সংকষ্টী চতুর্থী | |
---|---|
পালনকারী | হিন্দু |
ধরন | ভারতীয় হিন্দু |
তারিখ | হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রতি মাসের কৃষ্ণা চতুর্থী তিথি |
সংকষ্টী চতুর্থী (সংস্কৃত: संकष्टी चतुर्थी) বা সংকটহরা চতুর্থী হল একটি হিন্দু অনুষ্ঠান। এই দিন হিন্দু দেবতা গণেশের পূজা করা হয়। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রতি মাসের কৃষ্ণা চতুর্থী তিথিতে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।[১][২] এই তিথিটি মঙ্গলবারে পড়লে তাকে বলা হয় অঙ্গারকী সংকষ্টী চতুর্থী। সকল সংকষ্টী চতুর্থী তিথির মধ্যে অঙ্গারকী সংকষ্টী চতুর্থীকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।
সংকষ্টী চতুর্থী তিথিতে ব্রতকারী কঠোরভাবে উপবাস পালন করেন। রাত্রিতে চন্দ্র দর্শনের পর গণেশের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে উপবাস ভঙ্গ করা হয়। ভক্তরা মনে করেন, অঙ্গারকী চতুর্থী তিথিতে (জ্বলন্ত কয়লাকে সংস্কৃতে ‘অঙ্গারক’ বলা হয়। এটি গ্রহদেবতা মঙ্গলের দ্যোতক। উল্লেখ্য, মঙ্গলের নামানুসারেই মঙ্গলবারের নামকরণ করা হয়েছে।) প্রার্থনা জানালে, তাদের ইচ্ছা পূর্ণ হবে। গণেশ বিঘ্ননাশকারী এবং বুদ্ধির সর্বোচ্চ ঈশ্বর। তাই ভক্তদের বিশ্বাস, এই দিন উপবাস করলে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। চন্দ্র উদয়ের আগে গণেশের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য গণপতি অথর্বশীর্ষ পাঠ করা হয়।
প্রতি মাসে গণেশকে পৃথক পৃথক নামে ও পীঠে (আসনে) পূজা করা হয়। সংকষ্টী চতুর্থীর পূজাকে ‘সংকষ্টী গণপতি পূজা’ বলা হয়। প্রত্যেকটি ব্রতের একটি উদ্দেশ্য থাকে। এই উদ্দেশ্য একটি ব্রতকথার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। সংকষ্টী চতুর্থী ব্রতের ১৩টি ব্রতকথা আছে। ১২টি ব্রতকথা বছরের ১২ মাসে এক-একটিতে পঠিত হয়। ১৩শ ব্রতকথাটি ‘অধিক’ বা ‘মল’ মাসে (হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রতি ৪ বছর অন্তর বছরে একটি মাস অধিক হয়, সেটিকেই ‘অধিক’ বা ‘মল’ মাস বলে) পঠিত হয়। এই ব্রতের বৈশিষ্ট্য এই যে, প্রতি মাসের সংশ্লিষ্ট ব্রতকথাটিই সেই মাসে পঠিত হয়।
মাস | গণেশের নাম | পীঠের নাম |
---|---|---|
চৈত্র | বিকট মহাগণপতি | বিনায়ক পীঠ |
বৈশাখ | চক্ররাজ একদন্ত গণপতি | শ্রীচক্রপীঠ |
জ্যৈষ্ঠ | কৃষ্ণপিঙ্গল মহাগণপতি | শ্রীসংকষ্টী গণপতি পীঠ |
আষাঢ় | গজানন গণপতি | বিষ্ণুপীঠ |
শ্রাবণ | হেরম্ব মহাগণপতি | গণপতি পীঠ |
ভাদ্র | বিঘ্নরাজ মহাগণপতি | বিঘ্নেশ্বর পীঠ |
আশ্বিন | বক্রতুণ্ড মহাগণপতি | ভুবনেশ্বরী পীঠ |
কার্তিক | গণাধিপ মহাগণপতি | শিবপীঠ |
মাঘ | অকুরথ মহাগণপতি | দুর্গাপীঠ |
পৌষ | লম্বোদর মহাগণপতি | সৌরপীঠ |
মাঘ | দ্বিজপ্রিয় মহাগণপতি | সামান্যদেব পীঠ |
ফাল্গুন | বালচন্দ্র মহাগণপতি | আগমপীঠ |
অধিক মাস | বিভুবন পলক মহাগণপতি | দূর্বা বিল্বপত্র পীঠ |
ভক্তেরা মনে করেন, এই দিন গণেশ মর্ত্যে অবতীর্ণ হয়ে ভক্তদের কৃপা করেন। এই দিনই শিব বিষ্ণু-লক্ষ্মী ও শিব-পার্বতীর উর্ধ্বে তার পুত্রকে শ্রেষ্ঠতম বলে ঘোষণা করেছিলেন।
কিংবদন্তি অনুসারে, পার্বতী গণেশকে সৃষ্টি করেছিলেন তার স্নানের সময় ব্যবহৃত চন্দন থেকে। তারপর তিনি গণেশে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি গণেশকে তার স্নানের সময় দ্বাররক্ষী নিয়োগ করেন। শিব যখন গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন তাকে না চিনে গণেশ তাকে বাধা দেন। শিব ক্রুদ্ধ হয়ে তার অনুগামী গণেদের আদেশ করেন, সেই বালককে সহবত শিক্ষা দিতে। মহাশক্তি পার্বতীর সন্তান বলে গণেশ ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি গণেদের পরাজিত করেন এবং ঘোষণা করেন, তার মা যখন স্নান করবেন, তখন কেউই গৃহে প্রবেশ করতে পারবেন না। দেবর্ষি নারদ ও সপ্তর্ষিগণ উদ্ভূত পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে সেই বালককে সন্তুষ্ট করতে আসেন। দেবরাজ ইন্দ্র ক্রুদ্ধ হয়ে দেবসেনাদের নিয়ে যুদ্ধ করতে আসেন। কিন্তু কিছুতেই গণেশকে টলানো বা পরাজিত করা যায় না। ফলে বিষয়টি শিব ও পার্বতীর মধ্যে বিবাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দেবগণ পরাজিত হওয়ার পর ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব একযোগে গণেশকে আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধের সময় শিব গণেশের মুণ্ডচ্ছেদ করেন। এতে পার্বতী যারপরনাই ক্রুদ্ধ হন। নিজ পুত্রকে নিহত দেখে পার্বতী তার আদ্যাশক্তি রূপ ধারণ করেন। তিনি ভয়ংকরী মূর্তি ধরে জগৎ ধ্বংস করতে যান। দেবতারা পার্বতীর স্তব করতে থাকেন। শিব প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি গণেশের প্রাণ ফিরিয়ে দেবেন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব একটি মস্তকের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। পথে তারা দেখতে পান, এক হস্তীমাতা তার মৃত হস্তীশাবকটির জন্য কাঁদছে। তারা সেই হস্তীমাতাকে সান্ত্বনা দিয়ে সেই হস্তীশাবকের মাথাটি কেটে এনে গণেশের শরীরে স্থাপন করেন। শিব ঘোষণা করেন, সেই দিন থেকে সেই বালকের নাম হবে ‘গণেশ’।[৩]
Chaturthi falling in the dark fortnight is known as ‘Sankashti’.