শ্লৈষ্মিক অনাক্রম্যবিজ্ঞান (ইংরেজি: Mucosal immunology) পরিপাকনালী, মূত্র-জনন নালী ও শ্বসনতন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে অনাক্রম্যতন্ত্রের যে প্রতিক্রিয়াগুলি সংঘটিত হয়, সেগুলি অধ্যয়নের শাস্ত্র। এই আবরণীগুলি বহিঃস্থ পরিবেশের সাথে সংস্পর্শে থাকে।[১] সুস্থ অবস্থায় শ্লৈষ্মিক অনাক্রম্যতন্ত্র রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা প্রদান করে এবং একই সাথে দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়, এমন সহভক্ষক অণুজীবসমূহ ও পরিবেশজাত পদার্থগুলির প্রতি সহনশীলতা বজায় রাখে।[১]
উদাহরণস্বরূপ, মুখগহ্বর ও অন্ত্রের শ্লৈষ্মিক আবরণীগুলিতে যে ইমিউনোগ্লোবুলিন এ (আইজিএ, IgA) নামক প্রতিরক্ষিকা নিঃসৃত হয়, সেগুলি খাদ্যের সম্ভাব্য প্রতিজনক বা প্রত্যুৎপাদকগুলির বিরুদ্ধে অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া প্রদান করে, এবং এর ফলে সমগ্র তন্ত্রব্যাপী বৃহৎ মাত্রার অপ্রয়োজনীয় অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না।[২] যেহেতু শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিগুলি একটি পোষক জীব ও তার পরিবেশের মধ্যবর্তী প্রধান সংস্পর্শতল হিসেবে কাজ করে, তাই এগুলিতে বৃহৎ পরিমাণে শ্লৈষ্মিকঝিল্লি-সংশ্লিষ্ট লসিকাকল্প কলা (গৌণ লসিকাকল্প কলা) দেখতে পাওয়া যায়। এই কলাগুলি জীবকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক স্তরের প্রতিরক্ষা প্রদান করে। প্লীহা ও লসিকাগ্রন্থিগুলির পাশাপাশি তালুমূলগ্রন্থি (টনসিল) ও শ্লৈষ্মিকঝিল্লি-সংশ্লিষ্ট লসিকাকল্প কলাগুলিও গৌণ লসিকাকল্প কলা হিসেবে পরিগণিত হয়।[৩]
শ্লৈষ্মিক অনাক্রম্যতন্ত্র তিনটি প্রধান কাজ সম্পাদন করে:
প্রতিজনক ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহের প্রাথমিক স্তরের প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করা
সহভক্ষক ব্যাকটেরিয়াসমূহ ও খাদ্যস্থিত প্রতিজনকসমূহের (মূলত অন্ত্র-সংশ্লিষ্ট লসিকাকল্প কলায় খাদ্যস্থিত প্রোটিন, তথাকথিত মৌখিক সহনশীলতা) বিরুদ্ধে তন্ত্রব্যাপী অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করা।
দৈনিক ভিত্তিতে দেহ যেসব রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, সেগুলির প্রতি অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।[৪]
জন্মের সময় নবজাতকের শ্লৈষ্মিক অনাক্রম্যতন্ত্র আপেক্ষিকভাবে অবিকশিত অবস্থায় থাকে। কিন্তু আন্ত্রিক অণুজীবসমগ্রের উপনিবেশ স্থাপনের সাথে সাথে এটির বিকাশ ঘটতে থাকে।[৫]
যেহেতু শ্লৈষ্মিক অনাক্রম্যতন্ত্রটি অনাক্রম্যতন্ত্রের অভ্যন্তরে সম্মুখ সারির মর্যাদায় আসীন, তাই এটিকে বিভিন্ন ধরনের রোগের টিকাতে ব্যবহার করা যায় কি না, তা নিয়ে গবেষণা চলছে,[৬] যার মধ্যে এইডস[৭][৮][৯][১০] ও বিভিন্ন অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জি) উল্লেখ্য।[১১]
↑Simerska, Pavla; Moyle, Peter M.; Olive, Colleen; Toth, Istvan (২০০৯)। "Oral Vaccine Delivery - New Strategies and Technologies"। Current Drug Delivery। 6 (4): 347–58। ডিওআই:10.2174/156720109789000537। পিএমআইডি19534712।