শাজারাতুদ দুর | |||||
---|---|---|---|---|---|
মিশরের সুলতান | |||||
রাজত্ব | ২ মে – ৩০ জুলাই ১২৫০ | ||||
পূর্বসূরি | মুয়াযযাম তুরানশাহ | ||||
উত্তরসূরি | ইযযুদ্দিন আইবাক | ||||
মিশরের শাসক | |||||
রাজত্ব | ২১ নভেম্বর ১২৪৯ – ২৭ ফেব্রুয়ারি ১২৫০[১] | ||||
জন্ম | অজ্ঞাত | ||||
মৃত্যু | ২৮ এপ্রিল ১২৫৭ কায়রো | ||||
সমাধি | কায়রো | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | সালিহ আইয়ুব (মৃ. ১২৪৯) ইযযুদ্দিন আইবাক (বি. ১২৫০; মৃ. ১২৫৭) | ||||
বংশধর | খলিল | ||||
| |||||
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
শাজারাতুদ দুর (আরবি: شجرة الدر, অনুবাদ 'মুক্তা বৃক্ষ'[ক]) বা শাজারুদ দুর (شجر الدر)[খ] ছিলেন মুসলিম যুগের মিশরের নারী শাসক। তিনি মালিকা আসমাতুদ্দিন উম্মে খলিল শাজারাতুদ দুর (الملكة عصمة الدين أم خليل شجر الدر; তার উপনাম ছিল أم خليل উম্মে খলিল, 'খলিলের মাতা';[গ] মৃত্যু: ২৮ এপ্রিল ১২৫৭) নামধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে সালিহ আইয়ুব ও ইযযুদ্দিন আইবাকের স্ত্রী ছিলেন। তাকে কেউ কেউ বাহরি মামলুক রাজবংশের প্রথম সুলতান হিসেবে গণ্য করেন। আইয়ুবের সাথে বিয়ের পূর্বে তিনি একজন ক্রীতদাসী ও আইয়ুবের উপপত্নী ছিলেন।[৪]
রাজনীতির ময়দানে শাজারাতুদ দুর মিশরের বিরুদ্ধে পরিচালিত সপ্তম ক্রুসেডের সময় (১২৪৯ - ১২৫০ খ্রিস্টাব্দ) তার প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১২৫০ সালের ২ মে তিনি মিশরের সুলতানা হন। যা আইয়ুবীয় রাজত্বের সমাপ্তি এবং মামলুক যুগের সূচনা করে।[ঘ] শাজারাতুদ দুররের বংশগত উদ্ভব সম্পর্কে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে। অনেক মুসলিম ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করতেন যে তিনি বেদুইন, সার্কাসীয়, গ্রীক বা তুর্কি বংশোদ্ভূত ছিলেন। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন যে, তিনি আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন।[ঙ][১২]
কিছু উৎসে শাজারাতুদ দুররের সুলতানা (سلطانة, sulṭānah) উপাধি ধারণ করার ব্যাপারে পাওয়া যায়। সুলতানা শব্দটি সুলতান শব্দের স্ত্রীবাচক।[১৩] যাইহোক, ঐতিহাসিক সূত্রে (বিশেষ করে ইবনে ওয়াসিল) এবং শাজারাতুদ দুররের একমাত্র বিদ্যমান থাকা মুদ্রায় তাকে "সুলতান" হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে।[১৪]
শাজারাতুদ দুর ছিলেন আর্মেনীয়[১৫] বা তুর্কি[৪] বংশের। ইতিহাসে তাকে সুন্দরী, ধার্মিক ও বুদ্ধিমতী নারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[১০] সুলতান হবার পূর্বে সালিহ আইয়ুব তাকে শাম থেকে ক্রীতদাসী হিসেবে ক্রয় করেন।[১৬] শামে আইয়ুব সুলতান হওয়ার আগে এবং ১২৩৯ সালে সেখানে বন্দী হওয়ার সময় তিনি এবং মামলুক বাইবার্স[চ] কারাকে গিয়েছিলেন।[১০][১৭][১৮][১৯][ছ] পরে যখন সালিহ আইয়ুব ১২৪০ সালে সুলতান হন তখন তিনি তার সাথে মিশরে যান এবং তাদের পুত্র খলিলের জন্ম দেন যাকে মালিকুল মানসুর বলা হত।[১০][২১][২২] এই জন্মের কিছুকাল পরেই আইয়ুব শাজারাতুদ দুরকে বিয়ে করেন।[জ]
১২৪৯ সালের এপ্রিল সালিহ আইয়ুব সিরিয়ায় গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তিনি মিশরে ফেরার পথে দমইয়াতের কাছাকাছি আশমুম তানাহে পৌঁছেন।[২৪][ঝ] তখন তিনি ফ্রান্সের নবম লুই কর্তৃক সাইপ্রাসে ক্রুসেডার বাহিনী একত্রিত করার ও মিশরে আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করার সংবাদ পান।[ঞ] ১২৪৯ সালের জুনে ক্রুসেডাররা নীলনদের মুখে দমইয়াতের পরিত্যক্ত শহরে অবতরণ করে।[ট][ঠ] সালিহ আইয়ুবকে একটি স্ট্রেচারে করে মানসুরাহ শহরে তার প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তিনি প্রায় ১০ বছর মিশর শাসন করার পর ২২ নভেম্বর ১২৪৯ সালে মারা যান।[৩০][৩১][৩২] শাজারাতুদ দুর, আমির ফখরুদ্দিন ইবনুশ শাইখ (মিশরীয় সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার) এবং তাওয়াশি জামালুদ্দিন মুহসিনকে (রাজপ্রাসাদ নিয়ন্ত্রণকারী প্রধান নপুংসক) সুলতানের মৃত্যুর কথা জানান, কিন্তু দেশটি ক্রুসেডারদের আক্রমণের মুখে ছিল। তাই তারা তার মৃত্যু গোপন করার সিদ্ধান্ত নেন।[৩৩] সুলতানের কফিনবন্দী দেহটি গোপনে নৌকায় করে নীলনদের রুদাহ দ্বীপের দুর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।[৩৪][ড] যদিও মৃত সুলতান তার মৃত্যুর পর কার উত্তরাধিকারী হবেন সে বিষয়ে কোনো সাক্ষ্য রাখেননি,[৩৭] ফারিসুদ্দিন আকতাইকে মৃত সুলতানের ছেলে মুয়াযযাম তুরানশাহকে ডাকার জন্য হাসানকেফে পাঠানো হয়েছিল।[৩৮][ঢ] প্রত্যক্ষদর্শী পর্যবেক্ষক, যারা সুলতানের মৃত্যুর সময় জীবিত ছিলেন এবং মিশরে ছিলেন তারা বলেছেন যে- নথিগুলি একজন ভৃত্য দ্বারা জাল করা হয়েছিল; যে সুলতানের হাতের লেখা নকল করতে পারত।[৪] আমির ফখরুদ্দিন ডিক্রি জারি এবং রাজকীয় আদেশ প্রদান করতে শুরু করেন[ণ] এবং উপদেষ্টাদের এই ছোট বৃত্ত জনগণ এবং অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তাদের বোঝাতে সফল হন যে সুলতান মৃত নন, বরঞ্চ অসুস্থ। শাজারাতুদ দুর সুলতানের জন্য খাবার প্রস্তুত করে তার তাঁবুতে নিয়ে যেতে থাকেন।[৪০] উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সুলতানের মামলুক এবং সৈন্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল - "অসুস্থ" সুলতানের ইচ্ছায় - সুলতান, তার উত্তরাধিকারী তুরানশাহ[১০][ত] এবং প্রধান সেনানায়ক আতাবেগ[থ] ফখরুদ্দিন ইউসুফের[৩৩] প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে।
সালিহ আইয়ুবের মৃত্যুর খবর দমইয়াতে ক্রুসেডারদের কাছে পৌঁছায়[৪১][দ] আর রাজা নবম লুইয়ের ভাই আলফানসু, কাউন্ট অব পোইতুর নেতৃত্বে সৈন্যশক্তি আগমনের কারণে তারা কায়রোর দিকে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নবম লুইয়ের অপর ভাই আর্টোইসের রবার্ট প্রথমের নেতৃত্বে একটি ক্রুসেডার বাহিনী আশমুমের খাল (বর্তমানে বাহরে সগির নামে পরিচিত) অতিক্রম করে এবং মানসুরাহ থেকে দুই মাইল (৩ কিলোমিটার) দূরে গিদিলায় মিশরীয় ক্যাম্পে আক্রমণ করে। আকস্মিক আক্রমণে আমির ফখরুদ্দিন নিহত হন এবং ক্রুসেডার বাহিনী মানসুরাহ শহরের দিকে অগ্রসর হয়। শাজারাতুদ দুর মানসুরাহ রক্ষার জন্য বাইবার্সের পরিকল্পনায় সম্মত হন।[৪৪] মিশরীয় সেনাবাহিনীর কৌশলে ক্রুসেডার বাহিনী শহরের ভিতরে আটকা পড়েছিল, সৈন্যদল ও শহরের জনগণ আর্টোইসের রবার্টকে হত্যা করেছিল এবং ক্রুসেডার বাহিনীকে ধ্বংস করেছিল।[ধ] এর দ্বারা তারা কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরে আধিপত্য বিস্তারকারী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চলেছিলেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন: বাইবার্স বুন্দুকদারি, ইযযুদ্দিন আইবাক এবং কালাউন আলফি।[ন]
১২৫০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মৃত সুলতানের পুত্র মুয়াযযাম তুরানশাহ মিশরে আসেন এবং সালিহিয়ায় সিংহাসনে বসেন।[প][ফ] কারণ, তার কায়রো যাওয়ার সময় ছিল না। তার আগমনের সাথে সাথে শাজারাতুদ দুর সালিহ আইয়ুবের মৃত্যুর ঘোষণা দেন। তুরানশাহ সরাসরি মানসুরাতে চলে যান[৪৯] এবং ৬ এপ্রিল ১২৫০ ফারিসকুরের যুদ্ধে ক্রুসেডাররা সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয় আর রাজা নবম লুই বন্দী হন।
সপ্তম ক্রুসেডে পরাজিত হবার পর নবম লুই বন্দী হন আর আইয়ুবীয়রা বিজয়ী হয়। কিন্তু তুরানশাহ আর শাজারাতুদ দুররের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এসময়ে মামলুকরা শাজারাতুদ দুররের পক্ষ নেয়। তুরানশাহ জানতেন যে, শাজারাতুদ দুর আর তার মৃত বাবার মামলুকরা তার সাথে থাকলে তিনি পূর্ণ ক্ষমতা পাবেননা। তাই তিনি পুরাতন অফিসারদের বাদ দিয়ে নতুন অফিসার নিয়োগ দিতে শুরু করেন। এমনকি তিনি নায়েবে সুলতানকেও পরিবর্তন করেন[ব] আর হিসনে কাইফা থেকে আনীত নিজের অনুগামীকে নায়েব হিসেবে নিয়োগ দেন।[৫১] তিনি তারপর জেরুসালেমে অবস্থান করা[১০] শাজারাতুদ দুরকে সতর্ক করে বার্তা প্রেরণ করেন আর তার মৃত পিতার সম্পত্তি ও স্বর্ণ-কড়ি তার কাছে ফেরত দিতে অনুরোধ করেন।[১০] অনুরোধটি আর পাশাপাশি তুরানশাহের বার্তার ভাষা শাজারাতুদ দুরকে রাগান্বিত করে। তিনি বিষয়টি মামলুকদের কাছে তুলে ধরেন। আর তুরানশাহের ধমকি আর অকৃতজ্ঞতার[ভ] কারণে মামলুকরা (বিশেষতঃ ফারিসুদ্দিন আকতাই) রাগান্বিত হন।[ম] পাশাপাশি তুরানশাহ মদ্যপান করতেন। তিনি মদ্যপ অবস্থায় তার পিতার মুক্ত দাসদের গালাগাল করেন আর মামলুকদের হুমকি দেন।[য] তুরানশাহ ফারিসকুরে ২রা মে ১২৫০ সালে বাইবার্স ও একদল মামলুকের হাতে নিহত হন। তিনিই সর্বশেষ আইয়ুবীয় সুলতান ছিলেন।[৫৩][র]
তুরানশাহকে হত্যার পর মামলুক ও আমিররা সুলতানীয় দেহলিজে[ল] সাক্ষাত করেন এবং শাজারাতুদ দুরকে সিংহাসনে বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি ইযযুদ্দিন আইবাককে আতাবেগ (কমান্ডার ইন চিফ) হিসেবে গ্রহণ করা হয়। শাজারাতুদ দুর কায়রোর পাহাড়ের দুর্গে[শ] থাকাকালীন এই সংবাদ পান এবং দায়িত্ব নিতে সম্মত হন।[৫৪] শাজারাতুদ দুর রাজকীয় নাম "মালিকা ইসমাতুদ্দিন উম্মে খলিল শাজারুদ্দুর" গ্রহণ করেন। পাশাপাশি আরো কিছু উপাধিও নেন, যেমন- মালিকাতুল মুসলিমিন (মুসলিমদের রানী) এবং ওয়ালিদাতুল মালিকুল মানসুর আমিরুল মুমিনিন (মুমিনদের আমির ও মালিকুল মানসুর খলিলের মাতা)। তিনি তার নাম জুমার নামাজের খুতবায় জারি করেন। সেখানে তার নামের সাথে "উম্মুল মালিকুল খলিল" (মালিক খলিলের মাতা) এবং "সাহিবাতুল মালিকুস সালিহ" (মালিকুস সালিহের স্ত্রী) উপাধি যুক্ত করা হয়। তার নামে মুদ্রাও মুদ্রিত হয় আর তিনি ডিক্রি জারি করতে "ওয়ালিদাতুল খলিল" নামে স্বাক্ষর করেন।[১৬][৫৫] তার প্রয়াত স্বামী এবং তার মৃত পুত্রের নাম ব্যবহার করে সালতানাতের উত্তরাধিকারী হিসেবে তার রাজত্বের জন্য সম্মান ও বৈধতা অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন।
শাজারাতুদ দুররের প্রতি রাজকীয় কর প্রেরণ করার পর আমির হুসামুদ্দিনকে রাজা নবম লুইয়ের নিকট প্রেরণ করা হয়। নবম লুই তখনও মানসুরাতে কয়েদ ছিলেন। তারপর তারা এই বিষয়ে সম্মত হন যে, আগেরবার নবম লুইয়ের উপর আরোপিত মুক্তিপণের অর্ধেক পরিশোধ করার পর এবং তার জীবনের বিনিময়ে দমইয়াত সমর্পণ করলে তাকে মুক্ত করে দেওয়া হবে।[৫৬] লুই দমইয়াত সমর্পণ করেন এবং ৮ মে ১২৫০-এ প্রায় ১২,০০০ মুক্ত যুদ্ধবন্দীর সাথে আক্কায় যাত্রা করেন।[ষ]
মুয়াযযাম তুরানশাহকে হত্যার সংবাদ এবং শাজারাতুদ দুররের নতুন সুলতানা হিসেবে সংবাদ সিরিয়ায় পৌঁছল। সিরীয় আমিরদেরকে শাজারাতুদ দুররের প্রতি আনুগত্য ও রাজকীয় কর প্রেরণ করার আদেশ দেয়া হলে তারা অস্বীকার করেন। আর কারাকে থাকা তুরানশাহের নায়েব কায়রোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।[৫৭] সিরীয় আমিররা মিশরীয় আইয়ুবীয় ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে আলেপ্পোর আইয়ুবীয় আমির নাসির ইউসুফকে দামেস্কের ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।[৫৮] সিরিয়ার আইয়ুবীয়দের পাশাপাশি, বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা মুসতাসিমও মিশরে মামলুকের পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং শাজারাতুদ দুরকে সুলতান হিসাবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছিলেন।[স] শাজারাতুদ দুরকে নতুন সুলতানা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে খলিফার প্রত্যাখ্যান মিশরের মামলুকদের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। কারণ, আইয়ুবীয় যুগের প্রথা ছিল যে সুলতান শুধুমাত্র আব্বাসীয় খলিফার স্বীকৃতির মাধ্যমে বৈধতা পেতে পারেন।[৫][হ]মামলুকরা তখন ইযযুদ্দিন আইবাককে নতুন সুলতান হিসেবে অধিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি শাজারাতুদ দুরকে বিয়ে করে। শাজারাতুদ দুর তিন মাসের মত সময় সুলতানা হিসেবে মিশর শাসন করার পর সিংহাসন ত্যাগ করে আইবাকের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।[৬১] সুলতানা হিসেবে শাজারাতুদ দুররের শাসনের সময়কাল স্বল্প মেয়াদের হলেও এটি ইতিহাসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী ছিল: প্রথমত মিশর থেকে নবম লুইয়ের বহিষ্কার, যা দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকা জয় করার জন্য ক্রুসেডারদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সমাপ্তি ঘটায়। দ্বিতীয়তঃ আইয়ুবী রাজবংশের সমাপ্তি এবং মামলুক রাজ্যের উত্থান যা দক্ষিণ ভূমধ্যসাগর অঞ্চল কয়েক শতক ধরে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
খলিফাকে খুশি করতে এবং তার স্বীকৃতি নিশ্চিত করার জন্য, আইবাক ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফার একজন প্রতিনিধি মাত্র।[৫][৬২] সিরীয় আইয়ুবীয়দের শান্ত করতে তিনি আইয়ুবীয় শিশু আশরাফ মুসাকে সহ-সুলতান হিসেবে নির্বাচন করেন।[৫][ড়]কিন্তু এটি আইয়ুবীয়দের শান্ত করেনি। তাই আইয়ুবীয় ও মামলুকদের মধ্যে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয়।[ঢ়] বাগদাদের খলিফা তখন মঙ্গোলদের সাথে ব্যস্ত ছিলেন যারা তার রাজধানীর কাছাকাছি অঞ্চলগুলিতে অভিযান চালাচ্ছিল। তাই তিনি মিশরের মামলুক এবং সিরিয়ার আইয়ুবীয়দের মধ্যে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করতে পছন্দ করেছিলেন। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর খলিফার আলোচনা এবং মধ্যস্থতার মাধ্যমে, সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করা মামলুকরা[য়] আইয়ুবীয়দের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল যা তাদের গাজা এবং জেরুসালেম এবং সিরিয়ার উপকূলসহ দক্ষিণ ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ দেয়।[৬৬][৬৭] এই চুক্তির মাধ্যমে মামলুকরা নিজেদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলো ছাড়াও নতুন রাষ্ট্রের স্বীকৃত অধিকার পেয়েছিল। সিরীয় আইয়ুবীয়দের সাথে সংঘাতের পাশাপশি মামলুকরা মধ্য ও উচ্চ মিশরের কয়েকটি বড় ধরনের বিদ্রোহ সফলভাবে দমন করে।[ৎ] তারপর আইবাক সালিহিয়া মামলুকদের ক্রমবর্ধমান শক্তির ভয়ে, যারা শাজারাতুদ দুররের সাথে তাকে সুলতান হিসাবে অধিষ্ঠিত করেছিলেন; তাদের নেতা ফারিসুদ্দিন আকতাইকে হত্যা করেছিলেন। আকতাই হত্যার পর তাৎক্ষণিকভাবে সিরিয়ায় মামলুক যাত্রা শুরু হয় যেখানে তারা আইয়ুবীয় সুলতান নাসির ইউসুফের সাথে যোগ দেয়।[৬৫] বাইবার্স বুন্দুকদারি এবং কালাউন আলফির মতো বিশিষ্ট মামলুকরা সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া মামলুকদের মধ্যে ছিলেন।[কক] শাজারাতুদ দুররের সমর্থক সালিহিয়া মামলুকদের[কখ] চলে যাওয়ার পরে আইবাক মিশরের একচ্ছত্র এবং নিরঙ্কুশ শাসক হয়ে ওঠেন এবং শাজারাতুদ দুর তার বিরুদ্ধে চলে যান।[৬৯]
১২৫৭ সালের দিকে আইবাকের সাথে তার সম্পর্ক ঝগড়া ও বিতর্কের দিকে গড়ায়।[৭০] একদিকে আইবাক একজন নেতৃত্বদানকারী অভিভাবক ও নিরাপত্তাদানকারী কাউকে খুঁজছিলেন। আরেকদিকে তার স্ত্রী শাজারাতুদ দুর, একজন প্রাক্তন সুলতানা যার ইচ্ছা দৃঢ় ছিল আর একটি বহিরাগত আক্রমণের সময় দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা অবস্থায়ও পরিচালনা করেছিলেন; তিনি মিশরের মূল শাসন ক্ষমতা হাতে রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি আইবাকের কাছ থেকে সালতানাতের বিষয়গুলো গোপন করেছিলেন। তিনি তাকে তার অন্য স্ত্রীকে অনুসন্ধান করতে বাধা দেন এবং তার অন্য স্ত্রীকে[কগ] তালাক দেওয়ার জন্য জোর দেন।[৭০] আবার আইবাকের একজন শক্তিশালী আমিরের সাথে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন ছিল; যিনি তাকে সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া মামলুকদের বিরুদ্ধে সহায়তা করবেন।[৭১] তাই তিনি ১২৫৭ সালে মসুলের আমির বদরুদ্দীন লুলুর কন্যাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।[১০][৭০] বদরুদ্দীন লুলু আইবাককে সতর্ক করেছিলেন যে, শাজারাতুদ দুররের সাথে দামেস্কের নাসির ইউসুফের সংযোগ রয়েছে।[৭২][কঘ] এহেন পরিস্থিতিতে শাজারাতুদ দুর নিজেকে অনিরাপদ ভাবা শুরু করেন[১০][কঙ] আর তিনি যেই আইবাককে সুলতান বানিয়েছিলেন; সে-ই তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। তাই তিনি দাসদের সাহায্যে আইবাককে গোসলের সময়ে হত্যা করেন।[৭০][৭৩][কচ] আইবাক সাতবছর মিশর শাসন করেছিলেন।
শাজারাতুদ দুর দাবি করেন যে আইবাক রাতে হঠাৎ মারা গিয়েছেন। কিন্তু কুতুযের নেতৃত্বে আইবাকের (মুইযযিয়া) মামলুকরা তাকে বিশ্বাস করেনি[৭৫][৭২][কছ] এবং জড়িত চাকররা নির্যাতনের কারণে স্বীকার করতে বাধ্য হয়। শাজারাতুদ দুর এবং চাকরদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং আইবাকের মামলুকরা (মুইযযিয়া মামলুক) তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, কিন্তু সালিহিয়া মামলুকরা তাকে রক্ষা করেছিল এবং তাকে লাল টাওয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যেখানে তিনি অবস্থান করেন।[১০][৭৩][৭৬][কজ] মুইযযিয়া মামলুকরা আইবাকের ১৫ বছর বয়সী ছেলে মানসুর আলিকে নতুন সুলতান হিসাবে সিংহাসনে বসায়।[১০][২৭][৭৫][৭৮] ২৮শে এপ্রিল মনসুর আলি ও তার মায়ের দাসরা শাজারাতুদ দুরকে অপহরণ করে এবং খড়ম দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। দুর্গের বাইরে তার নগ্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।[১০][৭২][৭৯][৮০] ঐতিহাসিক ইবনে আইয়াসের মতে, শাজারাতুদ দুরকে তার পা থেকে টেনে টেনে উপর থেকে নগ্ন অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কেবল তার কোমরে একটি কাপড় ছিল। তার মৃতদেহ পরিখায় দাফন করার আগে তিন দিন যাবত পড়ে ছিল। এমনকি, এক রাতে একটি দল এসে তার কোমরের চারপাশের কাপড় খুলে নিয়ে যায়। কারণ এটি মুক্তাযুক্ত রেশমের ছিল এবং এতে কস্তুরির গন্ধ ছিল।[৮১] আইবাকের হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া দাসদেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়।[কঝ]
শাজারাতুদ দুরকে তুলুন মসজিদের কাছাকাছি একটি মাজারে সমাহিত করা হয়েছিল। তার মাজারটি মুসলিম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া স্থাপত্যের একটি অন্যতম উদাহরণ। ভিতরে একটি মিহরাবে "শাজারাতুদ দুর" লিখিত মোজাইক দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। বিশেষ করে এই কাজটি কনস্টান্টিনোপল থেকে আনা শিল্পীদের দ্বারা কার্যকর করা হয়েছে। তার সমাধির অভ্যন্তরের চারপাশে যে কাঠের কুফীয় শিলালিপি রয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অত্যন্ত সূক্ষ্ম কারুকার্যের।
শাজারাতুদ দুর বাহরি মামলুক সমাধির আদিবাসী স্থাপত্য গ্রহণ এবং মাদ্রাসা বা ইসলামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে তাদের সমন্বয় করার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন মিশরের প্রথম ইসলামি সুলতান যিনি এই সাংস্কৃতিক-সমৃদ্ধ স্থাপত্য ব্যবহার করেছিলেন। মামলুক সালতানাতের নেতৃস্থানীয়রা তার কবরের কাঠামো গ্রহণ করা অব্যাহত রাখেন। তারা সেগুলো মাদ্রাসাগুলোর জন্য গ্রহণ করেছিলেন এবং ইসলামি শাসনের অনেক পরেও এই স্থাপত্যশৈলী বাহরি মামলুকদের ব্যবহারে ছিল।[৮২]
শাজারাতুদ দুর ১২৫০ সালে তার স্বামীর শহুরে মাদ্রাসা সালিহিয়াতে একটি সমাধি যোগ করার জন্য তার সম্পদ এবং ক্ষমতা ব্যবহার করেছিলেন। এবং এই উদ্ভাবনের কারণে মাদ্রাসা এবং অন্যান্য অনেক দাতব্য স্থাপত্য কমপ্লেক্স স্মারক স্মৃতিস্তম্ভে পরিণত হয়েছিল। এই প্রথাটি মামলুক শাসকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং পরেও ব্যাপকভাবে রয়ে গিয়েছিল। ট্রি অফ পার্লস (২০২০), রাগলস লিখেছেন:
“প্রাথমিক মাদ্রাসা ফাউন্ডেশন পৃষ্ঠপোষককে রাস্তার দৃশ্য অলঙ্কৃত করতে, শহরের প্রতি দাবি রাখতে এবং তার জীবদ্দশায় তার উদারতা এবং ধার্মিকতা প্রদর্শন করতে সক্ষম করেছিল। কিন্তু যদিও এটি তার নাম এবং উপাধি বহন করে, এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষাদান এবং অধ্যয়নের জন্য একটি জায়গা প্রদান করা। বিপরীতে, সমাধিটি স্মরণের একমাত্র উদ্দেশ্যে বিদ্যমান ছিল। সমস্ত মাউসোলিয়ার মতো, এটি একটি দৃশ্যমান চিহ্ন হিসাবে দাঁড়িয়েছিল যার স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল অনন্তকালের জন্য এর বাসিন্দার স্মৃতি সংরক্ষণ করা। সমাধি এবং মাদ্রাসার একীকরণের সাথে, একটি নতুন সংমিশ্রণ তৈরি করা হয়েছিল যেখানে উভয় ফাংশন উন্নত করা হয়েছিল: সমাধিটি সংলগ্ন বিদ্যালয়ের দাতব্য উদ্দেশ্যকে শুষে নেয় এবং এর কার্যকলাপের থ্রুম ক্যাপচার করে, মাদ্রাসা স্মৃতির একটি মূর্ত স্থান হিসাবে নতুন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লাভ করে। —একটি সমালোচনামূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আইয়ুবীয়দের স্মৃতি, যা আমরা স্মরণ করি মৃত সুলতানের শেষ অবশিষ্ট যোগসূত্র হিসেবে শাজারাতুদ দুররের দেওয়া ছিল। অধিকন্তু কমপ্লেক্সটি পূর্ববর্তী সমাধিগুলির তুলনায় আরও বেশি জায়গা নিয়ে শহুরে স্থান দখল করেছে এবং এটির চারপাশের শহরকে রূপান্তরিত করেছে আর চারপাশের রাস্তাকে স্পষ্ট করেছে। এর সুদর্শন মিনার এবং বড় গম্বুজ মানুষের মনোযোগ দেওয়ার দাবি রাখে।”[৪]
তিনি ১২৫০ সালের পর থেকে ১২৫৭ সালের মধ্যে তার মৃত্যুর আগে যেকোনো সময়ে নিজের জন্য একটি সমাধিও তৈরি করেছিলেন। যেটি ছিল একটি বৃহত্তর দাতব্য কমপ্লেক্সের অংশ। তবে শুধুমাত্র সমাধিটি আজ টিকে আছে। আর এটি সম্প্রতি আছার লিনা ফাউন্ডেশন দ্বারা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।[৮৩] যদিও ফাতেমীয় শহরের দেয়ালের বাইরে নির্মিত, কিন্তু এই সমাধিটি ছিল- সুলতান সালিহের জন্য যে সমাধিটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন তার মত একটি অসাধারণ এবং উদ্ভাবনী কাঠামোর। রাগলস লিখেছেন:
“এটি সাধারণভাবে জানা যায় যে শিলালিপিগুলো মুসলিম শিল্পে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম প্রদান করে এবং মুসলিম ধর্মীয় স্থাপনা যেমন মসজিদ এবং সমাধিতে মানুষ এবং প্রাণীর ছবি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। একইভাবে, শাজারাতুদ দুররের মাজারে যেখানে প্রার্থনা করা হয়, মিহরাবের সবচেয়ে উচ্চ জায়গায় নিজের সম্পর্কে একটি স্পষ্ট উদ্ধৃতি সন্নিবেশ করেন। যেখানে মুক্তাযুক্ত ফলসহ একটি খাড়া শাখার চিত্র তার নাম স্মরণ করে: শাজার (বৃক্ষ) ও দুরর (মুক্তা)।”[৮৪]
একজন স্বেচ্ছাচারী ক্রীতদাসী হিসেবে; যিনি আইয়ুবীয়দের বংশের ছিলেন না, শাজারাতুদ দুররের মিশর ও সিরিয়ার প্রথম মামলুক শাসক হওয়ার গৌরব রয়েছে।[৮৫] আইবাক এবং শাজারাতুদ দুর তাদের মৃত্যুর আগে দৃঢ়ভাবে মামলুক রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা শেষ পর্যন্ত মঙ্গোলদের বিতাড়িত করেছিল, ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের পবিত্র ভূমি থেকে বিতাড়িত করেছিল এবং উসমানীয়দের আগমন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে স্থায়ী ছিল।
শাজারাতুদ দুর হাজার হাজার পৃষ্ঠার লোককাহিনী মহাকাব্য[কঞ] সিরাতুয যাহির বাইবার্সের (যাহির বাইবার্সের জীবনী) একটি চরিত্র, যেই লোককাহিনীটি মামলুক যুগের প্রথম দিকে মিশরে রচিত হওয়া শুরু হয়েছিল এবং উসমানীয় যুগের প্রথম দিকে চূড়ান্ত রূপ নেয়।[কট] গল্পটি কল্পকাহিনী এবং সত্যের মিশ্রণ। বাইবার্স এবং শাজারাতুদ দুর উভয়ের জন্য মিশরীয় সাধারণ মানুষের মুগ্ধতা প্রতিফলিত করে। গল্পটিতে তার সুন্দর নাম ছিল- ফাতিমা শাজারাতুদ দুর, যিনি ছিলেন বাগদাদের খলিফা মুকতাদির বিল্লাহের কন্যা। যার সময়ে বাগদাদে মঙ্গোলরা আক্রমণ করেছিল।[কঠ] কাহিনীটির মতে, তাকে শাজারাতুদ দুর (মুক্তার গাছ) বলা হত, কারণ তার বাবা তাকে মুক্তো দিয়ে তৈরি পোশাক পরিয়েছিলেন। তার বাবা তাকে মিশর দিয়েছিলেন কারণ তিনি মিশরের রানী হতে চেয়েছিলেন। মিশর তার ছিল বলে ক্ষমতায় থাকার জন্য সালিহ আইয়ুব তাকে বিয়ে করেছিলেন। যখন বাইবার্সকে কায়রোর দুর্গে আনা হয়েছিল, তখন তিনি তাকে ভালোবাসতেন এবং পুত্রের মতো আচরণ করেছিলেন। আর বাইবার্স তাকে মা বলে ডাকতেন। আইবাক তুর্কমানি গ্রন্থটির একজন দুষ্ট চরিত্র, যে মসুল থেকে শাজারাতুদ দুর এবং তার স্বামী সালিহ আইয়ুব থেকে মিশর দখল করতে এসেছিল। শাজারাতুদ দুর আইবাককে তলোয়ার দিয়ে হত্যা করে। কিন্তু তার ছেলের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দুর্গের ছাদ থেকে পড়ে মারা যান।[৮৬] উপরন্তু শাজারাতুদ দুররের নামের অর্থ আসলে মুক্তার গাছ। তাই কবিতায় তার উল্লেখ একটি ফলের গাছ দেখায় যা ঝিনুকের টুকরো দ্বারা গঠিত।[৮১]
তাইয়েব সালিহ তার গল্প "দ্য ওয়েডিং অব জেইন"-এ শাজারাতুদ দুরকে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মিশর শাসন করা ক্রীতদাসী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার গল্পের একটি চরিত্র বলে, "একজন পুরুষ পুরুষই থাকে, যদিও না তার নাক দিয়ে পানি পড়তে থাকে। আর একজন নারী নারী থাকে, যদিও না সে শাজারাতুদ দুররের ন্যায় সুন্দরী হয়।"[৮৭]
শাজারাতুদ দুররের নামে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে আহমদ জালাল একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন।[৮৮][৮৯]
শাজারাতুদ দুররের মুদ্রায় নিম্নোক্ত নাম ও উপাধি খোদাই করা হয়েছিল: মুস্তাসিমিয়াহ সালিহিয়াহ মালিকাতুল মুসলিমিন ওয়ালিদাতুল মালিকুল মানসুর খলিল আমিরুল মুমিনীন। আরও লেখা ছিল, শাজারাতুদ দুর। এমনকি আব্বাসীয় খলিফার নাম "আবদুল্লাহ বিন মুসতানসির বিল্লাহ" তার মুদ্রায় খোদাইকৃত ছিল।[৯০]
...শাজারাতুদ দুরকে আইয়ুবীয়দের আধিপত্যের সুলতানা (সুলতানের স্ত্রীবাচক শব্দ) ঘোষণা করা হয়েছিল, যদিও এটি সিরিয়ার আইয়ুবী আমিরদের দ্বারা স্বীকৃত ছিল না।
শাজারাতুদ দুর জন্ম: ? মৃত্যু: ২৮ এপ্রিল ১২৫৭
| ||
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী মুয়াযযাম তুরানশাহ |
মিশরের সুলতান ২ মে – জুলাই ১২৫০ |
উত্তরসূরী ইযযুদ্দিন আইবাক |