লেমা বোউই

লেমা বোউই
বোউই ২০১৩ সালে
জন্ম
লেমা রবার্টা বোউই

(1972-02-01) ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ (বয়স ৫২)
জাতীয়তালাইবেরিয়ান
শিক্ষাএএ ডিগ্রী ইন সোশাল ওয়ার্ক, মাদার প্যাটার্ন কলেজ অফ হেলথ সাইন্সেস, মনরোভিয়া, লাইবেরিয়া; এমএ ইন কনফ্লিক্ট ট্রান্সফরম্যাশন, ইস্টার্ন মেনোনাইট ইউনিভার্সিটি, হ্যারিসনবার্গ, ভার্জিনিয়া, ইউএসএ
পেশাশান্তি আন্দোলন কর্মী
পরিচিতির কারণওমেন অফ লাইবেরিয়া ম্যাস অ্যাকশন ফর পিস and প্রে দ্যা ডেভিল ব্যাক টু হেল
পুরস্কার২০১১ নোবেল শান্তি পুরস্কার

লেমা রবার্টা বোউই (জন্ম: ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২) একজন অহিংস নারী আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী লাইবেরিয়ান শান্তি কর্মী যিনি ওমেন অফ লাইবেরিয়া ম্যাস অ্যাকশন ফর পিস নামে একটি আন্দোলনের মাধ্যমে ২০০৩ সালে দ্বিতীয় লাইবেরিয়ান সিভিল যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটান। তার সহযোগী অ্যালেন জনসন সিরিলিফের সহযোগীতায় তিনি সেই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটান, ফলে ২০০৫ সালে সেখানে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ্যালেন সারলিফ সেই নির্বাচনে অংশ নেন এবং জয়লাভ করেন। অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে নারীদের সুরক্ষা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি শান্তি প্রতিষ্ঠায় পূর্ন নিবেদনের স্বীকৃতি স্বরূপ তার আন্দোলনের সহযোগী অ্যালেন জনসন সিরিলিফ এবং ইয়েমেন মানবাধিকার কর্মী তাওয়াক্কুল কারমানের সাথে মিলে ২০১১ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[][]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

লেহমাহ বয়ই জন্মগ্রহণ করেন মধ্য লাইবেরিয়ায়, ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে। প্রথম লাইবেরিয়ান গৃহযুদ্ধ ১৯৮৯ সালে শুরু হয় এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তা গোটা দেশকে বিশৃঙ্খল করে রাখে। সেই সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর এবং তিনি তার বাবা মা এবং দুই বোনের সাথে মনরোভিয়াতে বাস করছিলেন। “যুদ্ধ কিছুটা প্রশমিত হলে তিনি ইউনিসেফ দ্বারা পরিচালিত একটি কর্মশালার ব্যাপারে জানতে পারেন, যেখানে কিছু ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সামাজিক কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হয়, যেন তারা যুদ্ধে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন।” -এই ঘটনাগুলোর কথা বয়ই তার ২০১১ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী “মাইটি বি আওয়ার পাওয়ারস”-এ উল্লেখ করেন। তিনি তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন যা তাকে তার দুই সন্তানের বাবার (ছেলে জোসুহা “নুকু” এবং মেয়ে এম্বার) হাতে অবমাননা হওয়ার ব্যাপারে সচেতন করে তোলে। পরিবারের শান্তি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বয়ই তার পার্টনারকে অনুসরণ করে ঘানায় চলে আসেন (আত্মজীবনীতে যার নাম তিনি ড্যানিয়েল বলে উল্লেখ করেছেন)। সেখানে তিনি তার বেড়ে ওঠা পরিবারকে (ততদিনে তার দ্বিতীয় ছেলে আর্থারের জন্ম হয়েছে) নিয়ে কার্যত গৃহহীন উদ্বাস্তু এবং খাদ্যাভাবে জর্জরিত অবস্থায় বসবাস করতে থাকেন। একদিন তার তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি সেখান থেকে পালালেন। তার হাতে তখন একটি পয়সাও ছিল না। তিনি কৌশলে ভাড়া পরিশোধের ঝামেলা এড়িয়ে এক সপ্তাহ ব্যাপি বাস ভ্রমণ করে আবার সেই বিশৃঙ্খল লাইবেরিয়াতে ফিরে আসেন, যেখানে তার বাবা মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা তখনো বাস করছিলেন।[]

১৯৯৮ সালে মাদার প্যাটার্ন কলেজ অফ হেলথ সাইন্স শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সামাজিক কর্ম বিষয়ে অ্যাসোসিয়েট অফ আর্টস ডিগ্রি কার্যক্রমে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা স্বরূপ বয়ই সেখানে একজন সেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত হন। সেখানে তখন সেইন্ট পিটার’স লুথেরান চার্চ ইন মনরোভিয়া কর্তৃক পরিচালিত লুথেরান চার্চ ইন লাইবেরিয়া’র একটি কর্মশালা চলছিল। সেখানে তার মা ছিলেন একজন মহিলা নেত্রী। বয়ই’র বয়ঃসন্ধির দিনগুলো সেখানে কাটে। আর সেই কর্মশালাটির নাম ছিল দ্যা ট্রমা হিলিং এন্ড রিকনসিলেশন (টিএইচআরপি)। এই কর্মশালাটি একজন শান্তি কর্মী হিসেবে যাত্রা শুরু করতে বয়ইকে ভীষণ ভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।[]

টিএইচআরপি’র অফিসগুলো নতুন ছিল, কিন্তু তাদের একটি ইতিহাস ছিল। লাইবেরিয়ার চার্চগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল এমনকি তারা তাদের কার্যক্রম ১৯৯১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বেই শুরু করেছিল। লুথেরান যাযক, অপেশাদার নেতা, শিক্ষক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা লাইবেরিয়ার খ্রিশ্চিয়ান হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত হয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত লাইবেরিয়ার সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি এবং সেখানকার জনসাধারণের মানসিক ক্ষতির উন্নয়ন সাধনের জন্য সবাই একজোট হয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি অ্যাসোসিয়েট অফ আর্ট ডিগ্রি’র জন্য পড়াশোনা এবং তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন, যা তাকে ২০০১ সালে প্রদান করা হয়। তিনি তার ট্রমা হেলিং এন্ড রিকনসিলেশন-এর প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে চার্লস টেলর আর্মীর হয়ে যুদ্ধ করা কিছু সাবেক শিশু সৈনিককের পূনর্বাসনে সহযোগিতা করেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত চারপাশে তাকিয়ে তিনি উপলব্দি করেন, “সমাজে যদি কোন পরিবর্তন আনতে হয়, তবে তা মায়েদেরকেই করতে হবে।”            

বয়ই তার দ্বিতীয় কন্যা নিকোল “পুডু”-কে জন্ম দিয়ে চতুর্থবারের মত মা হন। হিংস্রতা বন্ধের জন্য তিনি লাইবেরিয়ার মহিলাদের একত্রিত করা শুরু করেন, যুদ্ধের নির্মমতা যাদের সন্তানদের ধ্বংস করে দিচ্ছিল।[]

শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ

[সম্পাদনা]
  • লাইবেরিয়ার মনরোভিয়াতে অবস্থিত মাদার প্যাটার্ন কলেজ অফ হেলথ থেকে সামাজিক কাজে অ্যাসোসিয়েট অফ আর্টস ডিগ্রি (২০০১)
  • ভার্জিনিয়ার হ্যারিসনবার্গে অবস্থিত ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কনফ্লিক্ট ট্রান্সফর্ম্যাসন-এ মাস্টার্স অফ আর্টস ডিগ্রি (২০০৭)
  • দি ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন্সটিটিউট ফর ট্রেইনিং, দ্যা হেলিং ভিক্টিমস অফ ওয়ার ট্রমা সেন্টার ইন ক্যামেরুন  থেকে কনফ্লিক্ট প্রেভেনশন এন্ড পীসবিল্ডিং নিয়ে এবং লাইবেরিয়ায় অহিংস শান্তি শিক্ষার নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। 

পেশা জীবন

[সম্পাদনা]

বয়ই মনরোভিয়া কেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠান বয়ই পীস ফাউন্ডেশন আফ্রিকা’র একজন প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি লাইবেরিয়ার নারী এবং তরুণদের শিক্ষা ও নেতৃত্বের সুযোগ প্রদান করে থাকে।

এছাড়া বয়ই ঘানার রাজধানী আক্রা কেন্দ্রীক ওমেন পীস এন্ড সেকুরিটি নেটওয়ার্ক আফ্রিকার-তে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি পশ্চিম আফ্রিকার সমস্ত উপত্যকা জুড়ে সম্পর্ক উন্নয়ন, নারীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান, প্রচারণা ও দ্বন্দ নিরসনে নানা ভাবে সহযোগিতা করে এসেছে। তিনি ওমেন ইন পীসবিল্ডিং প্রোগ্রাম/ওয়েস্ট আফ্রিকান নেটওয়ার্ক ফর পীসবিল্ডিং-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সাবেক সমন্বয়কারী। এছাড়া তিনি লাইবেরিয়া ট্রুথ এন্ড রেকনসিলেশন কমিশনে কমিশনার-ডেজিগনেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৩-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্নাড কলেজের সোশাল জাস্টিস বিভাগে তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। ২০১৩ সালে তিনি অক্সফাম গ্লোবালের অ্যাম্বাসেডর হন। বয়ই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কথা বলেন। ২০১৬ সালে বয়ই ওমেন ওয়াগ পীস আয়োজিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তার বক্তব্য রাখেন। এটি একটি তৃনমূল রাজনৈতিক দল যা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে আসছে।

এছাড়াও বয়ই "এ নিউ ডিমেনশন অফ হোপ" নামে একটি অলাভজনক সংগঠনের একজন স্পষ্টবাদী সমর্থক। এই সংগঠনটি তার নিজের দেশ লাইবেরিয়ায় স্কুল প্রতিষ্ঠা করে থাকে। ২০১৫ সালের মে মাসে ইনডেগোগো নিয়ে কাজ করা এনডোপ’স-এর ক্রাউড ফাউন্ডিং ক্যাম্পেইনের প্রদায়কদের তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিঠি লেখেন।

বয়ই ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বয়ই দ্যা ডেইলি বিস্ট পত্রিকার একজন প্রদায়ক।

মানসিক আঘাত নিরাময়ে ভূমিকা পালন

[সম্পাদনা]

১৯৯৯ সালের বসন্তে, মানসিক আঘাত নিরাময় কর্মসূচিতে এক বছর কাজ করার পর বয়ই’র তত্ত্বাবধায়ক লাইবেরিয়ার লুথেরান চার্চ-এর যাজক রেভেরেন্ড বার্থোলোমেউ বিওহ “বিবি” কোলি তাকে স্যামুয়েল বায়ডি ডয়ি’র সাথে পরিচয় করে দেন। তিনি ছিলেন একজন সংবেদনশীল এবং বুদ্ধিমান লাইবেরিয়ান, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি খ্রীশ্চিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শান্তি-প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রী গ্রহণ করেছেন। ডয়ি ছিলেন আফ্রিকার প্রথম আঞ্জলিক শান্তি সংগঠন দ্যা ওয়েস্ট আফ্রিকা নেটওয়ার্ক ফর পীসবিল্ডিং (ডব্লিউএএনইপি)-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক। ১৯৯৮ সালে এই সংগঠনটি আফ্রিকার ঘানায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বয়ই শান্তি -প্রতিষ্ঠা বিষয়ে ব্যাপকভাবে পড়াশোনা শুরু করেন। বিশেষ ভাবে মেনোনাইটের লেখা “দ্যা পলিটিকস অফ যেশুাস” এছাড়া তিনি পড়েন ধর্মতত্ত্ববিদ জন হাওয়ার্ড ওডার, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, মহাত্মা গান্ধী এবং কেনিয়ান সংঘাত ও সমন্বয় বিশেষজ্ঞ ও লেখক হিযকিয়াস অ্যাসেফার লেখা বইসমূহ।          

১৯৯৯ সালের শেষের দিকে, বয়ই লিখেছেন, “ডব্লিউএএনইপি তাদের কাজের সাথে নারীদের যুক্ত করার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছিল এবং আমি ঘানায় একটি কনফারেন্সে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম”। ২০০০ সালে ডব্লিউএএনইপি’র পরবর্তি সম্মেলনে নাইজেরিয়ার থেলমা ইকিয়রের সাথে বয়ই’র সাক্ষাৎ হয় “যিনি ছিলেন অত্যন্ত শিক্ষিত, এবং বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ উকিল।” ইকিয়র ডব্লিউএএনইপিকে দিয়ে একটি নারী সংগঠন খোলার কথা বয়ইকে বলেন। “থেলমা ছিলেন বিবি এবং স্যামুয়েলের মতই একজন চিন্তাবিদ ও স্বপ্নবিলাসী। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন নারী, আমার মত।”

এক বছরের মধ্যে ইকিয়র ডব্লিউএএনইপি থেকে তহবিল গঠন করেন এবং বয়ই’র উপস্থিতিতে ঘানার আক্রায় ওমেন ইন পিসবিল্ডিং নেটওয়ার্ক (ডব্লিউইপিএনইটি)-এর প্রথম সম্মেলনের আয়োজন করেন।  

প্রথম সম্মেলন কী রকম উত্তেজনাময় ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। সেখানে সিয়েরা লিওন, গিনি, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, বুর্কিনা ফাসো, টোগো - পশ্চিম আফ্রিকার প্রায় সব দেশের মহিলারা অংশ নেন। থেলমা খুব শান্ত এবং সুন্দর ভাবে সব কাজ করতেন। নিজ হাতে লিখে সংগঠকদের প্রশিক্ষণের কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করে দিতেন, তাদের ব্যস্ত রাখতেন, সংঘাত ও সংঘাত সমাধান বিষয়ে শিক্ষা দিতেন এবং উল্লেখিত এই বিষয়গুলোতে তাদের কেন যুক্ত থাকা উচিত তা বুঝতে সাহায্য করতেন।      

অন্য মহিলাদের শান্তির ক্ষুধা তিনি সহানুভূতির সাথে দেখতেন। বয়ই প্রথমবার তার জীবনের দুঃখের সময়ের কথা বলেন – হাসপাতাল করিডোরের মেঝেতে তাকে সদ্য জন্ম নেয়া কন্যাকে নিয়ে এক সপ্তাহ কাটাতে হয়েছিল, কারণ তার কাছে বিল পরিশোধের টাকা ছিল না এবং কেউ তাকে সাহায্য করতেও আসে নি। “নারীদের নিয়ে এবং শান্তি - প্রতিষ্ঠা কল্পে কাজ করার জন্য আফ্রিকায় তার মত আর কেউ ছিলেন না।”  ইকিয়রের সাথে বয়ই’র বন্ধুত্ব হয়, তিনি তার প্রশিক্ষকের ভূমিকাও পালন করেন। তিনি ডব্লিউআইপিএনইটি’র উদ্ভোধন ঘোষণা করেন এবং লাইবেরিয়ান নারীদের পদক্ষেপে তাকে সমন্বয়কারী নিযুক্ত করেন। “বিবি” কোলি, স্যামুয়েল বায়ডি ডয়ি এবং হিজকিয়াস অ্যাসেফা - ইনারা সবাই হয় শিক্ষার্থী অথবা অধ্যাপক (অ্যাসেফা’র ক্ষেত্রে) হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন।       

একটি নারী দলের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান

[সম্পাদনা]

২০০২ সালের বসন্তে, বয়ই’র দিনগুলো কাটছিল মানসিক আঘাত নিরাময়ের কাজে এবং সন্ধ্যাগুলোতে তিনি অবৈতনিক নেতা হিসেবে লাইবেরিয়ার ডব্লিউআইপিএনইটিতে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি লুসিয়া “মালোউ” নামে একটি মেয়েকে দত্তক নেন (ফলে তার সন্তানের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচে), এই মেয়েটিসহ বাকি সন্তানেরা ঘানায় তার বোনের তত্ত্বাবধানে বসবাস করছিল। এক রাতে ডব্লিউআইপিএনইটি’র অফিসে ঘুমের ঘোরে তিনি স্বপ্নে দেখলেন ঈশ্বর তাকে বলছেন, “মহিলাদের একত্র করে শান্তির জন্য প্রার্থনা কর”। তার কিছু বন্ধু তাকে বোঝালেন যে, অন্যদের কাছে তার এই স্বপ্নের কোন মূল্য নেই। বয়ই ভাবলেন অন্যকথা, “স্বপ্নে দেখা ঈশ্বরের নির্দেশানুযায়ী কাজ করা তার নিজের জন্য প্রয়োজন”।  

লাইবেরিয়ায় ডব্লিউআইপিএনইটি’র প্রশিক্ষণের পর বয়ই আসাটু নামে এক মান্ডিঙ্গো-মুসলিম মহিলাসহ তার সঙ্গীদের নিয়ে প্রতি শুক্রবার দুপুরে নামাজের পর মসজিদগুলোতে, শনিবার সকালে বাজারে এবং প্রতি রবিবার দুটি করে চার্চে যাওয়া শুরু করেন। তারা প্রচার করেন : “আমারা পরিশ্রান্ত! আমরা পরিশ্রান্ত আমাদের সন্তানদের খুন হওয়া দেখতে দেখতে! আমরা পরিশ্রান্ত নির্যাতিত হতে হতে! নারীজাতি, জেগে ওঠো - শান্তির জন্য আওয়াজ তোল!” তারা তাদের উদ্দেশ্য সহজ ভাবে এঁকে যে সমস্ত মহিলারা পড়তে পারেন না তাদের মধ্যে বিলি করেন।  

২০০২ সালের গ্রীষ্মের দিকে বয়ই “লাইবেরিয়া নারী শান্তি আন্দোলন”-এর একজন মুখপাত্র এবং অনুপ্রেরণাদায়ী নেত্রী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। মাছের বাজারে স্থানীয় নারীদের নিয়ে প্রার্থনা এবং গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে তারা তাদের শান্তি আন্দোলন পরিচালনা করেন। বয়ই নানা জাতি ও ধর্মের মানুষের সাথে কাজ করেছেন। মনরোভিয়ায় কয়েক মাস ধরে কয়েক হাজার খ্রীশ্চিয়ান ও মুসলিম নারীকে একত্র করতে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। খ্রীশ্চিয়ান ও মুসলিম মানুষেরা সেখানে শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন এবং অত্যাচারী রাষ্টপতি চার্লস টেলরের নির্দেশের বিপক্ষে অহিংস প্রতিবাদে অংশ নেন।

তারা যৌন ধর্মঘটের ডাক দেন। সেই ধর্মঘট সম্পর্কে বয়ই বলেন, "সেই ধর্মঘট অনিয়মিত ভাবে কয়েক মাস ধরে চলছিল, এর প্রভাব ছিল খুব সামান্যই, অথবা কোন প্রভাব ছিল না কিন্তু এই ধর্মঘটটি আমাদের প্রতি মিডিয়ার আগ্রহ তৈরিতে গুরুত্ত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছিল।" তাদের একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল একটি মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, সেই মাঠে ফুটবল খেলা হতো। এটি ছিল টাবম্যান বৌলেভার্ডের পাশে, চার্লস টেলর দিনে দু’বার তার কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য এই রাস্তা ব্যবহার করতেন। নিজেদেরকে একটি দল হিসেবে সবার কাছে আরও পরিচিত করতে তারা ডব্লিউআইপিএনইটি’র লোগো যুক্ত, শান্তির বার্তা সংবললিত সাদা টি-শার্ট পরিধান এবং চুলে সাদা ফিতা ব্যবহার করা শুরু করেন। ২৩ এপ্রিল ২০০৩ সালে অবশেষে টেলর তাদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হন।

সেদিন তার অট্রালিকার পাশে দুই হাজারেরও অধিক নারী জড় হয়েছিলেন, বয়ই সেই সব নারীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের দাবী দাওয়া তার কাছে পেশ করেন। বয়ই সেদিন তার মুখ প্রেসিডেন্ট টেলরের দৃষ্টিগোচর হয় এমন অবস্থানে রাখেন কিন্তু তার বক্তব্য পেশ করেন গ্রেস মিনোরের কাছে, যিনি ছিলেন সিনেটের প্রধান এবং সরকারের নিযুক্ত একমাত্র নারী প্রতিনিধি :    

যুদ্ধ করতে করতে আমরা পরিশ্রান্ত। আমরা ছোটাছুটি করতে করতে পরিশ্রান্ত। আমরা পরিশ্রান্ত আমাদের সন্তানদের যৌন সহিংসতার স্বীকার হওয়া দেখতে দেখতে। আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য। আমরা বিশ্বাস করি, সমাজের রক্ষক হিসেবে আগামী দিনে আমাদের সন্তানেরা আমাদের জিজ্ঞেস করবে, “মা, সেই সংকটময় মূহুর্তে তুমি কী ভূমিকা পালন করেছিলে?”

বয়ই তার বইয়ে গ্রেস মিনোরের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, “ব্যক্তিগত ভাবে অনেক ঝুঁকিপুর্ন হওয়া স্বত্ত্বেও তিনি তার নিজের বেশ কিছু পরিমান টাকা নারীদের সেই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দিয়েছিলেন”। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নারীরা রাষ্ট্রপতি চার্লস টেলরের কাছ থেকে ঐক্যমত্তে আসার জন্য বিদ্রোহী সংগঠন লাইবেরিয়ান ইউনাইটেড ফর রিকনছিলেশন এন্ড ডেমোক্রেসি এবং অন্য আরেকটি বিদ্রোহী সংগঠন এমওডিইএল-এর সাথে ঘানায় শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন।

২০০৩ সালের জুনে বয়ই শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে চাপ প্রয়োগ করার জন্য একটি লাইবেরিয়ান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রথমে নারীরা আলোচনা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে চাপ প্রয়োগ করার জন্য আলোচনাকারীরা যে নামী হোটেলগুলোতে সাক্ষাৎ করতেন সেখানে নিয়িমিত প্রদর্শনের জন্য বসে থাকা শুরু করেন। আলোচনা প্রক্রিয়া জুনের শুরু থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত কোন অগ্রগতি ছাড়াই টেনে নেয়া হয় এবং লাইবেরিয়ায় হিংস্রতা চলতেই থাকে।

তারা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন, “কসাই ও খুনিরা এবার থামো”। বয়ই মূল মধ্যস্ততাকারী জেনারেল আবু বাকারকে ( নাইজেরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি) এই কথা বলে একটি বার্তা পাঠান যে, যতক্ষণ পর্যন্ত না শান্তি চুক্তি হচ্ছে নারীরা মিলনায়তনের রাস্তায় পরস্পর সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে বসে থেকে প্রতিনিধিদের জম্মি করে রাখবে। নারীদের প্রতি আবু বাকার সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি কৌতুক করে ঘোষণা করলেন, “শান্তি মিলনায়তন জেনারেল লেহমাহ ও তার বাহিনীদের দ্বারা জব্দ করা হয়েছে।” যখন লোকেরা মিলনায়তন ভবন ত্যাগ করার চেষ্টা করল লেহমাহ ও তার সহযোগীরা নিজেদের কাপড় ছিঁড়ে দেয়ার হুমকি দেন।

একজন বিবাহিতা এবং বয়স্কা নারী ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজেরা বিবস্ত্র হচ্ছে, আফ্রিকায় এই দৃশ্য দেখা ছিল ভয়ঙ্কর অভিশাপ।

সপ্তাহ খানেক পরে আক্রা সমন্বিত শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে লাইবেরিয়ান যুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়। দিনটি ছিল ১৮ আগস্ট ২০০৩।

আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত নারী নেত্রী হিসেবে অ্যালেন জনসন সিরিলিফ লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই নির্বাচন ছিল দীর্ঘ ১৪ বছর সেই নারী আন্দোলন এবং নারীদের সংগ্রামের ফসল।      

বয়ই ও সিরিলিফ ২০১১ সালে তাওয়াক্কুল কারমানের সাথে যৌথ ভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই তিন জনকে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে নারী অধিকার আদায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১১ সালের পুনঃনির্বাচনের সময় বয়ই সিরিলিফকে সমর্থন করেন।  

শান্তি সংহতকরন

[সম্পাদনা]

ডাব্লিউআইপিএনটি’র সাদা টিশার্ট পরে তারা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন, বয়ই এবং অন্য নারী আন্দোলনকারীরা আক্রা শান্তি চুক্তির বাস্তবায়নে রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলনের জন্য লাইবেরিয়ানদের কাছে নায়িকা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। একটি ভঙ্গুর শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা যে অবিশ্রান্ত স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন তা প্রকাশ করতে গিয়ে বয়ই লিখেছেন :

চোদ্দ বছর ধরে চলা যুদ্ধ শেষ হচ্ছিলো না। সেই মূহুর্তগুলোতে আমরা চারপাশের ঘটনাগুলো দেখে শান্ত ছিলাম, আমাদের লাইবেরিয়ায় সেই কঠিন সময়গুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছিল। দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার লোক মারা গিয়েছিল, তাদের এক - চতুর্থাংশ ছিল শিশু। প্রতি তিন জনে একজন বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৫,০০,০০০ জন শিবিরে এবং বাকিরা যে যেখানে পারে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছিলেন। পানির জন্য ব্যবহৃত কুয়োগুলোতে দূষণের কারণে ১০ লক্ষ্য মানুষ, বিশেষ করে মহিলা এবং শিশুরা অপুষ্টি, ডায়রিয়া, হাম এবং কলেরার ঝুঁকিতে ছিলেন। আমাদের রাস্তাঘাট, হাসপাতাল ও স্কুলসহ দেশের অবকাঠামোর ৭৫ ভাগেরও বেশি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

বয়ই লাইবেরিয়ানদের দ্বারা ঘটানো “মানসিক ক্ষতি” সম্পর্কে বিশেষ ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন :

যুবকদের পুরো একটি প্রজন্ম হাতে বন্দুক ছাড়া নিজেদের ভাবতেই পারতো না। বেশ কয়েকটি প্রজন্ম বিধবা হয়েছিল, তারা ধর্ষিত হচ্ছিল, মা ও কন্যাদের চোখের সামনে ধর্ষিত হতে দেখেছিল, তাদের সন্তানেরা মারছিল এবং মরছিল। প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে মারছিল; তরুণ প্রজন্ম হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছিল, বৃদ্ধরা তাদের সারাজীবনের সঞ্চয় হারাচ্ছিল। আমরা সবাই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে একটি সাক্ষাৎকারে বয়ই আরও বলেন :

লাইবেরিয়ার নারী শান্তি আন্দোলন বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছিল যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন কতটা অপরিহার্য। নেতৃত্বের পদে থাকা মহিলারা বেনিয়ান হিসেবে শান্তির জন্য অত্যন্ত কার্যকর ছিলেন এবং সাংস্কৃতিকভাবে সংশ্লিষ্ট সামাজিক ন্যায়বিচারের আন্দোলন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। লাইবেরিয়ার অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর কাছে ছিল একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যে মহিলারা - বিশেষত আফ্রিকান মহিলারা শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।    

যে ব্যক্তিরা একটি ভয়াবহ সংঘাতের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছে তারা ক্ষুধার্থ এবং উন্মত্ত হতে পারে তবে তারা বোকা নয় (বয়ই’র উদ্ব্যক্তি)। কীভাবে শান্তি বিকশিত হতে পারে সে সম্পর্কে তাদের বেশির ভাগেরই খুব ভালো ধারণা ছিল, তাদের শুধু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন ছিল। বয়ই লাইবেরিয়ার নাগরিক সমাজ, বিশেষত মহিলা সংস্থাগুলোকে দেশ পুনরুদ্ধারে জড়িত করার পক্ষে ছিলেন। জাতিসংঘ যেভাবে লাইবেরিয়ায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছিল তাতে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, কারণ তার বেশিরভাগ অংশই ছিল (তাদের নিজস্ব) কর্মীদের উপর... তারা যদি সেই অর্থের কিছু পরিমান স্থানীয় লোকদের দিত, বাস্তবে এটি অনেক বড় পার্থক্য তৈরি করে দিত।    

২০০৩ -০৪ সালের শেষের দিকে শীতের মধ্যে, সংঘাত নিরসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে বিশ্ব নারী আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বয়ইকে আমন্ত্রণ জানানো হয় -প্রবন্ধ লেখার জন্য, মত বিনিময় সভায় অংশ নেয়ার জন্য অথবা শুধুমাত্র ডাব্লিউআইপিএনইটি অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করার জন্য। থেলমা একিওর বয়ইকে শান্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত তত্ত্বগুলো পড়ে ও বুঝে অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোক যারা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন এমন মানুষদের সামনে তার আত্মসম্মানের অভাব কাটিয়ে উঠতে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি লুইস ডায়মন্ডের শান্তি বিষয়ক বই পড়েন, যেগুলো ছিল বহুস্তর গণতন্ত্র বিষয়ক। এছাড়া তিনি দ্যা জার্নি টুওয়ার্ড রেকনসিলেশন এবং দ্যা লিটল বুক অফ কনফ্লিক্ট ট্রান্সফর্মেশন নামে জন পল লেদার‍্যাচের লেখা বই দুটো পড়েন, যিনি ছিলেন ইস্টার্ন মেন্নোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্যা সেন্টার ফর জাস্টিস এন্ড পিসবিল্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। তিনি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ইউএসএআইডি’র মতবিনিময় সভায় অংশ নেন, যেটি ছিল আফ্রিকার বাইরে তার প্রথম কর্মসূচি। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সম্মেলনে এবং সুইজারল্যান্ডে তিনি লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘের প্রোগ্রামের দায়িত্বে থাকা নাইজেরিয়ানদের সাথে আলোচনা করেন।

শান্তি প্রতিষ্ঠা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ  

[সম্পাদনা]

২০০৪ সালের বসন্তের শেষের দিকে, ঘানা -আক্রা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আট মাস পরে, বয়ই যে বিষয়ে কাজ করছিলেন সে বিষয়ে একটি কলেজ পর্যায়ের কোর্স করার স্বিদ্ধান্ত নেন। “আমি ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনেছিলাম, যেটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কিত একটি সুপরিচিত প্রোগ্রাম রয়েছে। এটি ছিল একটি খ্রিস্টান স্কুল যা সম্প্রদায় এবং সেবার উপর জোর দিয়েছিল; ডাব্লিউএএনইপি’র সাথে এর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল এবং সেখানে পড়াশোনার জন্য আফ্রিকানদের নিয়োগের ইতিহাস ছিল। ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল বার্ষিক গ্রীষ্মকালীন শান্তি উন্নয়ন বিষয়ক ইন্সটিটুটে চার সপ্তাহের একটি কোর্স। সেই কোর্সটি তার মধ্যে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে। বয়ই হিজকিয়াস আসসেফার সাথে পড়াশোনা করেছিলেন, পাঁচ বছর আগে সেন্ট পিটার’স লুথেরান চার্চে ট্রমা মিরাময়ের কাজ করার সময় বয়ই তার লেখা পড়েছিলেন। তিনি হাওয়ার্ড জের সাথেও পড়াশোনা করেন, তার কাছ থেকে তিনি পুনরুদ্ধার ন্যায়বিচার ধারণাটির শিক্ষা নিয়েছিলেন।

তিনি ভাবেন যে পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার আফ্রিকার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী :

“পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার ছিল... এমন কিছু যা আমরা আমাদের হিসেবে দেখতে পেতাম, যা মোটেও পশ্চিমাদের দ্বারা কৃত্তিমভাবে চাপানো নয়। এটি আমাদের খুব প্রয়োজন ছিল, খুব প্রয়োজন ছিল এটি আমাদের ঐতিহ্যে ফিরে আসা। দায়মুক্তির সংস্কৃতি পুরো আফ্রিকা জুড়ে প্রসার লাভ করেছিল। জনগণ, আধিকারিক, সরকার সবাই খুব খারাপ কাজ করছিল কিন্তু কখনই দায়বদ্ধ ছিল না। তাদের শাস্তি দেয়া আমাদের যতটা না প্রয়োজন ছিল তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল যে ক্ষতি তারা করেছে তা ঠিক করা। যখন আমি ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করলাম, আমি জানতাম যে সেখানে আমার আরও কিছু পাওয়ার ছিল। কোন না কোন ভাবে আমি আবার সেখানে ফিরে আসার উপায় খুঁজে পেয়েছিলাম।”

২০০৫ সালের গ্রীষ্মে ট্রমা হেলিং এন্ড রেসিলেন্স বিষয়ক একটি গোল -টেবিল বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য তিনি আবার ফিরে এসেছিলেন, সেবার তিনি ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জাস্টিস এন্ড পিসবিল্ডিং বিভাগে আবাসিক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে একজন পূর্নকালীন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হিসেবে ২০০৬ -০৭ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

স্নাতক স্কুলে আমি অনুভব করি আমার মন আরও প্রসারিত, আমার উপলব্দি আরও গভীর। আমি বুঝতে পারছিলাম যে, আমি লাইবেরিয়ায় স্বভাবতই যা করেছি তার একটি “সুকৌশলী শান্তি প্রতিষ্ঠা” নামক একটি আনুষ্ঠানিক নাম রাখতে পারি। ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই দ্বন্দের মধ্যে জীবন যাপন করেছেন, তাদের সাথে থাকাটা স্বস্তি দায়ক ছিল। প্রতিবার যখন আমি একজন মাকে তার বাচ্চাদের সাথে দেখি, আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়তাম। ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ এটিকে অদ্ভুত বলে মনে করেনি। একজন বৃদ্ধের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল যিনি রুয়ান্ডা গণহত্যায় তার পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন।  

২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে, বয়ই শুধু স্নাতক বিদ্যালয়ে তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ সেমিস্টারের যাত্রা শুরু করেছেন, তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে জাতিসংঘের ১৩২৫ প্যাসাজ অফ রেজ্যুলুশনের পঞ্চম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তিনি লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা থেকে নারীদের রক্ষা এবং জাতিসংঘ ভিত্তিক শান্তি প্রচেষ্টায় তাদের জড়িত করার বিষয়ে কাজ করেন। নিউইয়র্কে থাকাকালীন তিনি ওয়াল্ট ডিজনি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাদের বংশধর, নারীবাদী এবং পরোপকারী অ্যাবিগ্যাইল ডিজনির কল পেয়েছিলেন। ডিজনি এবং তার একজন সহযোগী গিনি রিটিকার লাইবেরিয়ার মহিলারা কীভাবে একজোট হয়ে কাজ করে পুরুষদেরকে লড়াই বন্ধ করতে বাধ্য করেছিলেন সে বিষয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরির জন্য বয়ই’র সাথে কথা বলতে চাইলেন।       

ওমেন ইন পিস এন্ড সেকুরিটি নেটওয়ার্ক (ডাব্লিউআইপিএসইএন)  

[সম্পাদনা]

২০০৬ -০৭ সালের দিকে বয়ই ইকিয়োর এবং ইকোমা আলাগার (ইকিয়োরের মতই একজন নাইজেরিয়ান) ডাব্লিউএএনইপি থেকে ডাব্লিউআইপিএনইটি বিভক্ত করার বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছিলেন, মূল সংস্থাটি পুরুষদের দ্বারা আর্থিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং তিনটি পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ডাব্লিউএএনইপি’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বয়ই’র প্রবীন বন্ধু স্যাম বায়ডি ডো, কাঠামোগত স্বাধীনতার জন্য মহিলাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, তবে তিনি ইংল্যান্ডে পিএইচডি করার জন্য ডাব্লিউএএনইপি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এরপর ডাব্লিউএএনইপি ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কনফ্লিক্ট ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রামে স্নাতক ডিগ্রীধারী ইমানুয়েল বোম্বান্দের দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে, যিনি ডাব্লিউএএনইপি’র শাখা ডাব্লিউআইপিএনইটি তিনজন মহিলার মালিকানাধীন থাকবে সে বিষয়ে সম্মত ছিলেন না। ফলশ্রুতিতে, বয়ই এবং তার দুই সহকর্মী ঘানার আক্রাতে অবস্থিত ওমেন ইন পিস এন্ড সিকিউরিটি নেটওয়ার্ক (ডাব্লিউআইপিএসএন) নামে একটি নতুন সংস্থা শুরু করেন। অ্যাবিগ্যাইল ডিজনি নিউইয়র্কের সমাজসেবীদের মধ্যে ডাব্লিউআইপিএসএন চালু করার জন্য বয়ইকে তহবিল গঠনে সাহায্য করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তিনি ৫০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন তহবিল সুসংহত করার জন্য।

ব্যক্তিগত সংগ্রাম

[সম্পাদনা]

এই সময়ের মধ্যে ৩০ এপ্রিল ২০০৭ সালে বয়ই ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কোর্সটি শেষ করেন এবং সে বছরের মে মাসে লাইবেরিয়ায় তার সন্তানদের কাছে ফিরে যান -এতদিন তার বাবা মা যাদের দেখাশোনা করেছিলেন –তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তার নয় মাস দূরে থাকা সবাইকে কষ্ট দিয়েছে। ভার্জিনিয়ায় তিনি “এমন এক শীতের সাথে কাটিয়েছিলেন যা কখনো যায়নি” এবং তিনি আতঙ্ক এবং দুঃখ অনুভব করেছিলেন। ডাব্লিউএএনইপি তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে নতুন দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি তার সাবেক বন্ধুদের করা মামলার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তার স্নাতক ডিগ্রী (যা তাকে ২০০৭ সালে প্রদান করা হয়েছিল) তার খ্যাতি বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার জীবনের অন্য আরেকটি পরিবর্তন ছিল টুনডে নামে এক ব্যক্তির সাথে তার সম্পর্কে জড়ানো। যিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একজন কর্মী, লাইবেরিয়ান নারীদের শান্তি আন্দোলনের শুরুর দিকে বয়ই’র ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা কালীন সময়ে প্রায় এক দশক ধরে তিনি বয়ই’র সন্তানদের বাবার দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাদের পড়াশোনার খরচ বহন করেছিলেন। পরবর্তিতে তাদের মধ্যকার সম্পর্কের অবসান ঘটে এবং ২০০৮ সালের শুরুর দিকে বয়ই একজন লাইবেরিয়ান তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, যার নাম তিনি উল্লেখ করেছেন জেমস হিসেবে। তিনি ছিলেন ২০০৯ সালে নিউইয়র্ক শহরে জন্ম নেয়া তার ষষ্ঠ সন্তান, কন্যা জেয়ডিন থেলমা অ্যাবিগ্যাইলের পিতা।

২০০৮ সালের এপ্রিলে, বয়ই’র পরিবার ও বন্ধুরা যখন তার সবচেয়ে বড় কন্যা অ্যাম্বারের ১৪তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য জড় হয়েছিল তখন এটি প্রকাশ্যে আসে যে বয়ই খুব মারাত্মক ভাবে মদ্যপান জনিত সমস্যায় আক্রান্ত। তার স্মৃতিচারণে বয়ই উল্লেখ করেছেন, দারিদ্রের চাপ, যুদ্ধ-বিগ্রহ জনিত ট্রমা, সময়ের দাবীগুলো পূরণ করতে না পারার চাপ, এক দশক পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট ও নিঃসঙ্গতা ভুলে থাকার জন্য তিনি মদ্যপান শুরু করেছিলেন। অ্যাম্বারের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বয়ই’র সন্তানেরা তাকে ১৪ গ্লাস ওয়াইন পান করতে দেখে। তিনি আলসারে ভুগছিলেন, জেমসকে অনুরোধ করেছিলেন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে :

“আমি দেখলাম বাচ্চারা আমার চারপাশে জড়ো হয়েছে, তাদের আতঙ্গিত অসহায় মুখ। মদ্যপান ত্যাগ করা খুব সহজ ছিল না। আমি এখনো নিদ্রাহীনতায় ভুগি, তবে আমি আর মদ পান করি না।”

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা]

বয়ই তার খ্রীষ্টান বিশ্বাসের প্রতি নিষ্ঠা প্রকাশ করেন। তিনি তার স্মৃতিকথার “অ্যাকনোলেজমেন্ট” অংশে লেখেন :“সমস্ত প্রশংসা, গৌরব এবং সম্মান ঈশ্বরের প্রতি, আমার প্রতি তার অঢেল ভালবাসা এবং অনুগ্রহের জন্য।” ২০০৯ সালে ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ে খ্রীস্টানদের নিজস্ব প্রার্থনাগৃহে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন :  

“আমি নিজের দ্বারা বা পৃথকভাবে কিছু করে সেখানে পৌঁছাই নি, এটা ছিল আমার প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং করুণা… তিনি আমার হাত ধরে আছেন, কঠিন সময়গুলোতে তিনি আমার পাশে ছিলেন। তারা একটি গান করেন, “প্রিয়তম প্রভু, আপনার পথে আমাকে পরিচালিত করুণ” প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আমি এই প্রার্থনাটি করি কারণ শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে এই যাত্রায় আর কোন পথা ছিল না। সারাজীবন ধরে আমি শুধু একটি কথাই বিশ্বাস করি : আমি যা, আমি যা হওয়ার আশা করি, তার সবই ঈশ্বরের কৃপায়।"

বয়ই ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বলেন যে তিনি রাগান্বিত, ভঙ্গুর, কার্যত গৃহহীন - চারটি সন্তানের ২৫ বছর বয়েসী একজন মা, যার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, সবকিছু ঈশ্বরের হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন যে ঈশ্বর তার সাথে পাঁচ বছরের একটি ছেলের মাধ্যমে কথা বলেছেন, তার ছেলে যার নাম তিনি রেখেছিলেন নুকু। তাকে বলা নুকুর কথাগুলো থেকে তিনি উপলব্দি করেন যে তিনি বিষন্নতায় নিমজ্জিত হচ্ছেন যা তার আত্মসম্মানবোধ নষ্ট করে দিচ্ছে এবং অসহায়ত্ব বোধ তার পরিবারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, যা ইতোমধ্যে লাইবেরিয়ার নৃশংস যুদ্ধ বিগ্রহ দ্বারা লাঞ্ছিত। তিনি ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন এবং প্রতিটি পদক্ষেপে ঈশ্বরের সাহায্য চান। যখন তিনি হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছিলেন তখন ঈশ্বর তার ফেরেস্তাদের মানুষ রূপে তার কাছে প্রেরণ করেন। লাইবেরিয়ার নারী আন্দোলনের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির পরামর্শে, বয়ই উল্লেখ করেছিলেন অন্য ধর্মমতে বিশ্বাসীরাও তাকে একইভাবে সমর্থন করতে পারেন :

এটি যীশু হতে পারে, হতে পারে মুহাম্মদ অথবা বুদ্ধ কিন্তু মানুষের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসার কোন পথ নেই যদি এমন কেউ না থাকে যাকে আপনি “ঐশ্বরিক” হিসেবে ভরসা করে প্রতিদিন ডাকতে পারেন... ঈশ্বর বিশ্বস্ত, বিশ্বাসের পদক্ষেপ নিন, ঈশ্বর সব দেখতে পান।    

তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন : মহাত্মা গান্ধীর প্রতীক্ষায় থেকো না, মার্টিন লুথার কিংয়ের প্রতীক্ষায় থেকো না, থেকো না নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতীক্ষায়। তুমি নিজেই তোমার গান্ধী, তুমি নিজেই তোমার ম্যান্ডেলা।

প্রামাণ্যচিত্র   

[সম্পাদনা]

২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া প্রে দ্যা ডেভিল ব্যাক টু হেল প্রামাণ্যচিত্রে বয়ই বর্ণনাকারী এবং প্রধান চরিত্র হিসেবে কাজ করেন, যাতে যুদ্ধকালীন সময়ের সঙ্গীত ও অডিও ক্লিপস ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে ত্রিবেকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটি সেরা প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। এটি “ওমেন, ওয়ার এন্ড পিস” সিরিজের অংশ হিসেবে গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারিত হয়েছিল। এটি ২০১১ সালে, অক্টোবর এবং নভেম্বরের শুরুর দিকে পাবলিক টেলিভিশনের স্টেশনগুলোতে প্রতি মঙ্গলবার প্রচারিত হয়েছিল।  বসনিয়া, আফগানিস্তান, ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকা, রুয়ান্ডা, মেক্সিকো, কেনিয়া, কম্বোডিয়া, রাশিয়া, সুদান, দ্যা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ দ্যা কঙ্গো এবং পশ্চিম তীরবর্তি সংঘাতপূর্ন্য ও সাংঘাত - উত্তর জায়গাগুলোতে প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচার করা হয়েছিল। প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়ভাবে একই রকম ছিল : দেশ এবং সমাজ যতই আলাদা হোক না কেন, মহিলারা তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং কীভাবে তারা নিজেদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে একত্র হতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেন।

প্রামাণ্যচিত্রে বয়ই এমন একজন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন যে অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি হাসতে এবং জীবন উপভোগ করতে সক্ষম।

“আপনি দেখবেন মহিলারা নাচছে, গাইছে, সাদা ঘুঘুদের মত সুন্দর পোশাক পড়েছে, এমনকি প্রতিবাদ করার সময়ও আপনি তাদের মুখে হাসি দেখতে পাবেন।”            

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি

[সম্পাদনা]

বয়ই ডিজনির সাহায্যে (যিনি তার খুব ভালো বন্ধু হয়েছিলেন) নিউইয়র্কে জনহিতকর সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেন, যা পরবর্তীতে একাধিক পুরস্কারের দ্বার উন্মুক্ত করেছিল। প্রথমটি ছিল ২০০৬ সালের শুরুর দিকে হার্ভাডে জন এফ কেনেডি স্কুল অফ গভর্মেন্ট থেকে, ওমেন’স ই-নিউজ, গ্রুবার প্রাইজ ফর ওমেন’স রাইটস, জন এফ কেনেডি প্রোফাইল ইন কারেজ অ্যাওয়ার্ড, লিভিং লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড ফর সার্ভিস টু হিউমিনিটিসহ আরও বেশ কিছু জায়গা থেকে তিনি অনেক পুরস্কার ও স্বীকৃতি পান। ২০১১ সালের জুলাইয়ে, ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয় বয়ইকে “অ্যালুমনা অফ দ্যা ইয়ার” ঘোষণা করে। (বয়ইর জ্যেষ্ঠ পুত্র জোশুয়া “নুকু” মেনসাহ, স্যাম বায়ডি ডো’র জ্যেষ্ঠ কন্যা স্যামফি ডো’র সাথে ২০১০ সালে ইস্টার্ন মেনোনাইট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য আসেন।) বয়ই তার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি পান ২০১১ সালে, যখন নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি বয়ইকে তাঁর আন্দোলনের সহযোগী অ্যালেন জনসন সিরিলিফ এবং ইয়েমেন মানবাধিকার কর্মী তাওয়াক্কুল কারমানের সাথে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করে।

১০ ডিসেম্বর ২০১১ সালে (বা থেকে) তাওয়াক্কোল কারমান, লেহমাহ বয়ই এবং অ্যালেন জনসন সিরিলিফ নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তাদের পুরস্কার প্রদর্শন করছেন।

পুরস্কারসমুহ

[সম্পাদনা]
  • ২০১৬ - কম্যিউনিটি অফ খ্রিস্ট আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার
  • ২০১৪ - অক্সফাম আমেরিকা রাইট এন্ড রং পুরস্কার
  • ২০১৩ - দ্যা নিউইর্ক ওমেন’স ফাউন্ডেশন সেঞ্চুরী পুরস্কার
  • ২০১৩ - বার্নাড কলেজ মেডেল অফ ডিস্টিংশন
  • ২০১২ - অলিম্পিক ফ্লাগ বেরিয়ার ইন দ্যা ২০১২ সামার অলিম্পিক্স ওপেনিং সেরেমনি
  • ২০১১ - নোবেল পুরস্কার
  • ২০১১ - ইউনিভার্সিটি অফ মেসাচুয়েটস লওয়েল গ্রীলি স্কলার ফর পিস স্টাডিস
  • ২০১১ - ভিলানোভা পিস অ্যাওয়ার্ড ফ্রম ভিলানোভা ইউনিভার্সিটি
  • ২০১১ - অ্যালামনা অফ দ্যা ইয়ার, ইস্টার্ন মেনোনাইট ইউনিভার্সিটি
  • ২০১০ - লিভিং লিজেন্ডস অ্যাওয়ার্ড ফর সার্ভিস টু হিউমিনিটি
  • ২০১০ - জন জায় মেডেল ফর জাস্টিস ফ্রম দ্যা জন জায় কলেজ অফ ক্রিমিনাল জাস্টিস
  • ২০১০ - জোলি হিউম্যানটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড ফ্রম রিভারড্যাল কান্ট্রি স্কুল
  • ২০০৯ - গ্রুবার প্রাইজ ফর ওমেন’স রাইটস
  • ২০০৯ - জন এফ কেনেডি প্রোফাইল ইন কারেজ অ্যাওয়ার্ড
  • ২০০৯ - “অনার অ্যায়ার্ড ফর কওরেজিয়াস কমিটমেন্ট ফর হিউম্যান রাইটস অফ ওমেন” বাই দ্যা ফিল্ম ফেস্টিভাল ওমেন’স ওয়ার্ল্ড, জার্মানি
  • ২০০৮ - ওমেন’স ই-নিউজ লিডার’স ফর দ্যা টুয়েন্টি ফাস্ট সেঞ্চুরি অ্যাওয়ার্ড
  • ২০০৭ - ব্লু রিবন ফর পিইস  ফ্রম দ্যা জন এফ কেনেডি স্কুল অফ গভর্মেন্ট এট হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি

সম্মানসূচক ডিগ্রী

[সম্পাদনা]
  • ২০১৮ - অনারারি ডক্টরেট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ফ্রম আমেরিকান ইউনিভার্সিটি
  • ২০১৩ - অনারারি ডক্টরেট বাই রোডস ইউনিভার্সিটি

অন্যান্য কর্মকাণ্ড

[সম্পাদনা]
  • ক্যালোউস্ট গুলবেনকিয়ান প্রাইজ ফর হিউম্যান রাইটসের (২০১৮ সাল থেকে জুরি বোর্ডের সদস্য) প্যাসিস ইনিসিয়েটিভ (কাউন্সিলের সদস্য)
  • অ্যারোরা প্রাইজ (২০১৫ সাল থেকে নির্বাচন কমিটির সদস্য)
  • হাই লেভেল টাস্কফোর্স ফর দ্যা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন এন্ড ডেভেলভম্যান্ট (সদস্য)
  • নোবেল ওমেন’স ইনিসিয়েটিভ (বোর্ডের সদস্য)
  • পিসজ্যাম ফাউন্ডেশন (বোর্ডের সদস্য)
  • ওয়ার্ল্ড রিফুজি কাউন্সিল (কাউন্সিলের সদস্য)

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "The Nobel Peace Prize 2011 – Press Release"। Nobelprize.org। ২০১১-১০-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০৭ 
  2. "Kevin Conley, "The Rabble Rousers" in O, the Oprah Magazine, Dec. 2008, posted at www.oprah.com/omagazine/Leymah-Gbowee-and-Abigail-Disney-Shoot-for-Peace-in-Liberia/2#ixzz1bTSs28cd. Retrieved 21 October 2011.
  3. Leymah Gbowee, Mighty Be Our Powers (New York: Beast Books, 2011), written with Carol Mithers, pp. 69.
  4. Leymah Gbowee, Mighty Be Our Powers (New York: Beast Books, 2011), written with Carol Mithers, pp. 80-81 and p. 82.
  5. "Leymah Gbowee, Women in Peace and Security Network Africa — NIEW INTERNATIONAL CONFERENCE 2010"। ১৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬