কোন বৃত্তের অন্তর্লিখিত যে চতুর্ভুজের একটি কোণের সন্নিহিত বাহু দুটি পরস্পর সমান এবং এই কোণের বিপরীত কোণের সন্নিহিত বাহু দুটিও পরস্পর সমান উপরন্ত প্রথম বাহুযুগলের দৈর্ঘ্য ও দ্বিতীয় বাহুযুগলের দৈর্ঘ্য পরস্পরের অসমান সেই ঘুড়ি আকৃতির চতুর্ভুজকে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির ভাষায় সমকোণী ঘুড়ি বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, কোন বৃত্তে অন্তর্লিখিত যে চতুর্ভুজের বাহু চারটিকে দুটি ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করা যায় যেখানে প্রতিটি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত বাহুজোড়া পরস্পরের সন্নিহিত এবং সমান অথচ একটি গ্রুপের বাহুর দৈর্ঘ্য অপর গ্রুপটির বাহুর দৈর্ঘ্যের থেকে ভিন্ন সেই চতুর্ভুজটিই সমকোণী ঘুড়ি। সংক্ষেপে বললে, যে জ্যামিতিক ঘুড়িকে কোন বৃত্তে অন্তর্লিখন করা যায় সেই জ্যামিতিক ঘুড়িই হচ্ছে সমকোণী ঘুড়ি।[১] যার অর্থ সমকোণী ঘুড়ি হচ্ছে একটি পরিবৃত্ত সম্বলিত ঘুড়ি (যেমন: বৃত্তীয় ঘুড়ি)। একইভাবে, সমকোণী ঘুড়ি হল এমনই এক উত্তল চতুর্ভুজ যার পরস্পর বিপরীত দুটি সমকোণ রয়েছে।[২] যদি সমকোণী ঘুড়িতে ঠিক দুটি সমকোণ থাকে তবে প্রত্যেক সমকোণ সংলগ্ন বাহুদুটি অবশ্যই অসমান হবে। প্রতিটি ঘুড়ির যেমন একটি অন্তর্বৃত্ত থাকবেই তেমনি প্রতিটি সমকোণী ঘুড়ির অবশ্যই একটি পরিবৃত্ত থাকবে (উপরের সংজ্ঞা)। অর্থাৎ একটি সমকোণী ঘুড়ির অন্তর্বৃত্ত ও পরিবৃত্ত উভয়ই বিদ্যমান। তাই প্রতিটি সমকোণী ঘুড়িই একটি দ্বিকেন্দ্রিক চতুর্ভুজ। সমকোণী ঘুড়িটির একটি কর্ণ ঘুড়িটির প্রতিসাম্যিক অক্ষের ন্যায় কাজ করবে এবং একে সমান দুটি সমকোণী ত্রিভুজে বিভক্ত করবে। সমকোণী ঘুড়িটির যে পরিবৃত্ত পাওয়া যাবে তার ব্যাস হবে এই কর্ণের দৈর্ঘ্যের সমান।
যেহেতু প্রতিটি সমকোণী ঘুড়ির অবশ্যই একটি অন্তর্বৃত্ত বিদ্যমান তাই সমকোণী ঘুড়ি এক প্রকার স্পর্শকীয় চতুর্ভুজ। যেকোন স্পর্শকীয় চতুর্ভুজের অন্তর্বৃত্তের কেন্দ্র এবং অন্তর্বৃত্তটির স্পর্শক বিন্দু চারটির সংযোগকারী রেখাংশ চারটি চতুর্ভুজটিকে চারটি সমকোণী ঘুড়িতে বিভক্ত করে।
বর্গ হল বিশেষ ধরনের সমকোণী ঘুড়ি যার কর্ণ দুটির দৈর্ঘ্য সমান এবং যার অন্তর্বৃত্ত ও পরিবৃত্ত সমকেন্দ্রিক।
একটি ঘুড়ি সমকোণী ঘুড়ি হবে যদি এবং কেবল যদি এর একটি পরিবৃত্ত থাকে। এর মানে হল, একটি ঘুড়িকে সমকোণী ঘুড়ি হতে হলে এর দুটি বিপরীত কোণকে সমকোণী হতে হবে।
যেহেতু একটি সমকোণী ঘুড়িকে দুটি সমকোণী ত্রিভুজে বিভক্ত করা যায় তাই সমকোণী ঘুড়ির মেট্রিক সূত্রাবলী সমকোণী ত্রিভুজের নিম্নোক্ত সুপরিচিত বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে সহজে বের করা যায়। ABCD সমকোণী ঘুড়িতে B এবং D বিপরীত কোণদ্বয় সমকোণ হলে অপর কোণ দুটিকে নিচের সূত্র দ্বারা বের করা যাবে:
যেখানে a = AB = AD এবং b = BC = CD। সমকোণী ঘুড়িটির ক্ষেত্রফল হবে:
AC কর্ণ যা সমকোণী ঘুড়িটির একটি প্রতিসাম্যিক অক্ষ তার দৈর্ঘ্য হবে:
আবার যেহেতু যেকোন সমকোণী ঘুড়ির কর্ণদ্বয় পরস্পরের লম্ব তাই প্রতিটি সমকোণী ঘুড়িই একটি লম্বকর্ণ চতুর্ভুজ যার ক্ষেত্রফল হবে । অতএব সমকোণী ঘুড়িটির অপর কর্ণ BD এর দৈর্ঘ্য হবে:
পিথাগোরাসের উপপাদ্য অনুযায়ী পরিবৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে:
পুনরায়, সকল ঘুড়িই স্পর্শকীয় চতুর্ভুজ হওয়ায় অন্তর্বৃত্তটির ব্যাসার্ধকে লেখা যাবে:
এখানে s হচ্ছে অর্ধ-পরিসীমা।
সমকোণী ঘুড়িটির ক্ষেত্রফলকে পরিবৃত্তের ব্যাসার্ধ R এবং অন্তর্বৃত্তের ব্যাসার্ধ r মাধ্যমে প্রকাশ করলে পাব:[৩]
সমকোণী ঘুড়ির কর্ণদ্বয়ের ছেদবিন্দু থেকে এর শীর্ষ পর্যন্ত দূরত্বগুলো , , এবং (ঘড়ির কাটার ক্রমানুসারে) হলে আমরা পাব—
এটি জ্যামিতিক গড় উপপাদ্যের একটি সরাসরি ফলাফল।
সমকোণী ঘুড়ি আকৃতির দ্বৈত বহুভুজ হবে সমদ্বিবাহু স্পর্শকীয় ট্রাপিজিয়াম আকৃতির।[১]
সমকোণী ঘুড়িকে কখনো কখনো ন্যূনতম একটি সমকোণযুক্ত ঘুড়ি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[৪] একটি সমকোণের ভিত্তিতে সমকোণী ঘুড়িকে সংজ্ঞায়িত করা হলে এই সমকোণের সন্নিহিত বাহুদুটিকে অবশ্যই সমান হতে হবে। আর এক্ষেত্রে উপর্যুক্ত সূত্রগুলো প্রযোজ্য হবে না।