শেহবাজ শরীফ | |
---|---|
شہباز شریف | |
![]() মিয়া শেহবাজ শরীফ | |
পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ৪ মার্চ ২০২৪ | |
রাষ্ট্রপতি | আরিফ আলভি আসিফ আলি জারদারি |
পূর্বসূরী | আনোয়ারুল হক কাকার (তত্ত্বাবাধয়ক) হিসাবে |
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ৮ জুন ২০১৩ | |
রাষ্ট্রপতি | আসিফ আলি জারদারি |
প্রধানমন্ত্রী | ইউসুফ রাজা গিলানি রাজা পারভেজ আশরাফ Mir Hazar Khan Khoso |
গভর্নর | মাখদুম আহম্মেদ মেহমুদ লতিফ খোশা সালমান তাসের |
পূর্বসূরী | Dost Muhammad Khosa |
উত্তরসূরী | Najam Sethi |
কাজের মেয়াদ ৮ জুন ২০০৮ – ২৬ মার্চ ২০১৩ | |
President of Pakistan Muslim League (N) | |
কাজের মেয়াদ ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ – ১২ অক্টোবর ১৯৯৯ | |
পূর্বসূরী | Mian Muhammad Afzal Hayat |
উত্তরসূরী | Chaudhry Pervaiz Elahi |
কাজের মেয়াদ 30 September 2009 – 27 July 2010 | |
উপরাষ্ট্রপতি | Ghaus Ali Shah |
পূর্বসূরী | Chaudhry Nisar |
উত্তরসূরী | নওয়াজ শরীফ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | লাহোর, পাঞ্জাব, পাকিস্তান | ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫১
জাতীয়তা | পাকিস্তানি |
রাজনৈতিক দল | পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) |
দাম্পত্য সঙ্গী | বেগম নুসরাত (বি. ১৯৭৩) আলিয়া হানি (বি. ১৯৯৩; বিচ্ছেদ. ১৯৯৪) তেহমিনা দুরানি (বি. ২০০৩) |
সন্তান | ৪ ( হামজা শাহবাজ সহ) |
পিতামাতা | মুহাম্মদ শরীফ এবং বেগম আখতার |
জীবিকা | রাজনীতিবিদ |
মিয়া মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ (গুরুমুখী: شہباز شریف, উচ্চারিত [ ʃɛhˈbaːz ʃəˈriːf]; জন্ম: ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫১) একজন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ। তিনি ২০২৪ সালের ৪ মার্চ থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১১ এপ্রিল তিনি নবগঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি ৩ মেয়াদে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১]
তিনি বিশিষ্ট রাজনৈতিক শরীফ পরিবারের ব্যক্তিত্ব, তিনি মিয়া শরীফ (ইত্তেফাক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা) এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই, যিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগের (এন) সভাপতিও ছিলেন। শেহবাজ শরীফ ১৯৮৮ সালে পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন এবং ১৯৯০ সালে জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে তিনি আবার পাঞ্জাব অধিবেশনে নির্বাচিত হন এবং বিরোধীদলীয় নেতা হন। ১৯৯৭ সালে তৃতীয়বারের মত নির্বাচন করে শরিফ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ তারিখে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শরিফ কিছু বছর সৌদি আরবে স্ব-নির্বাসনে যান এবং ২০০৭ সালে পাকিস্তানে আসেন। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রদেশের পিএমএল-এন বিজয়ী হওয়ার পর শরীফ দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিন। । ২০১৩ সালে তিনি তৃতীয়বার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।[২]
শেহজাদ শরীফ ১৯৫১ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ শরীফ ছিলেন একজন ঊর্ধ্বতন মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, যার পরিবার কাশ্মীরে ব্যবসা করতেন এবং শেষ পর্যন্ত বিংশ শতাব্দীর শুরুতে পাঞ্জাবের অমৃতসর জেলার যাতি উমরা গ্রামে বসবাস করতেন। তার মা এর পরিবার পুলওয়ামা থেকে এসেছিলেন।[৩] জিন্নাহর নেতৃত্বে আন্দোলন এবং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পর, তার পিতা-মাতা অমৃতসর থেকে লাহোরে চলে আসেন।[৪] শরীফ সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, লাহোর থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতকের পর, তিনি তার পরিবারের মালিকানাধীন ইত্তেফাক গ্রুপে যোগদান করেন এবং ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন। শেহবাজ উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, ইংরেজি, জার্মান ও আরবি ভাষায় কথা বলতে পারেন।[৫]
তার দুই ভাই রয়েছে, আব্বাস শরীফ, এবং নওয়াজ শরীফ। নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তার ভাবী, কুলসুম বাট, পাকিস্তানের তিনবারের ফার্স্ট লেডী।[৬]
শেহবাজ প্রথমে তার চাচাত-বোন, নুসরাত শেহবাজকে বিয়ে করেন।[৭] এই দম্পতি ১৯৭৩ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন,[৮] এবং তাদের চারজন সন্তান রয়েছে, সালমান ও হামজা, এবং দুই কন্যা যাবেরিয়া ও রাবিয়া।[৯]
১৯৯৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন আলিয়া হানি কে। অবশ্য এক বছর পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।[১]
শরীফ ২০০৩ সালে তিনি তৃতীয় বার তেহমিনা দুররানি কে বিবাহ করেন, যিনি My Feudal Lord এর লেখক।[১০]
শরীফ পেশাগতভাবে একজন ব্যবসায়ী,[১১] এবং যৌথভাবে ইত্তেফাক গ্রুপের মালিক,যেটি একটি মাল্টি মিলিয়ন-ডলারের পিন্ডীভূত লৌহ কোম্পানি।[১২]
১০ এপ্রিল ২০২২-এ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি অনাস্থা ভোটের পরে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হলে বিরোধী দলগুলি দ্বারা শরীফকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল।[১৩][১৪]
তিনি ১১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।[১৫] একই দিনে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। শপথ বাক্য পাঠ করান সিনেটের চেয়ারম্যান সাদিক সানজরানি, যিনি রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভির পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভি শারীরিক "অসুবিধা" অনুভবের কারণে চিকিৎসা ছুটিতে ছিলেন।[১৬] পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)-এর সরকার দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়। শরিফ নেতৃত্বাধীন প্রশাসন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সঙ্গে একটি ত্রাণ চুক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতির আশা করেছিল।[১৭] তবে তারা শুধুমাত্র সীমিত সাড়া পায়।[১৮] অন্যদিকে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা নিয়ে স্পষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যদিও চীন তার দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করেছে।[১৯]
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) আসিফ আলী জারদারি এবং শেহবাজ শরিফ ঘোষণা করেন যে, তাদের দলগুলো ২০২৪ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পর একটি জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব জানান, "নওয়াজ শরিফের সুপারিশে শেহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে।"[২০] পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে পিএমএল-এন প্রার্থীকে সমর্থন করবেন এবং পিপিপি পরবর্তী মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে না।[২১] এক জ্যেষ্ঠ পিপিপি নেতা বলেন, দলটি জোট সরকারে ন্যূনতম ভূমিকা রাখতে চায় এবং উল্লেখ করেন, "আমরা সেই বিশাল দায়িত্ব নিতে চাই না।"[২২] বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ব্যবস্থা সেনাবাহিনীর সমর্থন উপভোগ করছে।[২২]
মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট – পাকিস্তান, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কিউ), ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টি এবং বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি একযোগে পিএমএল-এন এবং পিপিপি জোটে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে। এর ফলে তারা জাতীয় পরিষদে সরাসরি নির্বাচিত ১৫২টি আসন ধরে রাখতে সক্ষম হবে, যা সংরক্ষিত আসনে বাড়তি অর্জনের মাধ্যমে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।[২৩] এর জবাবে, ইমরান খান এই জোট সরকারকে "দিন-দুপুরে ডাকাতি" বলে আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেন যে "চুরি করা ভোট দিয়ে সরকার গঠন করার দুঃসাহসিকতায় নামবেন না।"[২৪] পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন যে পিটিআইয়ের ক্রমবর্ধমান সমর্থন ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করেছে, যার ফলে শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার শুরু হওয়ার আগেই দুর্বল মনে হচ্ছে।[২২]
৩ মার্চ ২০২৪ তারিখে শেহবাজ শরিফ দ্বিতীয় মেয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। তিনি ২০১ ভোট পান, যেখানে পিটিআই-সমর্থিত ওমর আইয়ুব খান, যিনি পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসকের নাতি, পান ৯২ ভোট। জাতীয় পরিষদে এই নির্বাচন প্রায় এক মাসের রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর অনুষ্ঠিত হয়।[২৫]