শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ

শামসউদ্দিন ইলতুতমিশ
দিল্লির সুলতান
বাদাউনের গভর্নর
নাসির আমিরুল মুমিনিন
ইলতুতমিশের কবর
রাজত্ব১২১১– ৩০ এপ্রিল ১২৩৬
পূর্বসূরিআরাম শাহ
উত্তরসূরিরুকনউদ্দিন ফিরোজ
জন্ম১১৮৬ কাবুল
মৃত্যু৩০ এপ্রিল ১২৩৬
দিল্লি
সমাধি
দাম্পত্য সঙ্গীকুতুব বেগম, শাহ তুরকান
বংশধরনাসিরউদ্দিন মাহমুদ, রাজিয়া সুলতানা, রুকনউদ্দিন ফিরোজ, মুইজউদ্দিন বাহরাম
পূর্ণ নাম
শামসউদ্দিন ইলতুতমিশ
রাজবংশমামলুক
ধর্মইসলাম

শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ দিল্লির মামলুক সালতানাতের একজন সুলতান ছিলেন। তিনি ১১৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

জীবনী

[সম্পাদনা]

তার ভাইয়েরা তার রুপ ও যোগ্যতায় ইর্ষান্বিত হয়ে তাকে এক দাস ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়। বিক্রির পর তাকে বুখারার কাজী সদর জং কিনে নেন। বুখারায় তিনি ভাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পান। এর পরে তাকে দিল্লি নিয়ে আসা হয়, সেখানে তাকে কুতুবউদ্দিন আইবেক কিনে নেন। কুতুবউদ্দিন আইবেক তার যোগ্যতা খুশি হয়ে তাকে সার-জান্দার ( প্রধান প্রহরী ) হিসেবে নিয়োগ দেন। কঠোর প্ররিশ্রমের দ্বারা তিনি আমির-ই-শিকার এবং পরে গোয়ালিয়রের আমির হিসেবে উন্নিত হন। আইবেক তার কন্যাকে ইলতুতমিশের সাথে বিয়ে দেন। কুতুবউদ্দিন আইবেকের মৃত্যুর পর তার পুত্র শাসনভার গ্রহণের অযোগ্য প্রমাণিত হলে তুর্কিরা তাকে সুলতান হিসেবে মনোনিত করে। ইলতুতমিশ একজন যোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি জ্ঞানী, প্রশাসক ও উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের দেশে নিয়ে আসেন যারা মঙ্গল আক্রমণের সময় চলে গিয়েছিল। এদের নিয়ে ইলতুতমিশ এক শক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।

ধর্মপ্রান ইলতুতমিশ

[সম্পাদনা]

তিনি ধর্মপ্রান ছিলেন এবং দরবেশদের গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি তার সময়ের একজন বিখ্যাত দরবেশ। তিনি কখনো নামায কাযা করেন নি। তিনি কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকীর জানাযার ইমামতি করেন।

স্থাপত্য

[সম্পাদনা]

কুতুবউদ্দিন আইবেকের শুরু করা কুতুব মিনারের কাজ ইলতুতমিশের সময় শেষ হয়। তিনি আজমিরে একটি বিখ্যাত মসজিদ তৈরি করেন।

অর্থনীতি

[সম্পাদনা]

ইলতুতমিশ দিল্লীর সুলতানদের মধ্যে সর্বপ্রথম খাঁটি আরবি মুদ্রার প্রবর্তন করেন। ভারতবর্ষে রোপো বা তঙ্কা (১৭৫ গ্রাম) ও তাম্র মুদ্রা বা জিতল এই দুটি মুদ্রার প্রচলন করেন। নামে অভিহিত হত। তার সময়ে বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা মুনতানজির বিল্লাহ ১২২৯ সালে ভারতে বিপুল বিনিয়োগ করেন।

সাম্রাজ্যের বিদ্রোহ দমন ও বিস্তার

[সম্পাদনা]

ইলতুতমিশ একজন মহান শাসক ছিলেন। তিনি নতুন বিজিত অঞ্চলগুলোর বিদ্রোহ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করেন। ঘুরি বংশের নাসিরউদ্দিন কুবাচাহ নিজ রাজ্যের স্বাধীনতা ঘোষণা করে উচ, মুলতান এবং লাহোর দখল করে নেন। অন্যদিকে, তুর্কি বংশোদ্ভূত তাজউদ্দিন ইলদিজ গজনীতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইলতুতমিশ দ্রুত পরিস্থিতি সামলে নিয়ে তাদের উভয়কে পরাজিত করেন। ১২২৫ সালে তিনি বাংলার খিলজী বংশের শাসক হুসামউদ্দিন ইয়াজকে পরাজিত করে বাংলা দখল করে নেন। তিনি সিন্ধুর সুম্রা শাসকের পরাজিত করেণ। ১২৩১ সালে ইলতুতমিশ গোয়ালিয়রের কেল্লা অবরুদ্ধ করেণ। গোয়ালিয়রের শাসক মঙ্গল দেব একবছর পর পলায়ন করলে ইলতুতমিশ গোয়ালিয়র শহর দখল করেন। ইলতুতমিশ মালওয়া, বিলসা, উজ্জান দখল করেন এবং দক্ষিণে তার সাম্রাজ্য নারবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।

বৈদেশিক সম্পর্ক

[সম্পাদনা]

ইলতুতমিশের আমলে চেঙ্গিস খান জালালউদ্দিন খোয়ারিজমিকে পরাজিত করে আতুকের নিকটে চলে আসে। জালালউদ্দিন ইলতুতমিশের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কিন্তু ইলতুতমিশ চেঙ্গিস খানের বিরুদ্ধে যেতে চান নাই, ফলে জালালউদ্দিনকে চিঠি লিখে জানান দিল্লি আবহাওয়া ভাল নয়, এই আবহাওয়া জালালউদ্দিন সহ্য করতে পারবেন না। তখন জালালউদ্দিন সিন্ধু হয়ে ইরান চলে যান। এভাবে ইলতুতমিশ তার নব্য মুসলিম সম্রাজ্যকে মঙ্গল আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন।

উপাধি

[সম্পাদনা]

সুলতান-ই-আজম