সত্তা শনাক্তকরণ (ইংরেজিতে Agent detection) হচ্ছে প্রাণীর (মানুষেরও) এমন একটি প্রবৃত্তি যেখানে বলা হয়, এই পরিবেশে সংগঠিত কোনো ঘটনার (প্রাকৃতিক) পিছনে কোনো সংবেদী অথবা বুদ্ধিমান সত্তার উদ্দেশ্যমূলক হস্তক্ষেপ রয়েছে। বাস্তবে কোনো বুদ্ধিমান সত্তার হস্তক্ষেপ থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে।
এটা বিশ্বাস করা হয় যে, মানুষই টিকে থাকার কৌশল হিসেবে অলৌকিক সত্তার অনুধাবন কে বিবর্তিত করেছে। ধরা যাক, একটা পরিস্থিতি, যেখানে একজন মানুষ জানে না- সে ছাড়া অন্য কোনো বুদ্ধিমান সত্তা আছে কিনা, (বহিরাগত বা আদিকালে যেহেতু মানুষ ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে বাস করত, এবং এক গোত্রের মানুষ বেশিরভাগ সময় অন্য গোত্রের শত্রু ছিল- এধরনের অন্য গোত্রের কোনো শত্রু আশেপাশে আছে কিনা), সেক্ষেত্রে প্রথম থেকেই কেও আশেপাশে থাকতে পারে, একথাটা মাথায় রেখে কাজ করলে অগ্রিম সতর্ক থাকা যায় (প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম ব্যবস্থা) - যা টিকে থাকতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ: যদি একজন মানুষ মাটিতে খাজকাটা কিছু দেখেই ভাবে, এটা সিংহের পায়ের ছাপ, তখন সে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যায়, এবং পুর্বানুমান করবে, আশেপাশে সিংহ আছে। এই ভুলটির ফলে তার জীবনে কোনো বিপত্তি আসবে না। কিন্তু যদি সে একে এড়িয়ে যায়, তাহলে দেখা যাবে ভবিষ্যতে বাস্তব সিংহের পায়ের ছাপকেই এড়িয়ে যাবে, এতে করে তার জীবনবিপত্তির একটা সম্ভাবনা তৈরী হয়। তাই টিকে থাকার সুবিধার্থে কোনো কিছু নেই এটা ভাবার তুলনায় কোনো কিছু আছে, এটা ভাবাই সর্বাপেক্ষা উত্তম।[১]
মনোবিদ কার্ট গ্রে এবং ডেনিয়েল ওয়েগনার লিখেছেন:
“ আশেপাশে কোনো সত্তার উপস্থিতি শনাক্ত করতে না পারার চড়ামুল্য দেওয়া এবং কোনো সত্তা আশেপাশে আছে, তা নিয়ে ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করে নামমাত্র মুল্য দেওয়া, এই দুই বিষয়কে মাথায় রেখে গবেষকরা এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমাদের পূর্বপুরষরাও এই নীতির কারণে Hyperactive Agent Detection Device ঘরানার একটি তত্বীয় ধারণার সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনাকে সেই সত্তার রুপ, কার্যবিধি বা বৈশিষ্ট্য বলেই আমাদের পূর্বপুরষ রা ব্যাখ্যা করেছেন।[২] ”
কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর হচ্ছেন এজেন্ট ডিটেকশনের উপজাত।[৩] স্পেনডেল অভিযোজিত অংশের সাইড ইফেক্ট হিসেবে তৈরী হয়। মনস্তত্বে একটি বিষয় আছে, তা হলো" যদি তুমি কোনো জঙ্গলে ডাল ভাঙ্গার আওয়াজ শুনতে পাও, তবে ধরে নিবে এর পিছনে কোনো উদ্দেশ্যমুলক বল কাজ করছে।" এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই প্রাইমেটদের খুন হয়ে যাওয়া বা খাদ্য হিসেবে কারো পেটে চলে যাবার হাত থেকে রক্ষা করেছিল। যাইহোক, এই হাইপোথিটিক্যাল বৈশিষ্ট্য আধুনিক মানুষের অভ্যন্তরেও কাজ করে। কিছু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী তাত্ত্বিক ভাবে এটাই বিশ্লেষণ করেছেন যে, "এমনকি যদি জঙ্গলে বাতাসের কারণে মড়মড় আওয়াজ হয়, আধুনিক মানুষ ধরে নেয় এর পিছনে কোনো সংবেদী প্রতিনিধি আছে, তারা এই প্রতিনিধিকে ঈশ্বরও ভেবে বসতে পারে।" [৪]
গ্রে এবং ওয়েগনার আরো বলেন, সত্তা শনাক্তকরণ মানুষের ঈশ্বরে বিশ্বাসের একটা ভিত্তি ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র সত্তা থেকে ঈশ্বরে বিশ্বাস সম্পর্কিত ধারণা পুরোপুরি জন্ম নেয় নি। মানুষের মনস্তত্ত্ব; আরো বিশেষায়িতভাবে বললে অস্তিত্ববাদের সপক্ষে মনস্তত্ব- তৈরীর যে সক্ষমতা তাই আমাদের মননে ঈশ্বর নামক চেতনাগত ধারণাকে জন্ম দিতে নির্দেশিকা দিয়েছে।[২]