বৃহত্তর অর্থে সংজ্ঞানাত্মক মনোবিজ্ঞান (ইংরেজি: Cognitive psychology) বলতে মনোবিজ্ঞানের একটি শাখাকে বোঝায় যেখানে মানুষ কীভাবে নিজের ও বিশ্বের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে, এই জ্ঞান কী রূপে মনে ও মস্তিষ্কে ধারণ করা হয় এবং কীভাবে মানুষ জ্ঞানের মাধ্যমে তার আচরণ পরিচালিত করে, এইসব বিষয়ে অধ্যয়ন করা হয়।[১] বিশিষ্ট অর্থে এই শাস্ত্রে প্রত্যক্ষণ, মনোযোগ, চিন্তা, ভাষা ও স্মৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট মানসিক প্রক্রিয়াসমূহ কীভাবে কাজ করে, সেগুলি নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। প্রধানত মানুষের বহিঃস্থ আচরণ থেকে উপপত্তির মাধ্যমে এগুলির ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা হয়।[২]
মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণার ইতিহাসে ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে সংজ্ঞানাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটে এবং ১৯৬০-এর দশকে এসে এটি বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে প্রচলিত ও আধিপত্য বিস্তারকারী আচরণবাদের একটি সুস্পষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বী তাত্ত্বিক পরিকাঠামোয় পরিণত হয়। এতে পর্যবেক্ষণযোগ্য আচরণের পরিবর্তে মনের ভেতরে অবস্থিত অদৃশ্য জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াসমূহের উপরে জোর দেওয়া হয়। আরও বলা হয় যে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যবর্তী সম্পর্ক সরল ও প্রত্যক্ষ নয়, বরং জটিল ও মধ্যস্থতাকৃত প্রকৃতির। আবার মনোবিশ্লেষণে যেখানে সহজাত প্রবৃত্তি ও অন্যান্য অচেতন বা অবচেতন উপাদানগুলির উপরে জোর দেয়া হয়, তার বিপরীতে সংজ্ঞানাত্মক মনোবিজ্ঞানে উচ্চতর মানসিক প্রক্রিয়াসমূহের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এসে পরিগণক বিজ্ঞান (কম্পিউটার বিজ্ঞান) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষেত্রে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও তথ্য তত্ত্বগুলি যেসব দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়, সেগুলিো সংজ্ঞানাত্মক মনোবিজ্ঞানের উপরে প্রভাব ফেলে।[২] পরিগণক যন্ত্রের উপাত্ত প্রবিষ্টকারী যন্ত্রাংশগুলির সাথে মানুষের সংবেদন ও প্রত্যক্ষণ কর্মপদ্ধতির, উপাত্ত সংরক্ষণকারী যন্ত্রাংশের (মেমরি) সাথে মানুষের স্মৃতি, কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ অংশের সাথে মানুষের মস্তিষ্ক, এবং নির্গত তথ্য-উপাত্তের সাথে মানব আচরণের যে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়, তা মানুষের চিন্তা বা সংজ্ঞানের একটি উপকারী প্রতিমান বা মডেল প্রদান করে। সংবেদন, প্রত্যক্ষণ, শিখন, স্মরণ, চিন্তা, ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলিকে "মানব তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের" বিভিন্ন প্রক্রিয়া হিসেবে কল্পনা করা হয়। মানুষের মনকে পরিগণক যন্ত্রের সফটওয়্যার তথা নির্দেশনাসামগ্রী এবং মানুষের মস্তিষ্ককে হার্ডওয়্যার তথা ভৌত যন্ত্রাংশসামগ্রী হিসেবে কল্পনা করা হয়। পরিগণক যন্ত্র তথা কম্পিউটারে ছদ্মায়িত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাস্তব মানব বুদ্ধিমত্তার একটি প্রতিমান বা মডেলে (এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বীতে) পরিণত হয়।[১]
সংজ্ঞানাত্মক মনোবিজ্ঞানে অধীত প্রধান প্রধান বিষয়গুলি হল সংবেদন, প্রত্যক্ষণ, মনোযোগ, স্মৃতি, শ্রেণীকরণ, শিখন, ভাষা ও যোগাযোগ, চিন্তা, যুক্তিপাত, বিচার ও সিদ্ধান্তগ্রহণ। সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানে সংজ্ঞানাত্মক প্রক্রিয়াগুলির স্নায়বিক অধোস্তরগুলি অনুসন্ধান করে দেখা হয়। সংজ্ঞানাত্মক মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তিত্ব, সামাজিক মনোবিজ্ঞান, রোগীভিত্তিক মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান এবং অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের শাখা-প্রশাখায় প্রভাব বিস্তার করেছে। সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞান অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় জ্ঞানের শাখা যেখানে সংজ্ঞানাত্মক মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে দর্শন, ভাষাবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত ক্ষেত্রগুলির সংযোগ ঘটেছে।
|Volume=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|volume=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)