এই নিবন্ধটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। |
এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। |
সমাজবিজ্ঞান একটি উচ্চশিক্ষায়তনিক পাঠ্য বিষয় ও গবেষণার ক্ষেত্র যা প্রাথমিকভাবে ফরাসি বিপ্লবের পর পরই জ্ঞানদান চিন্তার ফলে সমাজের প্রত্যক্ষবাদী বিজ্ঞান হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি বিজ্ঞান এবং জ্ঞানের দর্শনের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের ফসল। বৃহত্তর অর্থে দর্শনের সাধারণ ভিত্তি থেকে পূর্ব নির্ধারিত ক্ষেত্র হিসেবে সামাজিক বিশ্লেষণের জন্ম। আধুনিকতা, পুঁজিবাদ, নগরায়ন, যৌক্তিকীকরণ, ধর্মনিরপেক্ষতা, উপনিবেশ স্থাপন এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আধুনিক একাডেমিক সমাজবিজ্ঞান আবির্ভূত হয়েছে। ১৯ শতকের শেষ দিকে সমাজবিজ্ঞান তার সামাজিকতার একক এবং নজরদারির নিমিত্তে আধুনিক জাতি রাষ্ট্রসমূহে একটি বিশেষ আগ্রহ সষ্টি করে একে প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠন করে। আলোকায়নের চেয়ে আধুনিকতার ধারণার উপর গুরুত্বারোপ করে, প্রায়ই ধ্রুপদী রাজনৈতিক দর্শন থেকে সমাজতাত্ত্বিক আলোচনাকে আলাদা করা হয়।[১]
সরকার, ব্যবসা, সংস্থা এবং অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সংখ্যামূলক সামাজিক গবেষণা কৌশল সাধারণ টুলস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সামাজিক গতিবিদ্যার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা থেকে বিলুপ্ত হয়ে, এটি সামাজিক গবেষণা কে সমাজবিজ্ঞানের শৃঙ্খলা থেকে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছে। একইভাবে, যে সকল প্রতিষ্ঠান মানুষ, মিথস্ক্রিয়া, সমাজ বা সংস্কৃতি অধ্যয়ন করে; তাদের বুঝাতে "সামাজিক বিজ্ঞান" ছাতা পরিভাষা হিসেবে অধিকার লাভ করে।[২]
প্রাচীন গ্রীস হচ্ছে সমাজতাত্ত্বিক যুক্তির প্রাচীণ ক্ষেত্র(জেনোফেন্সের মন্তব্য: "যদি ঘোড়া দেবতাদের পূজা করে, তাহলে এই উপাস্যরা ঘোড়ার প্রতিনিধি")। পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতিষ্ঠার সময়কার গ্রন্থে (হেরোডোটাস, থুসিডাইডিস, প্লেটো, পলিবিয়াস এবং আরো অনেকে), সেই সাথে ইউরোপের বাইরে যেমন কনফুসিয়াসের চিন্তায় প্রোটো-সমাজতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ পাওয়া যাবে।[৩] প্রাচীন গ্রিকের সামাজিক পরিবেশে তাদের সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারার চরিত্রগত প্রবণতা পাওয়া যাবে। কেননা সেখানে রাজ্যের মধ্যে খুব কমই কোন ব্যাপক বা অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক সংগঠন ছিল যা স্থানীয় এবং প্রাদেশিক উপজাতীয় চেতনাধারীকে মুক্ত চর্চার অনুমতি দিত। এই স্থানীয় এবং প্রাদেশিক উপজাতীয় চেতনা গ্রিক চিন্তার সামাজিক ঘটনাবলির উপর সবচেয়ে পরিব্যাপ্ত।[৪]
১০৮৬ সালে ডমেসডের বইয়ে রাজা উইলিয়াম প্রথমের আদেশে জরিপের উৎপত্তি পাওয়া যায়।[৫][৬]
১৩ শতকে একজন চীনা ঐতিহাসিক মা থুন-লিন, তার ধাতুগত বিশ্বকোষ, উইনজেন টংকাও বা "সাহিত্যের ব্যাপক পরীক্ষা"-এ ঐতিহাসিক বিকাশের অন্তর্নিহিত উপাদান হিসাবে প্রথম সামাজিক গতিবিদ্যার ধারণাকে পরিচিত করান।[৭]
১৪শ শতাব্দী থেকে প্রথম মুসলিম সমাজবিজ্ঞানের প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৪ শতকে উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত তিউনিশিয়ার আরবীয় ইসলামী পণ্ডিত ইবনে খালদুনকে অনেকে প্রথম সমাজবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করে;[৮] তাঁর মুকাদ্দিমাহ সম্ভবত সামাজিক সংযোগ এবং সামাজিক দ্বন্দ্বের উপর পরিণত সামাজিক-বৈজ্ঞানিক যুক্তির প্রথম কাজ।[৯][১০][১১][১২][১৩] ইবনে খালদুনের (১৩৩২-১৪০৬) মুকাদ্দিমার (পরে লাতিন ভাষায় প্রোলিগোমেনা হিসাবে অনূদিত) সার্বজনীন ইতিহাসের সাত খন্ডের বিশ্লেষণের ভূমিকা; আধুনিক সামাজিক দর্শন এবং সামাজিক বিজ্ঞানে সামাজিক সংযোগ এবং সামাজিক দ্বন্দ্বের তত্ত্ব প্রণয়নে প্রথম কর্ম। এভাবে তিনি অনেকের দ্বারা সমাজবিজ্ঞানের অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত।[১০][১২][১৩][১৪][১৫][১৬]
সমাজবিজ্ঞানের শৃঙ্খলা বিষয়ে তিনি ইতিহাসের একটি গতিশীল তত্ত্ব দেন যা সামাজিক সংঘাত ও সামাজিক পরিবর্তনের সাথে জড়িত। তিনি "প্রজন্ম" ধারণার পাশাপাশি যাযাবর জীবনের সাথে আসীন জীবনের বৈপরীত্য এবং মরুভূমির যোদ্ধাদের দ্বারা শহর জয় করার সময় ক্ষমতার অনিবার্য ক্ষয় সম্পর্কে ধারণা দেন। একজন সমকালীন আরব পণ্ডিত সাতি আল-হুসরির বর্ণনামতে, সাধারণ সমাজবিজ্ঞানের ছয়টি বইয়ের মধ্যে মুকাদ্দিমাহকে একটি সমাজতাত্ত্বিক কাজ হিসেবে পাঠ করা যেতে পারে। এই কাজের সাথে রাজনীতি, শহুরে জীবন, অর্থনীতি, এবং জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত। এই কাজটি ইবনে খালদুনের কেন্দ্রীয় ধারণা 'আসাবিয়ার উপর ভিত্তি করে রচিত, যা "সামাজিক সংযোগ", "গ্রুপ সংহতি", বা "ট্রাইবালিজম" হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। এই সামাজিক সংযোগ উপজাতি ও অন্যান্য ছোট আত্মীয়তা গ্রুপে সৃষ্টি হয়; এটি একটি ধর্মীয় মতাদর্শ দ্বারা তীব্রতর এবং বিকশিত হতে পারে। ইবনে খালদুনের বিশ্লেষণ দেখায় কীভাবে এই সংযোগ মানসিক, সমাজতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রের চেতনা দ্বারা গ্রুপকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে কিন্তু নিজেদের মধ্যে গ্রুপের পতনের ববা একটি নতুন গ্রুপ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ার, একটি শক্তিশালী (বা অন্তত ছোট এবং আরো সবল) রাজবংশ বা সাম্রাজ্য সংযোগ দ্বারা আবদ্ধ হওয়ার বীজ রয়েছে।
লাতিন: socius, "সহচর"; এবং গ্রিক: λόγος, logos, "জ্ঞান" থেকে -ology "অধ্যয়ন" প্রত্যয়টি নিয়ে ফরাসি প্রাবন্ধিক এমানুয়েল জোসেফ সেইয়িস (১৭৪৮-১৮৩৬) সোসিওলোজি (“sociologie") পরিভাষাটি প্রথম সৃষ্টি করেন।[১৭][১৮][১৯] ১৮৩৮ সালে, ফরাসি-চিন্তাবিদ ওগ্যুস্ত কোঁৎ (১৭৯৮-১৮৫৭) সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দেন যা আজও বর্তমান।[১৮] কোঁৎ প্রথমে "সামাজিক পদার্থবিদ্যা" হিসাবে তার কাজ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু শব্দটি অন্য আরেকটি শাখার উপযোগী ছিলো, উল্লেখযোগ্যভাবে বেলজিয়ান পরিসংখ্যানবিদ এডোলফি কোয়েটিলেট (১৭৯৬-১৮৭৪) দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিলো।
সাঁ-সিমোঁ ১৮১৩ সালে সাইকোলোজি সোসিআলি প্রকাশ করেন এবং তিনি এর উন্নতির জন্য অনেক সময় ব্যয় করেন, কারণ যদি বিজ্ঞানীরা তার কোর্সকে প্রভাবিত করতে আন্তর্জাতিক সমাবেশ গঠন করে, তবে মানবসমাজ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি যুক্তি দেখান যে, তাদের মনোযোগ সামাজিক জীবন মানের উন্নয়নের দিকে ফোকাসিংয়ের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা যুদ্ধ এবং শত্রুতা থেকে গ্রুপদের বিভ্রান্ত করতে পারে। ক্রমে, এটি একাধিক সংস্কৃতি ও সমাজকে একত্রিত করবে এবং দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ করবে। সেণ্ট সাইমন ধারণা করেন যে সবাই আলোকায়ন দ্বারা উৎসাহিত হবে, যা ছিল বিজ্ঞানে বিশ্বাস, এবং আরও বাস্তব সমাজের সাহায্য দ্বারা এটিকে বিস্তৃত করবে। সেণ্ট সাইমনের প্রধান ধারণা ছিল, শিল্পপ্রধান সমাজব্যবস্থা একটি নতুন ইতিহাস তৈরি করবে। তিনি দেখলেন মানুষ উন্নয়নকে বিজ্ঞানের একটি পদ্ধতি হিসাবে দেখছে, কিন্তু তিনি তাদের দেখাতে চেয়েছিলেন যে এটি জীবনের সকল ক্ষেত্রের একটি পদক্ষেপ। ক্ষয়িষ্ণু সামন্তবাদ থেকে যখন সমাজ জন্ম নিচ্ছিল তখন এটির গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছিল। সমাজ পূর্বে যে সব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, এই নতুন পথ এই সব পুরাতন সমস্যা সমাধানের ভিত্তি দিতে পারতো। কোন ধরনের শিল্পে শ্রমিকদল অংশগ্রহণ করবে তার চেয়ে মানুষ শ্রমিকদলে অংশগ্রহণ করে কি না এই নিয়ে তিনি আরও বেশি চিন্তিত ছিলেন। তার স্লোগান ওঠে "সকল লোকের কাজ করতে হবে[২]" এবং এই থেকে কমিউনিজমের স্লোগান বিকশিত হয় "প্রত্যেকে তার ক্ষমতা অনুযায়ী"।[২]
সেণ্ট সাইমনের সামাজিক চুক্তির রাজনৈতিক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, প্রকৃত জ্ঞানদানের পরের লেখায়, ওগ্যুস্ত কোঁৎ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সামাজিক রাজত্বে মানবজীবনের সব গবেষণায় ঐক্যসাধনের আশা করেছিলেন। তাঁর নিজের সমাজতাত্ত্বিক পরিকল্পনা ছিল মূলত ১৯ শতকের মানবতাবাদী আদর্শ; তিনি বিশ্বাস করতেন সব মানুষের জীবন স্বতন্ত্র ঐতিহাসিক পর্যায় অতিক্রম করে এবং যদি কেউ এই অগ্রগতি উপলব্ধি করতে পারে, তবে সে সামাজিক দুর্ভাগ্যের প্রতিকার করতে পারবে। কোঁতের স্কিমে সমাজবিজ্ঞান ছিল "রাণী বিজ্ঞান"; প্রথম দিকে সব মৌলিক ভৌত বিজ্ঞান এসেছে, যা মানবসমাজের সবচেয়ে মৌলিকভাবে কঠিন বিজ্ঞানের নেতৃত্ত্ব দিয়েছে।[১৮] কোঁত এইভাবে "সমাজবিজ্ঞানের জনক" হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।[১৮] কোৎ তার ইতিবাচক দর্শনশাস্ত্রে কোর্সে [১৮৩০-১৮৪২] তার বৃহত্তর বিজ্ঞানের দর্শন অঙ্কিত করেছিলেন, পক্ষান্তরে তার পজিটিভিজমের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি (১৮৬৫) সমাজবিজ্ঞানের নির্দিষ্ট লক্ষের দিকে জোর দেন।
ওগ্যুস্ত কোঁৎ তার দৃষ্টবাদী তত্ত্বের প্রতি এতো বেশ সন্তুষ্ট ছিলেন যে, এটিকে তিনি ১৮২২ সালের “সেরা আবিষ্কার” হিসেবে উল্লেখ করেন। কোতের পদ্ধতি জ্ঞানের তিনটি স্তরের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এই আইনের স্তরে যে কোন ধরনের জ্ঞান ধর্মতত্ত্বীয় আকারে শুরু হয়। এখানে জ্ঞানকে ব্যাখ্যা করা হবে যে কোন ধরনের উচ্চতর অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা দ্বারা; যেমন সর্বপ্রাণবাদ, আত্মা বা দেবতা। এরপর আসবে আধিবিদ্যক আকারে যেখানে জ্ঞান বিমূর্ত দার্শনিক ভাবনাচিন্তা দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। অবশেষে, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা এবং তুলনার বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা দ্বারা জ্ঞান ইতিবাচক হয়। সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এই আইনের ধারা সৃষ্টি হয়েছে।[২] কোতের বর্ণিত সমাজের পরিবর্তন, কার্ল মার্ক্সের বর্ণিত সমাজের পুঁজিবাদ থেকে কমিউনিজমে পরিবর্তনের মতই। তারা উভয়েই সে সময়ের বিভিন্ন কাল্পনিক-সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল এবং কমিউনিজমের কিছু রূপ সামাজিক উন্নয়নের শীর্ষবিন্দু হবে বলে একমত হন।[২]
পরবর্তী জীবনে, প্রত্যক্ষবাদী সমাজে একতা আনার জন্য ওগ্যুস্ত কোঁৎ একটি 'মানবতার ধর্ম' প্রবর্তন করেন এবং মানুষ যে ঐতিহ্যগত পূজায় অভ্যস্ত তার মধ্যে সংসক্তিপ্রবণতা খুজে পান। এই নতুন "ধর্ম"-এ তিনি সমাজকে "মহান সত্তা" হিসেবে উল্লেখ করেন। কোঁত তার শিল্প ব্যবস্থা তত্ত্ব শেখানোর মাধ্যমে একটি সার্বজনীন ভালোবাসা ও সম্প্রীতি প্রচার করেন।[২] ঘনিষ্ঠ সহযোগী জন স্টুয়ার্ট মিলের জন্য, "ভালো কোঁত" (ধনাত্মক দর্শনশাস্ত্রে কোর্সের লেখক) এবং "খারাপ কোঁতের" (ধর্মনিরপেক্ষ-ধর্মীয় সিস্টেমের লেখক) মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব হয়েছে।[২০] পদ্ধতিটি ব্যর্থ ছিল কিন্তু ডারউইনের প্রজাতির উৎপত্তির উপর প্রকাশনার পর ১৯ শতকের বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী বিশেষত যেমন ধর্মনিরপেক্ষ জর্জ হোলিওয়েক এবং রিচার্ড কনগ্রেভের উপর পদ্ধতিটি প্রভাব ফেলে।
কোৎ এবং মার্কস উভয়েই ইউরোপীয় ধর্মনিরপেক্ষতার পথ ধরে একটি নতুন বৈজ্ঞানিক মতাদর্শ বিকাশের চেষ্টা করেছিলেন। মার্ক্স হেগেলীয়বাদের অনুসরণে প্রত্যক্ষবাদী পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করেন এবং পর্যায়ক্রমে তার সময়কার স্বঘোষিত সমাজবিজ্ঞানী দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২০ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে সমাজের একটি ব্যাপক বিজ্ঞান বিকাশের প্রচেষ্টায় সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মার্কস স্বীকৃত হয়ে ওঠে। "যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ এই শিরোপা দাবি না করে ইশাইয় বার্লিন মার্ক্সকে আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের “সত্যিকার জনক” হিসেবে অবিহিত করেন।[২১]
মার্কসের তত্ত্বের প্রধান কৃতিত্ব ছিল, যে সকল পরিচিত গবেষণামূলক ক্ষেত্র সেই সময়ে মানুষের মনকে সবচেয়ে ভাল দখল করে সেই সব তাত্ত্বিক প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর দেওয়ায় এবং একই সাথে তাদের দুইয়ের মধ্যে কৃত্রিম লিঙ্ক তৈরি না করে স্পষ্ট ব্যবহারিক নির্দেশনার সিদ্ধান্তে পৌঁছানোতে সমন্বিত উত্তর দেওয়ায় … কোৎ এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে স্পেনসার এবং টাইনি যা আলোচনা এবং নকশা করেছিলেন, তার ঐতিহাসিক এবং নৈতিক সমস্যার সমাজতাত্ত্বিক সমাধানে, সুনির্দিষ্ট এবং সুসংঘটিত অধ্যয়ন শুরু হয়, শুধুমাত্র যখন সংগ্রামী মার্কসবাদের আক্রমণের পরিসমাপ্তিকে একটি জ্বলন্ত ইস্যু করে তুলে এবং এর প্রমাণকে আরও উদ্যোগী করার ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে মনোযোগকে আরও তীব্রতর করার জন্য অনুসন্ধান করে।
— যিশাইয় বার্লিন, কার্ল মার্ক্স ১৯৬৭, [২২]
হেগেল (১৭৭০-১৮৩১) (যার ধাতুগত তোমে, যুক্তিবিদ্যার বিজ্ঞান ১৮১৬ সালে প্রকাশিত হয়), ১৮৩০ সালে মার্ক্স বার্লিনের তরুণ হেগেলীয়দের অংশ ছিলেন, যা দার্শনিকদের উত্তরাধিকারের সম্পর্কে আলোচনা করতো এবং লিখতো। যদিও, প্রথমদিকে প্রুশিয়ান প্রতিষ্ঠার পতনসাধনের জন্য খ্রিস্টানতত্ত্বকে আক্রমণকারী দলের কৌশলের সঙ্গে সহানুভূতিশীল ছিলেন, পরবর্তীতে তিনি বিপথগামী ধারণা গঠন করেন এবং জার্মান ভাবাদর্শের মতো কাজে হেগেলীয়দের মতামতকে আক্রমণ করে, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। শিল্পবিপ্লবের সময় শ্রমিকদের সংগ্রাম দেখে, মার্কস সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ধর্ম (বা "আদর্শ") ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার ভিত্তি নয়, বরং ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হচ্ছে পুঁজির মালিকানা (বা "উপাদান")- শ্রমিকের দক্ষতার প্রক্রিয়াকরণ, ভূমি, অর্থ ও বিশেষত মানুষের শ্রম-শক্তি, যা উদ্বৃত্ত-মূল্য তৈরি করতে [২৩] ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এটি "তার মাথায় হেগেল দাঁড়ায়" তিনি অনুমান করছেন যে, তার কেন্দ্রে আদর্শের বদলে ইতিহাসের ইঞ্জিন এবং সমাজের গঠন মৌলিক উপাদান হিসেবে রয়েছে। তিনি অনুমান করছে যে, সাংস্কৃতিক উৎপাদন ও রাজনৈতিক ক্ষমতা উভয়ই মতাদর্শের সৃষ্টি করে যা শ্রমিকশ্রেণীর নিপীড়নকে চিরস্থায়ী করেছে ও উৎপাদন উপায়ের মালিক, শ্রমিকশ্রেণী এবং পুঁজিবাদী শ্রেণীর মধ্যে সম্পদের ঘনত্ব চিরস্থায়ী করছে। মার্কস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, পুঁজিবাদী শ্রেণী মজুরি কমানো বা প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রমিককে প্রতিস্থাপিত করতে বাধ্যবাধকতা অনুভব করবে, যা পরিণামে পুঁজিপতিদের মধ্যে সম্পদ বাড়াবে। তবে, যেহেতু শ্রমিকরা উৎপাদিত পণ্যের প্রাথমিক ভোক্তাও ছিল, তাদের মজুরি হ্রাস অর্থনৈতিক উৎপাদনের একটি মোড হিসাবে পুঁজিবাদের একটি অনিবার্য পতন ঘটাবে।[২]
হার্বার্ট স্পেন্সার (১৮২০-১৯০৩), ইংরেজ দার্শনিক, ১৯ শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী সমাজবিজ্ঞানীদের অন্যতম।. কোৎ এবং মার্কসের একটি প্রতিক্রিয়া হিসাবে স্পেন্সারের প্রাথমিক সমাজবিজ্ঞান বিস্তৃতভাবে এসেছিল; লেখার পূর্বে এবং জীববিজ্ঞানে ডারউইনীয় বিপ্লবের পরে, স্পেনসার সূত্রবদ্ধ করতে চেষ্টা করেন যা এখন আমরা সামাজিকভাবে ডারউইনপন্থী পরিভাষা হিসেবে বর্ণনা করি। বস্তুত, তাঁর প্রথম দিকের লেখালিখিতে সাধারণ বিবর্তনের একটি সুসঙ্গত তত্ত্ব দেখাতেচেষ্টা করেন, ডারউইন এই বিষয়ে কিছু প্রকাশ করার পূর্বে [২৪] তার বন্ধু এবং অনুসরণকারী এডওয়ার্ড এল ইউমেন্স দ্বারা উৎসাহিত হয়ে,[২৫][২৬] ১৮৭৪ সালে স্পেন্সার সমাজবিজ্ঞানের পাঠ প্রকাশ করেন , যা "সমাজবিজ্ঞান" শিরোনাম যুক্ত প্রথম বই ছিল. “আন্তর্জাতিক মাসিক” পত্রিকার ১৯০০তম সংস্করণে[২৪] ফ্র্যাংকলিন এইচ গিডি্ডিন্স (১৮৫৫–১৯৩১), কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যাপক, এটিকে এমন একটি বই হিসেবে বর্ণনা করেণ যা "ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি এবং রাশিয়ায় প্রথম প্রবুদ্ধ হিসাবে ব্যাপক আগ্রহ সাধারণ আগ্রহ"[২৫] তারপর সমাজবিজ্ঞানের জাতপক্ষ শৃঙ্খলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চার্লস হর্টন কুলি, একটি ১৯২০ নিবন্ধে বিবৃত করেন যে “সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন” ”এই বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টিতে পূর্বের যে কোন প্রকাশনার চেয়ে সম্ভবত অধিক কিছু করবে।“[২৫] এটা অনুমান করা হয় যে, তিনি তার জীবদ্দশায় এক মিলিয়ন বই বিক্রি করেছিলেন, যা সেই সময় পর্যন্ত অন্য কোন সমাজবিজ্ঞানীর চেয়ে বেশি। তার প্রভাব এতো বেশি ছিল যে ইমেইল ডুর্খেইম সহ ১৯ শতাব্দীর অনেক চিন্তাবিদ, তার থেকে সম্পর্ক টেনে, তাদের ধারণা সংজ্ঞায়িত করতো। ডুর্খেইমের “সমাজের শ্রম বিভাগ” স্পেন্সরের সঙ্গে একটি বৃহৎ বর্ধিত বিতর্ক যার সমাজবিজ্ঞান থেকে ডুর্খেইম ব্যাপকভাবে ধার করেছে।[২৭] এছাড়াও একটি উল্লেখযোগ্য জীববিজ্ঞানী স্পেনসার “যোগ্যতমের উদ্বর্তন” পরিভাষাটি আনেন যা একটি মৌলিক প্রক্রিয়া যার দ্বারা "আরো কার্যকরভাবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ফর্মে অগ্রগতি হয়েছে"। যেখানে এই সময়ের অনেক বুদ্ধিজীবী স্টিয়ারিং সমাজের বৈজ্ঞানিকভাবে ওয়াকিবহাল পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্রের সমালোচক ছিলেন স্পেনসার সমাজতন্ত্রের একজন সমালোচক ছিলেন এবং সরকারের অবাধনীতি শৈলীর একজন উকিল ছিলেন।
তার ধারণা ছিল রক্ষণশীল রাজনৈতিক বৃত্ত দ্বারা পরিলক্ষিত বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ডের।[২৮] যদিও স্পেন্সারের কাজ খুব কমই সমসাময়িক সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বে আলোচনা করা হয়, তার কাজ অভিযোজিত এবং পরিবর্তিত হয়েছে, এবং বিভিন্ন সমসাময়িক ফর্মে পুনরুন্থতি হয়েছে।[২৯]
স্পেন্সার সমসাময়িক লেস্টার ফ্রাঙ্ক ওয়ার্ড কে প্রায়ই আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে বর্ণনা করা হয়।[৩০] এবং তিনি আমেরিকান সমাজতাত্ত্বিক এসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি হিসেবে ১৯০৫ সালে এবং ১৯০৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৮৮৩ সালে ডায়নামিক সমাজবিজ্ঞান; ১৮৯৮ সালে সমাজবিজ্ঞানের আউটলাইন; ১৯০৩ সালে বিশুদ্ধ সমাজবিজ্ঞান এবং ১৯০৬ সালে ফলিত সমাজবিজ্ঞান প্রকাশ করেন। এছাড়াও ৬৫ বছর বয়সে ১৯০৬ সালে, তিনি ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন[৩১]
উইলিয়াম গ্রাহাম সামনার ১৯০৮ থেকে ১৯০৯ পর্যন্ত আমেরিকান সমাজতাত্ত্বিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে ছিলেন। তিনি ইয়েল কলেজের সমাজবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যাপকও ছিলেন, এবং ১৮৭৬ সালে, সামনার ইংরেজি ভাষী বিশ্বে প্রথম "সমাজবিজ্ঞান" শিরোনামের কোন বিষয় শিক্ষা দেন। তার কোর্স অবশ্য প্রধানত ওগ্যুস্ত কোঁৎ এবং হার্বার্ট স্পেন্সারের কাজের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। যেহেতু তিনি মনে করতেন সমাজ বৈজ্ঞানিক হস্তক্ষেপ দ্বারা বাহিত হতে পারে না, এবং "যোগ্যতমের বেঁচে থাকা" ছিল " অযোগ্যতমের বেঁচে থাকা"র বিখ্যাত বিকল্প, সেহেতু তিনি মতাদর্শগতভাবে ওয়ার্ডের সমাজবিজ্ঞানের বিরোধি ছিলেন। যদিও এর আগে তিনি স্পেন্সরের গ্র্যান্ড তত্ত্বেরও বিরোধিতা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল সময়ে, সামাজিক ডারউইনবাদ বিতর্ককারী বিষয় হয়ে ওঠে এবং সামনার এবং ইয়েল কলেজে তার কোর্স স্পেন্সারীয় ধারনার মিশ্রনের কারণে সমালোচিত হয়। এটি সামনারকে তার পাঠদান থেকে প্রায় বিতাড়িত করে। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক কাজ হলো ১৮৮৩ সালের “কোন সামাজিক শ্রেণী একে অপরের কাছে ঋণী” এবং ১৯০৬ সালের “অনুসরণ করা: রীতিনীতি, আচার, রীতি, আচার-আচরণ, এবং সুনীতি অধ্যয়নের সমাজতাত্ত্বিক গুরুত্বের একটি সমীক্ষা”।
সমাজবিজ্ঞানের উন্নয়নে আরোও অনেক প্রভাবশালী দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন; যেমন, সামাজিক চুক্তির আলোকায়ন তাত্ত্বিকরা এবং এডাম ফার্গুসনের (১৭২৩-১৮১৬) মতো ঐতিহাসিকরা। ফার্গুসনের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া তত্ত্বের জন্য, তাকে "আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের জনক" হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়[৩২]'সমাজবিজ্ঞান' তত্ত্বটির যথাযথকরনের অন্যান্য কাজের মধ্যে উত্তর আমেরিকান আইনজীবী হেনরি হিউজেসের “সমাজবিজ্ঞানর উপর একটি গ্রন্থ, তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক” এবং আমেরিকান আইনজীবী জর্জ ফিটযোগের লেখা “দক্ষিণের জন্য সমাজবিজ্ঞান, বা মুক্ত সমাজের ব্যর্থতা” অন্তর্ভুক্ত।[৩৩] উভয় বই দাসপ্রথার ওপর বিতর্কের প্রেক্ষাপটে মার্কিন এ্যান্টিবেল্লামে ১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হয়। হ্যারিয়েট মার্টিনিও প্রথম মহিলা সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে উল্লেখ্য, যিনি একজন হিগ(ইংলণ্ডের রাজনৈতিক দল) সমাজতাত্ত্বিক এবং কোঁতের অনেক কাজের ইংরেজি অনুবাদক।
প্রথম দিকের অন্যান্য বিভিন্ন সামাজিক ঐতিহাসিক এবং অর্থনীতিবিদ শাস্ত্রীয় সমাজবিজ্ঞানী হসেবে পরিচিতি পেয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে সম্ভবত রবার্ট মাইকেলস (১৮৭৬-১৯৩৬), অ্যালেক্সি দ্য তোকভিল (১৮০৫-১৮৫৯), ভিলফ্রেদো প্যারেটো (১৮৪৮-১৯২৩) এবং থরস্টেইন ভেবলেন (১৮৫৭-১৯২৬)। শাস্ত্রীয় সমাজতাত্ত্বিক গ্রন্থ বিশুদ্ধরূপে নৈতিক,আদর্শ বা বিষয়ী থাকার চেয়ে বরং বৈজ্ঞানিক, নিয়মানুগ, কাটামোগত, বা দ্বান্দ্বিক থাকার ক্ষেত্রে বিস্তৃতভাবে রাজনৈতিক দর্শন থেকে ভিন্ন। আরও সুনির্দিষ্ট রেনেসাঁ এবং কিছু আলোকায়ন যুগে, রাজনৈতিক দর্শনের থেকে সমাজতাত্ত্বিক গ্রন্থে, নতুন শ্রেণী সম্পর্ক পুঁজিবাদ বিকাশের সঙ্গে যুক্ত।
যখন এমিল দ্যুর্কাইম ১৮৯৬ সালে বর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের প্রথম ফরাসি বিভাগের প্রতিষ্ঠা করেন তখন থেকে একটি একাডেমিক শৃঙ্খলা হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ শুরু হয়। ১৮৯৬ সালে তিনি “লাননি সোসিওলোগিগিওই” জার্নাল প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৭৫ সালে উইলিয়াম গ্রাহাম সামনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্যুর্কাইমের কাজের বদলে কোৎ এবং হার্বার্ট স্পেন্সারের চিন্তার উপর "সমাজবিজ্ঞান" নামে একটি কোর্স প্রথম শেখান।[৩৪] ১৮৯০ সালে ফ্রাঙ্ক ব্ল্যাকমারের বক্তৃতা দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীনতম অব্যাহত সমাজবিজ্ঞান কোর্স শুরু হয়। কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ১৮৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়[৩৫][৩৬] এবং এলবিনো ডব্লিউ স্মল (১৮৫৪-১৯২৬) যিনি ১৮৯৫ সালে “সমাজবিজ্ঞান আমেরিকান জার্নাল” প্রতিষ্ঠিত করেন, তার দ্বারা ১৮৯২ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের প্রথম পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।[৩৭] আমেরিকার সমাজবিজ্ঞান ইউরোপীয় সমাজবিজ্ঞানে একটি স্বাধীন নক্ষত্রের আবক্র পথ হয়ে উঠল। ১৮৮৩ সালে লেস্টার ওয়ার্ড যখন তার গতিশীল সমাজবিজ্ঞান প্রকাশনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কেন্দ্রীয় গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীকি মিথষ্ক্রিয়াবাদ এবং সামাজিক মনোবিজ্ঞান উন্নয়নে জর্জ হার্বার্ট মিড এবং চার্লস এইচ কোলির প্রভাবশালী ভুমিকা ছিল।
এই সময়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান সমাজবিজ্ঞানীদের আবির্ভাব হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একসঙ্গে আনে, এবং সব নেতৃস্থানীয় সমাজবিজ্ঞানীদের যুক্ত করতে তাদের একটি হাব এবং একটি নেটওয়ার্ক দিলো। ১৯২৫ সালে, সকল শিক্ষার্থীর এক তৃতীয়াংশ সমাজবিজ্ঞানের স্নাতক শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। শিকাগো অন্যান্য স্কুল থেকে তাদের শিক্ষার্থীদের পৃথকরূপে সনাক্ত না করতে খুব ভাল ছিল। তারা তাদের অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানীদের সঙ্গে মিশতে, এবং তাদের চারপাশের সমাজে অধ্যয়নের তুলনায় ক্লাস রুমে আরও বেশি সময় ব্যয় না করার জন্য উৎসাহিত করতো। এটি তাদের শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার দ্বারা, বাস্তব জীবনে আবদান রাখতে শেখাতো। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে সামাজিক সমস্যার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে শিক্ষা দেয়, যা বিশ্বকে বিপর্যস্ত বিপর্যস্ত করেছিল। এই সময়ে একাডেমিয়া, তত্ত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল না; বিশেষভাবে বলতে গেলে একাডেমিয়া আজকের মতো একই রকম ছিলো না। অনেকে এখনও সমাজবিজ্ঞানে দ্বিধাগ্রস্ত, বিশেষত ওয়েবার এবং মার্ক্সের সাম্প্রতিক বিতর্কিত তত্ত্ব নিয়ে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্পূর্ণরূপে ভিন্নভাবে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো এবং তাদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ তাদের পৃথক এবং সমান অধিকারে উন্নীতকরনের দিকে মনোযোগ দেয়। তাদের মনোযোগ ছিল ছোট গ্রুপ এবং সমাজের সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক আবিষ্কারকে কেন্দ্রী করে। প্রয়োজনীয় কোর্স বিশেষত অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, একাধিক সামাজিক বিজ্ঞান এবং রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিষয়ে ছাত্রদের ভাল কর্তৃত্বের জন্য, প্রোগ্রামটি অন্যান্য বিভাগের সাথে মিলিতভাবে ছিল। এলবিনো স্মল শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান কর্মসূচির প্রধান ছিলেন। জার্মান সমাজতাত্ত্বিক অগ্রগতিকে আমেরিকান একাডেমিক সমাজবিজ্ঞানে সরাসরি অন্তরাভূক্ত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও স্মল আমেরিকান সমাজতাত্ত্বিক জার্নাল চালু করেন। রবার্ট পার্ক এবং আর্নেস্ট বার্জেস প্রোগ্রামের পদ্ধতি, নির্দেশাবলী এবং চেকপয়েন্ট পরিশ্রুত করেন। এটি তথ্যকে আরো প্রমিত, সংক্ষিপ্ত এবং হৃদয়ঙ্গম করাকে সহজতর করেছে। এই জুটি রেফারেন্সের জন্য সমাজবিদ্যা প্রোগ্রামের পাঠ্যপুস্তক লেখেন এবং সব শিক্ষার্থীকে আরো কার্যকরভাবে একই কাতারে নিয়ে আসেন। অনেক অসাধারণ সমাজবিজ্ঞানী যেমন জর্জ হার্বার্ট মিড, ডব্লিও. ই. ডু বুইস, রবার্ট পার্ক, চার্লস এস. জনসন, উইলিয়াম অগবার্ন, হার্বার্ট ব্লুমার এবং অন্যান্য অনেকের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।[৩৮]
১৯২০ সালে ফ্লোরিয়ান জেনানিইচকি (১৮৮২-১৯৫৮) পোল্যান্ডে একটি বিভাগ স্থাপন করেছিলেন। উইলিয়াম আই. টমাস শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথমদিকের স্নাতক। তাঁর নির্মিত শিক্ষাগুলো এবং তার কাজ সমাজবিজ্ঞানকে অনেক দিকে পরিবর্তিত করেছে। ১৯১৮ সালে উইলিয়াম আই. থমাস ও ফ্লোরিয়ান জেনানিইচকি বিশ্বকে ইউরোপ ও আমেরিকায় দ্যা পোলিশ পিয়েজেন্ট প্রকাশ করেন। এই প্রকাশনা গভীর পরীক্ষামূলক গবেষণা এবং শৃঙ্খলিত সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বগুলোকে একত্র করেছে। এই পরিবর্তন সমাজবিজ্ঞানীদের পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে এবং নতুন নিদর্শন এবং নতুন তত্ত্বের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে তাদের সক্রিয় করেছে। এছাড়াও এই প্রকাশনা সমাজবিজ্ঞানীদের তাদের গবেষণা দেখার এবং একটি নতুন স্তরের উপর এটা প্রমাণ করার জন্য একটি নতুন উপায় দিয়েছে। তাদের সকল গবেষণা আরো সঠিক হতো এবং সমাজের জন্য একে গুরুত্ব না দেয়ার আরও কঠিন হতো। ১৯২০ সালে, জেনানিইচকি পোল্যান্ডে গবেষণা এবং শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য সমাজবিজ্ঞান বিভাগ শুরু করেন।[২]
সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের ঘাটতি সত্ত্বেও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানগত পদ্ধতির নতুন জোটবদ্ধ ভিত্তিগুলোর সাথে মিলিতভাবে শেখানো হচ্ছিলো, কোনো বাস্তব ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে ছাত্রদের ক্ষমতা অস্তিত্বহীন ছিল। শিকাগো স্কুল পতনের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রধান কারণ ছিল।[৩৮]
যুক্তরাজ্যে ১৯০৪ সালে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে প্রথম সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ম্যাক্স ওয়েবার, যিনি একটি নতুন প্রত্যক্ষবাদ বিরোধী সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা করেছিল, ১৯১৯ সালে জার্মানির মিউনিখ লুডভিগ মেক্সিমিলিআন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে "সামাজিক গবেষণা ইনস্টিটিউট" (পরবর্তীতে সমালোচনা তত্ত্বের "ফ্রাংকফুর্ট স্কুল" এ পরিণত হয়) প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার জীবদ্দসায়, প্রভাবশালী সাহিত্য তত্ত্ব এবং সাংস্কৃতিক চর্চার "বার্মিংহাম স্কুল" এ জটিল তত্ত্ব তৈরি হয়।
ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি, সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা ইনস্টিটিউটের গভীর নেকট্য জার্মানিকে সে সময় সমাজবিজ্ঞানের নেতৃস্থানীয় শক্তি হিসেবে তৈরি করে। ১৯১৮ সালে ফ্রাংকফুর্ট সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম চেয়ার তৈরি করার জন্য অর্থ পেয়েছে। জার্মানির যুগান্তকারী কাজসমূহ, দেশকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, সরকারকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তৈরিতে প্রভাবিত করে। যাদের ফ্রাংকফুর্টে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অবদান ছিল এই সকল অসাধারণ ব্যক্তিবর্গ শীঘ্রই বিশ্বব্যাপী মনোযোগ পেয়েছিল এবং তাদের "ফ্রাংকফুর্ট স্কুল" হিসাবে উল্লেখ করা শুরু হয়। তারা এখানে মার্কসের তত্ত্বের নতুন দৃষ্টিকোণ পড়াশোনা করেন এবং ওয়েবার এবং ফ্রয়েডের কাজের গভীরে যান। এই অধিকাংশ লোক শীঘ্রই নাৎসির জন্য জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হয় এবং আমেরিকায় পৌঁছে সেখানে সামাজিক গবেষণায় প্রভাবিত করে। সমাজবিজ্ঞানীদের এই জোরপূর্বক স্থানান্তর, ইউরোপে আমেরিকায় সেরা সমাজবিজ্ঞানীদের অন্তর্ভূক্তি দ্বারা সমাজবিজ্ঞানের ইউরোপীয় স্টাডিজের মান উন্নয়নে আমেরিকার সমাজবিজ্ঞানকে সক্রিয় করে।[৩৯]
যে সকল শিক্ষার্থীরা ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিকতার ধারণার উপর তাদের ডক্টরেট পেয়েছেন, ফেলিক্স ভেইল সেই সকল ছাত্রদের মধ্যে একজন। এটি ১৯২৩ সালে সামাজিক গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ম্যাক্স হরকিমার এবং কার্ট আলবার্ট গার্লেচকে সঙ্গে নিয়ে ফেলিক্স ভেইল একে উন্নত করেন। তিনি ইনস্টিটিউটের প্রথম পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ইনস্টিটিউট তৈরির লক্ষ্য ছিল এমন একটি জায়গা তৈরি করা যেখানে মানুষ সামগ্রিকভাবে সামাজিক জীবন সম্পর্কে আবিষ্কার করতে এবং অবহিত হতে পারবে। ভেইল, হরকিমার, এবং গার্লেচ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং আইনি বিষয়ে পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার; একইসাথে সম্প্রদায় এবং সমাজে পাণ্ডিত্যপূর্ণ মিথষ্ক্রিয়ার উপর গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন। ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষণা বৈজ্ঞানিক মার্কসবাদের রেনেসাঁ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অনেক সুবিধাভোগি অর্থ, জোগান এবং ভবন দিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়েছে। গার্লেচকে যখন অসুস্থতার কারণে পরিচালক থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল, ম্যাক্স হরকিমার তার জায়গা নেয়। তিনি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের তাদের চর্চিত সবকিছুকে প্রশ্ন করার জন্য উৎসাহিত করেন। যদি শিক্ষার্থীরা একটি তত্ত্ব অধ্যয়ন করে, তিন তাদের কেবল সত্য আবিষ্কার করতে বলতেন না, কীভাবে হয়, কেন তা সত্য এবং সমাজের সাথে তত্ত্বের সম্পর্ক কি তাও তিনি আবিষ্কার করতে বলতেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শাসনামলে সামাজিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের অনেক সদস্যদের নির্বাসিত করা হয়েছিলো। শাসনকালে সমগ্র ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক ছাত্র এবং কর্মীদের আমেরিকাতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলো। ইনস্টিটিউট থেকে অনেকে জোরপূর্বক যুদ্ধের পথ থেকে পালিয়ে যায়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো, ইনস্টিটিউটও অনেক মানুষ হারিয়েছিলো এবং বন্ধ করতে বাধ্য করতে বাধ্য হয়েছিলো। ১৯৫০ সালে ইনস্টিটিউটটি একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনরায় চালু করা হয়। সামাজিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই অবস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সমাজবিজ্ঞান গবেষণার একটি ঘনিষ্ঠ সংযোগ আছে।[৩৯]
১৮৯৩ সালে সমাজবিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শুরু হয় যখন রেনে ওয়ার্মসের(১৮৬৯-১৯২৬) প্রতিষ্ঠিত ছোট “ইনস্টিটিউট ইন্টারন্যাশনাল ডি সোসিওলোজিআ” যখন ১৯৪৯ সালে অধিকতর বড় আন্তর্জাতিক সমাজতাত্ত্বিক এসোসিয়েশন দ্বারা অধিগ্রীহিত হয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ পেশাদার সমাজবিজ্ঞানীদের এসোসিয়েশন, আমেরিকান সমাজতাত্ত্বিক এসোসিয়েশন, ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং লেস্টার এফ ওয়ার্ডকে নতুন সমাজের প্রথম সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
[[File:Vilfredo Pareto 1870s2.jpg|thumb|120px|left|ভিলফ্রেদো পারেতো দ্যুর্কাইম, মার্কস এবং ভেবারকে সাধারণত আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের তিন প্রধান স্থপতি হিসেবে উদাহৃত হন। সমাজতাত্ত্বীয় "ক্লাসিকের অনুশাসন" দ্যুর্কাইম এবং ওয়েবারের সাথে ট্যালকট পারসন্সের কাছে ঋণী, যাকে আমেরিকান দর্শকের কাছেও উপস্থাপনের জন্য বিশেষভাবে কৃতিত্ব দিতে হয়।[৪০] পারসন্সের সামাজিক কর্মের গঠন (১৯৩৭) আমেরিকান সমাজতাত্ত্বিক ঐতিহ্যকে সংহত করে এবং আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানে তার দ্রুততম বিকাশের সময়ের জন্য বিষয়সূচি সেট করে। পারসন্সের অনুশাষনে, ভিলফ্রিডো পারেতো মার্কস বা জিমেইলের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব ধারণ করেছেন। তাঁর অনুশাষণ একটি ইচ্ছা দ্বারা পরিচালিত ছিল "একটি একক পরিকল্পনার আলোকে সমাজবিজ্ঞানে বিভিন্নতার তাত্ত্বিক ঐতিহ্যকে ঐক্যসাধন করা যাতে, পূর্বের অর্ধেক শতকে যে কেও এই শৃঙ্খলাকে বিশুদ্ধরূপে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের মাধ্যমে যাচাই করতে পারে"।[৪১] যখন মার্কস প্রথমদিকের আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানে মাধ্যমিক ভূমিকা রেখেছিলো, তখন সমাজবিজ্ঞান পারসন্স[৪১] একই সাথে বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রবণতার কাছে দায়বদ্ধ,[৪২] তিনজন "ধ্রুপদী" সমাজবিজ্ঞানীর মধ্যে ইউরোপীয় সমাজতাত্ত্বিক চিন্তায় দ্যুর্কাইম এবং ভেবারের পাশাপাশি মার্কসবাদের আধিপত্য দীর্ঘ দিন পদমর্যাদা সুরক্ষিত ছিল।[৪৩]
সমাজবিজ্ঞানের প্রথমদিকের তাত্ত্বিকদের পদ্ধতিগত পদক্ষেপ ছিলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো একই পদ্ধতিতে এই শৃঙ্খলাকে বিস্তৃতভাবে নিয়ে আসা। কোনও সমাজতাত্ত্বিক দাবী বা তথ্যের একটি অকাট্য ভিত্তি প্রদান এবং দর্শনের মতো কম গবেষণামূলক ক্ষেত্র থেকে সমাজবিজ্ঞানকে পার্থক্য করতে; অভিজ্ঞতাবাদ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর গুরুত্বারোপ দেওয়া হয়েছিলো। প্রথমদিকে তাত্ত্বিক ওগ্যুস্ত কোঁৎ দৃষ্টবাদের এই দৃষ্টিকোণের ক্ষেত্র উন্নত করেন। দৃষ্টবাদ সেই তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা একমাত্র সত্য, বস্তুনিষ্ঠ এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান। একটি তত্ত্বকে দৃষ্টবাদ হিসেবে বিবেচনা করার ক্ষেত্রে কোঁতের খুব সবল নির্দেশিকা ছিলো। তিনি বুঝতে পেরেছিল যে এই খাঁটি জ্ঞান শুধুমাত্র তত্ত্বের ইতিবাচক নিশ্চিতকরণ কঠোর ক্রমাগত পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে পাওয়া যাবে, যা শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিকভাবেই নয় বরং পরিমাণজ্ঞাপক ভিত্তিতেও সম্ভব।[২] ইমেইল ডুর্খেইম তাত্ত্বিক ভিত্তির উপরে নিরীক্ষণবিদ্যার একজন প্রধান প্রবক্তার চেয়ে,[৪৪] কাঠামোগত আইন বা সামাজিক তথ্যের বিকষিত সম্পর্কযুক্তরূপে ছিলেন। ডুর্খেইম প্রমাণ করেছেন যে ধারণা ব্যক্তির উপর আরোপিত হয়েছে তা আসলে সামাজিকভাবে নির্ধারিত। এই ঘটনাগুলি হলো আত্মহত্যা, অপরাধ, নৈতিক বলাত্কার, একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, সময়, স্থান, এবং ঈশ্বর। তিনি বলেন যে সমাজ একজন ব্যক্তির সব দিকের উপর প্রভাব বিস্তার করে, এবং এটি পূর্বে যা ধারণা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি।[২] তাঁর জন্য, সমাজবিজ্ঞানকে "প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান, তাদের জনন এবং তাদের কার্যকরীতা হিসেবে" বর্ণনা করা যেতে পারে।[৪৫] ডুর্খেইম রাজনৈতিক সংস্কার ও সামাজিক সংহতি সাধনা করতে সমাজতাত্ত্বিক তথ্যও প্রয়োগ করে। বর্তমানে, ডুর্খেইমের দৃষ্টবাদের পাণ্ডিত্যপূর্ণ বর্ণনা সম্ভবত অতিরঞ্জিত এবং অতিসরলীকরণকৃত করা হয়েছে: যেখানে মৌলিক তত্ত্বগত সীমাবদ্ধতাকে বেশি বিস্তারিত করার ক্ষেত্রে ডুর্খেইমের স্বীকৃতি রয়েছে, উচ্চবংশজাত বিজ্ঞানের মতো, সামাজিক রাজত্বও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনের অধীন; একথা স্বীকার করার ক্ষেত্রে কোঁৎ-ই ছিলেন একমাত্র প্রধান সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাবিদ।[৪৬][৪৭]
জার্মান দার্শনিক জর্জ ভিলহেল্ম ফ্রেডরিখ হেগেল (১৭৭০-১৮৩১) যখন অভিজ্ঞতাবাদ, যা সমালোচনাহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এবং নিয়তিবাদ, যা তিনি মাত্রাতিরিক্ত অধিযন্ত্রবাদী হিসেবে দেখেছেন, উভয়ের বিরোধিতায় কথা বলেন; তখন থেকে দৃষ্টবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।[৪৮] কার্ল মার্কসের পদ্ধতি হেগেলের তর্কবিদ্যা থেকে ধার করা কিন্তু মোহের বর্জনের সঙ্গে "ঘটনা"র গবেষণামূলক অধিগ্রহণের সম্পূরক করতে সমালোচনামূলক বিশ্লেষনের আলোকে দৃষ্টবাদ প্রত্যাখ্যাত।[৪৯] তিনি দাবি করেছিল যে কেবল নথিভুক্ত করনের চেয়ে সমালোচনা বেশি প্রয়োজনীয়। মার্কস ঐতিহাসিক বস্তুবাদের অর্থনৈতিক নিয়তিবাদে নিহিত একটি “সমাজের বিজ্ঞান” উৎপাদন করতে তবু উদ্যমী ছিলেন।[৪৯] উইলহেম ডিলথি (১৮৩৩-১৯১১) এবং হাইনরিশ রিকার্ট (১৮৬৩-১৯৩৬) সহ অন্যান্য দার্শনিক যুক্তি দেখান যে, প্রাকৃতিক বিশ্ব সামাজিক বিশ্ব থেকে পৃথক মানব সমাজের সেই অনন্য দিকের (অর্থ, লক্ষণ ইত্যাদি) কারণে যা মানব সংস্কৃতির অংশ।
২০ শতাব্দীর শুরুর দিকে জার্মান সমাজবিজ্ঞানীদের প্রথম প্রজন্মের পূর্বে দৃষ্টবাদ বিরোধী হিসেবে পরিচিতরা প্রস্তাব করেন যে মানুষের সাংস্কৃতি, নিয়ম, মূল্যবোধ এবং প্রতীকের উপর গবেষণায় মনোনিবেশ করা উচিত এবং সামাজিক প্রক্রিয়া বিষয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তা দেখা উচিত। ম্যাক্স ওয়েবার যুক্তি দেখান যে, সমাজবিজ্ঞানকে কার্যকারণ সম্পর্ক চিহ্নিত করতে সক্ষম একটি 'বিজ্ঞান' হিসেবে স্বাধীনভাবে বর্ণনা করা হতে পারে- বিশেষ করে আদর্শ ধরন বা জটিল সামাজিক ঘটনাবলির প্রকল্পিত সাধারণীকরণের মধ্যে।[৫০] একজন দৃষ্টবাদ বিরোধী হিসেবে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীদের দ্বারা যেমন অনুসৃত, তেমনি " অনৈতিহাসিক, পরিবর্তিত বা সাধারণীকরণযোগ্য"[৫১] সম্পর্ক সন্ধান করে হবে না। ফার্দিনান্দ টনিস দুটি স্বাভাবিক ধরনের মানুষের সংঘটনরে মতো জিমিইনস্কেফ্ট এবং জিসেলস্কেফ্ট (কখনও কখনও সম্প্রদায় এবং সমাজ হিসাবে অনুবাদ করা হয়) উপস্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে ম্যাক্স ওয়েবার দ্বারা একটি পার্থক্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। টনিস সামাজিক কর্মের অন্তর্জগৎ ও বাস্তবতার মধ্যে একটি পরিষ্কার রেখা অঙ্কন করেন: প্রথমটিকে অবশ্যই স্বত্বসিদ্ধভাবে একটি প্রায়োগিক উপায়ে ('খাঁটি' সমাজবিজ্ঞান), অপরদিকে দ্বিতীয়টিকে প্রস্তাবনামূলক ভাবে এবং একটি আবরোহ পদ্ধতিতে ( 'প্রয়োগিক সমাজবিজ্ঞান) বিচার করা হয়। সামাজিক বিজ্ঞানের দিকে ওয়েবার এবং জর্জ জিমেইল উভয়ের প্রবর্তিত ভার্স্থেন (বা 'ব্যাখ্যামূলক') পদ্ধতি; একটি নিয়মানুগ প্রক্রিয়া যাতে বাইরের পর্যবেক্ষক একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক দল, বা আদিবাসীদের সঙ্গে তাদের নিজেদের শর্ত অনুযায়ী এবং তাদের নিজস্ব দৃষ্টভিঙ্গিতে সম্পর্কযুক্ত করতে চেষ্টা করে। জিমেইলের কাজের মাধ্যমে, বিশেষ করে, প্রত্যক্ষবাদী ডাটা সংগ্রহ বা মুখ্য, কাঠামোগত আইনের নিয়ন্ত্রণবাদী পদ্ধতিতে সমাজবিজ্ঞান একটি কার্যকর চরিত্র অর্জন করেছে। জীবনভর সমাজতাত্ত্বিক একাডেমী থেকে অপেক্ষাকৃতভাবে বিচ্ছিন্ন থেকে, জিমেইল সামাজিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের জন্য আধুনিকতার স্বকীয় বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন, যা সম্ভাবনার ফর্মে নির্দষ্টি উদ্বেগ রেখে প্রপঞ্চগত এবং অস্তিত্ববাদী লেখকদের কোঁৎ বা ডুর্খেইমের চেয়ে আরো স্মরণীয় করে।[৫২] তাঁর সমাজবিজ্ঞান উপলব্ধি সীমার মধ্যে একটি নব্য কাণ্ট সমালোচনায় যুক্ত ছিল, 'সমাজ বলতে কি বোঝায়?’ এই প্রশ্ন করে; কান্টের প্রশ্নের সরাসরি ইঙ্গিত 'প্রকৃতি কী?’[৫৩]
২০ শতাব্দীর প্রথম দিকে, সমাজের বিবর্তন সংশ্লিষ্ট সমষ্টিক সমাজবিজ্ঞান এবং মানুষের দৈনন্দিন সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যষ্টিক সমাজবিজ্ঞান উভয়দিকেই উন্নয়ন করে, আমেরিকায় সমাজবিজ্ঞান প্রসারিত হয়। জর্জ হার্বার্ট মিডের (১৮৬৩-১৯৩১) রাষ্ট্রীয় সামাজিক মনোবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে, হার্বার্ট ব্লুমার(১৯০০-১৯৮৭) এবং পরবর্তীকালে শিকাগো স্কুলের সমাজবিজ্ঞানীরা সিম্বলিক মিথষ্ক্রিয়াবাদ তত্ত্বরে প্রসার ঘটান।[৫৪] ১৯২০ সালে, যখন ডুর্খেইম এবং ওয়েবারের কিছু সংখ্যক মরণোত্তর কাজ প্রকাশিত হয়েছিলো, তখন গয়র্জি লোকাকস “ইতিহাস এবং শ্রেণী চেতনা’’ (১৯২৩) প্রকাশ করেন। ১৯৩০ সালে, পদ্ধতি তত্ত্ব এবং সাইব্যানেটিক্সের একটি উচ্চ ব্যাখ্যামূলক প্রসঙ্গের মধ্যে আলোচনা স্থাপনের সময়ে; টেলকট পারসন্স (১৯০২-১৯৭৯) ব্যষ্টিক ও সমষ্টিকরণের কাঠামোগত এবং সেচ্ছামূলক দিক দিয়ে সামাজিক শৃঙ্খলা অধ্যয়ন একীভূত করে কর্ম তত্ত্ব প্রবর্তন করেন। অস্ট্রিয়ায় এবং পরবর্তীতে আমেরিকায়, আলফ্রেড স্কোথ্জ (১৮৯৯-১৯৫৯) সামাজিক প্রপঁঞ্চবিজ্ঞান উন্নত করে, যা পরে সামাজিক নির্মাণতন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করবে। ফ্রাংকফুর্ট স্কুলের সমসাময়িক সদস্যদের যেমন থিওডোর ডব্লিউ. এডোর্নো (১৯০৩-১৯৬৯) এবং ম্যাক্স হর্খিমারের (১৮৯৫-১৯৭৩) সময়ে সমালোচনা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা হয়, যা তত্ত্বে ওয়েবার, ফ্রয়েড এবং গ্র্যামস্কির অর্ন্তদৃষ্টিতে, মার্কসবাদের ঐতিহাসিক বস্তুবাদী উপাদান একীভূত করে, যদিও সবসময় নামের সাহায্যে নয়, তবে প্রায়ই জ্ঞানদানের কেন্দ্রীয় মতবাদ থেকে দূরে আধুনিকতার পুঁজিবাদী বৈশিষ্টের একটি পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
যুদ্ধের সময়ে, প্রদর্শনীয় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কারণে সমাজবিজ্ঞান সর্বগ্রাসী সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। রাশিয়ান বিপ্লবের পরে, যতক্ষণ না সমাজবিজ্ঞানকে সোভিয়েত ইউনিয়নে কার্যত নিরস্ত করে অস্তত্বি আনা হয় ততক্ষণ এটি ধীরে ধীরে "বলশেভিবাদী এবং অবশেষে, স্টালিনবাদী রাজনীতিকরন হয়েছে"।[৫৫] চীনে ১৯৫২ সালে সেমিওটিক্স, তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব এবং সাইব্যানেটিক্সের সাথে "বুর্জোয়াদের নকল বিজ্ঞান" হিসেবে এই শৃঙ্খলাকে নিষিদ্ধ করা হয় যা ১৯৭৯ পর্যন্ত অপরিবর্তি ছিলো।[৫৬] যাইহোক, একই সময়কালে সমাজবিজ্ঞানকে পশ্চিমের রক্ষণশীল বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা দমিয়ে রাখা হয়েছিলো। উদারপন্থী বা বামপন্থী চিন্তার দিকে তার নিজের লক্ষ্য ও পুনঃস্থাপন করার মাধ্যমে এই বিষয়কে একটি সহজাত প্রবণতা হিসেবে প্রত্যক্ষকরণের জন্য আংশিকভাবে এই কারণ। বিষয়টি কাঠামোগত ক্রিয়াবাদীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; এই দৃস্টিভঙ্গি কিছুটা ভিত্তিহীন ছিল(যদিও এটি ছিলো পারসন্স যিনি আমেরিকান দর্শকের কাছে ডুর্খেইমকে পরিচিত করেছেন এবং তার ব্যাখ্যা একটি সুপ্ত রক্ষণশীলতার জন্য সমালোচিত হয়েছে) যা জৈব সংযোগ এবং সামাজিক সংহতি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।[৪৭]
মধ্য বিংশ শতাব্দীতে কর্ম তত্ত্ব এবং অন্যান্য পদ্ধতি-তাত্ত্বিক পন্থার প্রাধান্যের কারণে আমেরিকান সমাজতাত্ত্বে প্রকৃতিতে সার্বজনীন না হলেও আরও বৈজ্ঞানিক হওয়ার একটি সাধারণ প্রবণতা ছিল। রবার্ট কে. মার্টন তার“ সামাজিক তত্ত্ব ও সামাজিক গঠন” (১৯৪৯) প্রকাশ করেন। ১৯৬০ সালে, সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা বিশ্বব্যাপী সরকার ও ব্যবসা দ্বারা একটি হাতিয়ার হিসেবে ক্রমবর্ধমানহারে কার্যকর ছিলো। সমাজবিজ্ঞানীরা নতুন ধরনের পরিমাণগত ও গুণগত গবেষণা পদ্ধতি প্রবর্তন করে। পল লেজার্সফিল্ড কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফলিত সামাজিক গবেষণা ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে তিনি কৌশল এবং সামাজিক গবেষণার প্রতিষ্ঠানের উপর অসাধারণ প্রভাব প্রয়োগ করেন। সমাজতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে তাঁর অনেক অবদান তাকে “আধুনিক গবেষণামূলক সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা" উপাধি এনে দেয়।[৫৭] লেজার্সফিল্ড পরিসংখ্যানগত সমীক্ষার বিশ্লেষণ, প্যানেল পদ্ধতি, সুপ্ত গঠন বিশ্লেষণ, এবং প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণে দারুণ অগ্রগতি করেন।[৫৭] তাকে গাণিতিক সমাজবিজ্ঞানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও গণ্য করা হয়। তার অনেক ধারণা এখন এতোটাই প্রভাবশালী হয়েছে যে তা স্বত বিবেচনা করা হয়।[৫৭]
১৯৫৯ সালে ইরভিং গফম্যান “দৈনন্দিন জীবনে স্ব উপস্থাপনা” এবং ভিতিমূলক বিশ্লেষণ তত্ত্ব প্রকাশ করেন যা দাবি করে যে সকল মানুষ অন্য মানুষের হৃদয়ে নিজেদের একটি নির্দিষ্ট ধারণা তৈরি করতে চেষ্টা করে। মানবতাবাদী আলোচনাকে উৎসাহিত করে এবং আনমনা অভিজ্ঞতাবাদ ও গ্র্যান্ড তত্ত্ব প্রত্যাখ্যান করে, সি রাইট মিলস সমাজতাত্ত্বিক কল্পনা উপস্থাপন করেছেন। ১৯৬০ সালে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের উত্থানের সাথে সাথে, বিশেষ করে ব্রিটেনে, সামাজিক সংগ্রামে জোর দিয়ে সাংস্কৃতিক পালা দ্বন্দ্ব তত্ত্বে বৃদ্ধি পরিলক্ষিত করে, যেমন নব্য-মার্কসবাদ এবং দ্বিতীয়-তরঙ্গ নারীবাদ।[৫৮] রালফ ডরেনডর্ফ এবং রালফ মিলিব্যান্ড শ্রেণী দ্বন্দ্ব এবং শিল্পোন্নত রাষ্ট্রের উপর অগ্রগামী তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। ধর্মের সমাজবিজ্ঞান এই দশকে নাস্তিক্যবাদী গবেষণা, বিশ্বায়ন এবং ধর্মীয় অনুশীলনের বিভিন্ন সংজ্ঞায় নতুন বিতর্কসহ একটি রেনেসাঁস দেখেছে। লাস্কি এবং ইয়ঙ্গারের মতো তাত্ত্বিকরা পরিচিত ধারণায় “ধর্ম কি” এর পরিবর্তে ধর্ম “কি করে” এই জিজ্ঞাসার মাধ্যমে ধর্মের 'ক্রিয়ামূলক' সংজ্ঞা প্রণয়ন করেছে। এভাবে বিভিন্ন নতুন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলন তাদের ধর্মীয় ভূমিকার জন্য পরীক্ষা করা যেতে পারে। মার্কসবাদী তাত্ত্বিক অনুরূপ পদে ভোগবাদ এবং পুঁজিবাদী মতাদর্শ খুঁটিয়ে দেখা অব্যাহত রাখলো। আন্তোনিও গ্র্যামস্কির “প্রিসন নোটবুক থেকে নির্বাচন” [১৯২৯-১৯৩৫] অবশেষে ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়।[৫৯]
১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে তথাকথিত উত্তর কাঠামোবাদ এবং উত্তরাধুনিক তত্ত্ব, যতদূর সম্ভব ধ্রুপদী সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে গঠনতন্ত্র এবং প্রপঁঞ্চবিজ্ঞানের উপর অঙ্কিত হয়ে, সমাজতাত্ত্বিক তদন্ত ফ্রেমের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব তৈরি করে। প্রায়শই আধুনিকতাবাদের পরে সহজভাবে বোঝতে চিত্রী, শিল্প এবং বিদ্রূপ দ্বারা চিহ্নিত সাংস্কৃতিক শৈলী হিসেবে, আধুনিকতার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ একটি স্বতন্ত্র যুগ পেশ করেছে যা (১) বর্ণনার বিশ্লেষণ সংক্রান্ত (বিশেষত লইটার্ডের কাজে), এবং (২) পণ্য বস্তুকাম এবং শোষণের সাথে পরিচয়ের 'প্রতিফলিতকরণের' পরবর্তী পুঁজিবাদী সমাজ (ডিবোর্ড; বোউ্রিল্ড; জেমসন) সম্পর্কিত।[৬০] উত্তর-আধুনিকতাবাদ মিশেল ফুকো, ক্লদ লেভি-স্ট্রসের মতো চিন্তাবিদ মানুষের বিষয়ের আলোকায়ন ধারণা প্রত্যাখ্যানের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে এবং একটি ক্ষুদ্রতর ব্যাপ্তিতে লুই আলথুসার, মার্কসবাদের সঙ্গে মানবতাবাদ বিরোধীদের মিলনসাধনের চেষ্টা করেছেন। যাইহোক সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পদ্ধতির চেয়ে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে উত্তর-আধুনিকতাবাদকে পছন্দ করে ট্যাগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তা সত্ত্বেও, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানের মধ্যে আকুলভাবে উত্তর-আধুনিকোত্তর অংশ সাধারণভাবে উত্থান অব্যাহত রয়েছে।
১৯৮০ সালে, ফ্রান্সের বাইরের তাত্ত্বিকরা একটি স্বতন্ত্র নতুন যুগ পার সে এর চেয়ে, আধুনিকতার 'দ্বিতীয়' ফেজের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বায়ন, যোগাযোগ এবং প্রতিফলনশীলতা লক্ষ করতে ঝুঁকেছিলেন। ইয়ুর্গেন হেবার্মাস সমালোচনা তত্ত্ব এবং আমেরিকান প্রয়োগবাদ উভয় দ্বারা অবহিত হয়ে, আধুনিকতার আলোচনায় আধুনিকোত্তর চ্যালেঞ্চের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যোগাযোগমূলক কর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। জার্মান ফেলো সমাজবিজ্ঞানী উলরিখ বিক পদ্ধতির কারণ হিসাবে ঝুঁকি সমাজ (১৯৯২) উপস্থাপন করেন; যাতে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র সংগঠিত হয়ে উঠেছে। ব্রিটেনে অ্যান্টনি গিডডিন্স সংগঠনীকরন তত্ত্বের মাধ্যমে পৌনঃপুনিক তাত্ত্বিক দ্বিবিভাগের মিলনসাধন ঘোষণা করেন। ১৯৯০ সলে, গিডডিন্স "উচ্চ আধুনিকতা”র চ্যালেঞ্জ, সেই সাথে নতুন “তৃতীয় পথ” রাজনীতি নিয়ে কাজ করেন, যা যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকার নতুন শ্রমিকদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। ক্লিনটন প্রশাসনের মধ্যে অগ্রগামী মার্জিত সমাজবিজ্ঞানী, জুমেন্ট ব্যুম্যান আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতা ধারণার উপর ব্যাপকভাবে লিখেছেন, বিশেষ করে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসাবে হলোকস্ট এবং ভোগবাদের ব্যাপারে।[৬১] যখন পিয়েরে বোরডিও সাংস্কৃতিক রাজধানীর উপর তার অব্যাহত কাজের জন্য সমালোচকদের দ্বারা উল্লেখযোগ্য প্রশংসা অর্জন করলেন,[৬২] সেই সময় কিছু ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী, বিশেষত জাঁ বাউড্রিলার্ড এবং মিশেল মাফিসোলি, কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা এবং অপেক্ষবাদ অনুভূতির জন্য সমালোচিত হয়।[৬৩][৬৪]
ক্রিয়াবাদী পদ্ধতি তাত্ত্বিকরা যেমন নিকলাস লোমেন শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত সমাজবিজ্ঞানে প্রভাবশালী শ্রেণী হিসেবে রয়ে গেছে। ১৯৯৪ সালে রবার্ট কে. মার্টন বিজ্ঞানের সমাজবিজ্ঞানে অবদানের জন্য বিজ্ঞানের জাতীয় পদক জিতেন।[৬৫] প্রত্যক্ষবাদী ঐতিহ্য আজও জনপ্রিয়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।[৬৬] এই শৃঙ্খলার দুইটি সবচেয়ে ব্যাপকভাবে উদাহৃত আমেরিকান জার্নাল, “সমাজবিজ্ঞানের আমেরিকান জার্নাল” এবং “আমেরিকান সমাজতাত্ত্বিক পর্যালোচনা”, বৃহত্তর বৈচিত্র্য এএসআর প্রদর্শনের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে প্রত্যক্ষবাদী ঐতিহ্যে গবেষণা প্রকাশ করে (“সমাজবিজ্ঞানের ব্রিটিশ জার্নাল”, অপরপক্ষে, প্রাথমিকভাবে অপ্রত্যক্ষবাদী প্রবন্ধ প্রকাশ করে)।[৬৬] বিংশ শতাব্দী সমাজবিজ্ঞানে ব্যবহৃত পরিমাণগত পদ্ধতির উন্নয়ন দেখেছে। দীর্ঘমেয়াদী অধ্যয়নের উন্নয়ন যা কোর্সের উপর বছরের পর বছর ধরে একই জনসংখ্যা অনুসরণ করে তা, দীর্ঘমেয়াদী ঘটনা অধ্যয়নের জন্য গবেষকদের সক্রিয় করে এবং গবেষকদের কার্যকারণ সম্পর্ক অনুমান করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নতুন জরিপ পদ্ধতি দ্বারা উৎপাদিত তথ্য সেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়া, এই তথ্য বিশ্লেষণের জন্য নতুন পরিসংখ্যানগত কৌশল উদ্ভাবনের পথ তৈরি করেছে। এই ধরনের বিশ্লেষণ সাধারণত পরিসংখ্যানগত সফ্টওয়্যার প্যাকেজ যেমন এসএএস, স্টেট বা এসপিএসএস দ্বারা সঞ্চালিত হয়।
প্রত্যক্ষবাদী ঐতিহ্যে সামাজিক নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ নতুন পেরাডিমের একটি উদাহরণ। সামাজিক নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণের প্রভাব অনেক সমাজতাত্ত্বিক উপক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত যেমন অর্থনৈতিক সমাজবিজ্ঞান (উদাহরণস্বরূপ জে ক্লাইড মিচেল, হ্যারিসন হোয়াইট, বা মার্ক গ্রানোভেটরের কাজ দেখুন), সাংগঠনিক আচরণ, ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞান, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান, বা শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান। স্ট্যানলি এ্যারোনোইজের মত অনুযায়ী সি রাইট মিলসের চেতনায় গবেষণামূলক সমাজবিজ্ঞান এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়ার এলিট সম্পর্কে তার অধ্যয়নে নৈতিক স্বাধীনতারও একটি ছোটখাট রেনেসাঁ হয়।[৬৭]