"সত্র" হল মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ও শ্রীশ্রী মাধবদেবের অসমে নববৈষ্ণব ধর্মর প্রচার ও প্রসারের জন্য স্থাপন করা এক প্রতিষ্ঠান[১]। প্রথমে অসমে ৬৬৫ টি সত্র ছিল যদিও এখন তার বেশিরভাগেরই অস্তিত্ব নেই। এগুলির মধ্যে ৬৫ টি কেবল মাজুলীতে স্থাপন করা হয়েছিল যার মধ্যে এখন ২২ টি আছে[২]। ধর্ম চর্চা ছাড়াও সত্রসমূহে মহাপুরুষীয়া তথা অসমীয়া সংস্কৃতি যেমন বরগীত, সত্রীয়া নৃত্য, চালি নৃত্য, ঝুমুরা নৃত্য, দশাবতার নৃত্য ইত্যাদির সাথে পুরানো পুঁথি-পাঁজি ও অন্যান্য তালিকামূলক জিনিসের প্রদর্শনী[৩]।
মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের ধর্ম প্রচারের আদিকালে সত্রের উৎপত্তি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। শঙ্করদেব তাঁর জন্মস্থান বরদোয়াতে প্রথম সত্র স্থাপন করেছিলেন। নতুন ধর্ম প্রচার করার স্থানে তিনি "প্রার্থনা ঘর" (হরি গৃহ) স্থাপন করেছিলেন যা পরে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের রূপ নেয়। একে "থান"(সংস্কৃত- স্থান) বলে অভিহিত করা হত। অসমের একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় ধর্ম প্রচারের জন্য যাত্রা করাকালীন তিনি স্থানে স্থানে থান স্থাপন করেছিলেন।[১]
শঙ্করদেবের প্রধান শিষ্য মাধবদেবের বরপেটাতে স্থাপন করা থানটিই ছিল সর্ববৃহৎ। মাধবদেবের এক শরণ নাম ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব ন্যস্ত করা বারজন মুখ্য শিষ্যও অসমের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে থান স্থাপন করেন। এই থানগুলিই কালক্রমে বৈষ্ণব ধর্মেের প্রাণকেন্দ্র "সত্র" নামে পরিচিত হয়।[১]
"সত্র" শব্দটি প্রথমে "শতপথ ব্রাহ্মণ"-এ "আহুতি" বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছিল। ভগবদ্গীতায় এই শব্দটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু অসমের নববৈষ্ণব ধর্মের আমলে এটি এক আলাদা অর্থ গ্রহণ করে। শঙ্করদেবের ধর্ম প্রচারের জন্য কিছুকাল থাকা স্থানসমূহই "সত্র" বলে পরিচিত হয়। গুরুজনের বরদোয়া বা বট্রদয়াতে স্থাপন করা সত্রটিই প্রথম সত্র। সেখানে তিনি একটা প্রার্থনা ঘর সাজিয়ে নাম-কীর্তনের সঙ্গে ধর্মীয় আলোচনাও করেছিলেন। শঙ্করদেবের পরবর্তী যুগে তিনি বা অন্যান্য গুরুদের কিছুকাল থাকা সত্রসমূহ যেমন বরদোয়া, বেলগুরি, বরপেটা ইত্যাদিকে সত্রের পরিবর্তে "থান" বলে অভিহিত করা হয়। কোনো কোনো জীবনীকার অবশ্য "সত্র" ও "থান"র প্রভেদ রাখেননি [১]।
সত্রাধিকার ও তাঁর সহকারীবৃন্দ সত্রগুলির কাজ-কর্ম পরিচালনা করেন। সত্রে নিম্নলিখিত সদস্যগণ থাকেন [১]:
এছাড়াও ব্যবস্থাপনা ও ধর্মীয় কার্য সুষ্ঠভাবে চালানোর জন্য বিভিন্ন পদ থাকে। বড়ো সত্রে থাকা এমন পদসমূহ হ'ল :
অসমের চারটি রাজ সত্র হ'ল:-
যদিও এই চারটি রাজসত্র সমশ্রেণীতে পড়ে, তবুও আউনীআটী সত্র প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয়ত দক্ষিণপাট সত্র, তৃতীয়ত গড়মূর সত্র, চতুর্থত কুরুবাবাহী সত্র হয়।