শেরপুর | |
---|---|
জেলা | |
বাংলাদেশে শেরপুর জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৫° উত্তর ৯০° পূর্ব / ২৫° উত্তর ৯০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
আয়তন | |
• মোট | ১,৩৬৩.৭৬ বর্গকিমি (৫২৬.৫৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০২২)[১] | |
• মোট | ১৫,০১,৮৫৩ |
• জনঘনত্ব | ১,১০০/বর্গকিমি (২,৯০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৮.৬০% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২১০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৮৯ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
শেরপুর জেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পূর্বে ১৮২৯-২০১৫ পর্যন্ত এটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ছিল। শেরপুর জেলার আয়তন ১,৩৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার। শেরপুর জেলা পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার একটি থানা ছিল। ১৯৭৮ সালে জামালপুর জেলার একটি মহকুমা ঘোষণা করা হয়। এরপর ১[২]৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এটিকে জেলায় উন্নীত করা হয়। শেরপুর শহর, দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ১৮৩ কিলোমিটার (১১৩.৭ মাইল) উত্তরে অবস্থিত।[৩][৪][৫]
শেরপুর অঞ্চল প্রাচীনকালে কামরূপা রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে এই এলাকা "দশকাহনিয়া বাজু" নামে পরিচিত ছিল। পূর্বে শেরপুরে যেতে ব্রহ্মপুত্র নদ খেয়া পাড়ি দিতে হত। খেয়া পারাপারের জন্য দশকাহন কড়ি নির্ধারিত ছিল বলে এ এলাকা দশকাহনিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভাওয়ালের গাজী, ঈসা খানের বংশধর থেকে দশকাহনিয়া এলাকা দখল করে নেয়। দশকাহনিয়া পরগনা পরবর্তীতে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজীর নামানুসারে শেরপুর নামে নামকরণ করা হয়। ওয়ারেন হেস্টিংস থেকে কর্ণওয়ালিস-এর সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং স্থানীয় জমিদারদের বিরুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয়; ফকির আন্দোলনের নেতা টিপু শাহ এই এলাকায় সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে এবং গরজরিপার তার রাজধানী স্থাপন করেন। খোশ মুহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শেরপুরের কামারের চরে ১৯০৬, ১৯১৪ ও ১৯১৭ সালে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৩৮-৪৮ সালে নানকার, টঙ্ক, বাওয়ালী, মহাজনী, ইজারাদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শেরপুরে কমিউনিস্টরা বিদ্রোহ করে। ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পশ্চিম দিকে পরিবর্তন করে এবং যমুনার সঙ্গে একত্রীকরণ করতে বাধ্য করে; এটি অনেক প্রাচীন ভবনেও মারাত্মক ক্ষতি করে।
এই জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে ময়মনসিংহ জেলা ও জামালপুর জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলা, পশ্চিমে জামালপুর জেলা।
এই জেলার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১২° সে. থেকে সর্বোচ্চ ৩৩.৩° সে.। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২১৭৪ মি.মি.।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র জেলার একমাত্র নদ। এছাড়া প্রধান নদীসমূহ হচ্ছে:
খলং এবং কালাগাঙ এখন মৃত নদী। এছাড়াও আরো অনেক নদী রয়েছে৷
শেরপুর জেলা ৫টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা, ৫২টি ইউনিয়ন, ৪৫৮টি মৌজা, ৬৭৮টি গ্রাম ও ৩টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
শেরপুর জেলায় মোট ৫টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:
ক্রম নং | উপজেলা | আয়তন[৬] (বর্গ কিলোমিটারে) |
প্রশাসনিক থানা | আওতাধীন এলাকাসমূহ |
---|---|---|---|---|
০১ | ঝিনাইগাতী | ২৪২.০৭ | ঝিনাইগাতী | ইউনিয়ন (৭টি): কাংশা, ধানশাইল, নলকুড়া, গৌরীপুর, ঝিনাইগাতী, হাতীবান্ধা এবং মালিঝিকান্দা |
০২ | নকলা | ১৭৩.৮৪ | নকলা | পৌরসভা (১টি): নকলা |
ইউনিয়ন (৯টি): গণপদ্দী, নকলা, উরফা, গৌড়দ্বার, বানেশ্বর্দী, পাঠাকাটা, টালকী, চর অষ্টধর এবং চন্দ্রকোনা | ||||
০৩ | নালিতাবাড়ী | ৩২৭.৬১ | নালিতাবাড়ী | পৌরসভা (১টি): নালিতাবাড়ী |
ইউনিয়ন (১২টি): পোড়াগাঁও, নন্নী, রাজনগর, নয়াবিল, রামচন্দ্রকুড়া, কাকরকান্দি, নালিতাবাড়ী, রূপনারায়ণকুড়া, মরিচপুরান, যোগানিয়া, বাঘবেড় এবং কলসপাড় | ||||
০৪ | শেরপুর সদর | ৩৭২.৮৯ | শেরপুর সদর | পৌরসভা (১টি): শেরপুর |
ইউনিয়ন (১৪টি): কামারের চর, চর শেরপুর, বাজিতখিলা, গাজির খামার, ধলা, পাকুড়িয়া, ভাতশালা, লছমনপুর, চর মোচারিয়া, চর পক্ষীমারী, বলাইরচর, কামারিয়া, রৌহা এবং বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি | ||||
০৫ | শ্রীবরদী | ২৪৮.২৫ | শ্রীবরদী | পৌরসভা (১টি): শ্রীবরদী |
ইউনিয়ন (১০টি): সিংগাবরুনা, রানীশিমুল, কাকিলাকুড়া, তাতীহাটি, গোঁসাইপুর, শ্রীবরদী, ভেলুয়া, খড়িয়া কাজিরচর, কুড়িকাহনিয়া এবং গড়জরিপা |
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৭] | সংসদ সদস্য[৮][৯][১০][১১][১২] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
১৪৩ শেরপুর-১ | শেরপুর সদর উপজেলা | শূণ্য | |
১৪৪ শেরপুর-২ | নকলা উপজেলা এবং নালিতাবাড়ী উপজেলা | শূণ্য | |
১৪৫ শেরপুর-৩ | ঝিনাইগাতী উপজেলা এবং শ্রীবরদী উপজেলা | শূণ্য |
জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ হচ্ছে:
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শেরপুর ১১ নং সেক্টরের অধীনে ছিলো।[১৩] দীর্ঘ ৯ মাস জেলার বর্তমান ৫টি উপজেলার ৩০/৪০টি এলাকায় ছোট বড় যুদ্ধ হয়েছে। জগৎপুর গণহত্যা, নাকুগাও ডালু গণহত্যা, সোহাগপুর গণহত্যা, নকশী যুদ্ধ ও গণহত্যা, নারায়ন খোলা যুদ্ধ ও গণহত্যা, শেরপুর সদর উপজেলায় সূর্যদীর গণহত্যায় মুক্তিযোদ্ধা ও অনেক বেসামরিক জনগণ নিহত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ জেলার ১ জন বীর বীরবিক্রম, ২ জন বীর প্রতীক উপাধি পেয়েছেন। এরা হলেন, শহীদ শাহ মোতাসীম বিল্লাহ খুররম বীর বিক্রম, কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সি বীর প্রতীক ও ডাঃ মাহমুদুর রহমান বীর প্রতীক। অবশেষে ঝিনাইগাতী ৪ ডিসেম্বর, শ্রীবরদী ৬ ডিসেম্বর, শেরপুর সদর ৭ ডিসেম্বর ও নকলা ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। ৭ ডিসেম্বর শহরের শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্কে হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করেছিল ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জগজিৎ সিং অরোরা এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এখানে দাঁড়িয়েই তিনি বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা, মস্কো, আকাশবাণী সহ বিভিন্ন বেতার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঢাকা মুক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।
বধ্যভূমি: আহমদ নগর (ঝিনাইগাতী), ঝাওগড়া (শেরপুর), বিধবা পল্লী (সোহাগপুর, নালিতাবাড়ী), কয়ারি রোড (ঝিনাইগাতী) এই জেলার মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য।
যুদ্ধক্ষেত্র: জুলগাঁও কাটাখালি ব্রীজ, নাকুগাও স্থলবন্দর ইত্যাদি।
মোট জনসংখ্যা ২৬,৩৬,১৬২ জন (জাতীয় পুষ্টি জরিপ); মোট খানার সংখ্যা ৩,৭২,৯৬৪ টি;।
বর্তমান শেরপুর জেলার উত্তর সীমান্তের গারো পাহাড় ও তার প্বার্শবর্তী সমতল এলাকায় গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাই এবং রাজবংশী ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ শতশত বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন কোচ ভাষা, গারো ভাষা প্রভৃতি নিজস্ব ভাষায় কথা বলে।
জেলায় ১৭৪৯ টি মসজিদ, ৫৮ টি মন্দির, ২৯ টি গির্জা, ১৫ টি মাজার ও ১৭৫ টি ঈদগাহ মাঠ আছে।
জেলার ৩ টি সরকারি কলেজ, ১৬ টি বেসরকারী কলেজ, ৩ টি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ১৪৬ টি বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ২৮ টি জুনিয়র হাইস্কুল, ৩৫৮ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪৬ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৯২ টি মাদ্রাসা, ১ টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ১ টি নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ১ টি ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু নিচে দেয়া হলো:
জেলার ৯৩ টি ক্লাব, ৪ টি গণগ্রন্থাগার, ৩ টি নাট্যমঞ্চ, ১৫ টি নাট্যদল,৫ টি সাহিত্য সমিতি, ৩০ টি মহিলা সংগঠন, ১৩ টি সিনেমা হল, ১ টি শিল্পকলা একাডেমী এবং ১ টি শিশু একাডেমী আছে।
ধান, পাট, গম, সরিষা, আলু, বাদাম, আখ এবং তরিতরকারী এই জেলার প্রধান ফসল।
এই জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিম্নরূপ:
শেরপুরের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক, যদিও অকৃষি অর্থনৈতিক কার্যক্রম জেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। জেলার মোট ৩,৩৫,৪৬০ বসতবাড়ির মধ্যে, ৬০.১২% খামার যা বিভিন্নরকম ফসল উৎপন্ন করে যেমন স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল ধান, গম, পাট, সরিষা, আলু, ডাল, বিভিন্নরকম শাকসবজি, তামাক এবং অন্যান্য। কলা, আম, জাম, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, কাঁঠাল, তাল, জাম্বুরা, বেল, পেঁপে, বড়ই, কামরাঙ্গা, আতাফল ইত্যাদি বিভিন্ন ফল চাষ করা হয়। দেশের অন্যান্য অংশের মতো এই জেলায়ও বিভিন্ন জাতের মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। নদী, উপনদী চ্যানেল এবং খাঁড়ি থেকে বিভন্ন প্রকার মাছ ধরা হয়।জনপ্রিয় স্বাদুপানির মাছ হচ্ছে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউস, চিতল, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাস, গজাড়, শোল, পাবদা, কই, শিং, ফালি, বেলে, টেংরা ইত্যাদি। এছাড়াও সদ্য পরিচিত বিদেশী বিভিন্নরকম মাছ হচ্ছে তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ইত্যাদি। এছাড়াও ফসল, গৃহপালিত পশু ও মৎস্য পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। অকৃষি কর্মকাণ্ডেও জেলার অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্র বহুলাংশে ধানের চাতালের উপর নির্ভরশীল। প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি কুঁড়া, তুষ সহ অনেক ছোট ছোট শিল্পের যোগান ও পরিবহন খাতের গ্রাহক হয়ে সাহায্য করছে এইসব চাতাল। এ অঞ্চেলর পাহাড়ে লাল বনমোরগ ও বিভিন্ন প্রাণী পাওয়া যায়।
|তারিখ=
(সাহায্য); |শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)