মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
৫,৬৯৭ | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
চীন (তিব্বত) | ২,৩২২ (১৯৯৯)[১] |
ভারত (অরুণাচল প্রদেশ) | ৩,৩৭৫ (১৯৮১) |
ভাষা | |
বোকার, তিব্বতি ভাষা, মিশমি ভাষা | |
ধর্ম | |
বৌদ্ধ[২] | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
মোনপা, আদি, তিব্বতি, ইদু মিশমি |
লোভা (সরলীকৃত চীনা: 珞巴; Lo, Klo, Glo)[৩] হলো পেমাকোতে বসবাসকারী চীনা-তিব্বতি ভাষাভাষিদের একটি মিলন। পেমাকো হলো তিব্বতের একটি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল।[৪] এই অঞ্চলটি তিব্বতের মেইনলিং, নিঙচির মেডগ ও জাঁয়ু প্রদেশ এবং শানানের লুনজে প্রদেশ দ্বারা গঠিত।[৫] এরা খুবই অখ্যাত, তবে খুবই সাধারণ তিব্বতীয়। এদেরকে চীনের সরকার সরকারীভাবে ৫৬তম জাতি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
অধিকাংশ লোভা লোক আধুনিককালে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, আসলে তারা নিজেদের মাঝে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নাম রয়েছে, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে এবং সংস্কৃতিগতভাবে নিজেদেরকে একক সত্ত্বার অধিকারী বলে পরিচয় দেয় না।[৬][৭] দুটি প্রধান জাতি যাদেরকে লোভা বলা হয় তাদের মধ্যে রয়েছে মিশমি লোক পিনয়িন, যারা ইদু মিশমি ভাষায় কথা বলে। আর যারা আবো তানির আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে তাদেরকে অরুণাচল প্রদেশের ভেতরের দিকে পদওয়া যায়, এটি মূলত ভারতের একটি রাজ্য যেটি চীন দাবি করেছিল।
অন্যান্য সম্প্রদায় যাদেরকে লোভা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয় তাদের মধ্যে হলো তাগিন লোক, তারা বাঙ্গনি-তাগিন ভাষায় কথা বলে।[৮]
বর্তমানের যে জায়গায় লোভা লোকেরা বসবাস করে সেটি মধ্যযুগে লোইয়ু(বা Luoyu, lho-yul, ལྷོ༌ཡུལ་) নামে পরিচিত ছিল। লোইয়ু বর্তমানে তিব্বতের একটি জায়গার নাম এবং লোইয়ুর নিম্নাংশ ভারতের অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত। ৭ম শতাব্দীতে লোইয়ু তিব্বতের অধিকারে আসে।[৯]
চীনের তিব্বতে বসবাসকারী লোভা জাতির লোকেরা তিনটি অবোধ্য তিব্বতি-বার্মান ভাষায় কথা বলে। যেমন: দিগারো পরিবারের ইদু মিশমি, উত্তরের তানি গোষ্ঠীর আদি ভাষা এবং পশ্চিমা তানি গোষ্ঠীর নাহ ভাষা।[১০] এই ভাষাগুলো অরুণাচল প্রদেশে বেশি ব্যবহৃত হয়।
পোশাক, পরিচ্ছেদ এবং অভ্যাস গোষ্ঠী অনুসারে ভিন্ন হয়ে থাকে। লোইয়ুর লোভা লোকেরা হাটু পর্যন্ত লম্বা হাতা বিহীন কালো জ্যাকেট পরিধান করে এবং এর বোতামগুলো ভেড়ার পশম দিয়ে তৈরি হয়। তারা টুপির মতো হ্যালমেট পরিধান করে, যা ভাল্লুকের চামড়া বা বাঁশের দ্বারা তৈরি হয়। তাছাড়া তারা পুতি এবং বাঁশের দ্বারা তৈরি গহনা, দুল, নেকলেস পরিধান করে। লোভা নারীরা চিকন হাতার ব্লাউজ এবং ভেড়ার পশম দ্বারা তৈরি স্কার্ট পরিধান করে। উভয় লিঙ্গের লোক খালি পায়ে হাটে।
ইদু লোভার একটি উপজাতি হলো বেবেজিয়া মিয়মি। বেবেজিয়া মিশমি মহিলারা কাপড় বুনতে পারদর্শী ও তারা অসাধারণ ব্লাউজ বানিয়ে থাকে।[১১]
ইদু বাড়িগুলো প্রতিটি দম্পতির জন্য আলাদা হয়ে থাকে। অবিবাহিত ছেলে বা মেয়েরা আলাদা আলাদা ঘরে বাস করে। ঘরগুলোর কেন্দ্রে একটি আগুনের জায়গা থাকে।
কিছু লোভা তিব্বতি ভাষা জানে। অতীতে, যখন কোন লেখার পদ্ধতি ছিল না, তখন লোভারা তাদের ইতিহাসকে তাদের বংশধরদের জানিয়ে রক্ষা করত। তাদের সংস্কৃতিতে অবদান অনেক। তাদেরকে ভারতের উত্তর-পূর্বে বোকার নামে জানা যায় এবং তাদেরকে অরুণাচল প্রদেশের পিদিতে পাওয়া যায়। তাদের মূল বংশধর হলো অবোতানি। সকল বোকার গোষ্ঠী রামডুং, রামগো এবং রামগুতে উৎপন্ন হয়েছে। তাদের ভাইয়েরা হলো গালো, রামো এবং তাগিন।
তারা তিব্বতিদের সাথে বিভিন্ন জিনিস যেমন ভাল্লুকের নখ, প্রাণীদের চামড়া, মুখোষ বিক্রি করতো এবং তিব্বতিদের কাছ থেকে চাষের জিনিসপত্র, উল, লবণ, কাপড় কিনত। যার কারণে তাদের পোশাকে তিব্বতি নকশা রয়েছে।
দেবতাদের খুশি করার জন্য রেহ নামে এক ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো, সংস্কৃতিগতভাবে বিশ্বাস করা হতো তারা শান্তি ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করে।
লোভা ছেলেদেরকে অল্প বয়সে শিকারের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নারীরা তাদের পিতা ও স্বামীদের থেকে কোন সম্মান পেত না।
লোভারা একটি উষ্ণ আবহাওয়া অনুভব করে।
লোভা রন্ধনশৈলী অঞ্চলভেদে বিভিন্ন হয়। প্রধান খাবার হলো যব দ্বারা তৈরি বড়া, ভাত এবং বাজরা। তিব্বতের কাছাকাছি সম্প্রদায়ের লোকেরা আলু, চা এবং মসলাদার খাবার খেয়ে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোভা লোকেরা মদ পান করে ও গান গেয়ে উৎযাপন করে। মাখনের চা তাদের প্রিয় পানীয়। কিন্তু লবণের অভাবে তাদের মাঝে সার্বজনীন রোগ গলগন্ড ছিল। অনেকে বধির ও কালা হিসেবে জন্মগ্রহণ করত। এই রোগের জন্য তাদের জনসংখ্যা বর্তমান সময়ে অনেক কমে গিয়েছে। কম জনসংখ্যার কারণে, তারা অনেকে তিব্বতি বা অরুণাচল প্রদেশের জাতিদের সাথে আন্তবিবাহ সংগঠিত হয়।