শ্যাওড়া Streblus asper | |
---|---|
ফং না-কে বাং জাতীয় উদ্যানে রক্ষিত একটি শ্যাওড়া গাছ | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | সপুষ্পক উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | Eudicots |
শ্রেণীবিহীন: | Rosids |
বর্গ: | Rosales |
পরিবার: | Moraceae |
গোত্র: | Moreae |
গণ: | Streblus |
প্রজাতি: | S. asper |
দ্বিপদী নাম | |
Streblus asper Lour. |
শ্যাওড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Streblus asper; ইংরেজি: Sand Paper Tree, or Siamese rough bush or Toothbrush tree) ছোট আকারের চিরসবুজ গাছ। ঘন ডালপালার এই গাছের উচ্চতা ৪-১০ মিটার। কাণ্ডের বাকল অমসৃণ। পাতা ডিম্বাকৃতি, খসখসে ও গাঢ় সবুজ। পাতাগুলি ২.৫ থেকে ৮ সে.মি. লম্বা ও ২ থেকে ৩.৫ সেন্টিমিটার চওড়া এবং কিছুটা উপবৃত্তাকার। এর কিনারা এলোমেলো খাঁজকাটা হয়ে থাকে। এই গাছের ফুল ডায়োসেসাস বিক্ষিপ্ত বা গুচ্ছভাবে হয়। ফলগুলি হলুদ ও বেরি ধরনের। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, শ্যামদেশ এবং ভারতে এই গাছ দেখা যায়।
এই উদ্ভিদ বিবিধ ব্যবহারের জন্য সুপরিচিত। এর মধ্যে কাগজ তৈরি সর্বাগ্রে উল্লেখ্য। শ্যামদেশে সাতশো বছরেরও বেশি এই গাছ অত্যন্ত টেকসই ও ঐতিহ্যবাহী খোই কাগজ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[১] এছাড়া ভিয়েতনামে ঐতিহ্যবাহী কাঠের কাজে এই গাছের খসখসে পাতা কাঠ ঘষে মসৃণ করার কাজে শিরীষ কাগজের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়।
আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরির কাজেও এই গাছের ব্যাপক ব্যবহার আছে। বিশেষ করে দাঁতের ব্যথা, ডায়রিয়া, কুষ্ঠরোগ, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের ঔষধ তৈরিতে এই গাছ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই গাছের সরু ও কচি ডাল দাঁতন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আধুনিক যুগেও মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যরক্ষাজনিত বিভিন্ন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে এই গাছ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শ্যামদেশে খুবই জনপ্রিয় কালচে-খয়েরি আয়ুর্বেদিক টুথপেস্ট তৈরিতেও এই গাছের বহুল ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
আধুনিক গবেষণায় বেশ কিছু মাইক্রোওর্গানিজমের উপর এই গাছ থেকে প্রাপ্ত কিছু অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল উপাদানের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে পারা গেছে। বিশেষত এই গাছের পাতা থেকে পাওয়া কিছু উপাদান যে স্ট্রেপটোকক্কাস জাতীয় ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধে যথেষ্ট কার্যকরী তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে মুখ ও নাকের বিভিন্ন ইনফেকশন এবং গলাজ্বালা দূর করার ঔষধ প্রস্তুতিতেও বর্তমানে এই গাছ ব্যবহার করার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই গাছের মূল কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইডসের অত্যন্ত মূল্যবান উৎস। ফলে বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগের ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রেও তা কাজে লাগার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও এই গাছের কাণ্ডের বাকলে জমা হওয়া মিথানল ও ডাইক্লোরোমিথেন থেকে দু' ধরনের সাইটোটক্সিক কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড - স্ট্রেবলোসাইড ও মানসোনিনকে পৃথক করা সম্ভব হয়েছে, যাদের ক্যানসার প্রতিরোধী কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য।[২]