হিন্দু ধর্মগ্রন্থ |
---|
![]() |
আনুষঙ্গিক ধর্মগ্রন্থ |
সংহিতা (সংস্কৃত: संहिता, saṁhitā) (আক্ষরিক অর্থে, “একত্রিত, মিলিত, যুক্ত” এবং “নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসারে একত্রিত গ্রন্থ বা মন্ত্র-সংকলন)[১][২] হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ বেদের প্রাচীনতম অংশটিকেও ‘সংহিতা’ বলা হয়। এই অংশটি হল মন্ত্র, স্তোত্র, প্রার্থনা, প্রার্থনা-সংগীত ও আশীর্বচনের সংকলন।[৩]
বৈদিক সংহিতাগুলির কিছু অংশ হিন্দুধর্মের প্রাচীনতম অংশ যা আজও প্রচলিত আছে।[৩]
‘সংহিতা’ একটি সংস্কৃত শব্দ। এই শব্দের মূল ‘সং’ (सं) ও ‘হিত’ (हित) শব্দদুটি। এই শব্দদুটির অর্থ যথাক্রমে ‘সঠিক, যথার্থ’ ও ‘সমৃদ্ধ, বিন্যস্ত’। এই দুই শব্দের সম্মিলিত অর্থ হল ‘একত্রিত, মিলিত, রচনা, বিন্যাস, একত্রীকৃত’ এবং ‘উচ্চারণের নিয়ম অনুসারে যুক্ত অক্ষর, নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে সংকলিত গ্রন্থ বা মন্ত্রসমূহ’।[১]
সাধারণভাবে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে সংকলিত যে কোনো গ্রন্থ বা মন্ত্র-সংগ্রহকেই ‘সংহিতা’ বলা যায়। যে কোনো শাস্ত্র, সূত্র বা সংস্কৃত মহাকাব্য এবং সর্বোপরি বৈদিক সাহিত্য ‘সংহিতা’ পদবাচ্য।[১]
যদিও সমসাময়িক সাহিত্যে ‘সংহিতা’ বলতে বেদের আদি ও প্রাচীনতম অংশটিকেই বোঝায়। এই অংশে আক্ষরিক অর্থ সহ বা অর্থবোধ ছাড়া মন্ত্র, সাধারণ ভাষণ, প্রার্থনা, প্রার্থনা-সংগীত ও আশীর্বচন সংকলিত রয়েছে। এগুলি প্রকৃতি বা বৈদিক দেবদেবীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত।[৩] বৈদিক সংহিতা বলতে বোঝায় গাণিতিক নিয়মে নিবদ্ধ ছন্দে রচিত প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ। বেদের প্রতিটি ভাগেই (ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ) একটি করে সংহিতা রয়েছে।
প্রতিটি বেদ চার ভাগে বিভক্ত। যেমন, সংহিতা (মন্ত্র ও আশীর্বচন), আরণ্যক (রীতিনীতি, অনুষ্ঠান, যজ্ঞ ও প্রতীকী-যজ্ঞ সংক্রান্ত শাস্ত্র), ব্রাহ্মণ (রীতিনীতি, অনুষ্ঠান ও যজ্ঞ বিষয়ে ব্যাখ্যা) এবং উপনিষদ্ (ধ্যান, দর্শন ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান সংক্রান্ত আলোচনা শাস্ত্র)।[৪][৫][৬] সংহিতাকে বেদের ‘কর্মকাণ্ড’ (कर्म खण्ड, আচার-অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিভাগ) এবং উপনিষদ্গুলিকে ‘জ্ঞানকাণ্ড’ (ज्ञान खण्ड, জ্ঞান/আধ্যাত্মিকতা সংক্রান্ত বিভাগ) বলা হয়ে থাকে।[৪][৭] আরণ্যক ও ব্রাহ্মণগুলিকে কেউ কেউ কর্মকাণ্ড, আবার কেউ কেউ জ্ঞানকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
বৈদিক সংহিতাগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাঠ করা হত। এগুলিই হিন্দুধর্মের প্রাচীনতম অংশ যা আজও প্রচলিত আছে।[৩]
বেদ ও পরবর্তীকালে রচিত গ্রন্থগুলি পাঠ করলে বোঝা যায় যে, বৈদিক সংহিতাগুলি সংক্ষিপ্তসার এবং তৎ-সম্পর্কিত বৈদিক গ্রন্থগুলি এখন যে আকারে পাওয়া যায়, প্রকৃতপক্ষে তার থেকে এগুলির আকার অনেক বড়ো ছিল। ভারতীয় ইতিহাসের কোনো এক সময়ে বা কোনো এক পর্যায়ে এগুলির কিয়দংশ হারিয়ে গিয়েছে।[৮]
গায়ত্রী মন্ত্র হিন্দুধর্মের একটি বিখ্যাত মন্ত্র। এটি ঋগ্বেদ সংহিতায় পাওয়া যায়।[৯]
ওয়েবার বলেছেন, যে সামবেদ সংহিতা প্রকৃতপক্ষে ঋগ্বেদ সংহিতা থেকে গৃহীত মন্ত্র-সংকলন।[১১] উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হল সাংগীতিক সুর ও ছন্দ এবং ভাষাগত পরিমার্জনা ও প্রয়োগভঙ্গিমা।[১২] এইভাবে মূল মন্ত্রটি পরে ‘রথান্তর’ (সুন্দর রথ) মন্তত্রে পরিণত হয়েছে। সামবেদ ও ঋগ্বেদ সংহিতায় প্রাপ্ত এই ধরনের একটি মন্ত্রের উদাহরণ হল,[১২]
যজুর্বেদ সংহিতার ৪। ১। ৫।–সংখ্যক স্তোত্রটি একাধিক প্রাচীন দেবদেবীর প্রতি উৎসর্গিত। এটি হল:[১৩][১৪]
বসুগণ গায়ত্রী ছন্দ দ্বারা আপনাকে প্রস্তুত করুন; আপনি পৃথিবী,
রুদ্র ত্রিষ্টুপ ছন্দ দ্বারা আপনাকে প্রস্তুত করুন; আপনি আকাশ।
আদিত্যগণ জগতী ছন্দ দ্বারা আপনাকে প্রস্তুত করুন; আপনি স্বর্গ।
বিশ্বদেবগণ, যাঁরা সকল মানবলোকের, তাঁরা আপনাকে অনুষ্টুপ ছন্দ দ্বারা প্রস্তুত করুন; আপনি সর্বদিকময়।
আপনি অপরিবর্তনীয় দিক, আমাকে সন্তান দান করুন, প্রচুর অর্থসম্পদ দিন, প্রচুর গোসম্পদ দিন, অতুল শৌর্য প্রদান করুন।— তৈত্তিরীয় সংহিতা, ৪। ১। ৫[১৩]