মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
১০,০০০[১] | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
ভাষা | |
আরাওয়াক ভাষা |
লোকোনো বা আরাওয়াকরা হল আরাওয়াক গোত্রের এক জাতি। এরা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তর উপকূল অঞ্চলে এখনও বাস করে। তাদের মোট জনসংখ্যা এখন প্রায় ১০,০০০। বর্তমানে এরা মূলত ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, গায়ানা ও ফরাসি গায়ানার সমুদ্র ও নদী উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে বাস করে। এদের ভাষা হল আরাওয়াক ভাষা। এদের এই ভাষার নাম থেকেই আজ নৃ-বিজ্ঞানে বহুল ব্যবহৃত আরাওয়াক ভাষাগোষ্ঠী ও আরাওয়াক গোত্র নামদুটির সৃষ্টি।
লোকোনো জাতির মানুষ যে ভাষায় কথা বলতো (এখনও বলে), তা হল আরাওয়াক ভাষা। এই আরাওয়াক শব্দটি তারা বহুক্ষেত্রে জাতিগতভাবে নিজেদের বোঝাতেও ব্যবহার করতো। এর থেকেই ষোড়শ শতাব্দীতে বহিরাগত স্পেনীয় ঔপনিবেশিকদের কাছেও তাদের পরিচিতি হয়ে দাঁড়ায় আরাওয়াক। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে স্পেনীয়রা প্রথম আমেরিকায় এসে এসপানিওলা, কিউবা, বাহামা, প্রভৃতি দ্বীপে ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে যে তাইনো জাতির সাথে পরিচিত হয়, তাদের সাথে লোকোনোদের ভাষা ও সংস্কৃতির যথেষ্ট মিল ছিল। এই কারণে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভাষাতাত্ত্বিক ড্যানিয়েল গ্যারিসন ব্রিনটন তাইনোদের দ্বীপবাসী আরাওয়াক ("Island Arawak") বলে অভিহিত করেন। এরপর থেকে পণ্ডিতমহলে এই নামটি ব্যবহৃত হতে থাকে ও ছোট হয়ে 'আরাওয়াক'এ পরিণত হয়। ফলে একই শব্দ দ্বারা দুটি পৃথক জাতিকে বোঝানোয় যথেষ্ট বিপত্তির সৃষ্টি হয়। বিংশ শতাব্দীতে সেই কারণেই আবার পুরনো তাইনো ও লোকোনো শব্দদু'টিকে পুনরুজ্জীবিত করে ব্যবহার শুরু করা হয়।[২][৩] প্রথম শব্দটি দ্বারা এখন বোঝানো হয় দ্বীপবাসী আরাওয়াক জাতিটিকে। এরা এখন আর নেই। অন্যদিকে লোকোনো শব্দটি প্রযুক্ত হয় মূলভূখণ্ডে বসবাসকারী জাতিটিকে বোঝাতে। স্বল্পসংখ্যায় হলেও এরা এখনও বেঁচে রয়েছে, যদিও তাদের বাসভূমি আজ তিন-চারটি দেশে বিভক্ত।
যখন ইউরোপীয়রা প্রথম এই অঞ্চলে পদার্পণ করে, ষোড়শ শতাব্দীর সেই প্রথম ভাগে লোকোনোরা বাস করতো দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর উপকূল ঘেঁষে আজকের ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, গায়ানা ও ফরাসি গায়ানায়। স্পেনীয়রা ক্যারিবীয় সাগরের দ্বীপগুলিতে খুব দ্রুত তাদের উপনিবেশের বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হলেও মূল ভূখণ্ডের এই অংশে তারা প্রবল বাধার সম্মুখীন হয়। সারা ষোড়শ শতাব্দীতেও স্পেনীয়রা এদের বশ মানাতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এই অঞ্চলে এরপর আরও অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির আগমণ ঘটলে সপ্তদশ শতাব্দীতে তাদের প্রতিবেশী দীর্ঘদিনের শত্রু কারিব জাতির বিরুদ্ধে তারা শেষপর্যন্ত স্পেনীয়দের সাথে হাত মেলায়। অন্যদিকে কারিবরা ইংরেজ ও ওলন্দাজদের সাথে সহযোগিতা করে।[৪] এরপর থেকে লোকোনোদের সাথে ইউরোপীয়দের একধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, যার ফলে লোকোনোদের অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঐ অঞ্চলে প্রচূর খামার তৈরি হলে ও সেখানে শ্রমিক হিসেবে আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে দাস ও কৃষিশ্রমিকদের আমদানি শুরু হলে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যায়, তার ফলে লোকোনোদের অবস্থার অবনমন ঘটে, তাদের সংখ্যাও হ্রাস পায়। এমনকী বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই অবস্থাই চলতে থাকে। যাইহোক, বিংশ শতাব্দীতে এসে লোকোনোরা তাদের ঐতিহ্যগত কৃষিজীবিকা ছেড়ে মাছ ধরা, কাঠ কাটা ও পরিযায়ী শ্রমিকের বৃত্তি গ্রহণ করা শুরু করলে তাদের সংখ্যায় একটা স্থিতাবস্থা আসে। এখন অল্প হলেও তাদের সংখ্যা আবার ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে তাদের সংখ্যা প্রায় ১০,০০০। অবশ্য ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, গায়ানা ও ফরাসি গায়ানায় এমন বহু মানুষ বাস করেন, যাঁরা আংশিকভাবে হলেও লোকোনো বংশজাত।[১]