শোভা গুর্তু

শোভা গুর্তু
প্রাথমিক তথ্য
জন্মনামভানুমতি শিরোদকর
জন্ম(১৯২৫-০২-০৮)৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২৫
বেলগাম, কর্ণাটক, ভারত
মৃত্যু২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৪(2004-09-27) (বয়স ৭৯)
মুম্বাই, ভারত
ধরনহিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত
পেশাসংগীত শিল্পী(গায়িকা)
কার্যকাল১৯৪০–২০০৪

শোভা গুর্তু (১৯২৫-২০০৪) একজন ভারতীয় গায়িকা যিনি তার লঘু হিন্দুস্তানি ধ্রুপদী ধারার গায়নের জন্য বিখ্যাত। যদিও বিশুদ্ধ ধ্রুপদী সঙ্গীতের উপরও তার সমান দখল ছিল, তবুও লঘু ধ্রুপদী সঙ্গীতের মাধ্যমেই তিনি খ্যাতি অর্জন করেন এবং কালক্রমে ঠুমরি রানী [] নামে পরিচিত হন। ২০০২ সালে তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। [][]

পটভূমি এবং ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

শোভা গুর্তু ওরফে ভানুমতি শিরোদকর ১৯২৫ সালে বেলগাঁও (বর্তমান কর্ণাটক ) -এ জন্মগ্রহণ করেন। তার মা মেনকাবাই শিরোদকর ছিলেন একজন পেশাদার নৃত্যশিল্পী। মেনকাবাই ছিলেন জয়পুর-আত্রৌলি ঘরানার ওস্তাদ আল্লাদিয়া খানের সংগীত শিষ্যা ছিলেন। [] তাঁর কাছ থেকেই শোভা খুব ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন।

কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ বিশ্বনাথ গুর্তুকে বিবাহ করার পর তিনি শোভা গুর্তু নামে পরিচিত হন। তার শ্বশুর পণ্ডিত নারায়ণ নাথ গুর্তু পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি একজন পণ্ডিত ছিলেন এবং শখের সেতার শিল্পীও ছিলেন। [] তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে বেলগাঁও জেলায় কর্মরত ছিলেন, যেখানে শোভা এবং বিশ্বনাথের মধ্যে পরিচয় হয়। শোভা ও বিশ্বনাথের তিন পুত্র ছিল, রবি, ত্রিলোক এবং নরেন্দ্র। তাদের বড় ছেলে রবি গুর্তু ছিলেন একজন তাল বাদক। আরেক ছেলে, ত্রিলোক গুর্তু একজন বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্র বাদক। []

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

শোভার আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল ওস্তাদ ভুরজি খান -এর কাছ থেকে, যিনি কোলহাপুরের জয়পুর-আত্রৌলি ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা ওস্তাদ আল্লাদিয়া খানের কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন। যখন শোভার মা যখন ছোট ছিলেন, তখন তিনি তার কাছ থেকে সঙ্গীত শিখছিলেন। শোভা ওস্তাদ আল্লাদিয়া খানের ভাগ্নে ওস্তাদ নাথান খানের কাছ থেকে সংগীত শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। তবে শোভার সংগীত জগতে আত্মপ্রকাশ হয় ওস্তাদ ঘম্মন খানের তত্ত্বাবধানে। ঘম্মন খান মুম্বাইতে শোভার পরিবারের সাথে থাকতে এসেছিলেন এবং তার মাকে ঠুমরি-দাদরা এবং অন্যান্য ধ্রুপদী সঙ্গীত শেখাতেন। [][]

শোভা গুর্তু ঠুমরি, দাদরা, কাজরি, হোরি ইত্যাদি লঘু ধ্রুপদী সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। তাঁর গানে তিনি অনায়াসে বিশুদ্ধ ধ্রুপদী সঙ্গীতের অনুচ্ছেদ যোগ করেছিলন। এইভাবে তিনি একটি নতুন সঙ্গীতের ধারার সৃষ্টি করেছিলেন এবং ঠুমরির মতো সঙ্গীতধারাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। তিনি সময়ের একজন সেরা ঠুমরো শিল্পী হয়ে ওঠেন। তিনি গায়িকা বেগম আখতার এবং ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।

শোভা গুর্তু মারাঠি এবং হিন্দি সিনেমাতেও সংগীত পরিবেশন করেছেন।[] প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে তিনি প্রথম কাজ করেন কামাল আমরোহীর সুরারোপিত চলচ্চিত্র পাকীজা (১৯৭২)[]-এ। এরপর তিনি ফাগুন (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে বেদারদি বন গয়ে কোই জাও মনাও মোরে সাঁইয়াঁ গানটির নেপথ্য গায়িকা হিসাবে কাজ করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সফল চলচ্চিত্র মেইন তুলসি তেরে আংগন কি-তে গাওয়া সাঁইয়াঁ রুঠ গয়ে গানের গায়িকা হিসাবে তিনি শ্রেষ্ঠ মহিলা নেপথ্য গায়িকা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১০]

মারাঠি সিনেমায়ও তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনি সামনা এবং লাল মাটি চলচ্চিত্রের জন্য গান গেয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে, গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়া (ইএমআই) তার প্রথম অ্যালবাম অ্যাট হার বেস্ট... শোভা গুর্তু প্রকাশ করে। এই অ্যালবামটিকে একটি উচ্চমানের শাস্ত্রীয় সংগীত সংগ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে তার চমৎকার কণ্ঠসাধনার প্রকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে, পূর্ব উত্তরপ্রদেশের পূর্বী গায়কী সংগীত ঐতিহ্যের ভিত্তিতে তার গাওয়া গানগুলো ১৯ শতকের সংগীত ঐতিহ্যে গভীরভাবে প্রোথিত।

বছরের পর বছর ধরে, তিনি সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগীত অনুষ্ঠান করেছেন। তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির কার্নেগি হলে অনুষ্ঠিত সংগীত অনুষ্ঠানে তিনি সঙ্গীতের মহান ব্যক্তিত্বদের সাথে পরিবেশনা করেছিলেন। তিনি পন্ডিত বিরজু মহারাজের সাথে অনুষ্ঠান করেছিলেন। মেহেদী হাসানের সাথে শোভার গজল অ্যালবামটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। [১১] তিনি তার ছেলে ত্রিলোক গুর্তুর সংগীত অ্যালবামে গান গেয়েছেন। ২০০০ সালে, তিনি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ৫০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত জন গণ মন ভিডিওতে শোভা ভারতের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ধ্রুপদী গায়ক এবং সঙ্গীতজ্ঞদের সাথে ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত, জন গণ মন গেয়েছিলেন।

১৯৮৭ সালে, তিনি সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পান, এবং পরে লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার, শাহু মহারাজ পুরস্কার এবং মহারাষ্ট্র গৌরব পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০২ সালে, তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন।

হিন্দুস্থানী ধ্রুপদী সঙ্গীত ধারায় উল্লেখযোগ্য সময় ধরে রাজত্ব করার পর শোভা ২০০৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Thumri queen Shobha Gurtu no more News, Rediff.com, 27 September 2004.
  2. 'On stage Gurtu was always Radha' News, Rediff.com, 27 September 2004.
  3. Tribute -Abhinaya in vocal chords www.themusicmagazine.com. 28 October 2004.
  4. Shobha Gurtu Celebrated Masters, ITC Sangeet Research Academy.
  5. Trilok Gurtu Biography
  6. Passages... Passages... Passages...Shobha Gurtu: a rare raga Tribute Tehelka, 9 October 2004.
  7. Soul Singer Gurtu's rare mastery of thumri took the form to new heights India Today, 11 October 2004
  8. 2004: ये नहीं रहे 2004– Obituary BBC News, Hindi, 2004.
  9. ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে শোভা গুর্তু (ইংরেজি)
  10. 1st Filmfare Awards 1953
  11. MUSIC REVIEW; At Carnegie Hall, an All-Star Cast From India New York Times, 15 September 1997.