শোভনা শিলোত্রী সমর্থ | |
---|---|
জন্ম | সরোজ শিলোত্রী ৭ নভেম্বর ১৯১৬ |
মৃত্যু | ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০০ | (বয়স ৮৩)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র পরিচালক, নির্মাতা |
দাম্পত্য সঙ্গী | কুমারসেন সমর্থ |
সন্তান | নূতন তনুজা চতুরা সমর্থ জয়দ্বীপ |
পিতা-মাতা | রতন বাঈ প্রভাকর শিলোত্রী |
আত্মীয় | কাজল মুখোপাধ্যায়(নাতনী) শমু মুখোপাধ্যায় (জামাতা) মনীষ বাল (নাতি) নলিনী জয়ন্ত (কাকাতো ভাই) দেখুন - মুখোপাধ্যায়-সমর্থ পরিবার |
শোভনা শিলোত্রী সমর্থ (মারাঠি: शोभना समर्थ; জন্ম: ৭ নভেম্বর, ১৯১৬ - মৃত্যু: ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০০) মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ছিলেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের শুরুর দিককার সবাক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন শোভনা সমর্থ।
মারাঠি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৩৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নিগাহেন নফরাত হিন্দি চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেন তিনি। তবে, ১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাম রাজ্য চলচ্চিত্রে সীতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি।[১]
৭ নভেম্বর, ১৯১৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বোম্বেতে সরোজ শিলোত্রী নামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। বাবা পি এস শিলোত্রী পথিকৃৎ ব্যাংকাররূপে বোম্বেতে শিলোত্রী ব্যাংক চালু করেন। তাঁর মা রতন বাঈ ১৯৩৬ সালে মারাঠি চলচ্চিত্রই সরাজিয়াছায়া সীমিউয়ার নামের চলচ্চিত্রের অভিনয় করেন। শুরুতে এক বছরের জন্য বোম্বের ক্যাথেড্রাল স্কুলে ভর্তি হন। ১৯২৮ সালে তাঁর পিতা আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। এরফলে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘটে। এরপর ১৯৩১ সালে বেঙ্গালুরুতে তাদের পরিবারে স্থানান্তরিত হয়। সেখানকার বল্ডউইন গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি হন তিনি। জীবিকার তাগিদে তাঁর বাবা ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা প্রদান করে অর্থ উপার্জন করতেন। ডিসেম্বর, ১৯৩১ সালে তাঁর বাবা হৃদযন্ত্রক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে মা ও কন্যা বোম্বে ত্যাগ করে মাতৃসম্পর্কীয় কাকার কাছে ফিরে যান। পরবর্তীতে তিনি কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি হন। তারপর তিনি চলচ্চিত্র জগতে যোগ দেন। ফলে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর কাকা চলচ্চিত্রে যোগদানের বিষয়ে বিরোধিতা করলে তাঁরা গৃহত্যাগ করতে বাধ্য হন। উল্লেখ্য যে, শোভনার কাকাতো বোন নলিনী জয়ন্ত পরবর্তীকালে অভিনেত্রী হয়েছিলেন।[২] শোভনাও জীবিকার তাগিদে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা প্রদানে অগ্রসর হন। সম্মানীয় বাবু এন এম সমর্থের পুত্র ও ভবিষ্যতের পতি কুমারসেন সমর্থের সাথে তিনি পরিচিত হন। কুমারসেন সদ্য জার্মানি থেকে ফিরে এসেছিলেন ও চলচ্চিত্র পরিচালনায় সবিশেষ আগ্রহ ছিল তার। তারা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন ও শোভনা তার প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[৩]
১৯৩৫ সালে শোভনার প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্রই ছিল অরফ্যান্স অব সোসাইটি যা বিনায়ক পরিচালনায় করেন। কোলাপুরের সিনেমায় এটি নিগাহেন নফরাত বা বিলাশী ঈশ্বর নামে পরিচিত। এতে বিনায়ক ও বাবুরাও পেন্ধর্কার অভিনয় করেছিলেন। চলচ্চিত্রটি ব্যবসা সফল না হলেও শোভনা তার অভিনয়ের জন্য সুখ্যাতি অর্জন করেন।[৩][৪] উর্দু ও মারাঠি উভয় ভাষায় চলচ্চিত্রটির বহুভাষায় নির্মিত হয়। এক স্বাক্ষাৎকারে শোভনা দাবী করেন যে, চলচ্চিত্রে অভিনয়কালীন তিনি উর্দু ভাষা জানতেন না। কেবলমাত্র সংলাপ ব্যবহার পরবর্তীকালে ঐ ভাষার প্রয়োগ সম্পর্কে অবগত হন তিনি।[২] কোলাপুর সিনেটোনে তেরোমাস অবস্থান করলেও একটিমাত্র চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
কোলাপুর সিনেটোন ছেড়ে সাগর মুভিটোনে সাগর ফিল্ম কোম্পানির সাথে যুক্ত হন তিনি। সেখানে ১৯৩৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি চলচ্চিত্র কোকিলায় অভিনয় করেন। সর্বোত্তম বাদামীর পরিচালনায় ঐ চলচ্চিত্রের তার সাথে আরও অভিনয় করেন মতিলাল, সবিতা দেবী ও সিতারা দেবী। সাগর ফিল্মে থাকাবস্থায় ১৯৩৬ সালে সি এম লুহরের পরিচালনায় দো দিওয়ানে চলচ্চিত্রে অংশ নেন। এতে তার সাথে অভিনয় করেন মতিলাল, ইয়াকুব ও অরুণা দেবী।
১৯৩৭ সালের শেষদিকে সাগর ত্যাগ করে জেনারেল ফিল্মসে যুক্ত হন। মোহন সিনহার পরিচালনায় নিরালা হিন্দুস্তান চলচ্চিত্রে প্রেম আদিব ও ওয়াস্তির সাথে অভিনয় করেন। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র পতি পত্নীতে অংশ নেন। ভি এম গুঞ্জলের পরিচালনায় তার সাথে আরো ছিলেন ইয়াকুব, সিতারা দেবী ও ওয়াস্তি। ১৯৩৯ সালে হিন্দুস্তান সিনেটোনে যোগ দিয়ে চারটি চলচ্চিত্রে অংশ নেন। ১৯৪১ সালে নিজ স্বামী কুমারসেন সমর্থের পরিচালনায় ঘর জামাইয়ে দামুয়ান্না মালভঙ্করের সাথে অভিনয় করেন।
১৯৪২ সালে তার চলচ্চিত্র জীবনের সেরা ভারত মিলাপে অংশ নেন। বিজয় ভাটের পরিচালনায় দুর্গা খোত কৈকেয়ী, শোভনা সীতা এবং প্রেম আদিব রাম সেজেছিলেন। এরপর ১৯৪৩ সালে রাম রাজ্য চলচ্চিত্রে শোভনা সীতা ও প্রেম আদিব রামের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এ জুটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে ও দর্শকমহলে তুমুল সাড়া জাগায়। বেশ কয়েকবছর তাদেরকে রাম ও সীতা নামে পরিচিত করা হয়।[৫]
পরবর্তীকালে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজকের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও দুইটি চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন তিনি। ঐ চলচ্চিত্রগুলোর মাধ্যমে দুই কন্যা নূতন ও তনুজা'র অভিনয় জীবনের সূত্রপাত ঘটে।
মুম্বইয়ের ভিলে পার্লে (ই) এলাকায় বসবাসকারী পরিচালক ও সিনেমাটোগ্রাফার কুমারসেন সমর্থের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। তাদের নূতন, তনুজা, চতুরা নাম্নী তিন কন্যা ও জয়দীপ নামের এক পুত্রসন্তান রয়েছে।
পরবর্তীতে এ দম্পতির সংসার ভেঙ্গে যায় ও অভিনেতা মতিলালের সাথে সম্পর্ক গড়েন।[৬] অন্য কন্যা রেশমা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে অবস্থান করছেন। চতুরা ও রেশমা কখনো চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেননি। নূতনের পুত্র মনীষ বাল, তনুজার কন্যাদ্বয় কাজল ও তানিসা রয়েছে। কাজল অভিনেতা অজয় দেবগণ এবং তনুজা শমু মুখার্জীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
কন্যা নূতনের সাথে দীর্ঘ দুই দশকের অধিককাল দূরে ছিলেন। ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ সালে ক্যান্সারে নূতনের মৃত্যুর পূর্বে ১৯৮৩ সালে একত্রিত হন তিনি। ২০০০ সালে তিনিও একই ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। তার সাত নাতনী ও এক নাতি ছিল।
১৯৯৬ সালে ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন তিনি।[৭]