মুদ্রা | শ্রীলঙ্কান রূপী (LKR) |
---|---|
পঞ্জিকা বর্ষ | |
বাণিজ্যিক সংস্থা | সাফটা, ডব্লিউটিও |
পরিসংখ্যান | |
জিডিপি | US$ ৮০.৫৯১ বিলিয়ন (বিশ্বব্যাংক) / US$ ২৩৩.৬৩৭ বিলিয়ন পিপিপি[১] |
জিডিপি প্রবৃদ্ধি | ৭.৩% (২০১৩) |
মাথাপিছু জিডিপি | US$ ৩,৮১৮.১৬১ (২০১৫) / US$ ১১,০৬৮.৯৯৬ ইউএসডি পিপিপি[১] |
খাত অনুযায়ী জিডিপি | কৃষি: ১২.৮%; শিল্প কারখানা: ২৯.২%; সেবা খাত: ৫৮% (২০০৯ প্রাক্কলন) |
৬.৯% (২০১২ প্রাক্কলন)[২] | |
দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থিত জনসংখ্যা | ৪.৩% (২০১১ প্রাক্কলন)[২] |
৩৬.৪ (২০১৩) | |
শ্রমশক্তি | ৮,৩১৯,৬৮০ ([৩] |
পেশা অনুযায়ী শ্রমশক্তি | কৃষি: ৩২.৭%; শিল্প: ২৬.৩%; সেবা: ৪১% (ডিসেম্বর, ২০০৮ প্রাক্কলন) |
বেকারত্ব | ৪.৩% (২০১১)[২] |
প্রধান শিল্পসমূহ | রাবার, চা, নারিকেল, তামাক প্রক্রিয়াকরণ ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য; টেলিযোগাযোগ, বীমা, ব্যাংকিং; পর্যটন, জাহাজীকরণ; পোশাক, টেক্সটাইল; সিমেন্ট, পেট্রোলিয়াম পরিশোধন, তথ্য প্রযুক্তি সেবা, অবকাঠামো |
৮১তম[৪] | |
বৈদেশিক | |
রপ্তানি | $১০.৮৯ বিলিয়ন (২০১১ প্রাক্কলন) |
রপ্তানি পণ্য | টেক্সটাইলস ও অ্যাপারেল, ফার্মাসিউটিক্যালস, চা, মশলা, হীরা, পান্না, রুবি, নারিকেল দ্রব্যাদি, রাবার উৎপাদন, মাছ |
প্রধান রপ্তানি অংশীদার | United States ২১.৮% United Kingdom ৮.৩% India ৪.৫% Germany ৪.২% (২০১৩ প্রাক্কলন)[৫] |
আমদানি | $২০.০২ বিলিয়ন (২০১১ প্রাক্কলন) |
আমদানি পণ্য | টেক্সটাইল ফেব্রিক্স, ধাতব পণ্য, পেট্রোলিয়াম, খাদ্য, যান্ত্রিক ও পরিবহন মালামাল |
প্রধান আমদানি অংশীদার | India ২১.৫% China ১৭.৬% Singapore ১০.১% United Arab Emirates ৬.১% Iran ৪.৯% (২০১৩ প্রাক্কলন)[৬] |
এফডিআই স্টক | US$১ বিলিয়ন (২০১১) |
মোট বৈদেশিক ঋণ | $১৯.৪৫ বিলিয়ন (৩১ ডিসেম্বর, ২০০৯ প্রাক্কলন) |
সরকারি অর্থসংস্থান | |
জিডিপি’র ৮১% (২০১১ প্রাক্কলন) | |
রাজস্ব | $৮.৪৯৫ বিলিয়ন (২০১১ প্রাক্কলন) |
ব্যয় | $১২.৬৩ বিলিয়ন (২০১১ প্রাক্কলন) |
অর্থনৈতিক সহযোগিতা | $৮০৮ মিলিয়ন (২০০৬) |
স্ট্যান্ডার্ড এন্ড পুর’স:[৭] বিবি- (অভ্যন্তরীণ) ই+ (বৈদেশিক) বি+ (টিএন্ডসি অ্যাসেসমেন্ট) আউটলুক: স্ট্যাবল[৮] মুদি’জ:[৮] বি১ আউটলুক: স্ট্যাবল ফিচ:[৮] বি+ আউটলুক: স্ট্যাবল | |
বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার | $৭.২ বিলিয়ন (১৭ এপ্রিল, ২০১১ প্রাক্কলন)[৯] |
মূল উপাত্ত সূত্র: সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক মুদ্রা অনুল্লেখিত থাকলে তা মার্কিন ডলার এককে রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। |
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার বেশ মজবুত আকার ধারণ করেছে। দেশটির মাথাপিছু বার্ষিক আয় $১১,০৬৮.৯৯৬ মার্কিন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ার যে-কোন দেশের তুলনায় শীর্ষে অবস্থান করছে শ্রীলঙ্কা। তিন দশককালের গৃহযুদ্ধের অবসানের পর দেশটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও অবকাঠামোর উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ ঘটিয়েছে যা মাঝারি সারির দেশে পরিণত হয়েছে।
দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পর্যটন, চা রফতানী, টেক্সটাইল, চাউল উৎপাদন ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য দ্রব্যাদি প্রস্তুত করা। পাশাপাশি বিদেশে জনশক্তি রফতানী করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। তন্মধ্যে, কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্যেই ৯০% শ্রীলঙ্কান বসবাস করছে।
২০০২ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে দারিদ্রসীমায় অবস্থানকারী ব্যক্তিদের সংখ্যা ২৩ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নিয়ে আসে। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচনে চা শিল্প বিরাট ভূমিকা রাখছে।[১০][১১] জন সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প চা শিল্প পরিচালিত হয়। ১৯৯৫ সালে বিশ্বের মোট চা রপ্তানীতে কেনিয়ার ২২%-এর তুলনায় শ্রীলঙ্কার অবদান ছিল ২৩% যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। কৃষিখাত মূলতঃ ধান, নারিকেলকে ঘিরে পরিচালিত হচ্ছে।
দ্বীপরাষ্ট্রে অনেক ধরনের ব্যবসায়িক ও প্রযুক্তিখাতে উন্নয়নসহ পর্যটন এলাকাগুলোয় বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী রনীল বিক্রমাসিংহে।[১২] এছাড়াও সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক শ্রীলঙ্কান সামুদ্রিক খাদ্য আমদানীতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ জিএসপি+ সুবিধা অর্জনসহ ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশীপে যোগ দেয়।[১৩][১৪]
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭১, ১৯৮৭-৮৯, ১৯৮৩-২০০৯ মেয়াদে গৃহযুদ্ধের কবলে পড়া ও ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ভূমিকম্পের ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৭০-৭৭ মেয়াদে তৎকালীন সরকার বামপন্থী অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৪ মেয়াদে ইউএনপি দেশ পরিচালনা করে। ১৯৭৭ সাল থেকে রাষ্ট্রপতি জুনিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনে শ্রীলঙ্কাকে সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। তখন থেকেই সরকার বেসরকারীকরণ ও মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে ধাবিত হয়।
শ্রীলঙ্কার অর্থবাজার নিয়ন্ত্রণে ১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কা কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটি দেশের আর্থিক খাত পরিচালনায় দায়বদ্ধ। এছাড়াও অর্থনৈতিক পদ্ধতি দেখাশোনায়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভূমিকা রাখছে।[১৫]
শ্রীলঙ্কার প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে রয়েছে কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক এক্সচেঞ্জরূপে এটি স্বীকৃত যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্থিক লেনদেন কার্যাদি পরিচালনা করে। ১৯৯৫ সাল থেকে কলম্বোর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টাওয়ার্সে এর সদর দফতর অবস্থিত। ক্যান্ডি, মাতারা, কুরুনেগালা, নেগম্বো ও জাফনায় এর শাখা রয়েছে।[১৬] ২০০৯ সালে ৩০ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ অবসানের পর বিশ্বের সেরা স্টক এক্সচেঞ্জরূপে স্বীকৃত।
রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত শ্রীলঙ্কা রেলওয়ের মাধ্যমে অধিকাংশ নগর ও শহরগুলো যুক্ত রয়েছে। দ্বীপরাষ্ট্রে বাস সেবা প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রীয় শ্রীলঙ্কা ট্রান্সপোর্ট বোর্ড। ১১,০০০ কিলোমিটার রাস্তা আছে।
জ্বালানী নীতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয় অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু, সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ড কর্তৃক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টননামা পরিচালিত হয়। জ্বালানীর অধিকাংশই মধ্যপ্রদেশের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত হয়।[১৭][১৮]
দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে খ্যাতনামা সমুদ্র সৈকতগুলোয় পর্যটকদের আগ্রহ রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে প্রাচীন স্থাপনা নিদর্শন রয়েছে। পার্বত্য এলাকাগুলোয় অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।[১৯][২০] এছাড়াও, রুবির ন্যায় মূল্যবান পাথরের প্রাচুর্যতা থাকায় রত্নপুরা ও তার আশেপাশের এলাকায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক আনাগোনা রয়েছে।[২১]
২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সুনামি[২২] ও অতীতের গৃহযুদ্ধে পর্যটকের সংখ্যা বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু, ২০০৮ সালের শুরু থেকে পর্যটকদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।[২৩] ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মোতাবেক মার্চ, ২০০৮ সালে ৮.৬% বৃদ্ধি পায় ও ২০১২ সালে ১,০০৩,০০০ পর্যটক আসে।[২৪]
চীন সরকারের অর্থায়ণে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলের হাম্বানতোতায় নতুন বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৯ সালে ৪৪৫৬টি জাহাজ শ্রীলঙ্কার বন্দরগুলোয় ভিড়ে।