইনিংস অবলোকন করেন যা আট বছর পর হাটন নিজেই ঐ রান অতিক্রম করেছিলেন।[৫] ওভালে অনুষ্ঠিত সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে বিল বোসের অসামান্য বোলিংয়ের পর তিনি ৩৬৪ রান তুলে তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড গড়েন।
কিশোর বয়সেই ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্রিকেট তারকার চিত্ররূপে গড়ে উঠেন হাটন। ১৯৩৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর তিনি খুব দ্রুত কাউন্টি স্তরে খেলার জন্য নিজেকে তৈরি করেন। জুন, ১৯৪৯ সালে সাতটি সেঞ্চুরিসহ একমাসে রেকর্ডসংখ্যক ১,২৯৪ রান করেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৫৫.৫১ গড়ে ১২৯ সেঞ্চুরি সহযোগে ৪০,১৪০ রান তোলেন। ১৯৬০ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ার দলের হয়ে সর্বশেষ অংশগ্রহণ করেন।
![]() |
৯৯.৯৪
|
![]() |
৬০.৯৭
|
![]() |
৬০.৮৩
|
![]() |
৬০.৭৩
|
![]() |
৫৯.২৩
|
![]() |
৫৮.৬৭
|
![]() |
৫৮.৬১
|
![]() |
৫৮.৪৫
|
![]() |
৫৭.৭৮
|
![]() |
৫৬.৯৪
|
![]() |
৫৬.৬৮
|
![]() |
৫৬.৬৭
|
উৎস: ক্রিকইনফো যোগ্যতা: পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ী জীবনে কমপক্ষে ২০ ইনিংস। |
১৯৩৭ সালে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্য ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। ২৬ জুন, ১৯৩৭ তারিখে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে দলের অপর অন্তর্ভুক্ত জিম পার্কসের সাথে তারও টেস্ট অভিষেক ঘটে।[৭]
১৯৩৭ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরূপে খেলতে শুরু করেন। কিন্তু ১৯৩৯ সালে বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ঐ সময় তিনি দেশের তথা বিশ্বের শীর্ষ ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান। কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে কমান্ডো প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় বাহুতে গুরুতর আঘাত পান। কিন্তু তিনি আর পূর্ণাঙ্গভাবে বাহুর আঘাত থেকে উত্তোরণ ঘটাতে পারেননি। ফলে, তাকে ব্যাটিং কৌশল পরিবর্তন করতে হয়। যুদ্ধের পর ক্রিকেট পুনরায় শুরু হলে হাটন ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানের আসন ঠিকই ধরে রাখতে সক্ষম হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় পরবর্তী ছয় বছর ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি লিওনার্ড হাটন ও সিরিল ওয়াশব্রুকের উপর নির্ভরশীল ছিল।[৮]
১৯৫০-৫১ মৌসুমে ইংল্যান্ডের মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়। দলটি তার ব্যাটিং কৌশলের উপর পুরোপুরি নির্ভর হয়ে পরে যা তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে প্রবহমান ছিল। আক্রমণধর্মী মেজাজে ব্যাটিংয়ের অধিকারী হাটন পরিসংখ্যানগতভাবে টেস্ট ক্রিকেটে সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে রয়েছেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত লেন হাটন ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব করেন। কিন্তু তার অধিনায়কত্ব বিতর্কিত পর্যায়ে পৌঁছে। অধিনায়কের ভূমিকায় তিনি কখনো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি। হাটন অনুধাবন করেন যে, ইংরেজ ক্রিকেটের পরিচালনায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের সাবেক পেশাদার খেলোয়াড়গণ তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ২৩ টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের সময় দল আট টেস্টে জয় পায় ও চার টেস্ট হেরে যায়। বাদবাকী খেলাগুলো ড্রয়ে পরিণত হয়। ৭৯ টেস্টে ১৯ সেঞ্চুরিতে ৫৬.৬৭ গড়ে রান করেন ৬,৯৭১ তিনি।
শারীরিক ও প্রচণ্ড মানসিক দৃঢ়তার অধিকারী হাটন ১৯৫৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। ঐ বছরই তিনি নাইটহুড খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেন হাটন।[৯] ১৯৫৫ সালের পর লন্ডনভিত্তিক ইভনিং নিউজে ১৯৬৩ পর্যন্ত লিখতেন।[১০] কমিটিকে চিরকাল অপছন্দ করতেন হাটন। তারপরও ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেট দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু, ব্যবসায়িক দায়িত্ববোধের কারণে ১৯৭৭ সালে পদত্যাগ করেন।[১১] এরপর, সংবাদপত্রে লেখাসহ তহবিল সংগ্রহের কাজে নিজেক জড়িয়ে রেখেছিলেন। এছাড়াও ১৯৬০ সালে তিনি একটি প্রকৌশলী ফার্ম জে. এইচ. ফেনারে যোগদানের আমন্ত্রণ পান।[১২] এ ফার্মে জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন ও পরবর্তীকালে বাজারজাতকরণের সাথে সম্পৃক্ত হন।[১৩] ১৯৭৩ সালে তিনি ঐ ফার্মের পরিচালক মনোনীত হন।[৩] এরপর ১৯৮৪ সালে অবসর নেন।[১৪] তারপরও তিনি ক্রিকেটের সাথে জড়িত রেখেছিলেন নিজেকে। সারে ক্রিকেট দলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন কিন্তু ইয়র্কশায়ারের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেন। এ প্রেক্ষিতে জানুয়ারি, ১৯৯০ সালে ইয়র্কশায়ার দলের সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন।[৩]
যুদ্ধের পূর্ব ও পরে হাটন একটি কাগজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।[১৫] টমাস মোল্ট নামীয় এক সাংবাদিক ও লেখকের সাথে কাজ করেন। ১৯৪৯ সালে স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘ক্রিকেট ইজ মাই লাইফ’ প্রকাশ করেন।[১৬] এছাড়াও, [নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড নামের একটি পত্রিকায় খেলা চলাকালীন সময় লিখতেন।[১১]
১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ তারিখে স্কারবোরার কাছে ওকেহামে ডরোথি ম্যারি ডেনিস নাম্নী এক নারীকে বিয়ে করেন হাটন। ডরোথি ছিলেন ইয়র্কশায়ারের সাবেক ক্রিকেটার ফ্রাঙ্ক ডেনিসের বোন। ডরোথি ও তার ভাইয়ের সাথে এক নৃত্য অনুষ্ঠানে তাদের স্বাক্ষাৎ হয়েছিল।[১৭] তাদের দুই সন্তান ছিল। ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণকারী রিচার্ড হাটন নামীয় এক সন্তান পরবর্তীকালে ইয়র্কশায়ার ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলে প্রতিনিধিত্ব করেন।[১৮] ১৯৪৭ সালে জন জন্মগ্রহণ করেন।[১৯]
জীবনের শেষ পর্যায়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ সালে ওভালে খেলা দেখার সময় গুরুতর অসুস্থতা অনুভব করেন। এর কিছুদিন পর ৭৪ বছর বয়সে ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ তারিখে তার দেহাবসান ঘটে।[৩][২০]
রেকর্ড | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী ওয়ালি হ্যামন্ড |
বিশ্বরেকর্ড – টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ৩৬৪ ব অস্ট্রেলিয়া, ওভাল, ১৯৩৮ |
উত্তরসূরী গারফিল্ড সোবার্স |