শক্তি সঞ্চারণ

শক্তি সঞ্চারণ (ইংরেজি: Power transmission) বলতে শক্তিকে উৎপাদনের স্থান থেকে ব্যবহারের জায়গায় পৌঁছানোর অবিরাম প্রক্রিয়াকে বুঝানো হয়। ক্ষমতা হলো একক সময়ে শক্তির একক এবং শক্তি সঞ্চারণকে ক্ষমতা দিয়েই পরিমাপ করা হয় (যেমন, ওয়াট, কিলোওয়াট)। এসআই পদ্ধতিতে এর একক ওয়াট যার সমতুল্য হচ্ছে জুল প্রতি সেকেন্ড বা নিউটন মিটার প্রতি সেকেন্ড। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বর্তমানে সঞ্চারণ এবং সঞ্চারক ব্যবস্থা প্রযুক্তিবিদ থেকে প্রযুক্তি ব্যবহারকারী—সকলের আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চারণ

[সম্পাদনা]
বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চারণ

পৃথিবী জুড়ে শক্তি গ্রিড প্রতিষ্ঠার কারণে বর্তমানে শক্তি সঞ্চারণ বলতেই বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চারণকে বোঝায়। শক্তি সাধারণত দিক-পরিবর্তী প্রবাহে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। দীর্ঘ দূরত্বে প্রেরণের সময় পরিবাহকের রোধের কারণে সৃষ্ট শক্তির অপচয় (power loss) রোধ করার জন্য বিভব পার্থক্য (voltage) আরোহী ট্রান্সফরমারের সাহায্যে বাড়িয়ে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। যেহেতু P = VIcosθ, তাই বিভব পার্থক্য বাড়ালে তড়িৎ প্রবাহ কমে যাবে। আবার ক্ষমতার অপচয় বা , তাই তড়িৎ প্রবাহ কমে গেলে রোধের কারণে অপচয় (resistive loss) কমে যাবে। শক্তি গ্রহণের স্থানে অবরোহী ট্রান্সফরমারের সাহায্যে বিভবের পূর্ব মান ফিরিয়ে আনা হয়। এছাড়াও কম দূরত্বে পরিবহনের জন্য রেডিও তরঙ্গ, ক্ষুদ্র তরঙ্গ সফলতার সাথে ব্যবহার করা সম্ভব।

যান্ত্রিক শক্তি সঞ্চারণ

[সম্পাদনা]
যান্ত্রিক শক্তি সঞ্চারণ

বর্তমানে বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চারণের প্রসারের ফলে যান্ত্রিক উপায়ে শক্তি সঞ্চারণ অনেক কমে গিয়েছে। শিল্পবিপ্লবের সূচনা থেকে শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত যান্ত্রিক উপায়ে শক্তি সঞ্চারণ করা হত। প্রতিটি কারখানায় তখন ড্রাইভশ্যাফটের সাহায্য ঘূর্ণায়মান গতির কারণে উৎপাদিত শক্তি (rotary power) ড্রাইভবেল্ট দ্বারা আলাদা আলাদা ভাবে প্রতিটি যন্ত্রে সরবরাহ করা হত।

যান্ত্রিক শক্তি কঠিন এবং সুষম কাঠামো যেমন ড্রাইভশ্যাফট ব্যবহারের মাধ্যমে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে প্রেরণ করা যেতে পারে। বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চারণের তড়িৎ প্রবাহ এবং বিভব পার্থক্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেমন ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয় তেমনিভাবে যান্ত্রিক শক্তির টর্ক এবং দ্রুতি (speed) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহৃত হয় ট্রান্সমিশন গিয়ার। জলীয় ব্যবস্থায় শক্তি উৎপাদন এবং পরিবহনের জন্য অধিক চাপে তরল ব্যবহার করা হয়। খাল বা নদীতে বাঁধের সৃষ্টি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে।

জ্বালানি এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চারণ

[সম্পাদনা]

শক্তি জ্বালানি কিংবা রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পরিবহন করা সম্ভব। কৃত্রিম জ্বালানীর মধ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ, কাঠের বা শস্য এলকাহল, মিথেন, নানাবিধ গ্যাস, ইত্যাদি।