এই নিবন্ধটি শ্রীলঙ্কার প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে লিখিত যখন থেকে মানুষের বসবাস শুরু হয় যা প্যালিওলিথিক, মেসোলিথিক এবং প্রাথমিক লৌহ যুগের সাথে সম্পর্কিত।
প্রস্তরযুগের প্রায় ৩০০,০০০ বছর আগে থেকে শ্রীলঙ্কাতে প্যালিওলিথিক (হোমো ইরেক্টাস) মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে এছাড়াও শ্রীলঙ্কায় প্রস্তরযুগের প্রায় ১২৫,০০০ বছর আগে প্রাগৈতিহাসিক বসতির শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে। মেসোলিথিক এবং লৌহ যুগের মধ্যে রূপান্তরের প্রমাণ নিতান্তই সুক্ষ্ন।
গত কয়েক শত বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের ত্তঠা-নামা শ্রীলঙ্কাকে ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে সংযুক্ত করেছে। প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ বছর আগে শেষ সংযোগটি ঘটেছে।[১]
ইরানামুদুতে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো ইঙ্গিত করে যে প্রস্তরযুগের প্রায় ৩০০,০০০ আগে শ্রীলঙ্কাতে প্যালিওলিথিক মানুষ ছিল।[২] শ্রীলঙ্কাতে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের দ্বারা বসতি স্থাপনের নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে, যা প্রস্তরযুগের প্রায় ১২৫,০০০ বছর আগের।[১]
দ্বীপটি প্রস্তরযুগের প্রায় ৩৪,০০০ বছর আগে ‘বালাঙ্গোডা ম্যান’ নামের একদল মানুষের (এলাকার নাম অনুসারে যেখানে তাদের দেহাবশেষ আবিষ্কার করা হয়েছিল) দ্বারা উপনিবেশ স্থাপন করা হয় বলে মনে হয়। মেসোলিথিক শিকারী দল হিসেবে তাদের সনাক্ত করা হয় যারা গুহায় বাস করত। পাহিয়াংলা গুহা দক্ষিণ এশিয়ায় আধুনিক মানুষের প্রাচীনতম সংস্করণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
সুপরিচিত বাটাডোমবালেনা এবং ফা হিয়েন গুহাসহ এই গুহাগুলোর বেশিরভাগগুলো থেকে অনেক হস্তনির্মিত বস্তু পাওয়া গেছে, যা দ্বীপের প্রথম আধুনিক বাসিন্দা হিসেবে তাদেরকে নির্দেশ করে। বেলি-লেনা থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে প্রস্তরযুগের প্রায় ২৭,০০০ বছর আগে উপকূল থেকে লবণ সংগ্রহ করা হতো।
ওয়ারানা রাজা মহা বিহারের গুহায় ও কালাতুয়াওয়া এলাকায় সাম্প্রতিক খননকালে ৪ সেমি আয়তনের ছোট ছোট গ্রানাইটের সরঞ্জাম, মাটির পাত্র, পোড়ামাটির কাঠের অবশিষ্টাংশ এবং আট হাজার বছর আগের প্রস্তরযুগের কাদামাটির সমাধি পাত্র পাওয়া গেছে, যা মেসোলিথিক মানুষেরা ব্যবহার করত।
নীলগাল গুহা ও বেলানবান্দি পালাসা থেকে কুকুরের কঙ্কালের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে, যা প্রায় ৪,৫০০ খ্রিস্টপূর্ব বছরের পুরোনো। এটি প্রমাণ করে যে যে বালাঙ্গোডারা খেলার জন্য গার্হস্থ্য কুকুর রাখত। সিংহালা হাউন্ড জাতের কুকুরগুলো, কাদার কুকুর, নিউ গিনি কুকুর এবং ডিংগো কুকুরের অনুরূপ বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয় যে, এসমস্ত জাতগুলো একই গার্হস্থ্য ব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত। এটাও সম্ভব যে তাদের পোষা প্রাণী, পাখি, শূকর ও মহিষও ছিল।[৩]
শ্রীলঙ্কায় মেসোলিথিক থেকে লৌহ যুগের রূপান্তর যথেষ্ট পরিমাণে নথিভুক্ত করা হয়নি। হাম্বানটোটা জেলার গোদাভায়ায় একটি মানব কঙ্কাল পাওয়া যায়, যা ছিল ৩,০০০ থেকে ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এবং এর সাথে কিছু পশু-হাড় ও পাথরের সরঞ্জাম ছিল।[৪]
এছাড়া, হোর্টন প্লেইনগুলো প্রমাণ করে যে এখানে ৮,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কৃষিকাজের অস্তিত্ব ছিল। কেগালের কাছে দোরাওয়াক-কান্দার গুহা খননের সময় প্রায় ৪,৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যবহৃত মৃৎশিল্প, পাথরের সরঞ্জাম পাওয়া যা খাদ্যশস্য চাষের ব্যবহারকে নির্দেশ করে।[১][৫]
মান্তাইতে প্রাপ্ত প্রায় ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের খিলানে তামার কাজ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।[৫]
শ্রীলঙ্কাতে প্রাপ্ত দারুচিনি প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মিশরে ব্যবহৃত হতো, যা এই দ্বীপের সাথে লেনদেনের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে।[৬]
আনুরাধাপুরায় ৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ আগে একটি বড় বসতি স্থাপন করা হয়েছিল বলে মনে করা হয় যেখানে লৌহ যুগের বিভিন্ন সংস্কৃতির লক্ষণ পাওয়া গেছে। সিগিরিয়ার মধ্যে আলিগালাতেও অনুরূপ অঞ্চল আবিষ্কৃত হয়েছে।[৭]
প্রাচীনতম গ্রন্থ দীপাভামসা এবং মহাভামসা বলে যে, এই দ্বীপটি ইয়াকখাস (দানব), নাগাস (কোবরা বা গোখরা) এবং দেভাসদের (দেবতা) বাসস্থান ছিল।[৮]
খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ বছর আগের মৃৎশিল্প পাওয়া গেছে আনুরাধাপুরায়, যেখানে ব্রাহ্মী লিপি (লিপির সর্বকালের বিদ্যমান উদাহরণগুলির মধ্যে একটি) ও অ-ব্রাহ্মী লিপির লেখা ছিল যা পূর্ব এশিয়া থেকে সেমিটিক বাণিজ্যে ব্যবহারের ফলে এসেছে বলে মনে করা হয়।[২][৫]
লিপির মতো একই সময়ে পোড়ামাটির উত্থান, হস্তনির্মিত বস্তু, লাল গ্লাস মণির মতো অন্যান্য শিল্পকর্মের সাথে একটি নতুন সাংস্কৃতিক আবেগ নির্দেশ করে। উত্তর ভারতের সাংস্কৃতির প্রভাব বলে এগুলোকে মনে করা হয়। ব্রাহ্মী লেখা ইন্দো-আর্য প্রাকৃতের মধ্যে প্রদর্শিত হয় এবং এটি প্রায় ২০০ বছর পরে আসোকন লিপির অনুরূপ বলে ধারণা করা হয়।