শাপলা

শাপলা
সময়গত পরিসীমা: ১৩–০কোটি প্রাক ক্রিটেশিয়াস - বর্তমান
Nymphaea nouchali
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস e
জগৎ/রাজ্য: প্লান্টি (Plante)
গোষ্ঠী: ট্র্যাকিওফাইট (Tracheophytes)
ক্লেড: সপুষ্পক উদ্ভিদ (অ্যাঞ্জিওস্পার্মস)
বর্গ: Nymphaeales
পরিবার: নিম্ফিয়াচেয়া (Nymphaeaceae)
স্যালসবারি[]
Genera

শাপলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaeaceae) সপুষ্পক উদ্ভিদ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এ পরিবারভূক্ত সকল উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। হাওড়-বিল ও দিঘিতে এটি বেশি ফোটে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের কিছু জেলায় একে নাইল বা নাল বলা হয়।

শাপলা ফুল

[সম্পাদনা]

এই উদ্ভিদ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ডমায়ানমারে এই ফুল পুকুরবাগান সাজাতে খুব জনপ্রিয়। সাদা শাপলা বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশের পুকুরহ্রদে দেখা যায়। এই ফুল পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও দেখা যায়। এই ফুল যেমন দেখা যায় চাষের জমিতে, তেমনই হয় বন্য এলাকায়। কাটা ধান ক্ষেতের জমে থাকা অল্প পানিতে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। বিশ্বে এই উদ্ভিদের প্রায় ৩৫টি প্রজাতি পাওয়া গেছে।

নামকরণ

[সম্পাদনা]

বাংলায় বলা হয় শাপলা। ইংরেজিতে শাপলাকে বলা হয় “Water Lily”, White Water Lily, White Lotus.অন্যান্য ভাষায়: থারো আংগৌবা (মনিপুরী), வெள்ளாம்பல் ভেলাম্বাল (তামিল), कुमुद কুমুদ (সংস্কৃত), শালুক (বাংলা), নিরাম্বল (মালয়ালম ভাষা), কান্নাইদিলি (কান্নাদা), নাল (অসমীয়া)। বাংলায় নীল শাপলা ফুলকে শালুক বা নীলকমল, লাল শাপলা ফুলকে রক্তকমল বলা হয়। চট্টগ্রাম এ এই ফুল কে অঁলাফুল বলা হয় ।

বিবরণ

[সম্পাদনা]

শাপলা ফুল ভোর বেলা ফোটে এবং দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে পাপড়ি বুজে যায়। সরাসরি কাণ্ডমূলের সাথে যুক্ত থাকে। শাপলার পাতা আর ফুলের কাণ্ড বা ডাটি বা পুস্পদণ্ড পানির নিচে মূলের সাথে যুক্ত থাকে। আর এই মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে এবং পাতা পানির উপর ভেসে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতার জন্ম নেয়। পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয় কিন্তু নিচের দিকে কালো রঙ। ভাসমান পাতাগুলোর চারদিক ধারালো হয়। পাতার দৈর্ঘ্য ২০-২৩ সেন্টিমিটার এবং এদের ব্যাপ্তি প্রায় ০.৯-১.৮ মিটার। শাপলা ফুল নানা রঙের দেখা যায় যেমনঃ গোলাপী, সাদা, নীল, বেগুনি ইত্যাদি। এই ফুলে ৪-৫টি বৃতি থাকে ও ১৩-১৫টি পাপড়ি থাকে। ফুলগুলো দেখতে তারার মত মনে হয়। কাপের সমান বৃতিগুলো ১১-১৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। প্রায় বছরের সব সময় শাপলা ফুটতে দেখা যায় তবে বর্ষা ও শরৎ এই উদ্ভিদ জন্মানোর শ্রেষ্ঠ সময়।

প্রতীক

[সম্পাদনা]

শাপলা ফুল অনেক রঙের হলেও কেবল সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের পয়সা, টাকা, দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলা বা এর জলছাপ আঁকা থাকে।

এই ফুল শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল। শ্রীলংকায় এই ফুল Nil Mānel নীল মাহানেল নামে পরিচিত। শ্রীলংকার ভাষায় নীল থেকে এই ফুলকে ইংরেজিতে অনেক সময় blue lotus বলা হয়। শ্রীলংকায় বিভিন্ন পুকুর ও প্রাকৃতিক হ্রদে এই ফুল ফোটে। এই জলজ উদ্ভিদের ফুলের বিবরণ বেশ কিছু প্রাচীন বই যেমন - সংস্কৃত, পালি ও শ্রীলংকান ভাষার সাহিত্যে প্রাচীনকাল থেকে "কুভালয়া", "ইন্ধিয়ারা", "নীলুপ্পালা", "নীলথপালা", "নীলুফুল" নামে পাওয়া গেছে যা শ্রেষ্ঠতা, শৃংখলা, পবিত্রতার প্রতীক। শ্রীলংকার বুদ্ধদের দৃঢ় বিশ্বাস গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপে পাওয়া ১০৮ টি শুভ চিহ্নের মাঝে একটি ছিল এই শাপলা ফুল।

ইতিহাস ও পুরাণ

[সম্পাদনা]

শাপলার পরিবার বা গোত্র হল Nymphaea। এটি একটি গ্রিক শব্দের অনুবাদ।[] গ্রীক দার্শনিক প্লেটোএরিস্টটল এর এক শিষ্য থিউফ্রাস্টাস বলেছেন, এই উদ্ভিদ প্রায় ৩০০ খৃস্টপূর্ব পুরানো। তিনি আরো বলেছেন প্রাচীন গ্রীকে জল দেবীদের এই ফুল উৎসর্গ করে উপাসনা করার রীতি ছিল।[] প্রাচীন মিশরে, হাজার বছর ধরে Nymphaea caerulea (এখন যা Nymphaea nouchali/ caerulea এ হারিয়ে গেছে), নীল শাপলা ফুল, সাদা শাপলা ফুলের প্রতি অনুরাগী ছিল। মানুষ এই ফুল খেত, আঁকত এবং শ্রদ্ধা করত। কথিত আছে ভারতে হিন্দুদের সর্প দেবী মনসা পূজায় শাপলা ফুল দেয়া হয়।[]

ব্যবহার

[সম্পাদনা]

শাপলা প্রাচীন যুগ থেকেই বিভিন্ন জাতীর প্রার্থনা বা বাগান সাজানোর পাশাপাশি খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন: মিশর, চীন, জাপানএশিয়ার বিভিন্ন এলাকা শাপলার কাণ্ড বা ডাটা বা পুস্পদন্ড সবজী হিসেবে খাওয়া হয়। পূর্ণবিকশিত শাপলা ফুলের গর্ভাশয়ে গুড়ি গুড়ি বীজ থাকে। আঠালো এই বীজ বাংলাদেশের গ্রামের মানুষদের খেতে দেখা যায়। এই বীজ ভেজে একধরনের খাবার খৈ তৈরি হয় যার নাম “ঢ্যাপের খৈ”। উদ্ভিদটির গোড়ায় থাকে আলুর মত এক ধরনের কন্দ যার নাম শালুক, অনেকে এটি সব্জি হিসেবে খেয়ে থাকে।
নীল শাপলা ফুল ও লাল শাপলা ফুল ঘর সাজাতে ব্যবহৃত হয়। এটি বাগানের জলাধারে লাগানো বা অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখার জন্য খুব জনপ্রিয় একটি উদ্ভিদ। কখনো কখনো এই উদ্ভিদ তাদের ফুলের জন্য বেড়ে উঠে।
ভারতে আম্বাল নামের আয়ুর্বেদিক ঔষুধ বানাতে শাপলাকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ঔষধ অপরিপাকজনিত রোগের পথ্য হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে এই উদ্ভিদে ডায়াবেটিক রোগের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধী গুণাগুণ রয়েছে।[] এই উদ্ভিদ পানি থেকে তুলে রোদে শুকিয়ে গবাদি। পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

চিত্রমালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; apgiii নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. Nymphaea nouchali Burm. f. var. caerulea (Sav.) Verdc. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ অক্টোবর ২০১১ তারিখে, History and legends.
  3. মনসা, মনসা.
  4. Nymphaea nouchali

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]