ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান | |
---|---|
মানদণ্ড | সাংস্কৃতিক: i, ii, iii |
সূত্র | 171 |
তালিকাভুক্তকরণ | ১৯৮১ (৫ম সভা) |
বিপদাপন্ন | ২০০০–২০১২ |
শালিমার উদ্যান (উর্দু: شالیمار باغ) পাকিস্তানের লাহোর শহরে অবস্থিত অত্যন্ত সুন্দর ও সাজানো গোছানো বাগান।[১] মুঘল আমলের স্থাপনা হিসেবে ১৬৪১ সালে এর অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়।[২] পরের বছরই এর কাজ শেষ হয়। মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক শাহজাহানের বিচারালয়ের সাথে জড়িত খলিলুল্লাহ খানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানের উদ্যানের এ কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন আলী মর্দান খান ও মোল্লা আলাউল মুলক তানি। ‘শালিমার’ শব্দের অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও আন্না সুভরোভা তার লাহোর: তপোফিলিয়া অব স্পেস এন্ড প্লেস গ্রন্থে আরবী কিংবা ফার্সি থেকে শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে বলে তুলে ধরেন।[৩]
বাগবানপুরার আরাইন মিয়া পরিবারের ভূমিতে এ স্থাপত্যটি নির্মিত হয়েছে। মুঘল সাম্রাজ্যকে অনবদ্য সেবা দেয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি রাজকীয় উপাধি ‘মিয়া’ লাভ করেন। তৎকালীন সময়ে গৃহস্বামী মিয়া মোহাম্মদ ইউসুফ সম্রাট শাহজাহানকে ইশাক পুরার এ জমিটিতে রাজ প্রকৌশলী কর্তৃক উদ্যান তৈরিতে ভাল অবস্থান ও মাটির গুণাগুণের কারণে স্বত্ত্বত্যাগ করেন। বিনিময়ে সম্রাট শাহজাহান পরিবারটিকে শালিমার উদ্যান পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করেন। অদ্যাবধি এ উদ্যানটি মিয়া পরিবার কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক মেলা চিরাগান উৎসব বন্ধের পূর্ব পর্যন্ত এ বাগানে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতো। পাকিস্তানে সামরিক আইন প্রবর্তনের বিরুদ্ধে মিয়া পরিবারের সদস্যরা প্রতিবাদ জানালে ১৯৬২ সালে আইয়ুব সরকার উদ্যানটিকে জাতীয়করণ করে।
লাহোর শহরের ৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে পাশে বাগবানপুরা এলাকায় এ উদ্যানের অবস্থান। মধ্য এশিয়া, কাশ্মির, পাঞ্জাব, পারস্য ও দিল্লি সালতানাতের চিত্রশৈলী এতে প্রাধান্য পেয়েছে।[৪]
উদ্যানের উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬৫৮ মিটার ও পূর্ব থেকে পশ্চিমে ২৫৮ মিটার জায়গা রয়েছে। ১৯৮১ সালে লাহোর কেল্লার পাশাপাশি শালিমার উদ্যানও ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে তিনটি স্তরে সমান ভূমি রাখা হয়েছে যার প্রত্যকটি অংশ একে-অপরের থেকে ৪-৫ মিটার উঁচু। উপরের স্তরটি ফারাহ বখস, মধ্যমটি ফয়েজ বখস ও নিচেরটি হায়াত বখস নামকরণ করা হয়।
এখানে সর্বমোট ৪১০টি ঝর্ণাধারা রয়েছে। এরফলে এলাকাটি সবসময় বেশ শীতল থাকে। এর মাধ্যমে বিস্তৃত মার্বেল জলাধারে পানি পতিত হয়। মুঘল প্রকৌশলীদের নকশায় তৈরী এ জলাধারের জন্য ব্যবহৃত পানি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বর্তমানের বিজ্ঞানীদের কাছে আজো অজানা রয়েছে।