বিংশ শতাব্দী জুড়ে, মনোবিজ্ঞানের সাধারণ মানদণ্ড অনুযায়ী রোগনির্ণয়ক আদর্শসমূহের পরিভাষায় সমকামিতাকে মানসিক অসুস্থতা হিসেবে দেখা হত। পরবর্তীতে গবেষণাগুলো যখন এই সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা তা পরীক্ষা করা শুরু করে; তারা এর স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণাদি হাজির করতে ব্যর্থ হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আচরণিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের বহু অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ একে মানসিক অসুস্থতা হিসেবে গ্রহণ করার মাঝে আবদ্ধ থাকেন। পরবর্তী বছরগুলোতে, অনেকেই এই সিদ্ধান্তকেই সঠিক বলে দাবি করতেন, এবং মানসিক অসুস্থতার ডিএসএম নির্দেশিকার সংজ্ঞায়নেও প্রচলিত প্রভাবশালী সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা-ভিত্তিক বিশ্বাস, পুনর্বাসন সংস্থা ও অপরাধমূলক আইনি বিচার-সংস্থাগুলোর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।[১]
১৯৭০-র পর থেকে, বিশ্বজুড়ে বহু স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আচরণগত-সমাজবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ সমকামিতাকে মানব যৌন অভিমুখিতার একটি স্বাস্থ্যকর প্রকরণ হিসেবে দেখেন, যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ একে অসুস্থতা হিসেবে বহাল রাখেন।[২] ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মনোরোগ সংস্থা সমকামিতাকে অসুস্থতার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। এর কিছু মাস পরে মার্কিন মনোচিকিৎসক সমিতি মানসিক অসুস্থতা হিসেবে সমকামিতার সংজ্ঞাকে বাতিল করে।[৩]মার্কিন মনোচিকিৎসক সমিতির প্রতিনিধি কাউন্সিল ১৯৭৫ সালে[৪] এবং এরপর অন্যান্য স্বাস্থ্য ও মনস্তত্ব বিষয়ক বৃহত্তর সংস্থাগুলো উক্ত নতুন সংজ্ঞা অনুসরণ শুরু করে, যার মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯০ সালে মানসিক বিকৃতির তালিকা থেকে সমকামিতাকে বাতিল করে দেয়।[৫]
বর্তমান বিশেষজ্ঞদের মতে, সমকামিতা কোন মানসিক ব্যাধি নয়। কয়েক দশক ধরে গবেষণা ও ক্লিনিকের অভিজ্ঞতার ফলে প্রধান প্রধান স্বাস্থ্য ও[৬] মনোস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এসব প্রবৃত্তি মানুষদের স্বাভাবিক যৌনতার একটি ভিন্ন প্রকরণ মাত্র।[৭] নারী ও পুরুষের মধ্যেকার সম্পর্কের মতোই সমলিঙ্গ সম্পর্কও স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর।[২]
সমকামিতার ব্যাপারে সিগমন্ড ফ্রয়েডের দৃষ্টিভঙ্গি জটিল ছিল। সমকামিতার কারণ ও বিকাশকে বুঝতে গিয়ে, তিনি প্রথম উভকামিতাকে একটি "জন্মগত মৌলিক যৌন বৈশিষ্ট্য" হিসেবে ব্যাখ্যা করেন, যার দ্বারা তিনি বুঝিয়েছিলেন যে, সকল মানুষই উভকামী বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, যৌন তাড়নার একটি সমকামী অনুপাত ও একটি বিপরীতকামী অনুপাত আছে, এবং বিকাশকালীন সময়ে এ দুটোর একটি অপরটির উপর বিজয়ী হয়। এছাড়াও প্রাকৃতিক উভকামিতার ব্যাপারে একটি জৈবিক ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করতেন, যাতে বলা হয়, মানুষ জৈবিকভাবে উভয় লিঙ্গের দ্বারাই যৌন উত্তেজিত হওয়ার যোগ্য। একারণে, তিনি সমকামিতাকে মানুষের কাছে উপলব্ধ বহু প্রকারের যৌন সুযোগের মধ্যে একটি হিসেবে বর্ননা করেছেন। ফ্রয়েড প্রস্তাব করেন যে, মানুষের অন্তর্নিহিত উভকামিতা তাকে চূড়ান্তরূপে অধিক সন্তোষজনক যৌনতাকে বেছে নেওয়ার দিকে পরিচালিত করে, কিন্তু সাংষ্কৃতিক নিষিদ্ধতার কারণে অনেক মানুষের সমকামিতা অবদমিত হয়। ফ্রয়েডের মতে, যদি কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকতো, তবে মানুষ তখন নিজের কাছে মনে হওয়া অধিক সন্তোষজনক সুযোগটি বেছে নিতো, এবং তাদের এই যৌন পছন্দ সারা জীবনভর পরিবর্তনশীল হিসেবে বিরাজ করতো, এতে কখনো মানুষ সমকামী হতো, আর কখনো বিষমকামী।
সমকামিতার আরও কিছু কারণের মধ্যে তিনি ইডিপাস কমপ্লেক্স নামক একটি দশাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যেখানে কোন ব্যক্তি নিজেকে মায়ের সাথে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে এবং নিজেদেরকে অবচেতনভাবে প্রেমের বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে। এই আত্মপ্রেমকে নার্সিসিজম বলা হয়, ফ্রয়েড মনে করতেন যে, যার মাঝে নার্সিসিজম যত বেশি তার সমকামিতার সম্ভাবনা তত বেশি, কারণ সমলিঙ্গকে ভালবাসা হল নিজেকে ভালবাসার একটি বর্ধিতরূপ।[৭]
নারসিসিজম এবং সমকামিতার মধ্যে এই সম্পর্ক পরবর্তীতে রুবিনস্টাইন (২০১০) দ্বারা তৈরি একটি অভিজ্ঞ গবেষণার দ্বারা সমর্থন লাভ করে। গবেষণাটির ফলাফলে দেখা যায় যে, সমকামী শিক্ষার্থীরা বিষমকামী শিক্ষার্থীদের তুলনায় দুটি ভিন্ন ধরনের নারসিসিজমে উচ্চ এবং আত্মমর্যাদার মাপকাঠিতে নিম্ন স্কোর প্রদর্শন করে।[৮]
যৌনবিজ্ঞানীআলফ্রেড চার্লস কিনসে (১৮৯৪-১৯৫৬) কিনসে স্কেল উদ্ভাবন করেন, যা যৌন অভিমুখিতাকে ০ থেকে ৬ ছকে শ্রেণিবিন্যাসিত করে। সেই ছকে ০ মানে সম্পুর্ণভাবে বিষমকামী এবং ৬ মানে সম্পুর্ণভাবে সমকামী।[৯] তার অন্বেষণ থেকে এটা দেখা যায়, যৌন অভিমুখিতায় বিশালরকমের বৈচিত্র্য আছে। কিনসে পুরুষে যৌন আচরণ (Sexual Behavior in the Human Male) এবং নারীতে যৌন আচরণ (Sexual Behavior in the Human Female) শিরোনামে বই লিখেন, যা একই সাথে তাকে করে বিতর্কিত এবং পৌঁছে দেয় খ্যাতির চূড়ায়। তৎকালীন সময়ে সমকামীদের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হত। কিনসে বইতেই প্রথমবারের মত বর্ণনা করা হয়, সমকামিতা যতটুকু ভাবা হয় তারচেয়েও অধিক হারে সমাজে বিদ্যমান। প্রস্তাবনায় বলা হয়, এই আচরণ যৌনতারই একটি স্বাভাবিক অংশ।
সমকামিতা নিয়ে বৃহত্তর মনস্তত্ব বিষয়ক গবেষণাকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে:[১০]
কি কারণে কিছু লোক নিজের সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে?
কী কারণে সমকামিতামুলক যৌন অভিমুখিতার প্রতি বৈষম্য করা হয় এবং বৈষম্য কীভাবে প্রভাবিত হয়?[১১]
ব্যক্তি সমকামী হলে সেটা কী তার স্বাস্থ্যে, মানসিক দক্ষতায় অথবা জনস্বাস্থ্যে কোনো প্রভাব ফেলে?
সমকামী হলেই তাকে সমাজ বিচ্ছিন্ন হতে হবে কেন, যৌনতার এই প্রকরণের পরিচয়ের জন্য কাওকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বানানো কতটা যৌক্তিক[১২]
সমকামী মানুষের সন্তান কীভাবে বেড়ে উঠবে?
মনস্তাত্ত্বিক এই গবেষণাগুলো সবসময় সমকামী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে হিংসামুলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করতে সহায়ক হয়ে এসেছে, এই গবেষণাগুলো গুরুত্ববহন করেছে সাধারণ এলজিবিটি মানুষদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে।[১০]
“সমকামিতার বিকাশ” ব্যাখ্যা করার জন্য বহুবিধ তত্ত্ব এখন পর্যন্ত প্রস্তাবিত হয়েছে তবে সমকামিতা কেন হয় বা তার উৎস কি তা নিয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো সার্বজনীন তত্ব নেই।[১৩]
সমকামি বিরোধী এ মনোভাব এবং আচরণ (যাকে মাঝে মাঝে 'হোমোফোবিয়া' নামে অভিহিত করা হয়) মনস্তাত্ত্বিক গবেষণাগুলোর একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরনের গবেষণাগুলোতে সমাজে নারী সমকামীর তুলনায় পুরুষ সমকামীদের প্রতি যে বৈরী আচরণ সচরাচর পরিলক্ষিত হয়, তাই ফুটে উঠেছে।[১০] যারা সমকামীদের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত নন, সমকামী-বিরোধী মনোভাব মুলত তাদের মধ্যেই দেখা যায়। [১৪] সমকামী ও উভকামী ব্যক্তিরা নিজেদের যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তনের জন্য যদি মনোথেরাপি নিতে যায়, তবে সমকামী হওয়া থেকে তাদের প্রতিহত করতে সমকামীতার প্রতি বিদ্বেষমুলক যেসব কথাবার্তা থেরাপিষ্টরা বলেন, তা এলজিবিটি মানুষদের মানসিক ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। [১৫] এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব সমকামী থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, সেসব সমকামীদের প্রায় অর্ধ শতাংশই তাদের যৌন অভিমুখিতার জন্য বেশিরভাগ সময় সমাজের পুরুষ দ্বারা (যেমন: তার পরিবারের পুরুষ সদস্য, তার পুরুষ বন্ধুবান্ধব বা পুরুষ প্রতিবেশী) মৌখিক বা শারীরিকভাবে সহিংসতার শিকার হয়েছিলো, এই নিগ্রহের সাথে স্ট্রেস পরবর্তী বিভিন্ন লক্ষণ (যেমনঃ হতাশা, উদ্বেগজনিত সমস্যা, রগচটা সমস্যা সহ নানা সমস্যা) একজন নিগৃহীত সমকামীতে দেখার উচ্চতর ঝুকি থাকে।[১৬] গবেষকেরা দেখিয়েছেন, শিশুর যৌন অভিমুখিতা নিয়ে যেসমস্ত অভিভাবকেরা ঋণাত্মক চিন্তাধারণা পোষণ করেন, তাদের সন্তানেরা আত্মগ্লানিতে ভুগে এবং নারীদের প্রতি ঋণাত্মক চিন্তাজ্ঞাপন করে। এই ধরনের পিতামাতাদের তাদের সন্তানের সমকামিতার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হতে; তাদের সন্তানকে বুঝতে দীর্ঘ সময় লাগে।[১৭]
উপরন্তু, গবেষণায় প্রস্তাব করা হয়েছে, "যেসব পরিবার তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ অনুসরণ করে, ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে, বিবাহ এবং সন্তানাদি থাকার প্রতি জোর দেয়, সেসব পরিবারের; উদার মনোভাবাপন্ন পরিবারের তুলনায় সমকামিতাকে গ্রহণ করার মানসিকতা কম দেখা যায়।" [১৮] তবে আরো একটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, এটি সর্বজনীন নয়। অর্থাৎ এর উল্টোটাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চানা এটেনংফ এবং কোলেট ডাইয়েট কর্তৃক "এপিএ'র সাইকোলজি অফ রিলিজিয়ন অ্যান্ড স্পিরিচুয়ালিটি" (APA's Psychology of Religion & Spirituality) নামক জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা গেছে যে; বেশ কিছু ধর্মীয় পরিবারের সদস্যরা তাদের কোনো সদস্যের ভিন্ন যৌন অভিমুখিতাকে ধর্মীয় মুল্যবোধ ও ধর্মীয় গ্রন্থ দ্বারাই স্বীকার বা সমর্থন করেছেন। যেমনঃ একজন ক্যাথলিক মা, তার সমকামী পুত্রের অভিব্যক্তি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, "স্রষ্টার সকল নির্দেশনার উর্ধ্বে যে নির্দেশনা আছে; তা হলো ভালোবাসা"। একইভাবে একজন মেথোডিস্ট মা তার সমকামী পুত্রের সাথে এ বিষয়ে কথা আলোচনা করতে গিয়ে যীশুকেই তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, "আমি যীশুর বার্তা পড়ি, তার বার্তায় তিনি ভালোবাসার কথা বলেছেন, ক্ষমার কথা বলেছেন, এবং আমি মনে করি না, একজন মানুষকে কখনোই তার ভালোবাসার ন্যায় কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া যায়।" একই বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে একজন ধার্মিক মরমন পিতার দ্বারা, তিনি বলেছেন, "যদি তুমি কাওকে ভালোবাসো, তাহলে সেটা স্বীকার করে নেওয়াই সবচেয়ে বেশি যৌক্তিক এবং সমাজের কোনো অধিকার নেই; এজন্য তাকে শাস্তির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর।"[১১]
মনস্তাত্ত্বিক গবেষণাগুলো সমকামী, উভকামী ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পরীক্ষণ করেছে। গবেষকরা সমকামী ব্যক্তির হতাশা, মানসিক উদ্বেগ কেমন হয়, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। দেখেছেন এই সমস্ত সমস্যার ফলে তাদের খাদ্যভ্যাসে কোনো প্রভাব পরে কিনা।
মানসিক ব্যাধি: একটি ডাচ গবেষণা অনুসারে বিষমকামী পুরুষের তুলনায় সমকামী পুরুষে মেজাজ ও উদ্বিগ্নতা বিশৃঙ্ক্ষল থাকে, তারা অস্থিরচিত্ত নয়, ক্ষণে ক্ষণে মানসিক ধী পরিবর্তিত হয়, সমকামী নারীরা বিষমকামী নারীর তুলনায় অনেক বেশি হতাশাপ্রবণ থাকে (অন্যান্য উদ্বিগ্নতায় পার্থক্য তাদের দেখা যায় নি)।[১০]
শারীরিক বাহ্যরুপ ও খাদ্যাভাসে বিশৃঙ্ক্ষলা: সমকামী পুরুষেরা বিষমকামী পুরুষের তুলনায় তাদের শারীরিক শ্রী এর প্রতি বেশি মনোযোগী থাকে; তারা সচেতন থাকে; তাদের দেখে অন্য মানুষরা ইতিবাচক না নেতিবাচক মন্তব্য করছে; তার ব্যাপারে।[১৯]খাদ্যাভাসে বিশৃঙ্ক্ষলায় সমকামী নারীরা বিষমকামী নারীর তুলনায় কম ঝুঁকির শিকার হয়।[২০]
জৈবিক ভাবে নির্ধারিত লিঙ্গের সমাজ দ্বারা সংজ্ঞায়িত আচরণের বাইরে অন্য আচরণ সংক্রান্ত সমস্যা: সমাজ কর্তৃক জৈবিক লিঙ্গ ব্যক্তিবর্গের মানুষের আচরণ কেমন হবে; তা মোটামুটি নির্ধারিত। যেমনঃ একজন ছেলে বাইরে কাজ করবে, শার্ট প্যান্ট পরবে, হাটার সময় গটগট করে হাটবে, আর নারীরা ঘরে বসে থাকবে, ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরবে; হাঁটার সময় ধীরে ধীরে হাটবে, এধরনের আচরণ একটা সমাজ জৈবিক ভাবে নির্ধারিত লিঙ্গের মানুষের কাছে প্রত্যাশা করে। কিন্তু সমকামী পুরুষেরা যখন কিছু মেয়েলী আচরণ জনসম্মুখে করে, তখন তাকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।[২১] তবে সমকামী নারীদের এই সমস্যার মুখোমুখি কম হতে হয়।[২২]
সংখ্যা লঘুর চাপ: সমকামী ব্যক্তিরা প্রতিটা সমাজেই যৌন সংখ্যালঘু; আর নিজের যৌন প্রবৃত্তি এভাবে কম হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ সবসময় কাজ করে।
যৌন সম্পর্কের ব্যাধি: সমকামী ব্যক্তিরা যখন বিপরীত লিঙ্গের কাওকে বিবাহ করে (মিশ্রবিবাহ) তখন তারা এই ভেবে দ্বন্দ্বে থাকেন, তাদের বিবাহ হয়তো ভেঙে যাবে। যৌন সম্পর্কের ব্যাধি এমন এক প্রকার ব্যাধি; যেখানে যৌন পরিচয় তার সম্পর্কের গঠনে হস্তক্ষেপ করে।
বিষমকামীদের তুলনায় সমকামী নারী-পুরুষ অথবা উভকামীদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়।[২৩][২৪][২৫] সমকামী ও উভকামী পুরুষের তুলনায় উভকামী ও সমকামী নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার উচ্চ প্রবণতা দেখা যায়।[২৬]
গবেষণাগুলো বিষমকামী ও সমকামীদের আত্মহত্যার প্রবণতার নিখুত পার্থক্য কেমন হতে পারে; তার চূড়ান্ত কোনো ফলাফল প্রদর্শন করতে সক্ষম হয় নি। একটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে সমকামী নারীদের বিষমকামীদের তুলনায় ০.৮-১.১ গুণ বেশি[২৭] ও সমকামী পুরুষের বিষমকামীদের তুলনায় ১.৫-২.৫ গুণ বেশি আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়।[২৮][২৯] এধরনের অসংখ্য পারিসংখ্যানিক উপাত্ত থাকলেও, আত্মহত্যার প্রবণতার হার সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে এরকম একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা গিয়েছে; সমকামী নারীরা; বিষমকামীদের তুলনায় ৪.৬ গুণ[৩০] ও সমকামী পুরুষেরা বিষমকামীদের তুলনায় ১৪.৬ গুণ বেশি আত্মহননের পথ বেছে নেয়।[১০]
সমকামী নারী পুরুষের মধ্যে যারা আত্মহত্যা করতে চায়; তারা সমকামী বিদ্বেষী বিভিন্ন আচরণের শিকার হয়। দেখা যায়, যারা আত্মহত্যা করে না; তাদের তুলনায় আত্মহত্যা করতে ইচ্ছুক সমকামীরা অধিক বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব, বৈষম্য[১০][৩১][৩২] ও পরিবার থেকে ত্যাজ্য; এরকম ঘটনার মধ্য দিয়ে যায়।[৩৩] আরেকটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে; যেসব সমকামীরা আত্মহননের পথ বেছে নেয়; তারা অধিক হারে (যৌন ক্রিয়ায়) নারীর ভূমিকা পালন করে।[৩৪] যারা অবিষমকামী পরিচয় তরুণ বয়সেই গ্রহণ করে; তাদের মধ্যে অনেকেই যৌন নির্যাতনের, মাদকাসক্তের শিকার হয়; বিভিন্ন আচরণগত কারণে গ্রেফতার হয়।[৩৪] একটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে নরওয়ের যেসব কিশোররা আত্মহত্যা করতে যায়; তাদের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া যায়; এই কিশোররা সমলিঙ্গে যৌনাচারণ করতে ইচ্ছুক। তবে তারা সমকামী এমনটা বলা যাবে না।[৩৫]
এই নিবন্ধটি ইংরেজি থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। অনুগ্রহ করে এই অনুবাদটি উন্নত করতে সহায়তা করুন। যদি এই নিবন্ধটি একেবারেই অর্থহীন বা যান্ত্রিক অনুবাদ হয় তাহলে অপসারণের ট্যাগ যোগ করুন।
মূল নিবন্ধটি উপরে ডানকোণে "ভাষা" অংশে "ইংরেজি" ভাষার অধীনে রয়েছে।
প্রকাশ্যে আসা: অনেক সমকামী, উভকামী ব্যক্তিরা জীবনের একটা পর্যায়ে নিজের যৌন পরিচয় "প্রকাশ করেন"। মনস্তাত্ত্বিকদের মতে এই প্রকাশ্যে আসার বিষয়টি কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। তারা প্রথম স্তরে বুঝতে পারেন, তাদের যৌন চাহিদা সংখ্যাগরিষ্ঠের যৌন প্রবৃত্তি থেকে আলাদা। তখন তারা তাদের যৌন পরিচয়কে প্রশ্ন করতে থাকে। এরপর তারা ব্যবহারিকভাবে কিছু ক্ষেত্রে নিজের যৌন পরিচয়কে প্রকাশ করেন এবং এই পরিচয়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে তারা তাদের যৌন ইচ্ছাসমূহকে একত্রিত করে ও নিজেদেরকে সম্পুর্ণভাবে বুঝতে পারে।"[১০] তবে এই প্রক্রিয়াটি রৈখিক নয়[৩৬] এটি উভকামী, নারী সমকামী, পুরুষ সমকামীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়।[৩৭]
প্রকাশ্যে আসার ভিন্ন স্তর: একটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে সমকামী পুরুষেরা; তাদের সহ কর্মজীবি, পিতামাতা এবং দুরের দিকের আত্মীয়ের তুলনায় বন্ধু এবং সহোদরের কাছে নিজেকে বেশি প্রকাশ করেন।[৩৮]
প্রকাশ্যে আসা এবং ভালো থাকা: যেসব সমলিঙ্গের দম্পতি প্রকাশ্যে আসেন, তারা তাদের সম্পর্ক নিয়ে তুলনামুলক ভাবে বেশি তৃপ্ত থাকেন।[৩৯] যেসব নারীরা নিজেদের সমকামী হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন, তারা কম উদ্বিগ্ন থাকেন, ইতিবাচক এবং আত্মবিশ্বাসী থাকে।[৪০]
নিজের সমকামী সত্তাকে প্রত্যাখান: যেসব ধার্মিক ব্যক্তি নিজ নিজ সমকামী সত্তাকে ধর্মের সাথে সমকামিতার বিবাদ দেখে প্রত্যাখান করে, তারা নির্ভার হয়েই বসবাস করতে পারে।[৪১][৪২][৪৩][৪৪] এই গবেষণাসমুহকে পুনঃপরীক্ষণের পর মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠনের প্রধান জুডিথ গ্লাসগোল্ড বলেছেন, ধর্মীয় কারণে নিজের সমকামী সত্তাকে প্রত্যাখান করলে ক্ষতি হয়, এমনটা বলা যায় না।[৪৫]
তরলের ধর্ম তারল্য হওয়ায়, তা যে পাত্রে রাখা হয়, সে পাত্রের আকার ধারণ করে, অর্থাৎ তরল পদার্থ সময়ের সাথে তার আকার বদলায়, মানুষের ক্ষেত্রে যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তিত হতে পারে বলেই, একে তারল্যের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন (APA) এবিষয়ে বিবৃতিতে বলে, "কেও কেও মনে করে, যৌন অভিমুখিতা সহজাত এবং সুনির্দিষ্ট, যাইহোক; যৌন অভিমুখিতা একজন মানুষের গোটা জীবন জুড়েই ক্রমান্বয়ে প্রকাশিত হতে পারে।[৪৬] আমেরিকার বৃহৎ বৃহৎ স্বাস্থ্য বিষয়ক সংগঠনের সাথে মিলিতভাবে মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন বিবৃতি দেয় "ভিন্ন ভিন্ন লোক জীবনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বুঝতে পারে, তারা বিসমকামী, সমকামী, না উভকামী।[৪৭]মানসিক স্বাস্থ্য এবং আসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য মতে, "কিছু লোকের জন্য যৌন অভিমুখিতা সবসময়ের জন্য একই রকম থাকে, তবে কিছু মানুষের জন্য যৌন অভিমুখিতা তারল্যের ন্যায় সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।[৪৮] লিসা ডায়মণ্ডের "বয়ঃসন্ধি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক- নারীর উভকামিতা" নামক গবেষণা থেকে এটা দেখা গিয়েছে যে, "সমকামি ও বিসমকামী নারীদের স্বভাব, আত্মপরিচয়ে অভিমুখিতার তারল্য দেখা যায়"।[৪৯][৫০]
এলজিবিটি পিতামাতা বলতে বুঝানো হয়, যখন লেসবিয়ান, গে, উভকামী এবং রুপান্তরকামী (এলজিবিটি) মানুষরা এক বা একাধিক সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভূমিকা পালন করেন। এক্ষেত্রে তারা সেসব সন্তানের জৈবিক (মানে তারাই জন্মদিয়েছেন) অথবা অজৈবিক পিতামাতা হতে পারেন। সমকামী পুরুষরা গর্ভভাড়া, আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় ভাবে সন্তান দত্তক নিয়ে, কোনো নারীর সাথে যৌন সম্পর্কে না জড়িয়ে সহপিতা হিসেবেও সন্তানের পিতা হতে পারেন।[৫১][৫২][৫৩][৫৪][৫৫] এলজিবিটি পিতামাতা গণ সিঙ্গেল পিতা অথবা মাতাও হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০০০ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, ৩৩ শতাংশ নারী সমকামী ও ২২ শতাংশ পুরুষ সমকামীর ১৮ বছরের নিচে অন্তত একটি সন্তান আছে, এমন তথ্য নথিবদ্ধ হয়।[৫৬] কিছু সন্তান জানেই না, তাদের পিতা অথবা মাতা এলজিবিটি সম্প্রদায়ভুক্ত, কিছু পিতা-মাতা তাদের সন্তানের কাছে নিজের অভিমুখিতার পরিচয় গোপন রাখতেই প্রত্যয়ী।[৫৭][৫৮] কিছু দেশে এলজিবিটি মানুষের সন্তান পরিচর্যা ও তাদের সন্তান দত্তক নেওয়া বিতর্কিত। জানুয়ারি ২০০৮ এ ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত সমকামী দম্পতির সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকারের পক্ষে রায় দেয়।[৫৯][৬০] যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ টি রাজ্যে এলজিবিটি মানুষ সন্তান দত্তক নিতে পারেন।[৬১]
যদিও এটা মাঝেমাঝে বলা হয়, বিষমকামী দম্পতিরা মজ্জাগতভাবেই সমকামী দম্পতির তুলনায় ভালো পিতামাতা হয়ে থাকেন অথবা বিষমকামী দম্পতির তুলনায় সমকামী দম্পতির সন্তানেরা খারাপভাবে বড় হয়, কিন্তু এই ধরনের দাবী কোনোভাবে বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত নয়।[১][৬২] সমলিঙ্গের পিতামাতা দ্বারা প্রতিপালিত শিশুরা যে বিষমকামীদের চেয়ে খারাপভাবে বড় হয় না, এরপক্ষেই উলটা প্রচুর গবেষণা প্রবন্ধ আছে। এই গবেষণাগুলোতে শিশুর শারীরিক, মানসিক, অনুভূতিগত এবং আচরণগত বিষয়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে। তারা এখানে শিশুর ক্ষতির কোনো ঝুকি দেখতে পাননি।[৬৩] কোনো গবেষণা এটা প্রমাণ করতে সমর্থ হয় নি, পিতামাতার লিঙ্গ কোনোভাবেই সন্তানের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।[৬৪] গে, লেসবিয়ান অথবা উভকামী পিতামাতারা যদি বিষমকামী পিতামাতার চেয়ে সন্তান পালনে কম দক্ষ হয়; তবে তাদের প্রতিপালিত সন্তানের মধ্যে এই অদক্ষতার প্রমাণ দেখা যাবে। যা কখনোই এই গবেষণায় দেখা যায় নি।[৬৫]
যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ "মধ্যবিত্ত পরিবার আর সেই প্রথায় আটকে নেই; যেখানে বিবাহের পরে বাবা কাজের জন্য বাইরে যাবে, আর মা ঘরে বসে থাকবে এবং তাদের গর্ভ ও ঔরস জাত নিজ সন্তানকে মা ঘরে বসে বসে পালন করে বড় করবে।" ১৯৮০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কিশোররা প্রথাগত পরিবারের মত করে অপ্রথাগত পরিবারের সাথেও মানিয়ে নিতে সক্ষম।[৭৪]
বিষমকামী ব্যক্তিরা চাপ, সম্পর্ক, সমস্যা, সামাজিক কর্মে নিজেকে রাখতে সমস্যায় পরলে বিভিন্ন থেরাপি নিয়ে থাকে। সমকামী ব্যক্তিদের অনেকেই বিষমকামী ব্যক্তি হিসেবে জীবন ধারণের জন্য নিজের যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তনের নিমিত্তে এরকম থেরাপি নিতে চায়। কিন্তু এই থেরাপি গুলো যারা বিষমকামী নয়, তাদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক ঝুঁকি তৈরী করতে পারে।[১৫]
যৌন অভিমুখিতা যাই হোক না কেন, সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দম্পতির মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু এলজিবিটি সদস্যরা সমাজ কর্তৃক নিপীড়নের শিকার হতে হবে; এমন ভয়ে ভীত থাকে। ফলে সমকামী যুগলকে; বিষমকামীদের তুলনায় অতিরিক্ত ভাবে কীভাবে সমকামী বিদ্বেষীতাকে মোকাবিলা করা যায়, এবিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হয়। স্বতন্ত্রভাবে অনেকেই যখন তার অভিমুখিতাকে প্রকাশ করে; তাকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সমলিঙ্গের দম্পতির সামনে এমন কোনো সমলৈঙ্গিক জুটি নেই; যাকে তারা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে এবং সেই আদর্শকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরে নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে নির্ভার থাকতে পারে। সমাজ কর্তৃক লিঙ্গ নির্ধারণের বিষয় নিয়ে বিষমকামী দম্পতির জন্য সমাজ দ্বারা কোনো জটিলতা তৈরী হয় না; কিন্তু সমকামী দম্পতিকে সমাজ অনেকসময় সরলভাবে গ্রহণ করে না; ফলে তাদের নানাবিধ জটিলতা মোকাবিলা করতে হয়।[৭৫]
অনেক সমকামীকে মিশ্র বিবাহের মধ্য (নিজে সমকামী জানা সত্ত্বেও বিষমকামীকে বিবাহ) দিয়ে যেতে হয়; যা তাদের মানসিক ভাবে পীড়িত করে।[৭৬] থেরাপি সমকামীদের তাদের সত্তা স্বীকার করতে কিছুটা সাহায্য করতে পারে।[৭৭] যদি কেও নিজেকে মন থেকে সম্পুর্ণভাবে সমকামী মনে করে, তবে তা বৈবাহিক সম্পর্কে সমস্যা তৈরী করে।[৭৮]
সমকামী সত্তাকে স্বীকার করার মনোথেরাপি; মনোথেরাপিরই একটি অংশ। এই থেরাপি দ্বারা সমকামী মক্কেলকে, নিজের যৌন অভিমুখিতা স্বীকার করে নিতে উৎসাহ এবং সামাজিক চাপে পরে, নিজের অভিমুখিতা পরিবর্তন করে বিষমকামিতায় যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন (APA) এবং ব্রিটিশ মনোতাত্ত্বিক সংগঠন সমকামী সত্তাকে স্বীকার করে নেওয়া মনোথেরাপির নির্দেশিকা তৈরী করেছে।[৭৯][৮০] এই থেরাপি প্রদানকারী মনোঃচিকিৎসকেরা বিবৃতিতে বলেন, সমকামিতা বা উভকামিতা কোনো মানসিক অসুস্থতা নয়। তারা বিবৃতিতে বলে, নিজের সত্তাকে স্বীকার করে নেওয়ার মাধ্যমে তারা অন্য মানসিক অসুস্থতা উৎপত্তির ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাবে।[৭৯]
এপিএ তাদের প্রস্তাবনায় বলেন, কেও যদি তাদের যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে থেরাপি বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা শুরুর পুর্বে এটা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন, কেন সে অভিমুখিতা পরিবর্তন করতে চায়।[৮১] যৌন অভিমুখিতা পরিচয় অনুসন্ধানের একটি উদাহরণ হলো যৌন পরিচয় থেরাপি।
যৌন অভিমুখিতার পরিচয়ের যে অনুসন্ধান, এই অনুসন্ধানের পথপরিক্রমায় ব্যক্তি তার সত্তা সম্বন্ধে পুনঃপরিচিত হয়। প্রকৃত মনোথেরাপি; অবিষমকামী ব্যক্তির অপর সত্তা; যাকে সে সমাজ থেকে লুকিয়ে রেখেছে, তা প্রকাশে উৎসাহিত করে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজ সম্বন্ধে জ্ঞাত হয়, তার পরিচয়ের প্রতি সে হয়ে উঠে আত্মবিশ্বাসী। এই ধরনের থেরাপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে ব্যক্তির স্বীয় সত্তাকে প্রকাশে করে আত্মপ্রত্যয়ী। সমাজের নিয়ম নীতির বেড়াজালে যে বাঁধা তৈরী করা হয়েছে তা ভাঙতে মনোবল করে তুলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
মার্কিন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সংগঠন এই বিষয়ে বক্তব্যতে বলেছে: কনভার্সন থেরাপির মত থেরাপিগুলো অবিষমকামী ব্যক্তির জন্য নানাবিধ ঝুঁকি নিয়ে আসে। এই ধরনের থেরাপি নিলে অবিষমকামী ব্যক্তির উপর হতাশা, দুশ্চিন্তা, আত্ম-বিনাসী ভাবনা সহ বিভিন্ন আচরণ ভর করে। যারা এই ধরনের থেরাপি দেয়, তাদের প্রায়সয়ই সমকামীতার বিরুদ্ধে মনগড়া কথা বলতে হয়, থেরাপিষ্টরা সমকামী বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে অবিষমকামীদের। তাদের মনে পরোক্ষভাবে গেথে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, সমকামীরা কখনো সুখী হতে পারে না, সমাজ তাদের স্বীকার করবে না, এরুপ নানাবিধ প্রচারণা। অথচ একজন অবিষমকামী ব্যক্তি সমকামী, উভকামী হয়েও সুখী হতে পারে, নিজের মনোমত সঙ্গী বাছাই করেও সম্পর্কে সন্তুষ্ট থাকতে পারে; ইচ্ছাকৃতভাবেই এবিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়।"[৮২] এসমস্ত কারণে, একজন অবিষমকামী ব্যক্তির মধ্যে তার যৌন অভিমুখিতার জন্য ভর করে রাজ্যের হতাশা।
মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন সমকামিতা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে মানসিক সমস্যার তালিকা বা শ্রেণিবিন্যাস থেকে বাদ দিয়েছে।[৮৩] এই সংগঠন মনে করে, সমকামী, উভকামী মানুষ; তাদের প্রান্তিক যৌনতা সম্বন্ধে পর্যাপ্তভাবে জ্ঞাত না থাকায়; নিজের যৌন প্রবৃত্তি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে না জানার দরুন মানসিক পীড়ায় ভুগে থাকে।[৮৪]
মার্কিন কলেজ অব পেডিয়াট্রিক্স; যৌনতা নিয়ে যারা মনোকষ্টে ভুগে তাদের পরামর্শ বার্তায় এভাবেই বলে: "তুমি স্বাভাবিক মানুষ। সমকামিতা কোনো মানসিক রোগ নয়। মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন, মার্কিন মনোরোগ সংগঠন এবং আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স এর মত সমস্ত বৃহত্তম মনোসংগঠন গুলো মনে করে, সমকামিতা কোনো অসুখ বা ব্যাধি (ডিসঅর্ডার) নয়। শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তির একটি বহিঃপ্রকাশ। কেও জানে না, কী কারণে মানুষ সমকামী, উভকামী বা বিষমকামী হয়। অনেকগুলো ফ্যাক্টর এর পিছনে কাজ করে থাকতে পারে। কেও হয়তো জৈবিক কারণে সমকামী হয়, কেওবা মনস্তাত্ত্বিক কারণে। এই কার্য কারণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। বাস্তবতা হলো, কেও ইচ্ছাকৃতভাবে সমকামী, বিষমকামী বা উভকামী হতে পারে না।"[৮৫]
↑Bayer, Ronald (১৯৮৭)। Homosexuality and American Psychiatry: The Politics of Diagnosis। Princeton: Princeton University Press। আইএসবিএন0-691-02837-0।[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
↑Freud, Sigmund (১৯৫৩)। Three essays on the theory of sexuality। London: Hogarth Press।
↑ কখRuitenbeek, H.M. (১৯৬৩)। The problem of Homosexuality in modern society। New York: Dutton।
↑Geddes, Donald Porter (১৯৫৪)। An analysis of the Kinsey reports on sexual behavior in the human male and female। New York: Dutton।
↑ কখগঘঙচছSandfort, T., সম্পাদক (২০০০)। "2"। Lesbian and Gay Studies: An Introductory, Interdisciplinary Approach। আইএসবিএন978-0-7619-5417-0।
↑ কখEtengoff C.; Daiute C. (২০১৪)। "Family Members' Uses of Religion in Post–Coming-Out Conflicts With Their Gay Relative"। Psychology of Religion and Spirituality। 6 (1): 33–43। ডিওআই:10.1037/a0035198।
↑Etengoff C.; Daiute C. (২০১৫)। "Clinicians' perspectives of religious families' and gay men's negotiation of sexual orientation disclosure and prejudice"। Journal of Homosexuality। 62 (3): 394–426। ডিওআই:10.1080/00918369.2014.977115।
↑Siever, Michael D.। "Sexual orientation and gender as factors in socioculturally acquired vulnerability to body dissatisfaction and eating disorders"। Journal of Consulting and Clinical Psychology (ইংরেজি ভাষায়)। 62 (2): 252–260। ডিওআই:10.1037/0022-006x.62.2.252।
↑Finlay, Barbara; Scheltema, Karen E. (২৬ জুন ১৯৯১)। "The Relation of Gender and Sexual Orientation to Measures of Masculinity, Femininity, and Androgyny:"। Journal of Homosexuality। 21 (3): 71–86। আইএসএসএন0091-8369। ডিওআই:10.1300/J082v21n03_04। পিএমআইডি1880402।
↑Westefeld, John; Maples, Michael; Buford, Brian; Taylor, Steve (২০০১)। "Gay, Lesbian, and Bisexual College Students"। Journal of College Student Psychotherapy। 15 (3): 71–82। ডিওআই:10.1300/J035v15n03_06।
↑Ryan C, Huebner D, Diaz RM, Sanchez J (জানুয়ারি ২০০৯)। "Family rejection as a predictor of negative health outcomes in white and Latino lesbian, gay, and bisexual young adults"। Pediatrics। 123 (1): 346–52। ডিওআই:10.1542/peds.2007-3524। পিএমআইডি19117902।
↑"Sexual orientation and suicide attempt: a longitudinal study of the general Norwegian adolescent population"। 112 (1)। ফেব্রুয়ারি ২০০৩: 144–51। ডিওআই:10.1037/0021-843X.112.1.144। পিএমআইডি12653422।অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |2= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
↑de Monteflores, Carmen; Schultz, Stephen J. (১ জুলাই ১৯৭৮)। "Coming Out: Similarities and Differences for Lesbians and Gay Men"। Journal of Social Issues। 34 (3): 59–72। আইএসএসএন1540-4560। ডিওআই:10.1111/j.1540-4560.1978.tb02614.x।
↑Jordan KM, Deluty RH (১৯৯৮)। "Coming out for lesbian women: its relation to anxiety, positive affectivity, self-esteem, and social support"। Journal of Homosexuality। 35 (2): 41–63। ডিওআই:10.1300/J082v35n02_03। পিএমআইডি9524921।
↑Kerr, R. A. (1997). The experience of integrating gay identity with evangelical Christian faith" Dissertation Abstracts International 58(09), 5124B. (UMI No. 9810055).
↑Buxton, Amity P. (৩১ মার্চ ২০০৫)। "A Family Matter: When a Spouse Comes Out as Gay, Lesbian, or Bisexual"। Journal of GLBT Family Studies। 1 (2): 49–70। আইএসএসএন1550-428X। ডিওআই:10.1300/J461v01n02_04।
↑ কখPawelski JG, Perrin EC, Foy JM, ও অন্যান্য (জুলাই ২০০৬)। "The effects of marriage, civil union, and domestic partnership laws on the health and well-being of children"। Pediatrics। 118 (1): 349–64। ডিওআই:10.1542/peds.2006-1279। পিএমআইডি16818585।
↑"NACAC's Positions on Key Issues"। The North American Council on Adoptable Children (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ এপ্রিল ২০১৭। ১৯ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৮।
↑Coleman E (১৯৮১)। "Bisexual and gay men in heterosexual marriage: conflicts and resolutions in therapy"। J Homosex.। 7 (2–3): 93–103। ডিওআই:10.1300/J082v07n02_11। পিএমআইডি7346553।