তিন বার মদন পুরস্কার (১৯৫৬, ১৯৬০, ১৯৭০) অর্ডার অফ গোর্খা দক্ষিণা বাহু প্রাপক
দাম্পত্যসঙ্গী
রাধা দেবী
সত্যমোহন জোশী ( ১২ মে ১৯২০ - ১৬ অক্টোবর ২০২২) ছিলেন একজন নেপালি লেখক এবং পণ্ডিত।[১] সত্যমোহন নেপালের সংস্কৃতি ও নেপালের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য পরিচিত।[২] তিনি নেপালি ভাষা একাডেমির চ্যান্সেলর হিসেবেও দায়িত্বভার পালন করেছেন।[৩]
সত্যমোহন ১৯২০ সালের ১২ মে [৪] নেপালের ললিতপুর জেলায় শঙ্কর রাজ এবং রাজ কুমারী জোশীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।[৫][৬] বাড়িতে তার প্রাথমিক শিক্ষার পর তিনি কাঠমান্ডুরদরবার হাই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি ১৭ বছর বয়সে পাটনের রাধা দেবী শ্রেষ্ঠের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৭] তিনি ত্রিচন্দ্র কলেজে থেকে স্নাতক ডিগ্রী পাশ করেন।[৮] ১৯৫৯ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম পরিচালক হন।[৯] পরে কাঠমান্ডুতে রাষ্ট্রীয় নাচঘর – ন্যাশনাল থিয়েটার,[১০] এবং পাটনে প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্যান[১১] প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তাউলিহাওয়াতে প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর [১২] এবং ভক্তপুরে জাতীয় চিত্রকর্ম জাদুঘর [১৩] প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
১৯৬০ সালে রাজা মহেন্দ্রের অভ্যুত্থানের পর সত্যমোহন চীনে চলে যান। সেখানে তিনি পিকিং ব্রডকাস্টিং ইনস্টিটিউটে নেপালি ভাষা শেখাতে শুরু করেন। চীনে থাকাকালীন তিনি মল্ল রাজবংশের অরনিকো একজন ভাস্কর, যিনি ১২৬০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন তার উপর গবেষণা করেন।[৬] তিনি আরনিকো সম্পর্কিত ঐতিহাসিক নিদর্শন সংগ্রহ করে কাঠমান্ডুর কীর্তিপুরে আরনিকো হোয়াইট দাগোবা গ্যালারি স্থাপন করেন।[১৪]
বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর ৬০টিরও বেশি প্রকাশনা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হামরো লোক সংস্কৃতি (১৯৫৬ সালে মদন পুরস্কার ); নেপালি রাষ্ট্রীয় মুদ্রা (১৯৬০ সালের মদন পুরস্কার ); কর্নালী লোক সংস্কৃতি (একটি গবেষণা সংকলন); চারুমতি, সুনকেশরী, মাজিফা লাখে, বাঘ ভৈরব (নাটক) প্রভৃতি গ্রন্থ। [৮][১৫]
২০২১ সালে নেপাল সরকার তার প্রতিকৃতি দিয়ে একটি জাতীয় ডাকটিকিট প্রকাশ করে। নেপালি মুদ্রায় ১০ টাকা মূল্যের এই ডাকটিকিটটি মোট ১০০,০০০ কপি মুদ্রিত হয়েছিল।[১৬][১৭]নেপাল রাষ্ট্র ব্যাঙ্ক তার শততম জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নেপাল রাষ্ট্র ব্যাঙ্ক ১০০ টাকা, ১,০০০ টাকা এবং ২,৫০০ টাকা মূল্যের তিনটি নতুন নেপালি মুদ্রা জারি করে। মুদ্রাগুলির উপর সত্যমোহন জোশির প্রতিকৃতি রয়েছে।[১৮] ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর নেপালের বায়োমেট্রিক পাসপোর্টের প্রথম গ্রহণকারী ছিলেন সত্যমোহন।[১৯][২০] তাঁর সম্মানে ললিতপুরের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়। ১৮ মার্চ ২০২২-এ সত্যমোহন শিরোনামে তাঁর একটি জীবনী প্রকাশিত হয়। জীবনীটি লিখেছেন লেখক ও সাংবাদিক গিরিশ গিরি।[২১]
২০১৩ সালে টিঙ্কুনে গোর্খাপাত্র সংস্থা আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সত্যমোহন জোশী
২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর ললিতপুরের কেআইএসটি হাসপাতালে ১০২ বছর বয়সে তার জীবনাবসান হয়।[২২][২৩][২৪] সত্যমোহনের ইচ্ছানুযায়ী তার দেহ গবেষণার জন্য একটি হাসপাতালে দান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা, ললিতপুর মহানগরের মেয়র চিরি বাবু মহারজানসহ অন্যান্য রাজনীতিবিদরা তাকে শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জোশীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।[২৫]
তাঁর জ্যোতিষশাস্ত্রীয় জন্ম তালিকা (নেপালি ভাষায় জন্ম-কুণ্ডলি ) তাঁর মৃতদেহের জায়গায় বসিয়ে শঙ্খমূল ঘাটে দাহ করা হয়। তার পুত্র অনু রাজ জোশী এবং পূর্ণ রাজ যোশী উপস্থিত ছিলেন। এরপর হিন্দু রীতি অনুযায়ী চিতাভস্ম বাগমতি নদীতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।[২৬]নেপাল সরকার তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর একদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। [২৭]
↑Giri, Anil (১৭ নভেম্বর ২০২১)। "Nepal to start issuing e-passports from today"। The Kathmandu Post (English ভাষায়)। ১৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২১।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (link)