সংযুক্ত আরব আমিরাত আরব উপদ্বীপে পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বে এবং ওমান উপসাগরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি দেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭টি আমিরাত দ্বারা গঠিত এবং এটি একটি যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। সাতটি আমিরাতের মধ্যে ছ’টি (আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমান, উম্মুল কুয়াইন এবং ফুজিরা) ঐ দিন সংযুক্ত হয়। সপ্তমটি, রাস-আল-খাইমা, ১৯৭২ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান করে। ১৯শ শতকে ব্রিটিশদের স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুসারে সাতটি রাষ্ট্র পূর্বে চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্র নামে পরিচিত ছিল।
আমিরাতে প্রাপ্ত হস্তনির্মিত বস্তু থেকে এই অঞ্চলের মনুষ্য বসতিস্থাপনের ও মেসোপটেমিয়ার মত সভ্যতার সঙ্গে স্থানীয় বাণিজ্য চলাচলের সুপ্রাচীন ইতিহাস পাওয়া যায়। এই অঞ্চলের উপকূলে ও অভ্যন্তরস্থ স্থানে কিছু সংখ্যক উপজাতি প্রথমে বসতি স্থাপন করে এবং তাদের খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে ইসলামীকরণ করা হয়।
আলবুকার্কের নেতৃত্বে পর্তুগিজ আক্রমণের সময় এই অঞ্চলের উপকূলবিভাগে বেশ কিছু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। চুক্তিবদ্ধ উপকূলের অধিবাসী এবং ব্রিটিশদের মধ্যে সংঘাতের ফলস্বরূপ ব্রিটিশরা একবার ১৮০৯ সালে এবং আরো একবার ১৮১৯ সালে রাস-আল-খাইমা লুন্ঠন করে; এর ফলে ১৮২০ সালে চুক্তিবদ্ধ শাসকদের সঙ্গে ব্রিটিশদের প্রথম কিছু চুক্তি স্থাপিত হয়। চিরস্থায়ী উপকূলীয় শান্তির চুক্তিসহ, আরো বেশ কিছু চুক্তি ১৮৫৩ সালে স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত উপকূল অঞ্চল বরাবর শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় ছিল; এরপর মুক্তোর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই উপকূল অঞ্চলের অধিবাসীদের অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়।
১৯৬৮ সালে ব্রিটিশরা একটি সিদ্ধান্তে আসে যে তারা চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর ওপর নিজেদের কার্যকলাপ বন্ধ করবে এবং একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করবে। এই সিদ্ধান্তটি চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রের সবথেকে প্রভাবশালী দুই নেতা – আবুধাবির শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান এবং দুবাইয়ের শেখ রশিদ বিন সৈয়দ আল মাকতুম সমর্থন করে। এরা দুজন অন্যান্য চুক্তিবদ্ধ শাসকদের এই যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান করবার আহ্বান জানায়। একটা সময় মনে হয়েছিল, বাহরাইন এবং কাতার এই ইউনিয়নে যোগদান করবে, কিন্তু তারা স্বাধীন থাকবারই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল।
বর্তমান সময়ে আমিরাত হল একটি আধুনিক তেল রপ্তানীকারক রাষ্ট্র, যার অর্থনীতি খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ; বিশেষত দুবাই হল পর্যটন, খুচরা বিক্রয় এবং আর্থিক যোগানের একটি বিশ্বকেন্দ্র[১] ও এখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ইমারত এবং সর্ববৃহৎ মনুষ্য-নির্মিত সমুদ্রবন্দর রয়েছে।
২০১১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জেবেল ফায়া প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় খননকার্য চালিয়ে কিছু আদিম হাত-কুঠার এবং কয়েক ধরনের চাঁছনি ও ছিদ্র করবার যন্ত্র পাওয়া গেছে। এইসকল যন্ত্রগুলি পূর্ব আফ্রিকায় প্রাক-আধুনিক মানুষ কর্তৃক ব্যবহৃত যন্ত্রের মত দেখতে। থার্মোলিউমিনেসেন্স ডেটিং প্রযুক্তি দ্বারা জানা গেছে, এইসকল বস্তুগুলি আজ থেকে ১,০০,০০০ থেকে ১,২৫,০০০ বছর আগেকার। এটি হল আফ্রিকার বাইরে প্রাপ্ত আধুনিক মানুষের সর্বপ্রাচীন নিদর্শন এবং এই নিদর্শন আবিষ্কারের ফলে জানা গেছে, আধুনিক মানুষ, আগে যা ভাবা হত, তার থেকেও পূর্বে আফ্রিকা থেকে অন্যত্র গমন করে।[২] এইসকল আবিষ্কারের স্থানগুলি এবং এর পরবর্তীকালীন সাংস্কৃতিক সন্ধানগুলি শারজাহর মেলেইয়া প্রত্নতত্ত্ব কেন্দ্রে সংরক্ষণ করে রাখা আছে; এর মধ্যে রয়েছে সমাধিক্ষেত্র, আম-আল-নার, ওয়াদি সুক এবং ঐস্লামিক সময়কালীন প্রাপ্ত অন্যান্য নিদর্শন।
৬৮০০০ থেকে ৮০০০ খ্রিস্টপূর্ব চরম হিমবাহ যুগে পূর্ব আফ্রিকা, সম্ভবত অবসবাসযোগ্য ছিল। প্রস্তরযুগে আরবীয় বাইফেসিয়াল এবং উবেইদ সংস্কৃতি থেকে (এর মধ্যে ছিল পাথরের তীর এবং কুঠারমস্তক এবং উবেইদের মৃৎশিল্প) জানা যায়, এই অঞ্চলে ৫০০০ থেকে ৩১০০ খ্রিস্টপূর্ব মনুষ্য বসবাস শুরু হয়ে যায়। হাফিৎ যুগে, ভিন্ন প্রকৃতির সমাধিক্ষেত্র এবং জামদাত নাসর মৃৎশিল্প ৩১০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ২৫০০ খ্রিস্টপূর্ব বিস্তৃতি লাভ করে।
আম-আল-নার (আম-আন-নার নামেও পরিচিত) হল একটি ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা; ঐতিহাসিকেরা বিভিন্নভাবে একে সংজ্ঞায়িত করেছেন, এটি অধুনাতন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমানে খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সময়কালে অবস্থিত ছিল। এই সভ্যতার নামের ব্যুৎপত্তি আবু ধাবি সংলগ্ন একই নামের একটি দ্বীপ থেকে এসেছে।[৩][৪] এর প্রধান অঞ্চলটি অত্যন্ত সুরক্ষিত, কিন্তু এই স্থলে একটি পরিশোধনাগার এবং একটি সংবেদনশীল সামরিক অঞ্চল থাকায়, এখানে বর্তমানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই অঞ্চলটি যাতে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা যায় তার জন্য আমিরাত কর্তৃপক্ষ কাজ করছে এবং আবু ধাবির এই অংশটিকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বানাবার পরিকল্পনা নিয়েছে। আম-আল-নার সংস্কৃতির একটি উপকরণ হল এর বৃত্তাকার সমাধি যার বাইরের দিকের দেওয়ালে মজবুত পাথরের গাঁথনি এবং অভ্যন্তরস্থ অঞ্চলে অনেক মনুষ্য অবশেষ।[৫]
উম আল-নার সংস্কৃতি, ৩য় সহস্রাব্দ থেকে পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ শতক (২৬০০/২৫০০-২০০০ খ্রিস্টপূর্ব) পর্যন্ত টিকে ছিল। এর পর আসে ওয়াদি সুক সংস্কৃতি যেটি ২০০০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত এই অঞ্চলটিতে অবস্থিত ছিল। প্রধান প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র, যেগুলি উভয় আমলের বাণিজ্যিক শহর হিসেবে বিখ্যাত ছিল সেগুলি আমিরাত ও ওমানের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় উপকূলেই বিস্তৃত ছিল; এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দলমা, আম আল-নার, সুফৌহ্, এদ দুর, তেল আব্রাক, শিমল এবং কালবা। ওয়াদি সুক যুগ থেকে উট ও অন্যান্য প্রাণীদের পোষ মানানো হয় যার ফলে এই অঞ্চলে জনবসতি বেড়ে ওঠে এবং তাল-খেজুরসহ বিভিন্ন প্রকৃতির শস্যের চাষ শুরু হয়। ধাতুবিদ্যা, মৃৎশিল্প, প্রস্তর খোদাই করা প্রভৃতি উন্নতির সাথে সাথে আরো বেশি পরিমাণে উন্নত অস্ত্র এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি উৎপন্ন হতে থাকে, যদিও এইসময় সিন্ধুসভ্যতা এবং মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সঙ্গে এই অঞ্চলের শক্তিশালী বাণিজ্যের নিদর্শন অপেক্ষাকৃত কম মেলে।
১২০০ খ্রিস্টপূর্ব পূর্ব আরবে ইসলামের আগমনের সময় থেকে শুরু করে, তিনটি পৃথক লৌহযুগ পার করে (প্রথম লৌহযুগ, ১২০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্ব; দ্বিতীয় লৌহযুগ ১০০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্ব এবং তৃতীয় লৌহযুগ ৬০০-৩০০ খ্রিস্টপূর্ব) এবং মেলিহা আমল (৩০০ খ্রিস্টপূর্ব পরবর্তী) পর্যন্ত সময়ে এই অঞ্চলটি আর্কেমেনিড এবং অন্যান্য শক্তি দ্বারা অধিকৃত হয়েছিল এবং এই অঞ্চলে ফলাজ নামক সেচব্যবস্থার কারণে সুরক্ষিত বাসভবন এবং বিস্তীর্ণরূপে পশু প্রতিপালনের নিদর্শন মেলে।
৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে [বিশ্ব নবি হযরত মোহাম্মদ(সঃ)] এর মাধ্যমে এই অঞ্চলটি ইসলামে রূপান্তরিত হয়। মোহাম্মদের মৃত্যুর পর, বর্তমান ফুজাইরার দিব্বায় রিদ্দার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে অমুসলমানদের পরাজয়ের ফলে সমগ্র আরব উপদ্বীপে ইসলামের জয়জয়কার ঘোষিত হয়।
৬৩৭ সালে, জুলফার অঞ্চলকে (বর্তমান রাস-উল-খাইমা) ইরান বিজয়ের সূচনাকারী হিসেবে ব্যবহার করা হত। জুলফার ছিল একটি সমৃদ্ধশালী বন্দর এবং মুক্তো ব্যবসার কেন্দ্র; এখান থেকে পালতোলা নৌকো করে ভারত মহাসাগরের মধ্যে দিয়ে অনেক দেশে ভ্রমণ করা হত।
বর্তমান আমিরাত ভূখণ্ড খ্রীস্টিয় ১৬শ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যের সরাসরি অধিকারে আসে।[৬] ভাস্কো-দা-গামার সমুদ্র জলপথ আবিষ্কারের পর ১৬শ শতকে ভারত মহাসাগরে পর্তুগীজদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বহু উপকূলীয় দ্বীপে লুণ্ঠন চালাতে থাকে। এরপর ব্রিটিশরা এই অঞ্চলটিকে “জলদস্যুদের উপকূল” বলত;[৭] এই অঞ্চলে ১৭শ থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত ইউরোপীয় এবং ওমানীয় নৌবাহিনী নজরদারি চালানো সত্ত্বেও হানাদারেরা জাহাজ শিল্পের ওপর আক্রমণ হানত। রাস-উল-খাইমার হানাদারের হাত থেকে ভারতীয় শিল্পকে বাঁচাবার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশরা অভিযান চালায় যার ফলশ্রুতি হিসেবে ১৮১৯ সালে রাস-উল-খাইমার সদর দপ্তরে এবং ঐ উপকূল বরাবর অন্যান্য বন্দরে এর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযান শুরু হয়। পরের বছর, উপকূল অঞ্চলের সমস্ত শেখেদের নিয়ে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৮৩৫ সাল পর্যন্ত মাঝে মাঝেই হানাদারের আক্রমণ চলতে থাকে, এরপর শেখেরা সমুদ্র অঞ্চলে আর কোন উৎপাত চালাবে না বলে সম্মত হয়। ১৮৫৩ সালে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শেখেদের (চুক্তিবদ্ধ শেখ রাজত্ব/Trucial Sheikhdoms) একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যার দ্বারা তারা “চিরস্থায়ী উপকূলীয় শান্তি” রক্ষার জন্য সম্মত হয়। এই চুক্তি যুক্তরাজ্য কর্তৃক বলবৎ করা হয়, এবং এই চুক্তি অনুযায়ী শেখেদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হলে তার ফয়সালা ব্রিটিশরা করত।[৮]
মূলত অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির গতিবিধি লক্ষ্য করে যুক্তরাজ্য এবং চুক্তিবদ্ধ শেখ রাজত্ব নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য ১৮৯২ সালে আরো একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, এটি ছিল যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য পারস্য উপসাগরীয় অধিপতিদের দ্বারা সাক্ষরিত চুক্তির অনুরূপ। এই চুক্তি অনুযায়ী শেখেরা একমাত্র যুক্তরাজ্য ছাড়া অন্য কারুর জন্যে নিজেদের এলাকা ছেড়ে দিতে পারবে না এবং যুক্তরাজ্যের সম্মতি বিনা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনরকম সম্পর্ক রাখতে পারবে না। পরিবর্তে, ব্রিটিশরা চুক্তিবদ্ধ রাজত্বের উপকূল অঞ্চলকে সমস্তরকম জলপথ আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে এবং স্থলপথ আক্রমণেও তাদের সাহায্য করবে।[৯]
নুরা সাক্র আল ফালাহি তার “দ্য জুডিসিয়াল সিস্টেম ইন দ্য চুক্তিবদ্ধ কোস্ট” (“The Judicial System in the Trucial Coast”) বইতে লিখেছেন যে ১৮৯২ সালের চুক্তির ফলে এই দেশটিতে বহুকাল ধরে উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল; তুলনামূলকভাবে এই অঞ্চলে সমসাময়িক অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি কিন্তু তত বাধার সম্মুখীন হয়নি।[১০]
উনবিংশ শতক এবং বিংশ শতকের শুরুতে, অপেক্ষাকৃত শান্ত সমুদ্রে মুক্তোর ব্যবসার বেশ প্রসারলাভ ঘটেছিল যার ফলে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের আয় এবং কর্মসংস্থান হত। স্থানীয় মানুষের কাছে এটি একটি ভাল অর্থনৈতিক সংস্থান হিসেবে কাজ করত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এই মুক্তোর ব্যাবসার ওপর অত্যন্ত ক্ষতিকর আঘাত হানে, এরপর ১৯২০র দশকের শেষভাগ ও ১৯৩০র দশকের প্রথমভাগে মহামন্দার ফলে এবং জাপানীরা কৃত্রিম মুক্তো আবিষ্কার করবার ফলে এই শিল্প প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধীরে ধীরে এই শিল্প ক্রমাবলুপ্তির পথে চলে যায়, বিশেষত যখন ভারত সরকার পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলি হতে আমদানীকৃত মুক্তোর ওপর প্রচুর পরিমাণে শুল্ক ধার্য করে। এই অঞ্চলে মুক্তোব্যবসার অবক্ষয়ের ফলে খুব কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে হয় এবং এই স্থানের পরিকাঠামোগত উন্নয়নেরও কোন সুযোগ থাকে না।
১৯৩০র দশকে, প্রথম কিছু তৈল কোম্পানী প্রাথমিকভাবে কয়েকটি জরিপকার্য চালায়। পেট্রোলিয়াম ডেভেলপমেন্ট (চুক্তিবদ্ধ কোস্ট)কে ১৯৩৯ সালে অনুমোদন দেওয়া হয় এবং উপকূল থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে ডি’আরকি এক্সপ্লোরেশন লিমিটেডকে ১৯৫২ সালে অনুমোদন দেওয়া হয়।[১১] ১৯৫৮ সালে পারস্য উপসাগরের আম শাইফ নামক প্রাচীন মুক্তো অঞ্চলে এবং ১৯৬০ সালে মার্বানের মরু অঞ্চলে তেল আবিষ্কৃত হয়। ১৯৬২ সালে আবু ধাবির জাবেল ধান্না থেকে প্রথম ভোজ্য তেল রপ্তানী করা হয়। এর ফলে একদিকে যেমন তেল থেকে আয় বৃদ্ধি পায়, তেমনি আবু ধাবির শাসক শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহ্ইয়ান, এই অঞ্চলে স্কুল স্থাপন, গৃহনির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণ এবং সড়ক নির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে নির্মাণ কার্য চালাতে থাকেন। ১৯৬৯ সালে দুবাইয়ের তৈল রপ্তানীর সূচনার সময়ে, দুবাইয়ের শাসক শেখ রশিদ বিন সৈয়দ আল মাকতুম তার রাজ্যে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য তেল থেকে প্রাপ্ত আয়কে কাজে লাগাতে থাকেন।[১২]
১৯৫৫ সালে ওমানের সঙ্গে দক্ষিণের অপর একটি অঞ্চল বুরাইমি ওয়েসিস নিয়ে আবু ধাবির সমস্যা শুরু হলে যুক্তরাজ্য আবু ধাবির পক্ষ নেয়।[১৩] আবু ধাবি এবং সৌদি আরবের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৯৭৪ সালের একটি চুক্তির মাধ্যমে আবু ধাবি – সৌদি আরব সীমান্ত সমস্যা মেটানো হয়; যদিও এই চুক্তিটি আরব আমিরাত সরকার এখনও পর্যন্ত অনুমোদন করেনি এবং সৌদি সরকারও একে স্বীকৃতি দেয়নি। ওমান সীমান্তও সরকারীরূপে স্বীকৃত নয়, যদিও দুদেশের সরকার ১৯৯৯ সালের মে মাসে সীমান্ত রচনার ব্যাপারে সম্মত হয়।[১৪]
১৯৬০এর দশকে আবু ধাবিতে তেল আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে আরব আমিরাতের শেখ রাজত্বগুলি দ্রুত সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য ডাক দেয়। শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহ্ইয়ান ১৯৬৬ সালে আবু ধাবির শাসক নিযুক্ত হন, এবং ব্রিটিশরা আমেরিকান তেল কোম্পানীর কাছে তাদের তৈল বিনিয়োগ ও চুক্তি হারাতে থাকে।[১৫]
প্রথমে ব্রিটিশরা আমিরাতে কিছু ছোট ছোট উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সেখানে উন্নয়ন দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে। পরে আমিরাতের শেখেরা নিজেদের মধ্যেকার বিষয়গুলি সংঘবদ্ধভাবে আলোচনার জন্য একটি পরিষদ গঠন করে এবং উন্নয়নমূলক দপ্তরটি অধিগ্রহণ করে। তারা চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্র পরিষদ গঠন করে[১৬] এবং শেখ রশিদ বিন সৈয়দ আল মাকতুমের আইন উপদেষ্টা আদি বিতারকে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং আইনি উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত ক্রা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত হবার পর এই পরিষদটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।[১৭]
১৯৬৬ সালে ব্রিটিশ সরকার এই সিদ্ধান্তে আসে যে তারা বর্তমান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আর শাসন করতে পারবে না। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই নিয়ে প্রচুর বিতর্ক শুরু হয়, বেশ কিছু সাংসদ বলতে থাকেন রয়াল নেভির পক্ষে চুক্তিবদ্ধ শেখ রাজত্বকে রক্ষা করা আর সম্ভব নয়। যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিভাগের সেক্রেটারি অফ স্টেট, ডেনিস হিলি বলেন যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত বেশি মাত্রায় প্রসারিত হয়ে পড়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে শেখরাজত্বগুলির প্রতিরক্ষার জন্য তাদের কাছে মজুত অস্ত্রের পরিমাণ বিপজ্জনকভাবে অল্প। ১৯৬৮ সালের ২৪শে জানুয়ারী, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন ঘোষণা করলেন যে ব্রিটিশ অধীন বাহরিণ এবং কাতারসহ সাতটি চুক্তিবদ্ধ শেখরাজত্বের সঙ্গে তারা চুক্তি সম্পর্কের অবসান চায়। ব্রিটিশ প্রস্থানের এই সিদ্ধান্ত ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ পুনরায় জানিয়ে দেন।[১৮]
এই ঘোষণার কয়েকদিন পরে শেখ জায়েদ, অভ্যন্তরীণ দূর্বলতার ভয়ে, চুক্তিটি রক্ষা করবার জন্য ব্রিটেনকে রাজি করাতে সচেষ্ট হয় এবং আমিরাতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সমস্ত ব্যয়নির্বাহের জন্য সম্মত হয়। কিন্তু ব্রিটিশ লেবার গভর্নমেন্ট তা খারিজ করে।[১৯][২০]
লেবার সাংসদ গোরোনউই রবার্টস শেখ জায়েদকে ব্রিটিশবাহিনী প্রত্যাহারের সংবাদ জানিয়ে দেওয়ার পর, নয়টি পারস্য উপসাগরীয় শেখরাজত্ব আরব আমিরাতগুলির একটি ফেডারেশন গঠনের প্রয়াস শুরু করেন।[২০] ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফেডারেশনের কথা প্রথম উত্থাপন করা হয়; এই সময় আবু ধাবি এবং দুবাইয়ের শাসকগণ আর্গুব এল সেদিরার মরু অঞ্চলে মিলিত হন এবং সংগঠনের নীতি গঠনের ব্যাপারে সম্মত হন।[২১] তারা, অন্যান্য পারস্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের সঙ্গে জোট বাঁধবার সংকল্পের কথা ঘোষণা করেন। ঐ মাসের শেষে, বাহরিণ, কাতার এবং চুক্তিবদ্ধ কোস্টের শাসকগণ একটি শীর্ষসম্মেলনের আয়োজন করেন, সেখানে কাতার সরকার স্থির করে যে আরব আমিরাতের ফেডারেশনের গঠন এবং কার্যকলাপ ন’জন শাসক দ্বারা গঠিত একটি উচ্চ পরিষদের দ্বারা পরিচালিত হবে। এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয় এবং সংগঠনের ঘোষণাটি অনুমোদিত হয়।[২২] যদিও তখনও শাসকদের মধ্যে রাজধানীর অবস্থান, সংবিধানের খসড়া নির্মাণ এবং মন্ত্রকের বাঁটোয়ারা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতান্তর ছিল।[২২]
আরও কিছু রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিতে লাগল যখন বাহরিণ নিজেকে নয় রাজ্যের সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় তুলে ধরবার ব্যাপারে চাপ দিতে লাগল; এছাড়াও চুক্তিবদ্ধ কোস্ট, বাহরিণ এবং কাতারের শাসকদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতান্তর হতে লাগল, বিশেষত হাওয়ার দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে বাহরিণ ও কাতার দীর্ঘকাল সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল। যদিও দুবাইয়ের শাসক শেখ রশিদের সঙ্গে কাতারীয় শাসকপরিবারের অত্যন্ত সুদৃঢ় বন্ধন ছিল, বিশেষ করে শেখ রশিদের কন্যার সঙ্গে কাতারী আমিরের পুত্রের রাজবিবাহ সম্পন্ন হয়;[২৩] কিন্তু আবু ধাবির সঙ্গে দুবাইয়ের সুসম্পর্কই (এখানেও আন্তঃবিবাহ সম্পর্ক, রশিদের স্ত্রী ছিলেন আবু ধাবির শাসক পরিবারের সদস্যা[২১]) শেষমেশ টিকে রইল বাহরিণ ও কাতারের সঙ্গে সমস্ত কথোপকথন ছিন্ন করে। সবমিলিয়ে, নয়জন শাসকদের মধ্যে মাত্র চারটি বৈঠক হয়।[২৩] আবু ধাবিতে অনুষ্ঠিত এর শেষ বৈঠকটিতে, জায়েদ বিন সুলতান আল নাহ্ইয়ান ফেডারেশনের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। বৈঠক চলাকালীন, উপ-রাষ্ট্রপতির অবস্থান, ফেডারেশনের সুরক্ষা এবং এর কোন সংবিধানের প্রয়োজন রয়েছে কিনা প্রভৃতি বিষয়ে বহুবার বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।[২৩]
বৈঠকের কিছু পরেই, আবু ধাবির রাজনৈতিক প্রতিনিধি এই অধিবেশনের ফলাফলের ওপর ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থের ব্যাপারটি প্রকাশ করে দেয় এবং সাথে সাথে কাতার, স্পষ্টতই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপের কারণে ফেডারেশন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে। আলোচনাকে পুনরুজ্জীবিত করবার জন্য সৌদি আরব, কুয়েত এবং ব্রিটেনের চেষ্টা সত্ত্বেও নয় আমিরাতের ফেডারেশন অবিলম্বেই ভেঙে যায়।[২৪] ১৯৭১ সালের অগাস্টে বাহরিণ স্বাধীন হয় এবং কাতার স্বাধীন হয় ঐ একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে।
১৯৭১ সালের ১লা ডিসেম্বর ব্রিটিশ-চুক্তিবদ্ধ শেখরাজত্বের মধ্যেকার চুক্তি সমাপ্ত হলে, শেখরাজত্বগুলি পুরোপুরি স্বাধীন হয়ে যায়।[২০][২৫] আবু ধাবি এবং দুবাইয়ের সঙ্গে আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠা চুক্তির সঙ্গে যুক্ত হবে বলে আরো চারটি চুক্তিবদ্ধ দেশ (আজমান, শারজা, উম্মুল কুয়াইন এবং ফুজাইরা) স্থির করে; এই চুক্তির সময়ে খসড়া সংবিধানের খসড়া অত্যন্ত দ্রুত নির্মিত হয় যাতে তা ১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে।[২৬] ঐ দিনে, দুবাই গেস্টহাউসে (যা বর্তমানে ইউনিয়ন হাউস নামে পরিচিত) আমিরাতগণ একটি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে স্থির করেন যার নাম হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউনাইটেড আরব এমিরেটস (United Arab Emirates)। তান্ব উপকূলের সঙ্গে ইরানের সংযুক্তিকরণের পরেই রাস আল-খাইমা ১৯৭২ সালের প্রথমভাগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যুক্ত হয়।[২৭][২৮]
আরব আমিরাতের এই সংযুক্তিকরণ এমন এক সময়ে হয়েছিল যে সময়ে ঐ অঞ্চলে চূড়ান্ত অস্থিরতা চলছিল যেখানে কালবার সীমান্ত সংঘর্ষে ২২ জন নিহত হয় এবং ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে শারজায় একটি আকস্মিক অভ্যুত্থান ঘটে। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাতারের আমিরের এক জ্ঞাতিভাই তাকে পদচ্যুত করেন।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১র জঙ্গী হামলার পর, অপহরণকারীদের টাকার যোগান দেওয়ার ব্যাপারে আরব আমিরাতকেই আল-কায়দার প্রধান আর্থিক কেন্দ্র বলে মনে করা হতে থাকে। কিন্তু আরব আমিরাত তৎক্ষণাৎ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করতে থাকে, সন্দেহভাজন জঙ্গীদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় এবং সমস্ত রকম আর্থিক তছরুপ শক্ত হাতে দমন করে।[২৯]
এই রাষ্ট্র ইতোমধ্যে ১৯৯৪ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক প্রতিরক্ষামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং ১৯৯৫ সালে ঐ একই চুক্তি ফ্রান্সের সঙ্গেও করে।
আরব আমিরাত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য জোটরাষ্ট্রগুলির সামরিক অভিযান সমর্থন করে; এই অভিযানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আফগানিস্তান (২০০১) এবং ইরাক (২০০৩) আক্রমণ এবং আবু ধাবির থেকে কিছু দূরে আল দাফরা এয়ার বেসে হর্ণ অফ আফ্রিকায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ। এই এয়ার বেসটি ১৯৯১ সালের পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং অপারেশন নর্দার্ন ওয়াচ চলাকালীনও জোট অপারেশনগুলিকে সমর্থন করেছিল।
২০০৪ সালের ২রা নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম রাষ্ট্রপতি, শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহ্ইয়ান মারা যান। তার পর তার পুত্র শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহ্ইয়ান আবু ধাবির শাসক হন। সংবিধান অনুযায়ী, আরব আমিরাতের শাসকদের সর্বোচ্চ পরিষদ খলিফাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহ্ইয়ান খলিফার পরে আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স বা মুকুট রাজকুমার হিসেবে অভিষিক্ত হন।[৩০] ২০০৬ সালের জানুয়ারীতে, দুবাইয়ের শাসক এবং আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম মারা যান এবং ক্রাউন প্রিন্স শেখ মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম দুই পদেরই দায়িত্ব নেন।
২০০৬ সালের মার্চ মাসে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র দুবাইয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব দুবাই পোর্টস ওয়ার্ল্ডকে ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকান বন্দরের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য করে। সমালোচকদের মতে, বন্দরের এই লেনদেনের কারণ হল জঙ্গী হামলার ক্রমবর্দ্ধমান আশঙ্কা; বলা হয়, আরব আমিরাতে ৯/১১র অপহরণকারীদের দুজন লুকিয়ে আছে।[৩১]
২০০৬ সালের ডিসেম্বরে, আরব আমিরাত তার প্রথম নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয় যে নির্বাচনের দ্বারা ৪৫০ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে আরব আমিরাতের জাতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিষদের (Federal National Council) অর্ধেক সদস্য নির্বাচিত হবে। যদিও মাত্র ৭০০০ আমিরাতবাসী, যা কিনা সমগ্র আমিরাত জনগোষ্ঠীর মাত্র ১%, এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার পেয়েছিল। নির্বাচনের পদ্ধতিটিও ছিল অস্পষ্ট। লক্ষ্যণীয়ভাবে, নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে মহিলাদের স্থান ছিল।[৩২]
২০১১ সালে, মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কিছু গণতন্ত্রপন্থী কিছু অভ্যুত্থান দেখা যায়, যা কিনা আরব স্প্রিং নামেই বেশি পরিচিত। আরব আমিরাতে এইসকল অস্থিরতা কিছু কমই লক্ষ্য করা গেছে, তবে এখানেও একটা বড়রকম ঘটনা ঘটে যাতে রাষ্ট্রপতি, শেখ খলিফা, উপ-রাষ্ট্রপতি শেখ মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, এবং আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স (এবং শেখ খলিফার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী), শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহ্ইয়ানকে অপমান করবার জন্য পাঁচজন গণতন্ত্রপন্থী কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।[৩৩] আমিরাতের এই পাঁচজনের (UAE Five) বিচার চলাকালীন এটি আন্তর্জাতিক প্রচার কাড়ে এবং বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন এর প্রতিবাদ করতে থাকে;[৩৪] এর মধ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল এই পাঁচজন ব্যক্তিকে প্রিজনার্স অফ কনসায়েন্স বা বিবেকী বন্দী নামে অভিহিত করে।[৩৩] বিবাদীগণ ২০১১ সালের ২৭শে নভেম্বর দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাদের দুই থেকে তিন বছরের জেল হেফাজতে রাখবার নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও শেখ খলিফার নির্দেশে পরেরদিন কোনরকম ব্যাখ্যা ছাড়াই ঐ পাঁচজনকে মুক্তি দেওয়া হয়।[৩৫]
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহরগুলি