সপ্তম জয়বর্মণ | |||||
---|---|---|---|---|---|
খমের সাম্রাজ্যের রাজা | |||||
রাজত্ব | ১১৮১ – ১২১৮ | ||||
পূর্বসূরি | দ্বিতীয় যশোবর্মণ | ||||
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় ইন্দ্রবর্মণ | ||||
জন্ম | আনুমানিক ১১২০ আংকর, খমের সাম্রাজ্য | ||||
মৃত্যু | ১২১৮ (বয়স ৯৭–৯৮) যশোধারাপুরা, খমের সাম্রাজ্য | ||||
সঙ্গী | জয়রাচাদেবী, ইন্দ্রদেবী | ||||
| |||||
পিতা | দ্বিতীয় ধরণীন্দ্রবর্মণ | ||||
মাতা | শ্রী জয়রাজাচূড়ামণি | ||||
ধর্ম | মহাযান বৌদ্ধধর্ম পূর্বে হিন্দুধর্ম |
সপ্তম জয়বর্মণ, মরণোত্তর নাম মহপরমসৌগত, (খ্মের: ជ័យវរ្ម័នទី៧ আনুমানিক ১১২০-১২১৮) ছিলেন কম্বোডিয়ার খমের সাম্রাজ্যের (বর্তমানে সিয়েম রিপ) রাজা (রাজত্ব আনুমানিক ১১৮১-১২১৮)। আনুমানিক ১১২০ সালে তার জন্ম। তিনি সম্রাট দ্বিতীয় ধরণীন্দ্রবর্মণ (রাজত্ব ১১৫০-১১৬০) এবং মহারাণী শ্রী জয়রাজাচূড়ামণির পুত্র। তিনি মহারাণী জয়রাজাদেবীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং জয়রাজাদেবীর মৃত্যুর পরে ভগিনী ইন্দ্রদেবীকে বিবাহ করেন।[১]:১৬৯,১৭২ মনে করা হয়, সম্রাটের জীবনে তার দুই রানীরই অসামান্য ভূমিকা ছিল, বিশেশত বৌদ্ধ ধর্ম এবং দর্শনের প্রতি তার সুগভীর অনুরাগের ব্যাপারে। তার পূর্বে একজন মাত্র সম্রাট ছিলেন, বৌদ্ধ। বৌদ্ধধর্মের স্মারক হিসেবে তিনি একটি বেয়ন নির্মাণ করেন। তাকে খমের বংশের ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী সম্রাট বিবেচনা করা হয়।[২]
১১৭৭ সালে এবং পুনরায় ১১৭৮ সালে, চম্পারা কম্বোডিয়া আক্রমণ করে।[৩] ১১৭৭ সালে, চম্পা রাজা চতুর্থ জয়ইন্দ্রবর্মণ একটি তড়িত আক্রমণ করেন খমের রাজধানীতে, টোনলে সাপ হ্রদ থেকে মেকং নদী পর্যন্ত একটি দ্রুতগামী নৌবিহারের মাধ্যমে যাত্রা করে এবং তারপর টেনেল স্যাপের একটি উপনদী সিয়েম রিপ পর্যন্ত। আক্রমণকারীরা যশোধরপুরের খেমার রাজধানীকে ধ্বংশ করে এবং রাজা ত্রিভুবনাদিত্যবর্মণকে হত্যা করে। এছাড়াও ১১৭৮ সালে, সপ্তম জয়বর্মণ খেমার সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে, বহিরাক্রমণকে পরাহত করেন। এই যুদ্ধের অংশ হিসেবে নৌযুদ্ধো রয়েছে, যার চিত্র অনকিত রয়েছে বেয়ন এবং ব্যান্টি চমারের প্রাচীরগাত্রে।[১]:১৬৯–১৭০ এই যুদ্ধজয়, নিঃসন্দেহে সপ্তম জয়বর্মণকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব দিয়েছে। সেই সময় তার বয়স ছিল প্রায় ষাটের কোঠায়। এরপরে রাজধানীতে ফিরে তিনি অনুভব করেন চারপাশের অগোছালো ভাব। শক্ত হাতে সব কিছু দমন করে, ১১৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিজেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করে।[৪]:১২০–১২১
তার রাজত্বের শুরুতে, সম্ভবত তিনি অন্য এক চ্যাম আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং মালয়ঙ্গের (ব্যাটামবং) বর্বর রাজ্যের বিদ্রোহকে দমন করেন। তিনি উদ্বাস্তু যুবরাজ শ্রী বিদ্যানন্দনের সামরিক দক্ষতার দ্বারা ব্যাপকভাবে সাহায্য লাভ করেছিলেন, যিনি পরবর্তীতে বিপ্লব এবং চম্পার বিজয় লাভের অংশ হিসেবেও অংশ নেন (১১৯০-১১৯১)। জয়বর্মণ খমের সাম্রাজ্যকে মেকং উপত্যজার উত্তরে ভিয়েনতিয়েন অব্ধি এবং দক্ষিণে ক্রা ইস্থমুস অবধি বিস্তৃত করেছিলেন।
তার রাজত্বের ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে, জয়বর্মণ নির্মাণের একটি বিশাল কর্মসূচী শুরু করেন যা জনসাধারণের জন্যে নির্মাণ ও স্মৃতিস্তম্ভ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করে। মহাযান বৌদ্ধ হিসেবে, তার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল তার লোকদের দুঃখ হ্রাস করা। একটি শিলালিপি বলে, "তিনি তার নিজের চেয়ে নিজের প্রজাদের অসুস্থতা ভোগ করেছিলেন; পুরুষের দেহকে প্রভাবিত করে এমন যন্ত্রণা তার জন্য আধ্যাত্মিক ব্যথা ছিল এবং এভাবে আরও তীক্ষ্ণ ছিল।" এই ঘোষণাকে অবশ্যই অবহেলাযোগ্য সত্যের আলোকে পড়তে হবে যে জয়বর্মণ দ্বারা নির্মিত অসংখ্য স্মৃতিতে হাজার হাজার শ্রমিকের শ্রম ছিল এবং তার রাজত্বকে চিহ্নিতকরণ করা হয়, রাজ্যের কেন্দ্রীয়করণের দ্বারা এবং বৃহত্তর জনসংখ্যা কেন্দ্রগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি দ্বারা।
ইতিহাসবিদরা জয়বর্মণএর নিবিড় ভবন প্রোগ্রামে অনেক দিক চিহ্নিত করেছেন। এক পর্যায়ে, তিনি তার বিখ্যাত ১২০ হাসপাতালের মতো দরকারি নির্মাণের উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন;[৪]:১২৭ জোর দিয়েছিলেন রাস্তা বরাবর বিশ্রাম ঘর এবং জলাধার নির্মাণেও। এরপর তিনি তার পিতামাতার সম্মানে একজোড়া মন্দির নির্মাণ করেন, তা প্রোম- মায়ের সম্মানে এবং প্রেয়াহ খান তার বাবার সম্মানে।[৪]:১২৫–১২৯
অবশেষে তিনি তার নিজের "মন্দির-পর্বত" বেয়ন নির্মাণ, করেন আংকোর থম শহরের উন্নতিসাধন করেন।[৪]:১২১ তিনি আঙ্গকর কমপ্লেক্সের ক্ষুদ্রতম কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর মন্দিরগুলির মধ্যে একটি নিক পিয়ন ("কুন্ডলীকৃত সর্প") তৈরি করেছিলেন, এটি চারটি পার্শ্ববর্তী পুকুরের সাথে একটি কৃত্রিম হ্রদের একটি দ্বীপে অবস্থিত একটি ঝর্ণার সাথে নির্মিত ছিল।[৪]:১২৪–১২৫
১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দে জয়বর্মণ তার মায়ের উদ্দ্দ্যেশ্যে তাহ প্রোম ("পূর্বপুরুষ ব্রহ্ম" বা "ব্রহ্মের চক্ষু") উৎসর্গ করেছিলেন। একটি শিলালিপি ইঙ্গিত দেয় যে একসময় এই বিশাল মন্দিরটি ৮০,০০০ জনকে তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে ১৮ জন উচ্চ পুরোহিত এবং ৬১৫ জন মহিলা নর্তকী।[৪]:১২৬
অ্যাংকর থম ("গ্র্যান্ড অ্যাংকর" বা "ধম্মের আংকোর") ছিল একটি নতুন সিটি সেন্টার,[৬]:৩৭৮–৩৮২ সোনালি দিনগুলিতে যাকে ইন্দ্রপ্রত্থ বলে উল্লেখ করা হতো। নতুন শহরটির কেন্দ্রস্থলটি তার সবচেয়ে বড় সৌধগুলির মধ্যে একটি দাঁড়িয়ে রয়েছে- যে মন্দিরটি এখন বেয়ন নামে পরিচিত, এটি একটি বহুমুখী, বহুরত্ন মন্দির যা বৌদ্ধ ও হিন্দু আইকনোগ্রাফি মিশ্রিত করে নির্মিত হয়েছিল। এর বাইরের দেয়ালগুলিতে কেবল যুদ্ধের চিত্র নয়, খেমার সেনাবাহিনীর দৈনন্দিন জীবন এবং তার অনুসারীদের জীবনযাত্রাও অঙ্কিত রয়েছে। এই চিত্রগুলি পশুদের, শিকারী, রান্নারত নারীমূর্তি, চীনা ব্যবসায়ীদের সাথে ব্যবসারত মহিলা ব্যবসায়ীদের এবং সাধারণ পদাতিক সৈন্যদেরচিত্রাবলী দেখায়। এছাড়াও এখানে চিত্রিত রয়েছে টোনলে সাপের উপরে সংঘটিত একটি নৌযুদ্ধের কাহিনী।[৪]:১২৩–১২৪
রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ, মহান আংকর ওয়ত নির্মাতা, ১১৫০ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। তার পরে সম্রাট হন দ্বিতীয় যশোবর্মণ, যিনি সম্রাট ত্রিভুবনাদিত্যবর্মণ (তিন সূর্যের প্রোটজি) দ্বারা উৎখাত হন এবং তিনি একজন মহান উপকারী সম্রাট হিসাবে বিবেচিত হন। ১১৭৭ সালে, চতুর্থ জয় ইদ্রবর্মণের নেতৃত্বে চ্যাম আক্রমণএর দ্বারা আঙ্কোর ভাটের ধ্বংস সাধন হয়।[৪]:১২০[৭]:৭৮–৭৯ যাইহোক, এই কালপঞ্জি বিভিন্ন ঐতিহাসিক যেমন মাইকেল ভিকেরি দ্বারা প্রশ্নের মুখোমুখি হয় এবং ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়ের চৈনিক ইতিহাসের নির্ভরযোগ্যতা খুব বেশি নয়।[৮] ১১৮১ সালে সপ্তম জয়বর্মণ সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হন, চ্যামেদের আক্রমণ প্রতিহত করার পরে।[৪]:১২১ তারপর ১১৯০ সালে চম্পা আক্রমণের মধ্যে দিয়ে স্প্তম জয়বর্মণ ১১৭৭-এর আক্রমণের প্রতিশোধ নেন।[৭]:৭৮–৮০
সপ্তম জয়বর্মণ মারা যান প্রায় ১২১৮ সালে।[৯] তারপরে সিংহাসনে আরোহণ করে দ্বিতীয় ইন্দ্রবর্মণ, যিনি ১২৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। ইন্দ্রবর্মণের পরে সম্রাট হন অষ্টম জয়বর্মণ, যিনি ছিলেন একজন শৈব, যিনি সপ্তম জয়বর্মণ কৃত বৌদ্ধ স্মারকগুলির ক্ষতিসাধন করেন। এর মধ্যে বায়োনে বুদ্ধের মূর্তি এবং আঙ্গকর থমের বুদ্ধ মূর্তিগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পরবর্তীকালে শিবলিঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছিল।[৪]:১২১,১৩৩
সপ্তম জয়বর্মণ ১২১টি "আগুন-সহ-ঘর" তৈরি করেছিলেন, পর্যটকদের জন্য প্রধান সড়ক বরাবর প্রতি পনের কিলোমিটার অন্তর বিশ্রামাগার নির্মাণ করেছিলেন এবং ১০২ টি হাসপাতাল নির্মাণ করেন। তার "বৃহত্তর গাড়ির বৌদ্ধধর্ম" ছিল। ব্রাহ্মণরা "রাজসভায় ভূমিকা পালন" অব্যাহত রাখে, হৃষিকেষ প্রধান পুরোহিত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, জয়মহাপ্রধান নামে।[১]:১৭৩,১৭৬
যদিও তার অনেক সন্তান ছিল, আমরা জানি মাত্র তিনজনের নাম সূর্য্যকুমার (উল্লেখ তা প্রোহম), বীরকুমার (উল্লেখ প্রিয়া খান) এবং শ্রীইন্দ্রকুমার (উল্লেখ বান্তি ছমার)।[১]:১৮০
পূর্বসূরী: ত্রিভুবনাদিত্যবর্মণ |
খেমারের রাজা ১১৮১–১২১৮ |
উত্তরসূরী: দ্বিতীয় ইন্দ্রবর্মণ |