শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী | |
---|---|
প্রতিষ্ঠা | ১০ অক্টোবর ১৯৪৯[১] |
দেশ | শ্রীলঙ্কা |
ধরন | সামরিক বাহিনী |
ভূমিকা | শ্রীলঙ্কা ভূখণ্ড রক্ষা |
আকার | ২০১০ সালের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ২০০,০০০ সৈন্য[২] |
অংশীদার | মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) |
আর্মি হেডকোয়ার্টার্স | সেনাবাহিনী সদর দপ্তর, কলম্বো |
নীতিবাক্য | লাতিন: Pro Patria "পিতৃভূমির জন্য" |
বার্ষিকী | অক্টোবর ১০ |
যুদ্ধসমূহ | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৭১ সালের সাম্যবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহ বিরোধী অভিযান (শ্রীলঙ্কা) ১৯৮৭-৮৯ সাম্যবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহ বিরোধী অভিযান শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ |
ওয়েবসাইট | www |
কমান্ডার | |
সেনাবাহিনী কমান্ডার | একজন লেফটেন্যান্ট-জেনারেল |
চীফ অব স্টাফ (স্টাফ প্রধান) | একজন মেজর-জেনারেল |
উপ স্টাফ প্রধান | একজন মেজর-জেনারেল |
উল্লেখযোগ্য কমান্ডার | ফিল্ড মার্শাল শরৎ ফনসেকা জেনারেল সেপালা আত্তিগাল্লে জেনারেল জগৎ জয়সূর্য লেঃ জেনারেল ডেঞ্জিল কোব্বেকাদুয়া মেজর-জেনারেল বিজয় বিমলরত্ন মেজর-জেনারেল বেরট্রাম হেইন মেজর-জেনারেল এন্টন মুতকুমারু |
প্রতীকসমূহ | |
পতাকা | |
রাষ্ট্রপতির পতাকা |
শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী হচ্ছে শ্রীলঙ্কা সামরিক বাহিনীর একটি অংশ। এই বাহিনীর জন্ম হয় ১৯৪৯ সালে সিলন সেনাবাহিনী নামে যদিও ১৮৮১ সালে প্রথমবারের মত একটি পদাতিক রেজিমেন্ট গঠিত হয়েছিলো। ১৯৭২ সালে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী নামে এটি পরিচিতি লাভ করে। ২০১০ সালের হিসেব অনুযায়ী এই বাহিনীতে প্রায় ২০০,০০০ জন সেনা ছিলো। শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী জন্মলগ্ন থেকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এসেছে, যুক্ত হয়েছে আধুনিক সাঁজোয়া যান, গোলন্দাজ বাহিনী, পদাতিক বাহিনী এবং প্রকৌশলের সাজ-সরঞ্জাম। তামিল জাতীয়তাবাদী সংগঠন এলটিটিই (লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলাম) এর সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী ১৯৮০ সাল থেকে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো, তবে ২০০৯ সালে এক বিভীষিকাময় যুদ্ধের পরিণতিতে এলটিটিই পরাজিত হয় শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর কাছে।[৩][৪] এই বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দেশের রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করেন যিনি বিমান ও নৌবাহিনীরও সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিয়োজিত থাকেন এবং চীফ অব ডিফেন্স স্টাফ নামের আরেকটি পদ আছে যেটা একজন পূর্ণ জেনারেল, এ্যাডমিরাল বা এয়ার চীফ মার্শালের হাতে থাকে।[৫][৬] তবে সেনাবাহিনী পরিচালনার মূল দায়িত্ব থাকে একজন লেফটেন্যান্ট-জেনারেলের হাতে যিনি সেনাবাহিনী কমান্ডার পদে থাকেন।[৭][৮][৯]
আধুনিক শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর ইতিহাস অন্তর্নিহিত রয়েছে ১৮৮১ সালে, কারণ এই বছর ব্রিটিশরা সিলন লাইট ইনফ্যান্ট্রি ভলান্টিয়ার্স নামের একটি পদাতিক রেজিমেন্ট তৈরি করে যেটা এখন শ্রীলঙ্কা লাইট ইনফ্যান্ট্রি নামে পরিচিত। রেজিমেন্টটির গোঁড়াপত্তন হয় ১৮৮১ সালের ১ এপ্রিল, তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত সিলনের গভর্নরের নির্দেশে রেজিমেন্টটি তৈরি করা হয়েছিলো। যদিও এর আগে ১৮৭৪ সালে সিলন রাইফেল রেজিমেন্ট নামে একটি রেজিমেন্ট তৈরি করে খুব দ্রুতই ওটা ভেঙে দেওয়া হয়। ১৮৮১ সাল শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর ইতিহাসে আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই বছরের ২৯শে জুলাই 'সিলন ভলান্টিয়ার মেডিকেল কোর'-এর পূর্বসুরী হিসেবে স্ট্রেচার বিয়ারার নামের একটি মেডিকেল কোম্পানি (সিলন লাইট ইনফ্যান্ট্রি ভলান্টিয়ার্সের অংশ হিসেবে) তৈরি করা হয় যেটা পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী মেডিকেল কোর নামে পরিচিতি পায়।
১৮৮১ সালেই ব্রিটিশরা 'ক্যাডেট ব্যাটেলিয়ন সিলন লাইট ইনফ্যান্ট্রি' নামের একটি রেজিমেন্ট তৈরি করে যেটি বর্তমানে শ্রীলঙ্কান ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর নামে পরিচিত। ১৮৮৮ সালের ১২ এপ্রিল 'সিলন আর্টলারি ভলান্টিয়ার্স' নামের একটি গোলন্দাজ বাহিনী তৈরি করা হয় যেটা এখন শ্রীলঙ্কা আর্টিলারী নামে পরিচিত। ১৯১১ সালে তৈরি করা 'সিলন ইঞ্জিনিয়ার্স' বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স নামে পরিচিত। ১৮৮৭ সালে সিলন মাউন্টেড ইনফ্যান্ট্রি এবং ১৯০০ সালে সিলন প্ল্যান্টার্স রাইফেল কোর নামে আরও দুটি রেজিমেন্ট তৈরি করা হয় কিন্তু এগুলোর অস্তিত্ব বর্তমানে নেই, সিলন মাউন্টেড ইনফ্যান্ট্রি ১৯৩৮ সালে এবং সিলন প্ল্যান্টার্স রাইফেল কোর ১৯৪৯ সালে ভেঙে দেওয়া হয়।
বর্তমান শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর প্রথম নাম ছিলো সিলন ডিফেন্স ফোর্স যেটা ১৯১০ সালে তৈরি করা হয়। এই সিলন ডিফেন্স ফোর্সকে সংক্ষেপে সিডিএফ নামে ডাকা হতো। শ্রীলঙ্কায় যতোগুলো ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি ছিলো সবগুলো সিলন ডিফেন্স ফোর্সের অধীনে আনা হয়েছিলো। সিডিএফের অধীনে থেকে সিলন মাউন্টেড ইনফ্যান্ট্রি ১৯০০ সালে এবং সিলন প্ল্যান্টার্স রাইফেল কোর ১৯০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় বোয়ার যুদ্ধে অংশ নেয়। ১৯০২ সালে সিলন মাউন্টেড ইনফ্যান্ট্রিকে দ্বিতীয় বোয়ার যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য একটি পতাকা প্রদান করা হয় এবং অনুরূপ ১৯০৪ সালে সিলন প্ল্যান্টার্স রাইফেল কোরকেও যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য পতাকা প্রদান করা হয়। ১৯২২ সালে সিলন লাইট ইনফ্যান্ট্রিকে 'ব্রিটিশ রাজকীয় এবং রেজিমেন্টাল পতাকা' প্রদানের মাধ্যমে সিলন ডিফেন্স ফোর্সকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সিলন ডিফেন্স ফোর্সের অনেক সদস্য ব্রিটেনে যায় এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় যাদের অনেকেই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে। ব্রিটিশ লেখক আর্থার কোনান ডয়েলের লেখায় সিলন ডিফেন্স ফোর্সের একজন বীর সৈনিকের কথা উঠে এসেছিলো, তিনি লিখেছিলেন এরকম যে, "১৯১৮ সালে বেলজিয়ামে জার্মানির সঙ্গে সংগঠিত হওয়া 'লিসের যুদ্ধ'-এ সিলন লাইট ইনফ্যান্ট্রির সকল সৈনিক মারা পড়েছিলেন, কিন্তু জ্যাকোটিন নামের একজন সৈনিক জীবিত ছিলেন যিনি তার মৃত্যুর বিশ মিনিট আগ পর্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে শত্রুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন।"
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে সিলন ডিফেন্স ফোর্সে নতুন রেজিমেন্ট 'সিলন সিগনালস কোর', 'অক্সিলিয়ারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিস (সিলন)' এবং 'কলম্বো টাউন গার্ড' তৈরি করা হয়, কলম্বো টাউন গার্ড ১৯১৪ সালে তৈরি করে ১৯১৮ সালে ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে আবার তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটেন শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর ওপর সরাসরি কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, যুদ্ধের সময় সিডিএফ (সিলন ডিফেন্স ফোর্স) যে আকারে বৃদ্ধি পেয়েছিলো, সেটি ছোটো হয়ে আসছিলো। ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, কমনওয়েলথের মধ্যে একটি ডোমিনিয়ন হয়ে ওঠে এবং এক বছর আগে সিলন ব্রিটেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে যেটার নাম ছিলো অ্যাংলো-সিলনিজ ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট অব ১৯৪৭। ১৯৪৯ সালে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে 'আর্মি অ্যাক্ট নং ১৭ অব ১৯৪৯' ১১ এপ্রিল তারিখে পাশ হয় এবং ১০ অক্টোবর, ১৯৪২ সালে 'গ্যাজেট এক্সট্রা অর্ডিনারী নং ১০০২৮' অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে সিলন সেনাবাহিনী গঠন করা হয়, যা নিয়মিত এবং একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, এবং সিলন ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ)-এর উত্তরাধিকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়।[১০] ১৯৪৯ সালের ১০ই অক্টোবর সিলন সেনাবাহিনী আত্মপ্রকাশ করে এবং সেই থেকে প্রতি বছরের ১০ অক্টোবর সেনাবাহিনী দিবস পালিত হয়। ১৯৪৭ সালের প্রতিরক্ষা চুক্তিটি এই আশ্বাস প্রদান করেছিলো যে সিলন যদি কোনো বিদেশী শক্তির দ্বারা আক্রমণের শিকার হয় তাহলে ব্রিটিশরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে; ব্রিটিশরা তাদের সামরিক উপদেষ্টাদেরকে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী গঠনের জন্য নিয়োগ প্রদান করেছিলো। ব্রিটেনের জেমস সিনক্লেয়ার, আর্ল অব কেইথনেস সিলন আর্মির জেনারেল অফিসার কমান্ডিং হিসেবে নিযুক্ত হন, তিনি আদতে সিলন আর্মি'র প্রথম কমান্ডার ছিলেন।[১১][১২]
সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় কলম্বোতে, সদর দপ্তরটিতে তিনটি শাখা - জেনারেল স্টাফ শাখা, অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল শাখা এবং পে অ্যান্ড রেকর্ডস শাখা গড়ে তোলা হয়। বাহিনীর জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন ছিলো একটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট, একটি ইঞ্জিনিয়ার স্কোয়াড্রন, একটি পদাতিক ব্যাটেলিয়ন, একটি মেডিকেল ইউনিট এবং একটি সার্ভিস কোর কোম্পানী। ১৯৫০-এর দশকের বেশিরভাগ সময় সেনাবাহিনী গঠনে এর সদস্যরা অনেক পরিশ্রম করেছিলো, বাহিনীর পুরোনো এবং নতুন সদস্যদেরকে কি রকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা ছিলো। এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ আর্মি ট্রেনিং টিম (বিএটিটি) অ্যাডভাইজরি গ্রুপ সিডিএফ এর পুরোনো সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়; মধ্য পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্রিটিশ আর্মি স্টাফ কলেজে পাঠানো হয় এবং কিছু কর্মকর্তাকে পাঠানো হয় ব্রিটিশ আর্মি অব দ্য রাইনে, যাতে করে তারা যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। নতুন নিয়োগ পাওয়া তরুণদেরকে কমিশন প্রদানের লক্ষ্যে রয়্যাল মিলিটারি একাডেমী, স্যান্ডহার্স্টে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিলো যা ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো এবং বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পদবীদের সদস্যদেরকে ব্রিটেন ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান এবং মালয়তে পাঠানো হয়। সেনাবাহিনীর কোনো ফরমেশন ছিলোনা, সকল ইউনিট সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের অধীনে কাজ করতো। তবে সময়ের প্রয়োজনে আঞ্চলিক ক্ষেত্রের অস্থায়ী সদর দফতর স্থাপন করা হয়েছিলো।[১২] কোনো বাহ্যিক হুমকির অভাবের কারণে সেনাবাহিনীর বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং সেনাবাহিনীর প্রধান দায়িত্ব দ্রুত ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান করা ছিলো, একই সময়ে প্রথম সিংহলী ব্যক্তি মেজর জেনারেল অ্যান্টন মুতুকুমারু হলেন সেনাবাহিনী প্রধান। সিলন সেনাবাহিনীর প্রথম অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কার্যক্রম ১৯৫২ সালে শুরু হয়, অপারেশন মন্টি নামক সামরিক অভিযান দ্বারা অবৈধ দক্ষিণ ভারতীয় অভিবাসীদেরকে তাড়ানো হয় যাদেরকে উত্তর-পশ্চিম উপকূলে চোরাকারবারিদের দ্বারা আনা হয়েছিলো, যাতে রয়েল সিলন নৌবাহিনী উপকূলীয় এবং পুলিশ অপারেশনের সমর্থন দেয়। এটিকে ১৯৬৩ সালে টাস্ক ফোর্স অ্যান্টি-ইলিসিট ইমিগ্রেশন (টাফি) হিসাবে সম্প্রসারিত এবং পুনরায় নামকরণ করা হয় এবং এটি ১৯৮১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। ১৯৫৩ সালের হরতাল, ১৯৫৬ সালের 'গাল ওয়া ভ্যালি দাঙ্গা' এবং ১৯৫৮ সালের প্রাদেশিক জরুরী প্রবিধানের অধীনে শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয় এবং ১৯৮২ সালের দাঙ্গার সময় দ্বীপ জুড়ে জরুরী প্রবিধানের অধীনে প্রথমবারের মতো এটি তদারকি করা হয়।[১৩]
১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলি শ্রমিকদেরকে আন্দোলন করার জন্য উত্তেজিত করে এবং শ্রমিকরা আন্দোলনে-হরতালে জড়িয়ে যায়, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলো ১৯৬১ সালের কলম্বো বন্দর হরতাল, যার মধ্যে জাহাজ কলম্বো বন্দরকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছিলো এবং এর জন্য পুরো দেশকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিলো। এই সময়ে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর নতুন ইউনিট গঠিত হয়েছিলো, নতুন রেজিমেন্টও তৈরি করা হয়েছিলো যার মধ্যে ছিলো শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী সাঁজোয়া শাখা, সিনহা রেজিমেন্ট এবং পায়োনিয়ার কোর। এই সময়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে আন্দোলন-হরতাল দমনে ব্যবহার করা হয়।[১৩]
১৯৬২ সালে বেশ কিছু উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা একটি সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন, যদিও এটি সফল হয়নি। এই ঘটনার পর সরকার সেনাবাহিনীর অনেক ইউনিট ভেঙে দেয়। মে, ১৯৭২ সালে যখন সিলন একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয় এবং শ্রীলঙ্কার প্রজাতন্ত্র সিলন ডোমিনিয়ন থেকে তার নাম পরিবর্তন করে, তখন সমস্ত সেনা ইউনিটগুলির নামও পরিবর্তন করা হয়।[১৪]
জনথা ভিমুক্তি পিরামুনা (জেভিপি) -এর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের বিদ্রোহকে সফলভাবে পরাজিত করার পর, সেনাবাহিনী একটি নতুন সংঘাতের সম্মুখীন হয়, এই সময় লিবারেশন টাইগার্স তামিল ইলামের (এলটিটিই) বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় দেশটির উত্তরাঞ্চলে। সংঘাতটি এমন একটি অবস্থায় পরিণত হয় যেখানে ভারতকে একটি শান্তিরক্ষী বাহিনীর হস্তক্ষেপ করার জন্য বলা হয়। পরে ভারতীয় শান্তি রক্ষণপালন বাহিনী (ইন্ডিয়ান পিস কিপিং ফোর্স বা সংক্ষেপে 'আইপিকেএফ') নামের একটি বাহিনী শ্রীলঙ্কায় পাঠায় ভারত সরকার যার সদস্যরা ছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার সাহায্যে ২০০২ সালে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করার পর এলটিটিইয়ের সাথে যুদ্ধ থামানো হয়েছিলো। তবে, ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে আবার সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং শান্তি আলোচনার পতনের পর সেনাবাহিনী দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের ভারী যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়ে।[১৫] ১৯৮০ সাল থেকে সেনাবাহিনী এলটিটিই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অনেক অপারেশন করেছে। সেনাবাহিনী অভিযান দ্বারা জাফনা এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গেরিলাদের এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ১৯ মে ২০০৯ তারিখে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী যুদ্ধের বিজয় ঘোষণা করে যখন তারা এলটিটিই নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছিলো। শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত দীর্ঘকালীন সামরিক অভিঘাতের ফলে শ্রীলঙ্কায় বিদ্যমান এলটিটিই ধ্বংস হয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।[১৫] শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী সহ নৌ এবং বিমান বাহিনী, যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধে জড়িত ছিলো বলে অভিযোগ করা হয়।[১৬][১৭] গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন সংক্রান্ত কোনো লংঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন কর্তৃক নিযুক্ত বিশেষজ্ঞগণের একটি প্যানেল তাকে জবাবদিহি করতে পরামর্শ দেয়, যা "বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ" যদি প্রমাণিত হয় যে, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ ও অপরাধ শ্রীলঙ্কান সশস্ত্র বাহিনী এবং তামিল টাইগারদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিলো।[১৮][১৯][২০]
|
|
|
নাম | হেডকোয়ার্টার্স | সাবইউনিট |
---|---|---|
শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী সাঁজোয়া শাখা | রক হাউজ আর্মি ক্যাম্প, কলম্বো | আটটি রেগুলার রেজিমেন্ট এবং একটি ভলান্টিয়ার রেজিমেন্ট |
শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী গোলন্দাজ শাখা | পানাগোদা ক্যান্টনমেন্ট, পানাগোদা | সাতটি রেগুলার রেজিমেন্ট এবং একটি ভলান্টিয়ার রেজিমেন্ট |
শ্রীলঙ্কা ইঞ্জিনিয়ার্স | আর্মি হেডকোয়ার্টার্স, কলম্বো | ছয়টি রেগুলার রেজিমেন্ট এবং একটি ভলান্টিয়ার রেজিমেন্ট |
শ্রীলঙ্কা সিগনালস কোর | পানাগোদা ক্যান্টনমেন্ট, পানাগোদা | দশটি রেগুলার রেজিমেন্ট (দুইটি আইটি রেজিমেন্ট, একটি সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট এবং একটি সিটি রেজিমেন্ট) এবং একটি ভলান্টিয়ার রেজিমেন্ট |
শ্রীলঙ্কা লাইট ইনফ্যান্ট্রি | পানাগোদা ক্যান্টনমেন্ট, পানাগোদা | সতেরটি রেগুলার ব্যাটেলিয়ন, নয়টি ভলান্টিয়ার ব্যাটেলিয়ন |
শ্রীলঙ্কা সিনহা রেজিমেন্ট | আম্বেপুসসা ক্যাম্প, আম্বেপুসসা | সাতটি রেগুলার ব্যাটেলিয়ন, পাঁচটি ভলান্টিয়ার ব্যাটেলিয়ন এবং একটি হেডকোয়ার্টার্স ব্যাটেলিয়ন |
জেমুনু ওয়াচ | কুরুউইতা আর্মি ক্যাম্প, রত্নাপুরা | নয়টি রেগুলার ইউনিট, চারটি ভলান্টিয়ার ইউনিট |
গাজাবা রেজিমেন্ট | সালিয়াপুরা ক্যাম্প, অনুরাধাপুরা | বারোটি রেগুলার ব্যাটেলিয়ন এবং পাঁচটি ভলান্টিয়ার ব্যাটেলিয়ন |
বিজয়বাহু পদাতিক রেজিমেন্ট | বয়াগানে ক্যাম্প, কুরুনেগালা | আটটি রেগুলার ব্যাটেলিয়ন এবং চারটি ভলান্টিয়ার ব্যাটেলিয়ন |
মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট | এন/এ | চারটি রেগুলার ব্যাটেলিয়ন এবং একটি ভলান্টিয়ার ব্যাটেলিয়ন |
শ্রীলঙ্কা আর্মি কমান্ডো রেজিমেন্ট | গানেমুল্লা, গাম্পাহা | চারটি রেগুলার রেজিমেন্ট |
শ্রীলঙ্কা আর্মি স্পেশাল ফোর্সেস রেজিমেন্ট | সিদুওয়া, নেগোম্বো | তিনটি রেগুলার রেজিমেন্ট |
মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স কোর | পোলহেনগোদা,কলম্বো | দুইটি রেগুলার ব্যাটেলিয়ন |
ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসেস রেজিমেন্ট | পানাগোদা ক্যান্টনমেন্ট, পানাগোদা | তিনটি রেগুলার রেজিমেন্ট এবং একটি ভলান্টিয়ার রেজিমেন্ট |
শ্রীলঙ্কা আর্মি সার্ভিস কোর | পানাগোদা ক্যান্টনমেন্ট, পানাগোদা | ছয়টি রেগুলার ইউনিট এবং একটি ভলান্টিয়ার ইউনিট |
শ্রীলঙ্কা আর্মি মেডিকেল কোর | পানাগোদা ক্যান্টনমেন্ট, পানাগোদা | চারটি রেগুলার ইউনিট এবং একটি ভলান্টিয়ার ইউনিট |
শ্রীলঙ্কা আর্মি অর্ডন্যান্স কোর | পানাগোদা ক্যান্টনমেন্ট, পানাগোদা | তিনটি রেগুলার অর্ডন্যান্স ব্যাটেলিয়ন এবং একটি ভলান্টিয়ার অর্ডন্যান্স ব্যাটেলিয়ন |
শ্রীলঙ্কা ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স | স্লেভ আইল্যান্ড, কলম্বো | সাতটি রেগুরাল রেজিমেন্ট এবং একটি ভলান্টিয়ার রেজিমেন্ট |
শ্রীলঙ্কা কোর অব মিলিটারি পুলিশ | পোলহেনগোদা, কলম্বো | ছয়টি রেগুলার রেজিমেন্ট |
শ্রীলঙ্কা আর্মি জেনারেল সার্ভিস কোর | পানাগোদা ক্যান্টনমেন্ট, পানাগোদা | তিনটি রেগুলার ইউনিট এবং একটি ভলান্টিয়ার ইউনিট। সাথে ৩য় ৪র্থ ইউনিট |
শ্রীলঙ্কা আর্মি ওমেন্স কোর | রেজিমেন্টাল সেন্টার, বোরেল্লা | দুইটি রেগুলার ইউনিট এবং পাঁচটি ভলান্টিয়ার ইউনিট |
শ্রীলঙ্কা রাইফেল কোর | আর্মি হেডকোয়ার্টার্স, কলম্বো | দুইটি ভলান্টিয়ার ব্যাটেলিয়ন |
শ্রীলঙ্কা আর্মি পায়োনিয়ার কোর | হেডকোয়ার্টার্স, বাত্তারামুল্লা, পেলাওয়াত্তা | একটি ভলান্টিয়ার ইউনিট |
শ্রীলঙ্কা ন্যাশনাল গার্ড | কুরুনেগালা | বত্রিশটি ভলান্টিয়ার ব্যাটেলিয়ন |
শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর গঠনপ্রণালী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মতো প্লাটুন থেকে শুরু করে কোর পর্যন্ত রয়েছে।
শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর পদবীগুলো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পদবীর মতো। সৈনিক এবং কর্মকর্তা উভয়দের ক্ষেত্রেই ইংরেজি পদবী ব্যবহৃত হয়।