শিশুপাল | |
---|---|
পরিবার | দমঘোষ (পিতা) শ্রুতস্রবা (মাতা) বিশালা, ভদ্রা (স্ত্রী) |
সন্তান | ধৃষ্টকেতু, সত্যকেতু, সরভ, সুকেতু করেণুমতী (কন্যা)[১] |
শিশুপাল (সংস্কৃত: शिशुपाल) ছিলেন চেদী রাজ্যের রাজা দমঘোষ এবং বসুদেব ও কুন্তীর ভগিনী শ্রুতস্রবার পুত্র৷ রাজসভায় যুধিষ্ঠিরের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের সময়ে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের প্রতি শিশুপাল অষ্টোত্তর শততম কটুক্তির দ্বারা অপমানের সময়ে কৃষ্ণ চক্র দ্বারা তাঁকে হত্যা করেন৷ চেদী রাজ্যের রাজবংশের সন্তান হওয়ার দরুন শিশুপাল চৈদ্য নামেও পরিচিত ছিলেন৷[২]
শিশুপাল এবং তার মাসতুতো ভ্রাতা দন্তবক্র উভয়কে গোলোকধামে শ্রীবিষ্ণুর দুই দ্বাররক্ষী জয় ও বিজয়ের মর্ত্যলোকে তৃতীয় ও শেষ জন্ম বলে মনে করা হয়৷ কৃৃষ্ণের হাতে উভয়ে মৃৃত্যুবরণ করে ও পাপস্খলন করে তাঁরা আবার বিষ্ণুনিবাস বৈকুণ্ঠে প্রবেশ করার অনুমতি পান৷
মহাভারতে বর্ণিত রয়েছে যে শিশুপালের জন্মের সময় অস্বাভাবিকভাবে তার তিনটি চক্ষু ও চার হাত ছিলো৷ তাঁর পিতা ও মাতা এরূপ অস্বাভাবিক পুত্রপ্রাপ্তিতে চিন্তিত হয়ে তাকে একপ্রকার মেরে ফেলতে চাইলে দৈব আকাশবাণী হয় ও তাদের এই পাপ করা থেকে বিরত রেখে সাবধান করা হয় যে সদ্যোজাত শিশুটির মৃত্যুর সময় তখনও হয়নি৷ একই সাথে ভবিষ্যতবাণী করা হয় যে সদ্যোজাত শিশুপালের অস্বাভাবিক দেহাংশগুলি এক বিশেষ বালকের সংস্পর্শে লুপ্ত হবে ঐ একই জনের হাতে শিশুপাল ভবিষ্যতে নিহত হবে৷ সদ্যোজাত শিশুপালকে দেখতে তাঁর মাতুল্যভ্রাতা কৃষ্ণ চেদীরাজ্যে পদার্পণ করেন ও নিজের হাঁটুতে সদ্যোজাতকে রাখেন৷ এমতাবস্থায় শিশুপালের তৃৃতীয় নয়ন ও অতিরিক্ত দুটি হাত অবলুপ্ত হলে উপস্থিত সকলে শিশুপালের ভবিষ্যত পরিণতি বূঝতে পারেন এবং নিশ্চিত হন যে শিশুপালের মৃৃৃত্যু কৃষ্ণের হাতেই হবে৷ সমস্ত ঘটনা আন্দাজ করতে পেরে শিশুপালের মাতা শ্রুতস্রবা তার ভ্রাতুষ্পুত্র কৃৃষ্ণকে প্ররোচিত করেন যেন কৃষ্ণ তার এই ভ্রাতাটির ভবিষ্যত এক শত আটটি পর্যন্ত পাপ ক্ষমা করে দেন৷
বিদর্ভের রাজপুত্র রুক্মী শিশুপালের সাথে যথেষ্ট ঘনিষ্ট ছিলেন৷ তিনি তার ভগিনী রুক্মিণীর বিবাহ চেদীরাজ শিশুপালের সাথে দিতে চাইলে কৃষ্ণ বিবাহ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পূর্বেই তাঁকে অপহরণ করে বিবাহ করেন৷ শিশুপালের কৃৃষ্ণকে ঘৃণা করার এটিও অন্যতম কারণ৷
যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সময়ে তিনি ভীমকে চেদীদেশে নররাজা শিশুপালের কাছে যুধিষ্ঠিরের আনুগত্য স্বীকার করার কথা বললে শিশুপাল নির্বিরোধে তা স্বীকার করেন ও ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে আসা আমন্ত্রন গ্রহণ করেন৷
পাণ্ডবদের সিদ্ধান্তে সেই যজ্ঞে প্রধান অতিথিরূপে আমন্ত্রিত থাকেন বাসুদেব কৃৃষ্ণ৷ এই ঘটনা শিশুপালের মনে রাগের উদ্রেক ঘটায় এবং সভায় উপস্থিত সকলের সামনে তিনি কৃষ্ণকে অপমান করতে থাকেন৷ তিনি কৃষ্ণকে ভীরুচিত্ত ও রাজা হওয়ার অযোগ্য বলে অবমাননা করেন৷ [৩] তাঁর দেওয়া পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৃৃৃষ্ণ শিশুপালের একশত আটটি পাপকে ক্ষমা করেন৷ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে একটিও অধিক পাপবাক্য শিশুপাল বললে ঐ সভাস্থলেই সুদর্শন চক্র দিয়ে শিশুপালের শিরোচ্ছেদ করেন৷ শিশুপালের আত্মা দেহ থেকে বেরিয়ে শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে বিলীন হয় এবং শিশুপাল ইহজগৎ থেকে নিস্তার পান৷
সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে কবি মাঘের লেখা শিশুপালবধ কাব্যটি একটি অনবদ্য শাস্ত্রীয় সংস্কৃত সাহিত্য৷ এটি একটি মহাকাব্যিক কবিতাশৈলী যাতে ১৮০০ টি উচ্চ অলঙ্কৃত পঙ্ক্তি ও ২০ টি সর্গ ব্যবহার করা হয়,[৪] যা এটিকে ছয়টি অতুল্য সংস্কৃত মহাকাব্যে একটি বলে মান্যতা দেয়৷ কবির নামে এটি মাঘকাব্য নামেও পরিচিত৷