শরীফা আলখাতিব | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | শরীফা আহমেদ ৬ জুন ১৯৪৬ |
মৃত্যু | ২১ অক্টোবর ২০০৪ | (বয়স ৫৮)
জাতীয়তা | মার্কিনী |
পেশা | শিক্ষক এবং লেখক |
দাম্পত্য সঙ্গী | মেজদি আলখাতিব |
শরীফা আলখাতিব (ইংরেজি: Sharifa Alkhateeb; ১৯৪৬–২০০৪) ছিলেন একজন মুসলিম লেখিকা, গবেষক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সাংস্কৃতিক যোগাযোগ এবং সম্প্রদায় নির্মাণের শিক্ষক। তিনি নারীবাদী কারণ, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধের পাশাপাশি আন্তঃধর্ম এবং শিক্ষামূলক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম মহিলাদের জন্য প্রথম দেশব্যাপী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলামিক সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা থেকে কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত প্রথম নারী।
শরীফা আলখতীবের জন্ম ১৯৪৬ সালের ৬ জুন পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়ায়। তার বাবা ছিলেন ইয়েমেনি এবং তার মা ছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের, তখন চেকোস্লোভাকিয়ার অংশ। উচ্চ বিদ্যালয় শেষ করার পর, আলখাতিব তার শিক্ষা চালিয়ে যান,পেন্সিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ করেন।[১] পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন, তিনি ১৯৬০-এর দশকের নারীবাদী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, কখনও মনে করেননি যে তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস এবং নারীবাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। স্নাতক ডিগ্রী শেষ করার পর, তিনি ভার্মন্টের নরউইচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন এবং ১৯৭৭ সালে মারমাডিউক পিকথাল কর্তৃক প্রকাশিত কুরআনের অনুবাদ সম্পাদনা করেন।
১৯৭৮ এবং ১৯৮৭ সালের এর মধ্যে, আলখাতিব এবং তার স্বামী মেজদি আলখতিব সৌদি আরবে বসবাস করতেন, সেখানে তিনি সৌদি গেজেটের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন[২] এবং সৌদি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি স্কুলে উভয়ই শিক্ষকতা করতেন।[৩] ১৯৮৮ সালে, দম্পতিটি উত্তর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করেন এবং আলখতিব ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সের ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি পাবলিক স্কুলে নান বিষয়ের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন এবং "মিডল ইস্টার্ন প্যারেন্টিং" নামে একটি টেলিভিশন প্রোগ্রাম তৈরি করেন, যা ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছিল।[১] ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে, তিনি আমেরিকান জার্নাল অব ইসলামিক সোশ্যাল সায়েন্সেস (এজেআইএসএস)-এর[১] ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হন এবং তিনি আরব ওয়ার্ল্ড নোটবুকের সহ-রচনা করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক স্কুল ব্যবস্থায় ব্যবহৃত একটি সামাজিক অধ্যয়ন পাঠ্য। ১৯৮৯ থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, আলখাতিব মুসলিম শিক্ষা কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, একটি একটি আঞ্চলিক সংগঠন যা ইসলামিক সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রশাসকদের শিক্ষাদানের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।[৪]
১৯৯২ সালে, তিনি নর্থ আমেরিকান কাউন্সিল ফর মুসলিম উইমেন (এনএসিএমডাব্লিউ) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এনএসিএমডাব্লিউ আমেরিকান মুসলিম মহিলাদের প্রথম জাতীয় সংগঠন। তিনি মুসলিম নারীদের চাহিদা মোকাবেলাকারী সংস্থার জন্য একটি পরামর্শমূলক ডাটাবেস প্রতিষ্ঠার অনুসরণ করেন এবং তাদের জন্য প্রথম সংকট হটলাইন তৈরি করেন।[৫] ১৯৯৫ সালে, আলখাতিব চীনের বেইজিংয়ে জাতিসংঘ কর্তৃক আহ্বান করা চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে মুসলিম ককাসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১] ১৯৯৮ সালে, তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের সহিংসতা বিশ্লেষণের জন্য বিচার বিভাগের সাথে একত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবার প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন। ফলস্বরূপ জরিপ, সম্প্রদায়ের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতার বিষয়ে প্রথম দেশব্যাপী অনুসন্ধান ছিল।
৯/১১ এর হামলার পর, আলখাতিব "সংলাপ ও বোঝার সুবিধার্থে উপাসনালয়, গীর্জা ও মসজিদের আন্তঃবিশ্ব কনসোর্টিয়ামের" প্রচেষ্টা সমন্বিত করেন।[২] তিনি কমিউনিটি রেসিলিয়েন্স প্রজেক্টের জন্য মধ্যপ্রাচ্য/মুসলিম দলের প্রধান হয়েছিলেন, হামলার পর উত্তর ভার্জিনিয়ায় সংকট কাউন্সেলিং সেন্টার হিসেবে যা ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা) দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে, তিনি সর্বপ্রথম মহিলা হিসেবে ইসলামিক সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা থেকে কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। এক মাস পরে, ২১শে অক্টোবর ২০০৪ সালে ভার্জিনিয়ার অ্যাশবার্নে তার বাড়িতে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের কারণে তিনি মারা যান।[৪]
তার মৃত্যুর পর থেকে, তার উত্তরাধিকারকে সম্মান করার জন্য অনেক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শান্তিপূর্ণ পরিবার প্রকল্প,[৬] এমএএস ফ্রিডম ফাউন্ডেশন কর্তৃক বার্ষিক প্রদত্ত শরীফা আলখাতিব কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড এবং ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি পাবলিক স্কুলের শরীফা আলখাতিব মেমোরিয়াল স্কলারশিপ।[৭]