সঙ্গনিরোধ বা সঙ্গরোধ বলতে কোনও সংক্রামক ব্যাধি বা মহামারীর বিস্তার প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে মানুষের মুক্তভাবে চলাচল এবং কখনও কখনও কোনও বিশেষ দ্রব্যাদির পরিবহনের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে বোঝায়।[১] একে ইংরেজি পরিভাষাতে কোয়ারেন্টিন[টীকা ১] (ইংরেজি: Quarantine) বলা হয়। যদি কেউ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে এবং যদি তাকে নিশ্চিতভাবে রোগনির্ণয় করার সুযোগ না থাকে, তখন রোগ এবং অসুস্থতা নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি তাকে/তাদেরকে সঙ্গনিরোধ অবস্থায় রাখা হয়।[২] সঙ্গনিরোধ ও অন্তরণ (Isolation আইসোলেশন) দুইটি কাছাকাছি ধারণা। তবে এই দুইয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। সঙ্গনিরোধ হলো সম্ভাব্য (কিন্তু নিশ্চিত নয় এমন) ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে সাবধানতাবশত আলাদা করে রাখা। অন্যদিকে নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত এবং সংক্রমিত ব্যক্তিকে সুস্থ জনগোষ্ঠী থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে রাখার নামই অন্তরণ (বা বিচ্ছিন্নকরণ বা পৃথককরণ)।[২]
সঙ্গনিরোধকে করদোঁ সানিতের (cordon sanitaire) অর্থাৎ স্বাস্থ্যবেষ্টনীর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই দুইটি পদগুচ্ছই একে অপরের কাছাকাছি; তবে স্বাস্থ্যবেষ্টনী বা করদোঁ সানিতের বলতে সুনির্দিষ্টভাবে সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার থামাবার জন্য কোনও নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মানুষজনের চলাচলকে বাধা দেওয়াকে বোঝায়।[৩]
একটি মত অনুসারে ইংরেজি "কোয়ারেন্টিন" পারিভাষিক শব্দটি ইতালীয় শব্দ "কোয়ারান্তিনা" (ইতালীয়: Quarantina) থেকে এসেছে, যার অর্থ "চল্লিশ (দিন)"। মধ্যযুগে ১৫শ শতকে বিউবনিক প্লেগ রোগের মহামারীর সময়ে রোগাক্রান্ত অঞ্চল থেকে আগত জাহাজদেরকে ইউরোপের বিভিন্ন বন্দরে ৪০ দিনের জন্য পৃথক করে রাখা হত।[৪]
২০১৯ করোনাভাইরাস রোগের মহামারী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে সক্ষম নাগরিকদের নিজগৃহে বা দরকার হলে নিজকক্ষে থাকতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা যায়। এই পদক্ষেপ বা ব্যবস্থাটিকে নিজগৃহে সঙ্গনিরোধ বা স্বেচ্ছা সঙ্গনিরোধ বলা হয়। ইংরেজিতে একে "সেলফ কোয়ারেন্টিন", "হোম কোয়ারেন্টিন", "সেলফ আইসোলেশন", "হোম আইসোলেশন", ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। অস্ট্রেলিয়ার সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনাসূচি অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি নিম্নলিখিত মানদণ্ডগুলি পূরণ করলে নিজগৃহে সঙ্গনিরোধ করতে উৎসাহিত করা যায়[৫]:
অন্য একটি উৎস অনুযায়ী নিজের জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহার করা স্থান যেমন রান্নাঘর এমনকি একসাথে বৈঠক বা গল্প করতে যাওয়া উচিত নয়।[৬]
কোনও প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারী সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে তাকে সঙ্গনিরোধ ছুটি (ইংরেজি: Quarantine Leave) দেয়া হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মচারীদের স্বাস্থ্যরক্ষার স্বার্থে এরূপ ছুটি দেয়া হয়ে থাকে। সাধারণত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ স্ব-উদ্যোগে এই ছুটি মঞ্জুর করে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পূর্ণ বেতনে এই ছুটি মঞ্জুর করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মচারী পূর্ণ সুস্থ হয়ে ঝুঁকিমুক্ত হলে চিকিৎসকের দেয়া প্রত্যয়নপত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে পুনরায় তাকে কাজে যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।