শ্রীলঙ্কা মুসলিম কংগ্রেস (তামিল: ஸ்ரீலங்கா முஸ்லீம் காங்கிரஸ், প্রতিবর্ণী. Srīlaṅkā Muslīm Kāṅkiras; সিংহলি: ශ්රී ලංකා මුස්ලිම් කොංග්රසයSri Lanka Muslim Kongrasaya) শ্রীলঙ্কার একটি রাজনৈতিক দল।[২][৩]শ্রীলঙ্কার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করা দলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
১৯৮১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কত্তনকুডিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে শ্রীলঙ্কা মুসলিম কংগ্রেস গঠিত হয়। শুরুতে এটি একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল। কিন্তু ১৯৮৩ সালের ব্ল্যাক জুলাই তামিল বিরোধী দাঙ্গা এবং পরবর্তীতে তামিল যোদ্ধা ও শ্রীলঙ্কা সরকারের মধ্যে গৃহযুদ্ধ, ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন, ১৯৮৫ সালে কালমুনাই-কারাইতিভু এলাকায় সহিংসতা প্রভৃতি মুসলিম জনগণের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি করে। এমতাবস্থায় ১৯৮৬ সালের নভেম্বরে এম. এইচ. এম. আশরাফ দলটিকে রাজনৈতিক দলে পরিণত করেন এবং আহমেদ লেবেকে হঠিয়ে দলটির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।[৪][৫]
১৯৮৮ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে দলটি ২৯টি আসন লাভ করে, যার মধ্যে ১৭টি ছিল উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় প্রাদেশিক পরিষদের।[৬] ফলে দলটি সেখানকার প্রধান বিরোধীদলে পরিণত হয়। ১৯৮৯ ও ১৯৯৪ সালের সংসদীয় নির্বাচনে দলটি যথাক্রমে ৪টি ও ৭টি আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯৪ এর নির্বাচনে পিপল্স অ্যালায়েন্স সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পেতে ব্যর্থ হয় এবং মুসলিম কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। ফলে শ্রীলঙ্কান মুসলিম কংগ্রেস নেতা এম. এইচ. এম. আশরাফ নৌপরিবহন, বন্দর ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।[৭] দলটির আরো দুই এমপি পান উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব। পরবর্তীতে মুসলিম কংগ্রেস ও পিপল্স অ্যালায়েন্সের মাঝে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।[৮] ১৯৯৯ সালে আশরাফ ন্যাশনাল ইউনাইটি অ্যালায়েন্স গঠন করেন।[৯][১০] ২০০০ সালের ২২ আগস্ট তিনি পিপল্স অ্যালায়েন্সের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করলেও রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণ করেননি।[১১]
২০০০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আশরাফ নিহত হন।[১২] মৃত্যুর আগে তিনি গণমাধ্যমে ফ্যাক্স পাঠিয়ে পিপল্স অ্যালায়েন্সের সাথে শ্রীলঙ্কা মুসলিম কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল ইউনাইটি অ্যালায়েন্সের সকল সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন।[১৩][১৪] আশরাফের মৃত্যুর পর রউফ হাকিম দলটির দায়িত্ব নেন। কিন্তু দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তার সাথে আশরাফের স্ত্রী ফেরিয়াল আশরাফের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।[১৫] ২০০০ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলের ৭ সদস্য পিপল্স অ্যালায়েন্স জোট থেকে এবং ৪ জন ন্যাশনাল ইউনাইটি অ্যালায়েন্স থেকে নির্বাচিত হন। নির্বাচনে জয়লাভ করে পিপলস অ্যালায়েন্স সরকার গঠন করে এবং রউফ হাকিম অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মুসলিম ধর্মীয় বিষয় ও নৌপরিবহন উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১৬][১৭] কিন্তু ২০০১ সালে মুসলিম কংগ্রেসের এমপিরা পদত্যাগ করলে সরকার ভেঙে যায়[১৮][১৯] এবং ৫ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে দলটি ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্টের অংশ হিসেবে ৫টি এবং এককভাবে আরো ৫টি আসনে জয়লাভ করে। ইউএনএফ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করলে হাকিমকে দেওয়া হয় বন্দর উন্নয়ন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।[২০][২১]
২০০৪ সালের নির্বাচনে দলটি ৪ জেলায় এককভাবে প্রার্থী দিয়ে ৫টি আসন লাভ করে এবং বাকি জেলাগুলোতে ইউএনএফের সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে। কিন্তু নির্বাচনে ইউএনএফ পরাজিত হয় এবং ইউনাইটেড পিপল'স ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ) সরকার গঠন করে। ২০০৪-০৫ সালে দলটি ভেঙে ন্যাশনাল কংগ্রেস, ডেমোক্রেটিক ইউনাইটি অ্যালায়েন্স[২২] ও অল সিলন মক্কাল কংগ্রেস গঠিত হয়।[১৫] ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে মুসলিম কংগ্রেস ইউপিএফএ জোটে যোগদান করলে হাকিমকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী করা হয়।[২৩][২৪] কিন্তু সে বছরের ডিসেম্বরেই তারা জোট ত্যাগ করে।[২৫][২৬]
২০১০ সালের নির্বাচনেও ইউএনএফ ইউপিএফএ'র কাছে পরাজিত হয়। সে বছর নভেম্বরে মুসলিম কংগ্রেস আবারও ইউপিএফএ'তে যোগ দেয়।[২৭][২৮] এসময় হাকিম বিচারমন্ত্রী নিযুক্ত হন।[২৯][৩০] ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সিরিসেনাকে সমর্থন দিতে তারা জোট ছেড়ে বেড়িয়ে আসে।[৩১][৩২] এসময় হাকিম মন্ত্রীত্ব হারান।[৩৩] কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সিরিসেনা জয়লাভ করেন এবং হাকিমকে নগর উন্নয়ন, পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন মন্ত্রী নিযুক্ত করেন।[৩৪][৩৫][৩৬][৩৭]
২০১৫ সালের সংসদীয় নির্বাচনে দলটি ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট ফর গুড গভর্নেন্স (ইউ.এন.এফ.জি.জি) জোটে যোগ দেয়।[৩৮][৩৯][৪০] তারা বাত্তিকালোয়া ও ভান্নিতে এককভাবে ও বাকি আসনগুলোতে জোটবদ্ধভাবে প্রার্থী দেয়। এতে ইউ.এন.এফ.জি.জি জয়লাভ করে এবং হাকিম মন্ত্রীত্বে বহাল থাকেন।[৪১] ২০২০ সালের নির্বাচনে তারা সমগি জন বলয়েগায়া জোটে নির্বাচন করে এবং জোটটি সংসদে ৫৪টি আসনে জয়লাভ করে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়।[৪২]
↑"New cabinet sworn in today"। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন ইউনিট, রাষ্ট্রপতির সচিবালয়। ১৯ অক্টোবর ২০০০। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।