শ্রীলঙ্কার রন্ধনশৈলী

শ্রীলঙ্কার রন্ধনশৈলী
শ্রীলঙ্কার ভাত তরকারি
উৎপত্তিস্থলশ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কীয় রন্ধনশৈলী হচ্ছে শ্রীলঙ্কায় প্রচলিত বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালী যা বিভিন্ন ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিদেশী বণিকদের আনা ফল, ইন্দোনেশীয় রন্ধনশৈলী []দক্ষিণ ভারতীয় রন্ধনশৈলীর সহায়তায় শ্রীলঙ্কীয় রন্ধনশৈলী গড়ে উঠেছে। আজকের দিনে শ্রীলংকীয় রন্ধনশৈলীর প্রধান খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে আছে চাল, নারিকেল এবং মশলা। শ্রীলঙ্কা অন্যতম মশলা উৎপাদনকারী দেশ এবং বিভিন্ন দেশের ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ফলে এদের মশলায় অভুতপূর্ব বৈচিত্র্যতা আসে।

খাদ্যাভ্যাস

[সম্পাদনা]

ভাত তরকারি

[সম্পাদনা]
শ্রীলঙ্কান ভাত ও চিংড়িমাছ

শ্রীলঙ্কার প্রধান খাবারের মধ্যে আছে ভাত যা মাছ, মুরগী, গরু বা ছাগলের মাংসের তরকারি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। এছাড়া সবজি, ডাল বা ফল দিয়ে তৈরী বিভিন্ন তরকারিও পরিবেশন করা হয়। এর সংগে ফল বা সব্জির আচার, চাটনি ও স্যাম্বল পরিবেশন করা হয়। নারিকেল স্যাম্বলের ব্যবহার বেশি হয় যা ঝাল মরিচ, শুটকি মালদ্বীপ মাছ এবং লেবুর রস দিয়ে প্রস্তুত করা হয়।

পল স্যাম্বল বা নারিকেল স্যাম্বল

কিরিবাথ

[সম্পাদনা]

কিরিবাথ শব্দের অর্থ দুধ ভাত। নুন মেশানো নারিকেল দুধ দিয়ে চাল রান্না করে কিরিবাথ প্রস্তুত করা হয়। কিরিবাথ সকালে নাস্তায় প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া জন্মদিন, নতুন বছর এবং ধর্মীয় উৎসবে কিরিবাথ প্রস্তুত করা হয়। এটা লাল পেয়াজ ও মরিচ দিয়ে তৈরী লুনু মিরিস দিয়ে পরিবেশন করা হয়। সিংহলী/তামিল নতুন বছর আলুথ আভুরুডু/পুথান্ডু'র সময়ে কিরিবাথ কাভুম, কোকিস, মুং কাভুম ইত্যাদি মিষ্টির সংগে পরিবেশন করা হয়।

কোট্টু

[সম্পাদনা]

কোট্টু হচ্ছে মশলা যুক্ত ছেড়া রুটি ও সব্জির মিশ্রণ। এতে স্থানভেদে ডিম, মাংস বা পনিরও যোগ করা হয়। এটা বাট্টিক্যালাওতে উদ্ভাবিত হয় এবং তামিল ভাষায় এর অর্থ কাটা রুটি।

আপ্পাম

[সম্পাদনা]

আপ্পাম গাঁজনের মাধ্যমে তৈরী গোলা (ব্যাটার) দিয়ে তৈরী করা হয়। সাধারণত চালের গুড়ো, নারকেল দুধ ও মশলা দিয়ে এটা তৈরী করা হয়। গাঁজনের জন্য তালের রস বা ইস্ট ব্যবহার করা হয়। হপারের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে যেমন ডিম আপ্পা, দুধ আপ্পা, সুতা আপ্পা, ভান্ডু আপ্পা ও পানি আপ্পা। শ্রীলঙ্কার সাধারণ মিষ্টির মধ্যে আছে কেভুম নামে এক ধরনের তেলের পিঠা যা চালের আটা দিয়ে তৈরি করে ডুবো তেলে ভেজে সোনালী বাদামী বর্ণে পরিণত করা হয়। এর প্রকারভেদে আছে মুগ কেভুম যা মুগডাল দিয়ে প্রস্তুত করা হয় এবং ভাজার পূর্বে হীরকের আকৃতি দেওয়া হয়। কেভুমের অন্যান্য প্রকারভেদের মধ্যে আছে আথিরাহা, কোন্ডা কেভুম, আথিরস এবং হাঁড়ি কেভুম। সিংহলি ও তামিল নববর্ষে কিরিবাথের সাথে অনেক মিষ্টি পরিবেশিত হয়।

অন্যান্য কেকজাতীয় খাবারের মধ্যে আছে:

  • আলুয়া - হীরক আকৃতিসদৃশ চালের আটার পিঠা।
  • বিবিক্কান - নারকেল কোরা ও সাদা ময়দা দিয়ে কেকসদৃশ মিষ্টি যা বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলে তৈরি হয়।
  • কোকিস - বিস্কুট সদৃশ্য খাবার যা চালের আটা ও নারিকেল দুধ দিয়ে তৈরি।
  • পুশনাম্বু - শ্রী লংকার খ্রিস্টান অধিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত।

অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে আছে

  • উন্ডু ওয়ালালু/উন্ডু ওয়াল অথবা পানি ওয়ালালু - মাথালে এলাকার মিষ্টি যা কলাইয়ের ডালের ময়দা দিয়ে প্রস্তুত করা হয়।
  • আজ্ঞালা - চালের আটা ও নারিকেল দিয়ে তৈরি করা গোল্লা যাতে ওয়েলি থালাপার সুগন্ধ দেওয়া হয়।
  • আসামি - আটার ময়দা ও নিয়োলিটেসা ক্যাসসিয়া পাতার রস দিয়ে তৈরি করা হয়। ঢেঁড়সের রসও ব্যবহার করা যায়।
পুডিও ও টফি
  • কালু ডোডল
  • ওয়াটালাপ্পাম
  • থালা গুলি
  • কিরি টফি

পানীয়

[সম্পাদনা]

সমুদ্র উপকূলবর্তী শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন ধরনের পানীয় প্রচলিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ

  • ফালুদা - সিরাপ, আইসক্রিম, জেলির টুকরো, বেসিল বীজ দিয়ে তৈরী করে বরফের টুকরো দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
  • ফলের রস - বিভিন্ন ফল দিয়ে তৈরী করা হয়।
  • টড্ডি - তালের রস থেকে তৈরী মৃদু মদজাতীয় পানীয়।
  • আরক - নারিকেল থেকে তৈরী পাতিত স্প্রিরিট।
  • চা

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]