শিখ ধর্মে নারীর ভূমিকার ক্ষেত্রে বলা হয় যে, শিখদের পবিত্র গ্রন্থে নারী-পুরুষের সমতা নির্ধারণ করে। শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক নারী ও পুরুষের সমতা ঘোষণা করেছেন, সেইসাথে নয়জন গুরু যারা লিঙ্গ সমতার শিক্ষায় তাঁর অনুসরণ করার কথা বলেছেন। তাঁদের প্রথম পাঁচজনকে বলা হয় ‘পঞ্জ-পিয়ারে’। তাঁরা হলেন নানক (১৪৬৯-১৫৩৮/৯), অমরদাস (১৪৭৯-১৫৭৪), অঙ্গদ (১৫০৪-১৫৫২/৩), রামদাস (১৫৩৪-১৫৮১) এবং অর্জুন সিং। এঁরা সবাই এক মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন এবং একই ব্রত অনুসরণ করতেন। এঁদের মতবাদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদ একত্রিত করে শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেব রচিত হয়।[১] সে যাই হোক শিখ ধর্মে নারীদের সমস্ত কাজকর্মে পুরোপুরি অংশগ্রহণ এবং পুরুষের মতো পূজার অনুশীলন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।[২]
শিখ ধর্মের শিক্ষা অনুসারে, একজন পুরুষ একজন নারী ছাড়া নিরাপদ নয় এবং তার পরিপূর্ণ জীবন হয় না। একজন পুরুষের জীবনের সাফল্য হয় যখন তার প্রতি নারীর ভালবাসা ও সমর্থন তার সাথে যুক্ত থাকে। কারণ সে জীবনে সবসময় তার উপকার করে এবং স্বামীকে পছন্দ করে। এটা ছাড়াও শিখ ধর্ম বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করে।[৩] কারণ এতে পরিবারে বিশৃংখলা দেখা দেয়।
শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ ( গুরু গ্রন্থ সাহেব ) এ নারীদের উল্লেখ একভাবে বা অন্যভাবে আছে। যেমন
মধ্যযুগীয় সময়ে ভারতীয় নারীদের অবস্থা ও ভূমিকার অবনতি হচ্ছিল এবং কিছু সমাজে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ফলে জোরপূর্বক বিবাহের প্রচলন শুরু হয়। তখন বিধবাদের পুনর্বিবাহ থেকে নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও অনেক খারাপ প্রথা ও বিধান চালু ছিল। হিন্দু ভক্তি আন্দোলনের উত্থানের সাথে এটি স্পষ্ট হয়েছিল। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন-রামানন্দ ও নামদেব, রামানন্দের প্রধান শিষ্য কবির, গুরু নানক, শ্রীচৈতন্য, বল্লভাচার্য, নামদেব ও মীরাবাঈ।[৪] তারা এ আন্দোলনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্ম প্রচারক জনগণের মধ্যে প্রেম, মৈত্রী, ভালোবাসা ও ভক্তির বাণী প্রচার করতে থাকেন । কিছুদিন পর এ আন্দোলন মুখ থুবরে পড়ে।[৫]
ভক্তি আন্দোলনের বিলুপ্তির কিছুদিন পরেই, গুরু নানক শিখ আন্দোলন শুরু করেন এবং নারীদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন পথ গ্রহণ করেন। তিনি নারীদের ধর্মীয় আচার -অনুষ্ঠানের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন; একই বিশ্বাসীদের জন্য পুজা এবং গান গাওয়া বৈধ করেন। তাই শিখ ধর্মে নারীরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেয়াকে বৈধ করে। তারা আরও বলে একই বাপ্তিস্ম বা অমৃত সাধনে এবং বিবাহের সাথে ধর্মীয় অনুষ্ঠান গ্রহণ করাকে তারা বৈধতা দেয়। তবে অন্যক্ষেত্রে শিখ ধর্মগুরুরা নারীদের প্রতি বৈষম্যের অন্যান্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠে।
শিখ ধর্ম অনুসারে পুরুষ ও মহিলা একই মানব মুদ্রার এপিঠওপিঠ, আন্তঃসম্পর্কে এক দেহ এবং পরস্পরের উপর নির্ভরশীলতার একটি সুন্দর ব্যবস্থা। কেননা নারীর পেটে পুরুষ থাকে এবং নারী দ্বারা সে জন্মগ্রহণ করেন এবং নারীরা পুরুষের বীর্যের দ্বারা জন্মগ্রহণ করেন। এই মতবাদের দ্বারা একজন পুরুষ নারীকে ছাড়া নিজের জীবনে সুরক্ষিত এবং সম্পূর্ণ বোধ করতে পারে ন। পুরুষের সাফল্য তার সাথে তার জীবন ভাগ করে নেওয়া মহিলার প্রেম এবং সমর্থনের সাথে সমানুপাতিক । গুরু নানক, ১৪৯৯ সালে বলেছিলেন যে "নারীরা হলো যিনি সংসার জীবনে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যান" এবং আমাদের উচিত "মহিলাকে অভিশপ্ত না বলা ও নিন্দিত বিবেচনা না করা। কেননা নারী থেকে জন্মগ্রহণকারী নেতা ও রাজা হন। তবে শিখ ধর্মের মাঝে মিশ্র বিবাহকে অবৈধ বলা হয়। ভারতে ব্রিটিশ রাজত্বের সময় শিখ আচরণবিধি রেহত মারিয়াদা তৈরি হয়, যেখানে পরিস্কারভাবে বলে দেয়া হয়েছে, শিখ বিয়ে বা আনন্দকারাজ শুধুমাত্র দুইজন শিখ ধর্মাবলম্বীর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। যেমন শিখ ও হিন্দুর মাঝে বা অন্য ধর্মের নর-নারী মাঝে বিবাহ।[৬] এটা শিখ ধর্মকে শুদ্ধ রাখার নিয়ম।
বর্তমানে,নারীরা তাদের সমসাময়িক রাজনীতিতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে এবং পেশাগত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন যাতে নারীরা তাদের অনেক সমস্যা থেকে সমাধান পায়।
শিখ নারীরা বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজ করছেন, যেমন শিক্ষকতার পেশা, চিকিৎসার পেশা, সেনাবাহিনীর পেশা এবং অন্যান্য প্রগতিশীল কাজ যা জেন্ডার সমতাকে নির্দেশ করে।
একটি ধর্ম হিসাবে শিখ ধর্ম ব্যবস্থায়, একজন পুরুষের সমান একজন নারীকে ধরা হয়, যা বাইবেলে নেই। এ বলে তারা খ্রিস্ট ধর্মের উপর শিখ ধর্মকে প্রাধান্য দেয় এবং নারীর প্রতি সহানুভুতি দেখায়।
শিখ নারীদের ধর্মের কেন্দ্রীয় পুজার স্থান গুরুদ্বারে মুল কমিটিতে নির্বাচন করার জন্য পুরুষদের সাথে নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে, যারা শিখদের উপাসনালয় পরিচালনা করে।
এ ছাড়াও আছে-
এ সব নারী ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে তারা নারীর উন্নত অধিকার সম্পর্কে তাদের ধর্মের কথা বলতে চায়।