শেরপুর সদর | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে শেরপুর সদর উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৯′৫১″ উত্তর ৯০°১′৯″ পূর্ব / ২৪.৯৯৭৫০° উত্তর ৯০.০১৯১৭° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | শেরপুর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৩৭২.৮৯ বর্গকিমি (১৪৩.৯৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ৪,৯৭,১৭৯ |
• জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৫০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৩৬.৭% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৮৯ ৮৮ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
শেরপুর সদর উপজেলা বাংলাদেশের শেরপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি ১৪ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি ময়মনসিংহ বিভাগের অধীন শেরপুর জেলার ৫ টি উপজেলার একটি এবং এটি জেলার দক্ষিণভাগে অবস্থিত। শেরপুর সদর উপজেলার উত্তরে শ্রীবরদী উপজেলা, ঝিনাইগাতী উপজেলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলা, দক্ষিণে জামালপুর জেলার জামালপুর সদর উপজেলা, পূর্বে নকলা উপজেলা, পশ্চিমে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলা ও মেলান্দহ উপজেলা।
শেরপুর সদর উপজেলার আয়তন ৩৭২.৮৯ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী ৪,৯৭,১৭৯ জন; বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪৬%। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৩৩৩ জন।[২]
শেরপুর একটি প্রাচীন জনপদ। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে এ অঞ্চল কামরূপ রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। কামরূপ প্রাগজ্যোতিষ দেশ নামে পরিচিত ছিল। প্রাগজ্যোতিষ (কামরূপ) এর রাজধানী ছিল প্রাগজ্যোতিষপুর। ঐ সময় বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব হয় এবং সমগ্র অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে।
ময়মনসিংহ জেলা বিবরণীর রচয়িতা এফএ সাকসির মতে এ অঞ্চল পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দশক পর্যন্ত কোচ সামন্তদের অধীনে ছিল। দলিপা সামন্ত নামে এক কোচ রাজা এ অঞ্চল শাসন করত। তার রাজধানী ছিল গড়দলিপা। গড়দলিপা বা গড়জরিপা এখন শেরপুর জেলার শ্রীবর্দি থানার অন্তর্ভুক্ত। কোচবংশীয় রাজারা বহুবছর গড়দলিপা শাসন করে। বাংলার স্বাধীন সুলতানদের ক্রমাগত আক্রমণে কোচ সামন্তদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। ১৪৯১ সালে সাইফুদ্দিন দ্বিতীয় ফিরোজ শাহের নির্দেশে সেনাপতি মজলিস খাঁ কোচরাজা দলিপা সামন্তকে পরাজিত ও হত্যা করে গড়দলিপা দখল করে। সেই থেকে এ অঞ্চল মুসলমানদের দখলে আসে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে (১৬০৫-১৬১৭) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মুঘলদের সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
শেরপুর একটি প্রাচীন জনপদ। আগে এর নাম ছিল দশকাহনিয়া। প্রাচীন কালে ব্রহ্মপুত্র নদ অনেক প্রশস্ত ছিল। জামালপুর থেকে নদী পাড়ি দিয়ে শেরপুর যেতে খেয়া ভাড়া দিতে হতো দশ কাহনকড়ি। আর এ থেকে এই স্থান “দশকাহনিয়া” নামে পরিচিত হয়। শেরপুর নামকরণ সম্পর্কে বলা হয়, বাংলার নবাবী আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশ কাহনিয়া অঞ্চল দখল করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। এই শেরআলী গাজীর নামে দশ কাহনিয়ার নাম হয় শেরপুর।
শেরপুর সদর উপজেলা ২৪°৫৫´ থেকে ২৫°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৩´ থেকে ৯০°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[৩] এর উত্তরে শ্রীবর্দী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা, দক্ষিণে জামালপুর সদর উপজেলা, পূর্বে নকলা উপজেলা, পশ্চিমে ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলা।[৩] এ উপজেলার মৌসুমী জলবায়ু উষ্ণ, আর্দ্র ও নাতিশীতোষ্ণ। শীত ও গরম মধ্যম ধরনের; চরমাভাবাপন্ন নয়। শীতকালে প্রচুর কুয়াশা হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো কোনো বছর বৃষ্টিপাত হয়। এই সময় তাপমাত্রা ১৫° থেকে ২৭° সেলসিয়াস থাকে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩০° থেকে ৩৩° সেলসিয়াস।
শেরপুর সদর উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শেরপুর সদর থানার আওতাধীন।[৪]
এ উপজেলায় ১০০টি মৌজা, ১৮৮টি গ্রাম রয়েছে।[২]
১৮৬৯ সালে শেরপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৬ এপ্রিল পাকিস্তান বাহিনী শেরপুরে প্রবেশ করে।[৫] ৭ ডিসেম্বর শেরপুর হানাদার মুক্ত হয়।[৬] ১৯৭৯ সালে শেরপুর মহকুমা এবং ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেরপুর জেলা ঘোষিত হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সালে শেরপুর সদর উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর সদর উপজেলা নিয়ে শেরপুর-১ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪৩ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।[৭]
নির্বাচিত সাংসদগণ:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ৪,৯৭,১৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,৫০,৩৭৬ জন এবং মহিলা ২,৪৬,৮০৩ জন। লোক সংখ্যার ঘনত্ব ১,৩৩৩ জন/ বর্গ কিলোমিটার। শেরপুর সদরে প্রধানত মুসলমান ও হিন্দু এই দুই সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। অন্যান্য ধর্মের লোকসংখ্যা একেবারেই কম। এর মধ্যে মুসলমান জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুসলিম ৪,৮৩,৫০১, হিন্দু ১২,৯২৩, বৌদ্ধ ২৮, খ্রিস্টান ৫৫৭ এবং অন্যান্য ১৭০ জন।[২]
শেরপুর সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হলো- শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি (১৮৮৭), গোবিন্দকুমার পিস মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট (১৯১৮), সাপমারী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), যোগিনীমুরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), শেরপুর জিকে পাইলট হাইস্কুল (১৯১৯), শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০)।[৩]
শেরপুর সদর উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো- শেরপুর সরকারি কলেজ (১৯৬৪), শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৭২), ডা. সেকান্দর আলী ডিগ্রি কলেজ, মডেল গার্লস ডিগ্রি কলেজ।[৩]
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (২০০১), কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (১৯৫৭), শেরপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (২০০৪), জামিয়া সিদ্দীকিয়া তেরাবাজার মাদ্রাসা (১৯৭৮), ইদ্রিসিয়া আলীম মাদ্রাসা (১৯৯১)।[৩]
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে শেরপুর সদর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৯টি, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৮টি, বেসরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫টি, কিন্ডার গার্টেন ৭১টি, এনজিও স্কুল ১২২টি; সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ২টি, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৫৪ টি; সরকারি কলেজ ২টি, বেসরকারি কলেজ ৭টি; মাদ্রাসা ২৭টি, কওমি মাদ্রাসা ৪৬টি, এবতেদায়ি মাদ্রাসা ৫টি।[২]
উপজেলায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি জেনারেল হাসপাতাল,একটি সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট, ১ টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ১৩টি উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।[২] ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে শেরপুর সদর উপজেলায় ৮টি বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক এবং ১৯টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে।[২]
শেরপুর সদর মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সব ধরনের ফসলই এখানে উৎপন্ন হয়। চরাঞ্চলে ধান, আলু, পাট, তামাক, বেগুন, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, গম এবং বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপন্ন হয়। এখানকার মাটি যে কোন ফসলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। শিল্প ও কলকারখানার মধ্যে আছে চালকল, ময়দাকল, তেলকল, বিড়ি কারখানা, পলিথিন কারখানা, ছাপাখানা।
শেরপুরে সড়কপথে সহজে যোগাযোগ করা যায়। সরকারি বাস সার্ভিসের পাশাপাশি বেসরকারি অসংখ্য বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়া জলপথে নৌকা পরিবহনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। শেরপুরে কোন রেলপথ নেই। উপজেলার মোট সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ৬৬৮.৮ কিলোমিটার; এর মধ্যে পাকা রাস্তা ২৬৪.১১ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা ৪০৪.৬৮ কিলোমিটার।[১৯]
শেরপুর সদর উপজেলার প্রধান নদ-নদী হলো ব্রহ্মপুত্র নদ, মৃগি নদী, দশআনি নদী। বিলের মধ্যে আছে আউরাবাউরা বিল, মাউসি বিল, দুবলাকুরি বিল, রেওয়া বিল, বারবিলা বিল, ইসলি বিল, নিশলা বিল, ধলা বিল, বুরলা বিল, কালডাঙ্গের বিল, রুরুলী বিল, দুরুঙ্গী বিল, মরাগাঙ্গ বিল, টাকি বিল, কাডালতলা বিল, হাপনাই বিল, গোলডাঙ্গার বিল ইত্যাদি।