সবুক্তগিন | |
---|---|
গজনভি রাজবংশের আমির | |
রাজত্ব | ৯৭৭-৯৯৭ |
উত্তরসূরি | ইসমাইল |
জন্ম | ৯৪২ (সম্ভবত) |
মৃত্যু | আগস্ট ৯৯৭ তেরমিজ, উজবেকিস্তান |
দাম্পত্য সঙ্গী | আল্প তিগিনের কন্যা |
পিতা | কারা বজকম[১] |
ধর্ম | ইসলাম |
সবুক্তগীন বা সেবুক তিগিন (ফার্সী ابو منصور سبکتگین; জন্ম ৯৪২ খ্রিস্টাব্দ(সম্ভবত) - মৃত্যু অগাস্ট, ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন গজনবী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তার পুরো নাম ছিল আবু মনসুর সবুক্তগীন । ৯৭৭ থেকে ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন। তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী ছিলেন মাহমূদ গজনবী, যিনি গজনীর সুলতান মাহমূদ নামে ইতিহাসে বিখ্যাত।
সবুক্তগীন প্রথম জীবনে ছিলেন দাস। পরবর্তীকালে তিনি তার মালিক আল্প তিগিনের কন্যাকে বিবাহ করেন। তৎকালীন বুখারার সামানি সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে আল্প তিগিন ও পরে তার জামাতা সবুক্তগিন বাস্তবে স্বাধীনভাবে আধুনিক আফগানিস্তানের অন্তর্গত গজনির শাসক হয়ে বসেন। তারা নামে সামানিদের কর্তৃত্বকে স্বীকার করলেও সবুক্তগিনের পুত্র মাহমুদ নিজেদের সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন।[২]
তুর্কি ভাষায় 'সেবুক' শব্দের অর্থ 'প্রিয়' ও 'তিগিন' বা 'তেগিন' শব্দের আদত অর্থ 'রাজপুত্র' বা 'শাহজাদা'। অর্থাৎ 'সেবুক তিগিন' নামের মানে 'প্রিয় শাহজাদা'। কিন্তু পরবর্তীকালে 'তেগিন' শব্দটি অর্থের অবনমনের শিকার হয়। আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে এর মানে দাঁড়ায় তুর্কি সামরিক দাস।[৩] সবুক্তগিনের (এবং তার পূর্বতন মালিক ও পরবর্তীকালের শ্বশুর আল্প তিগিনের ক্ষেত্রেও, কারণ তিনিও তার পূর্বজীবনে একজন সামরিক দাসই ছিলেন[৪]) ক্ষেত্রেও এই নামের এই দ্বিতীয় অংশটি নিশ্চিতভাবেই এই পরবর্তী অর্থেরই পরিচয়বহন করে। তার দাসজীবনে পাওয়া এই নামেই পরবর্তীকালে তিনি বিখ্যাত হন ও রাজত্ব পরিচালনা করেন।
সবুক্তগীন শৈশবে পড়াশোনা'র জন্য 'বুখারা' যাওয়ার পথে দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন।অতঃপর তিনি দস্যুকর্তৃক বিক্রি হয়ে হাজী নাসিরের গৃহে আসেন দাস হয়ে।বাহ্যত সবুক্তগীন দাস হলেও হাজী নাসীরের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি হয়ে উঠেন এক দৃঢ়চেতা সৈনিক। যতদূর সম্ভব ৯৪২ সালে তার জন্ম।[৫] শুধু তার নিজের টেস্টামেন্ট 'পন্দনামা' থেকে জানতে পারা যায় আধুনিক কাজাখস্তানের অন্তর্ভুক্ত সেতিসু অঞ্চলের বলখসে তার জন্ম। আবার অন্যসূত্র থেকে আমরা জানতে পারি তার জন্ম অধুনা কিরগিজস্তানের বরস্কন অঞ্চলে, ইসিক-কোল হ্রদের ধারে। তবে মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি একজন দাসে পরিণত হন।[৬] হাজি নাসের বলে এক ব্যবসায়ীর কাছে তাকে বেচে দেওয়া হয়। তিনি তাকে ট্রান্সঅক্সিনিয়ায় আনেন। যৌবনে তিনি একজন সামরিক দাসে পরিণত হন। তখন তার মালিক ছিলেন সাবেক সামানিদের একজন সেনাপতি আল্প তিগিন। সবুক্তগিন তার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন।
৯৬১ খ্রিস্টাব্দে সামানি সাম্রাজ্যের আমির প্রথম আবদুল মালেক এর মৃত্যুর পর সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে আল্প তিগিন একটি ক্যু ঘটিয়ে তার নিজের প্রার্থীকে সিংহাসনে বসানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি বুখারা ছেড়ে আফগানিস্তানের উত্তর অংশে হিন্দুকুশ পর্বতমালার দক্ষিণে গজনিতে পালিয়ে আসেন ও জাবুলিস্তান দখল করে বকলমে এই পুরো অঞ্চলের শাসক হয়ে বসেন।[২][৬] তার আস্থাভাজন সবুক্তগিনকে যুদ্ধে পারদর্শিতার কারণে তিনি তার সেনাপতির পদে উন্নিত করেন ও তার মেয়ের সাথে তার বিয়ে দেন। আল্প তিগিন এবং তারপর তার উত্তরাধিকারী আবু ইশাকের প্রতিও সবুক্তগিন বিশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু তাদের পর রাজ্যের উত্তরাধিকার তার উপরই ন্যস্ত হয়।
সবুক্তগিনের রাজ্যলাভের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে দুই ধরনের তথ্য পেয়ে থাকি। বেশিরভাগ সূত্রের মতে আল্প তিগিন নিজেই তার সাথে তার কন্যার বিয়ে দেন ও তাকে নিজের উত্তরাধিকারী মনোনিত করে যান। এগুলির মধ্যে কোনও কোনও সূত্র আবার তার আল্প তিগিনের মৃত্যুর পরপরই রাজ্যলাভের কথাও উল্লেখ করে।[৭] আবার কোনও কোনও সূত্র আল্পতিগিন ও সবুক্তগিনের মাঝে দু'জন প্রশাসকেরও উল্লেখ করে থাকে। এদের মধ্যে একজন হল আবু ইশাক ও অন্যজন বলকাতিগিন। আবার পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের পার্শি ঐতিহাসিক ফরিস্তার মতে আল্প তিগিনের মৃত্যুর পর তার ছেলে আবু ইশাকের হাতেই প্রথমে উত্তরাধিকার বর্তায়। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে তিনিও মারা গেলে সামানি সম্রাট প্রথম মনসুর সবুক্তগিনকে গজনির নতুন প্রশাসক হিসিবে নিয়োগ করেন। এরপর সবুক্তগিন আল্প তিগিনের কন্যাকে বিয়ে করেন ও সিংহাসনে বসেন।[৭][৮]
৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি গজনির সিংহাসনে বসেন ও শাসক হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আল্প তিগিনের রাজ্যকে তিনি যথাসম্ভব বৃদ্ধিও করেছিলেন। তার আমলেই রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি পেয়ে উত্তরে বালখ, পশ্চিমে হেলমন্দ ও পূর্বে বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত সিন্ধু উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছয়।[৮] বাগদাদের খলিফাও তাকে গজনির শাসক বলে স্বীকার করে নেন।
তবে আল্প তিগিনের মতো সবুক্তগিনও সামানিদের কর্তৃত্বকে কখনও অস্বীকার করেননি। বাস্তবে তিনি হিন্দুকুশের দক্ষিণে এক বিরাট অঞ্চলের স্বাধীন শাসক হলেও সামানিদের নামেই তিনি শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এমনকী তিনি যে মুদ্রা তৈরি করেন, সেখানেও সামানি সম্রাটদের নামই লেখা ছিল। শুধু তাই নয়, ৯৯২ ও ৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সামানিদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সামরিকদিক দিয়েও সহায়তা করেন।
আল্প তিগিনে অধীনে সামরিক দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়ে সবুক্তগিন কিছুদিনের মধ্যেই আমির-অল-উমরাহ (প্রধান আমির) ও ওয়াকিল-ই-মুলক (প্রতিনিধি) উপাধিতে ভূষিত হন। এরপর তিনি সেনাপতি হয়ে ওঠেন ও ৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে আল্প তিগিনের মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর গজনির প্রতিরক্ষার বিষয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি গজনির সিংহাসন লাভ করলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দেয়। বিদ্রোহীদের দমন করতে তিনি অভিযান চালালে বিদ্রোহীদের নেতা তোঘান দক্ষিণ আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশের বস্ত শহরের দিকে পালায়। তাকে ধাওয়া করে সবুক্তগিন প্রথমে বস্ত ও পরে কান্দাহার ও তার চারিপাশের অঞ্চল দখল করেন। এদিকে তার অনুপস্থিতির সুযোগে লাহোর ও কাবুলের হিন্দুশাহি রাজা জয়পাল (৯৬৫ - ১০০১ খ্রিঃ) গজনি আক্রমণ করলে সবুক্তগিন কাবুলের কাছে লাগমনের যুদ্ধে (৯৭৯ খ্রিঃ) তাকে পরাস্ত করেন। জয়পাল তাকে বিপুল ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হতে বাধ্য হন। কিন্তু পরে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন ও নতুন করে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলে সবুক্তগিনের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কিন্ত এই বাহিনীও কাশ্মীরের নীলম নদীর তীরে সবুক্তগিনের বাহিনীর হাতে পরাস্ত হয় (৯৮৮ খ্রিঃ)। এই যুদ্ধে জয়ের ফলে নীলম নদীর পশ্চিমতীরের সমগ্র অঞ্চল গজনি রাজ্যের অধীন হয়ে পড়ে।[৯]
৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ট্রান্সঅক্সিনিয়ার বুখারা, বালখ ও নিশাপুরে সামানি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দিলে তা দমন করতে দক্ষিণ থেকে সবুক্তগিনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এই বিদ্রোহ দমন করে একদিকে যেমন তিনি উত্তরের এই অঞ্চলের এক বড় অংশ তার নিজ রাজ্যভুক্ত করে নিতে সক্ষম হন, অন্যদিকে কৃতজ্ঞ সামানি সম্রাট দ্বিতীয় নুহ তাকে 'নাসির-উদ-দিন' (ধর্মরক্ষী নায়ক) উপাধিতে ভূষিত করেন ও তার ছেলে মাহমুদকে সমগ্র খোরাসান প্রদেশের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করেন।[১০]
এইভাবে সবুক্তগিন তার পূর্বসুরী আল্প তিগিনের কাছ থেকে পাওয়া রাজ্য গজনিকে বিপুলভাবে শক্তিশালী করে তোলেন ও আয়তনে বহুগুণ বৃদ্ধি করেন। পরবর্তী গজনভি সাম্রাজ্যের ভিত তার হাতে এইভাবেই রচিত হয়।৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে একটি অভিযান শেষে বালখ থেকে গজনি ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও যতদূর সম্ভব বর্তমান উজবেকিস্তানের তেরমিজে তার মৃত্যু ঘটে।
মুহাম্মদ কাশিম ফিরিস্তা লিখছেন সবুক্তগীন বংশপঞ্জী হইল: পারস্য রাজ ইয়াযদিগারদের পুত্র ফিরোজ,ফিরোজের পুত্র আরসালান, তাহার পুত্র হাকাম, তস্য পুত্রজুকান এবং জুকানের পুত্র সবুক্তগীন ।গজনীতে ৯৬২ খ্রীস্টাব্দে গজনী দখল করে রাজত্ব স্থাপন করে সেখানেই সবুক্তগীন আবুল ফাত্তার সাক্ষাৎলাভ করেন। তিনি দূর্গের প্রাক্তন মালিকের কর্মসচিব ছিলেন । বিশ্বাসঘাতক তোগানকে আশ্রয় দানের অপরাধে সবুক্তগীন দূর্গের সেই মালিককে বিতাড়িত করিয়া দিয়াছিলেন। অতঃপর সবুক্তগীন আবুল ফাত্তাকে স্বীয় কর্মসচিব মনোনীত করেন। মাহমুদের সিংহাসনারোহণ পর্যস্ত তিনি এই পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন।মাহমুদের অভিযোগের পর তিনি বিরক্ত হইয়া তুর্কীস্তানে চলিয়া যান।বুস্টের দুর্গ অধিকার করিবার পর সবুক্তগীন কান্দাহার গমন করিয়া সেই প্রদেশও দখল করেন। কান্দাহারের প্রাক্তন শাসককে বন্দী করা হয় এবং পরে তাহাকে মুক্তি দান করিয়া গজনীর অন্যতম কর্মচারী নিযুক্ত করা হয়।সুবুক্তগীন তাহার রাজত্বের প্রথম বৎসরের শেষের দিকে ভারতের পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করেন। তিনি কতকগুলি দুর্গ অধিকার করিয়া সেইসব স্বানে মসজিদ নির্মাণ করেন এবং বিপুল পরিমাণ লুষ্ঠিত দ্রব্য লইয়া গজনী প্রত্যাবর্তন করেন।ব্রাহ্মণ বংশীয় হরপালের পুত্র মহান হিন্দু বীর জয়পাল এই সময় দৈর্ঘ্যে সারহিন্দ হইতে লামঘান এবং প্রস্থে কাশ্মীর হইতে মুলতান পর্যন্ত বিস্তৃত এক বিশাল রাজ্যের অধিপতি ছিলেন। মুসলমানদের আক্রমণ প্রতিহত করিবার সুবিধার জন্যে রাজ জয়পাল বিতুন্ডা দুর্গে বাস করিতেছিলেন। মুসলমানদের ঘন ঘন ভারতাক্রমণ করিবার প্রবণতা লক্ষ্য করিয়া জয়পাল বুঝিলেন যে ইহাদের শক্তি খর্ব না করিলে দেশে শাস্তিতে বসবাস করা যহেবে না। তিনি স্থির করিলেন যে, আক্রমণকারীদিগকে তাহাদের দেশে যাইয়াই আক্রমণ করিবেন।এই উদ্দেশ্যে জয়পাল এক বিরাট সেনাবাহিনী গঠন করিলেন এবং অনেক রণহস্তীও সংগ্রহ করিলেন।জয়পালের উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিয়া। সুবুক্তগীন এক বিরাট সৈন্যবাহিনী ভারতা-ভিমুখে রওয়ানা করিয়া দিলেন। লামঘান সীমান্তে দুই বাহিনী পরস্পরের সম্মুখীন হইল এবং সামান্য সংঘর্ষও হইল ।
এই সময় মাহমুদ শুনিতে পাইলেন যে, জয়পালের শিবিরে একটা পবিত্র প্রশ্রবণ আছে যাহাতে কোন প্রকারে কিছ গোময় নিক্ষেপ করিতে পারিলে প্রলয়কান্ড শুরু হইবে। মুহুর্তকাল মধ্যে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইয়া তুমুল প্রলয় আরম্ভ হইবে |মাহমুদ গোপনে সেই প্রশ্রবণে গোময় নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা করিলেন। আর অমনি তার প্রতিক্রিয়া শুরু হইল। আকাশ যেন নিম্নে
আসিয়া বজ্র বিদ্যুত ঝড় ও শিলাবৃষ্টি সহকারে পৃথিবীকে আক্রমণ করিল।চক্ষের নিমেষে দিবস রাত্রিতে পরিণত হইল বহুদূর পর্যন্ত ধ্বংস ও আর্তনাদ পরিব্যাপ্ত হইয়া পড়িল । এই প্রলয়কাণ্ডে অধিকাংশ পশু এবং উভয় পক্ষে কয়েক সহস্র সৈন্য বিনষ্ট হইল॥ প্রভাতে জয়পাল তাহার ক্ষতির পরিমাণ দেখিয়া আৎকিয়া উঠিলেন। তাহার ভয় হইল পাছে সবুক্তগীন তাহার দুরবস্থার সুযোগ গ্রহণ করিয়া তাহাকে আক্রমণ করিয়া বসিবে। এই জন্য তিনি কালবিলম্ব না করিয়া সবুক্তগীনের নিকট শান্তির প্রস্তাব প্রেরণ করিলেন। এই প্রস্তাবে তিনি গঞ্জনী সথলতানকে বাৎসরিক কিছু পরিমাণ কর এবং তখনকার মত অনেক হস্তী ও স্বর্ণ উপহার দিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন।
সবুক্তগীন এই প্রস্তাবে সম্মত হইতে যাইতেছিলেন। কিন্তু তাহার পুত্র মাহমুদের পীড়াপীড়িতে তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিতে বাধ্য হইলেন।জয়পাল স্ববুক্তগীনকে ইহা পুনবিবেচনা করিতে অনুরোধ জানাইলেন এবং সেই সঙ্গে ভারতীয়, তথা রাজপুত সৈনিকদের বীরত্বের কথা বলিয়া প্রচ্ছনভাবে ভীতিও প্রদর্শন করিলেন। তিনি সুলতানকে জানাইলেন, “নিরুপায় হইলে স্ত্রী পুত্র কন্যাদের মৃত্যু দেখিয়া [যৌহর প্রথা তে প্রাণ ত্যাগ ] গৃহে অগ্নি সংযোগ করে এবং তার পরে কেশ পাশ খুলিয়া মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করিয়া প্রতিশোধ গ্রহণের উন্মাদনায় শক্রর উপর ঝাপাইয় পড়িবে।"”
জয়পালের উক্তির যথার্থতা উপলদ্ধি করিয়া স্বুক্তগীন ভাহার প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। জয়পাল সবুক্তগীন কে বহু নগদ অর্থ ও ৫০টি হস্তী প্রদান করিতে প্রতিশ্রুত হইলেন। শিবিরে সমস্ত অর্থের সংস্থান না হওয়ায় জয়পাল আবেদন জানাইলেন যে,” সুবুক্তগীনের কয়েকজন লোক তাহার সঙ্গে লাহোর গমন করিয়া অর্থ আনিবে " । পরে সে সন্ধি বাতিল হলে লামঘান সীমান্তে দুই বাহিনী পরস্পরের সম্মুখীন হয়। সুবুক্তগীনের এইসময় শত্রু বাহিনী দর্শন করিবার জন্য পাহাড়ে আরোহণ করিয়াছিলেন। বিশাল হিন্দু বাহিনী তাহার নিকট সমুদ্রের যত অসীম এবং পিপীলিকা ও পঙ্গপালেরমত গণনাতীত বলিয়া প্রতীয়মান হইল। কিন্ত সুবুক্তগীনের মনোবল একটুও কম হইল না। বিশাল শক্র-সেনাদল তাহার নিকট মেষ পালের মতই মনে হইল এবং শার্দুলের ন্যায় উহাদের উপর ঝাপাইয়া পড়িবার জন্য তিনি উন্মত্ত হইলেন ।তিনি সৈন্যদলকে একত্রিত করিয়া তাহাদিগকে অক্ষয় কীতি অর্জন করিতে উদ্বুদ্ধ করিলেন। তাহার সৈন্য সংখ্যা বেশী ছিল না। এই স্বল্প সংখ্যক সৈন্যকে প্রতি পাঁচশত সৈন্যের এক একটি দলে বিভক্ত করিলেন। তিনি এই দলগুলিকে শক্ত ব্যূহের একই স্থানে পুনঃ পুনঃ পালাক্রমে আঘাত হানিবার নির্দেশ দান করিলেন যাহাতে শত্রুসৈন্যকে ক্ষণে ক্ষণে নূতন ফৌজের মোকাবিলা করিতে হয়॥ হিন্দুরা সমরক্ষেত্রের স্থানেই পরাজিত হইয়া পলায়ন করিল। সুসলমানেরা নিলাব নদীর তীর পর্যন্ত তাহাদের পশ্চাদ্ধাবন করিয়া তাহাদের অসংখ্য সৈনিককে হত্যা করে। এই যুদ্ধজয়ে সুবুক্তগীন অপরিমিত সম্পদ ও অভুতপূর্ব যশের অধিকারী হয় । শক্র শিবিরে পরিত্যক্ত বিপুল পরিমাণ দ্রব্য তার হাতে পড়েছিল হাতে পড়িয়াছিল। তদুপরি নিলাব নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত অঞ্চল ভাহার অধিকারভুক্ত হয় এবং লামঘান ও পেশোয়ার হইতে তিনি প্রচুর কর প্রাপ্ত হন |
সুবুক্তগীনের এই যুদ্ধ বর্ণনা ফিরিস্তার দ্বারা হলেও এতে বহু অতিশয়োক্তি রয়েছে কারণ ফিরিস্তা ছাড়া আর কেউই এই বর্ণনা লিখে যায়নি .
৫৬ বৎসর বয়সে তাহার জীবনাবসান ঘটিয়াছিল।এ তিনি গজনীর পথে রওয়ানা হন কিন্ত তিরমিজে পৌছিতেই তিনি এমন দুর্বল হইয়া পড়িলেন যে তাহাকে সেখানেই থামিতে হইল । ৩৮৭ হিজরীর সাবান মাসে (খ্রীস্টাব্দ ৯৯৭ আগস্ট) তিনি তিরমিজে ইন্তেকাল করেন।