এই নিবন্ধটি মেয়াদোত্তীর্ণ।(সেপ্টেম্বর ২০২৪) |
সজীব ওয়াজেদ জয় | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
অন্যান্য নাম | জয় |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | |
মাতৃশিক্ষায়তন | |
দাম্পত্য সঙ্গী | ক্রিস্টিন ওয়াজেদ |
সন্তান | সোফিয়া রেহানা ওয়াজেদ |
পিতা-মাতা |
|
আত্মীয় | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (নানা) সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (বোন) |
সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় (জন্ম: ২৭ জুলাই ১৯৭১) হলেন একজন বাংলাদেশী আইসিটি পরামর্শক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরমাণুবিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া দম্পতির প্রথম সন্তান এবং বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র।[১]
জয় ২৭ জুলাই ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে জন্ম নেন। তার বাবা এম এ ওয়াজেদ মিয়া, একজন খ্যাতনামা পরমাণুবিজ্ঞানী এবং মা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার নানা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর, জয় মায়ের সাথে জার্মানি এবং লন্ডন হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।
ফলে তার শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে ভারতে। নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ হতে স্নাতক করার পর যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এ্যট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি স্থায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বাস করছেন।[২]
২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, জয়কে পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়া হয়।[২]
তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ ২০১৯ থেকে নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[৩] দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২১ জানুয়ারি তাকে আবার অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।[৪]
এর আগে আওয়ামীলীগের বিগত মেয়াদের সরকারে ২০১৪ সালেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান।
জয় ২৬ অক্টোবর ২০০২ সালে মার্কিন নাগরিক ক্রিস্টিন ওয়াজেদকে বিয়ে করেন। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের সন্তানের নাম সোফিয়া ওয়াজেদ।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর তার বেতন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা হয়েছে।[৫] মূলত, ২০১৪ সালে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন যে, জয় মাসে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন নিচ্ছেন, যা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিকভাবে বেশি। এছাড়াও, কিছু নেতা দাবি করেন যে জয় এই বেতন নিজেই অনুমোদন করেন এবং তার আয় দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়।[৬][৭]
বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান অভিযোগ করেন যে, জয় সরকারের আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে প্রতি মাসে প্রচুর বেতন নিচ্ছেন। তবে, এই অভিযোগকে সরকার ও জয় দুই পক্ষই প্রত্যাখ্যান করেছে। জয় বলেন, তিনি বিনা বেতনে এই দায়িত্ব পালন করছেন এবং জাতির জন্য কাজ করাকে সম্মানের বিষয় হিসেবে দেখেন।[৮][৯][১০] তিনি আরও জানান, তার দায়িত্ব থেকে তিনি কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন না এবং সব কাজ নিঃস্বার্থভাবে সম্পন্ন করেন।[৯][১০]
সরকারিভাবেও এই বেতন বিষয়ক দাবিগুলোকে নাকচ করা হয়েছে। সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, জয় কেবল পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন এবং কোনো আর্থিক সুবিধা নেন না।[৫]
এই বিতর্কটি রাজনৈতিকভাবে উত্থাপিত হয়েছিল এবং এর কোনো প্রমাণিত ভিত্তি পাওয়া যায়নি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প বিভিন্ন সময়ে স্বচ্ছতার অভাব ও দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পড়েছে। [১১][১২][১৩][১৪][১৫] বিরোধী দল এবং সমালোচকদের মতে, বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্প এবং তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।[১৬] বিশেষ করে, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারদের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়।[১৩][১৭][১৮] বেশ কিছু প্রকল্পে বাজেটের অতিরিক্ত ব্যয় এবং নিম্নমানের সেবা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।[১৯][২০] যদিও সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সরকার এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।[২১] এসব অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রকৃতপক্ষে দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার একটি প্রচেষ্টা মাত্র বলে দাবি করেন জয়।[২১]
২০২২ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জয়ের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে সামসময়িক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সংশ্লিষ্টতায় ৯০ লাখ ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি জানতে চায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওই টাকার উৎস কী ছিল?” তিনি আরও বলেন, “লবিস্ট নিয়োগের প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েব পেজে আছে। বিএনপি জানতে চায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওই টাকার উৎস কী ছিল। কীভাবে ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিল?”[২২]
২০২৪ সালে গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর তার বিরুদ্ধে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের প্রভাবিত করতে ২ লাখ ডলারের বিনিময়ে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। নেত্র নিউজ নামের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম এ সংক্রান্ত প্রমাণ উপস্থাপন করে।[২৩][২৪]
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছিল, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল।[২৫] অভিযোগটি প্রধানত বিএনপির পক্ষ থেকে আনা হয়, যেখানে বলা হয়েছিল যে জয় যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে কোনো প্রমাণ বা নির্ভরযোগ্য তথ্য এই অভিযোগকে সমর্থন করতে পারেনি।[২৫][২৬]
জয় এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন।[২৭] তিনি বলেন, এই অভিযোগের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই এবং এটি তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার প্রচেষ্টা মাত্র। জয় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ নাকচ করে বলেন যে, তিনি আইন মেনে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বেআইনি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নন। [২৭][২৮][২৯]
অভিযোগের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আদালতে মামলা হয়নি বা বাংলাদেশের আদালতেও এই বিষয়ে কোনো কার্যকরী প্রমাণ বা মামলা হয়নি। ফলে অভিযোগটি রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা স্থিমিত হয়ে যায়।[২৯] বিএনপি এবং বিরোধী দলগুলো এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালালেও, এর কোনো বাস্তব ফলাফল বা আইনি পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।[৩০][৩১]
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রধান নীতিনির্ধারক এবং সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, সরকারি তথ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর তাঁর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক দেখা দেয়।[৩২][৩৩][৩৪] সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন যে, এই আইনটি সরকারকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারির ক্ষমতা দিয়েছে।[৩৫][৩৬] তারা দাবি করেন, এই আইনটি সরকারের বিরোধীদের দমন এবং রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।[৩৬][৩৭] সমালোচকদের মতে, সরকারের এই ধরনের কার্যক্রমে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রভাব রয়েছে,[৩৮][৩৯][৪০] যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর হুমকি তৈরি করেছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করেছে।[৩৭][৪১][৪২] জয়ের মতে, আইনটি দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়, এবং এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য প্রণীত হয়নি বরং দেশের তথ্য নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে কার্যকর হয়েছে।[৪৩][৪৪][৪৫][৪৬]
জয়, বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার প্রধান কৌশলকারী হিসেবে, বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে কিছু বিতর্কিত অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। সমালোচকরা দাবি করেছেন যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত উদ্যোগের আওতায় বিদেশি সংস্থাগুলি বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের সুযোগ পেয়েছে।[৪৭] তাঁদের মতে, এই তথ্য সংগ্রহ সরকারের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।[৪৮]
তবে, জয় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, বিদেশি সহযোগিতার আওতায় তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সাইবার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা, এবং এ ধরনের উদ্যোগ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নয়।[৪৯]
|তারিখ=
(সাহায্য)