শারীরিক সক্ষমতা বা ফিজিক্যাল ফিটনেস হল সুস্থতা ও ভালো-থাকার একটি অবস্থা এবং আরও স্পষ্টভাবে বললে, এটি হল বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলা, পেশা ও দৈনন্দিন কাজকর্ম করার ক্ষমতা। সাধারণত শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করা হয় সঠিক পুষ্টি,[১] সহনীয় পর্যায়ের শক্তিশালী শারীরিক ব্যায়াম,[২] এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমে।[৩]
শিল্প বিপ্লবের পূর্বে, ইংরেজি শব্দ ফিটনেস বলতে ক্লান্তিহীনভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করার ক্ষমতাকে বোঝানো হত। তবে, জীবনযাত্রায় স্বয়ংক্রিয়তা ও পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে ফিজিক্যাল ফিটনেস বলতে দৈনন্দিন কাজ ও অবসরের কাজকর্ম দক্ষ ও কার্যকরভাবে সম্পাদন করা, স্বাস্থ্যবান হওয়া, জড়তা ও অলসতার ফলে সৃষ্ট রোগব্যাধি প্রতিরোধ করা এবং আকস্মিক জরুরি অবস্থাসমূহ মোকাবেলা করার দৈহিক ক্ষমতার একটি স্বতন্ত্র মাপকাঠিকে বোঝানো হয়।[৪]
সাস্থ্য সম্পর্কিত শারীরিক সক্ষমতা উপাদান গুলো হলো - ১)হৃদ শাসনতান্ত্রিক সহনশীলতা ২) দেহ উপাদান ৩) পেশী সহনশীলতা ৪) নমনীয়তা ৫) পেশীশক্তি
শারীরিক ব্যায়াম বা শরীরচর্চা হল যেকোন শারীরিক কার্যক্রম যা শারীরিক সুস্থতা রক্ষা বা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর অপর একটি অর্থ হল শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত আন্দোলন | বিভিন্ন কারণে ব্যায়াম করা হয়, যেমন- মাংসপেশী ও সংবহন তন্ত্র সবল করা, ক্রীড়া-নৈপুন্য বৃদ্ধি করা, শারীরিক ওজন হ্রাস করা বা রক্ষা করা কিংবা শুধু উপভোগ করা। নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। হৃদ্ররোগ, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা রোধে শারীরিক ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করতে, ইতিবাচক আত্মসম্মান বৃদ্ধিতে, সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায়, ব্যক্তির যৌন আবেদন বৃদ্ধি, শরীরের সঠিক অনুপাত অর্জনে শারীরিক ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুস্বাস্থ্যের স্থূলতা একটি সমকালীন বিশ্বব্যাপী সমস্যা। ব্যায়াম শরীরের স্থূলতা রোধে কাজ করে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা শারীরিক ব্যায়ামকে “অলৌকিক” এবং “আশ্চর্যজনক” ঔষধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা রক্ষার্থে ব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রমাণিত।
সবাত ব্যায়াম হল কম থেকে বেশি তীব্রতার একটি শারীরিক ব্যায়াম[৫] যা মূলত সবাত শক্তি-উৎপন্নকারী প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে।[৬] "অ্যারোবিক" বা সবাত বলতে বিমুক্ত অক্সিজেনের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুকে বোঝানো হয়,[৭] এবং সবাত ব্যায়ামের সবাত শব্দটির দ্বারা ব্যায়ামের সময় সবাত বিপাকের মাধ্যমে ব্যায়ামের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তির চাহিদা পূরণে অক্সিজেনের ব্যাবহারকে বোঝানো হয়।[৮] সবাত ব্যায়ামে হাল্কা থেকে মাঝারি তীব্রতার দিকে অগ্রসর হয়ে একই কসরত দীর্ঘ সময় যাবত বারবার করা হয়ে থাকে।[৬] সবাত ব্যায়ামকে "মৌলিক সবাত" (ইংরেজিতে "সোললি অ্যারোবিক") ব্যায়ামও বলা হয়ে থাকে, কারণ একে এমনভাবে স্বল্পমাত্রায় পর্যাপ্ত তীব্রতার ব্যায়াম হিসেবে তৈরি করা হয়েছে যেন দেহের সকল শর্করা সবাত পদ্ধতিতে মাইটোকন্ড্রীয় এটিপি (এডিনোসিন ট্রাইফসফেট) উৎপাদনের মাধ্যমে শর্করায় রূপান্তরিত হয়। মাইটোকন্ড্রিয়া হল জীবদেহের শক্তি উৎপাদনকারী অঙ্গাণু যা শর্করা, আমিষ আর চর্বির বিপাকের জন্য অক্সিজেনের উপর নির্ভর করে।
কিছু অ্যারোবিক বা সবাত ব্যায়ামের উদাহরণ হল মাঝারি থেকে লম্বা দূরত্বের দৌড় বা জগিং, সাঁতার, সাইক্লিং, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা এবং হাঁটা।
অবাত ব্যায়াম হল একপ্রকারের ব্যায়াম যা অক্সিজেন ছাড়াই শরীরের গ্লুকোজকে ভেঙ্গে ফেলে, কারণ এনারবিক বা অবাত মানে হল অক্সিজেন ছাড়া।[৯] ব্যবহারিক পরিভাষায়, এর অর্থ হল অবাত ব্যায়াম হল সবাত ব্যায়ামের থেকে কঠিন কিন্তু ছোট।
অবাত ব্যায়ামের জৈবরসায়নের মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোলাইসিস নামক প্রক্রিয়া, যার মধ্যে গ্লুকোজ রূপান্তরিত হয়ে এডিনোসিন ট্রাইফসফেট বা এটিপিতে পরিণত হয়, যা হল কোষের কার্যক্রমের জন্য শক্তির প্রাথমিক উৎস।[১০]
অবাত ব্যায়ামের সময় অনেক বেশি মাত্রায় ল্যাক্টিক এসিড উৎপন্ন হয়, যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। রক্ত থেকে ল্যাক্টেট অপসারণ মাত্রার চেয়ে যদি ল্যাক্টেটের উৎপাদন হার বেশি থাকে (যাকে ল্যাক্টেট থ্রেশহোল্ড বা এনারবিক থ্রেশহোল্ড বলা হয়) তবে তা পেশীর ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
সাধারণত ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকগণ তাদের মক্কেলদের অবাত ব্যায়াম করিয়ে থাকেন, যেন তাদের শরীরের স্থায়িত্ব, পেশীর দৃঢ়তা ও শক্তি বৃদ্ধি পায়।[১১][১২]