এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। (মার্চ ২০২৩) |
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি দ্বারা বোঝানো হচ্ছে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের পানির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে স্থলভাগ গ্রাস করে ফেলা সংক্রান্ত দুর্যোগকে। এই দুর্যোগ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট কারণসমূহের সম্মিলিত ফলাফল। এটি এমন এক বিপর্যয় যা মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়গুলোর একটি বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর কারণে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্যাস মুক্ত হয়ে পৃথিবীর হতে তাপ নির্গমন রুদ্ধ করে দেয়। ফলে সমুদ্র এই গ্যাসসমূহ শোষণ করে। এর ফলে সমুদ্রের তাপ বৃদ্ধি পায় আর সমুদ্রের পানির আয়তন বাড়ে। [২] সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির আরও একটি কারণ হলো মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া। [৩]
১৯০১ হতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৫-২৬ সেন্টিমিটার (৬-১০ ইঞ্চি) বৃদ্ধি পায়। যা বাৎসরিক ১ থেকে ২ মিলিমিটার হারে বৃদ্ধির সমান। [৪] এই হার ২০১৩ হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে বেড়ে প্রতিবছরে ৪.৬২ মিলিমিটারে দাঁড়িয়েছে। [৫] মানবসৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর প্রধান কারণ। ১৯৯৩ হতে ২০১৮ সালে সমুদ্রের পানির তাপীয় প্রসারণের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৪২% বৃদ্ধি পেয়েছে। হিমবাহ গলনের কারণে ২১% উচ্চতা বেড়েছে; যেখানে গ্রিনল্যান্ড হতে ১৫% এবং অ্যান্টার্কটিকা হতে ৮% বরফের গলন ঘটেছে। [৬] সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির মত দ্রুত ঘটে না। বর্তমান সময় পর্যন্ত যতটুকু উষ্ণায়ন ঘটেছে তারই ফলশ্রুতিতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। [৭] এরপর কি হবে সেটি নির্ভর করে মানুষের গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রার উপর। ২০৫০ সাল হতে ২১০০ সালে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনা সম্ভব। ২১০০ সালের মধ্যে এই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩০ সেন্টিমিটার (১ ফুট) এর কাছাকাছিতে রাখা সম্ভব। তবে নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে গেলে উচ্চতা বৃদ্ধির মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। ধারণা করা হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা নিঃসরণের হার কমানো না গেলে ১ মিটার (সাড়ে ৩ ফুট) এমনকি ২ মিটার (সাড়ে ৬ ফুট) পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। [৮] দীর্ঘ মেয়াদে আগামী ২০০০ বছরে যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা যায় তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২ থেকে ৩ মিটারের মত বৃদ্ধি পেতে পারে। এই উচ্চতা ১৯ থেকে ২২ মিটার (৬২ থেকে ৭২ ফুটে) উঠে যেতে পারে যদি তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যায়। [৭]
ভারত মহাসাগরের উপসাগর বঙ্গোপসাগরের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলভাগ। দিনে দিনে এন্টার্কটিকার বরফ গলার ফলে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে (Sea Level Rise: SLR) ডুবে যাবার আশঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ।[৯] UNFCCC'র দেয়া তথ্যমতে, বিংশ শতাব্দিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ১০-২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে এবং ২০১১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আরো ১৮-৫৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। আর এতে মালদ্বীপসহ তলিয়ে যাবে উপকূলবর্তী দেশ বাংলাদেশও।[১০] জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেল বা IPCC ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে জানিয়েছে যে, ২০৫০ খ্রিস্টাব্দে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অন্তত ১৭% ভূমি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে৷[১১] [১২] কিন্তু ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে 'দ্যা সায়ন্টিফিক কমিটি অন এন্টার্কটিক রিসার্চ' (SCAIR) জানিয়েছে, যে হারে এন্টার্কটিকার বরফ গলছে, তাতে ২১০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৫ ফুট। বিগত দিনের পরিসংখ্যানের প্রায় দ্বিগুণ এই হিসাবের প্রেক্ষিতে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা DFDI-এর অভিমত হলো, এপরিমাণ উচ্চতাবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের প্রায় এক পঞ্চমাংশ সমুদ্রে তলিয়ে যাবে।[১৩] বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত তালিকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম (১০ম)।[১৪] এরকম অকষ্মাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ২০৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ দেশের প্রায় ৮%-এরও বেশি নিম্নাঞ্চল ও প্লাবনভূমি আংশিক এবং/অথবা স্থায়ীভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়বে।[১৫][১৬] এছাড়া রাজধানী শহর ঢাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১ মিটার উঁচুতে অবস্থান করছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাজনিত কারণে ঢাকাও আক্রান্ত হতে পারে বলে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড বা WWF-এর অভিমত।[১৭] এইসব ভবিষ্যত সংশ্লিষ্টতার প্রেক্ষিত পেরিয়ে বর্তমানেই (২০০৯) সুন্দরবনে সর্বপ্রথম, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অনুভূত হয়।[১৮] কারণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্যমতে, ২০০০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত সমুদ্র, প্রতি বছর ৩ মিলিমিটার (০.১২ ইঞ্চি) করে বাড়ছিলো, কিন্তু পরবর্তি দশকেই প্রতি বছর ৫ মিলিমিটার (০.২ ইঞ্চি) করে বাড়া শুরু হয়েছে।[১৯] এবং ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে সার্কের "আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র"(SMRC)-এর একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, হিরণ পয়েন্ট, চর চাঙ্গা, এবং কক্সবাজারে জোয়ারের পানির স্তর প্রতি বছর, যথাক্রমে ৪.০ মিলিমিটার, ৬.০ মিলিমিটার এবং ৭.৮ মিলিমিটার বেড়েছে।[৯]
এদিকে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির হারের চেয়েও আরো বেশি হারে ডুবে যাচ্ছে। কারণ প্রতি বছর বঙ্গোপসাগর উপকূলের এলাকাসমূহের মাটি দেবে, বসে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই একটি গবেষণা থেকে ভারতের কলকাতা শহরে, মাটি বসে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে।[২০] এছাড়া আরো দুটি গবেষণায় ভবিষ্যতে লখনৌ[২১] এবং পাটনার[২২] ভূমি বসে যাবার সম্ভাব্যতা দেখানো হয়েছে। যদিও বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে, ভূমি, প্রতি বছর ৫মিলিমিটার বসে গেলেও, পলি জমে আরো ৭মিলিমিটার উঁচু হয়ে যায় ভূত্বক। কিন্তু মানবসৃষ্ট বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে নদীর পানি বা বন্যার পানি সর্বত্র পৌঁছাতে পারে না, ফলে পলি পৌঁছতে পারছে না সেসব স্থানে। আর তাই ভূমি বসে যাবার তুলনায় সব স্থানে ভূমি উঁচু হচ্ছে না। এ গবেষণা সঠিক হলে, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির হারের চেয়ে অতিরিক্ত হারে বাংলাদেশ ডুবে যাবে; এতে যেমন মানুষের হস্তক্ষেপ আছে, তেমনি আছে প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন।
২০০৭ খ্রিস্টাব্দে, ইউনেস্কো'র প্রতিবেদন মতে, সমুদ্রস্তরের ৪৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে সুন্দরবনের ৭৫% ডুবে যেতে পারে।[২৩] ইতোমধ্যেই (২০০৯) সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের সবচেয়ে গহীন অরণ্যে, বঙ্গোপসাগর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্প ইতোমধ্যে সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গেছে৷ ক্যাম্পের কাছে মিঠা পানির একটি পুকুর ছিলো, যা প্রচুর জেলে-বাওয়ালির সুপেয় পানির একমাত্র উৎস ছিলো৷ মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পসহ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকার ভূমি সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে গেছে৷ নদীভাঙনের ফলে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের ভেতরে ছোট ছোট খাল ও নদী৷ ফলে জোয়ারের পানি একবার উঠলে আর নামতে পারছে না; পরবর্তী জোয়ারে আরও ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে পানি৷ ফলে এসব এলাকার গাছপালার বৃদ্ধি কমে যাচ্ছে৷[২৪]
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |year= / |date= mismatch
(সাহায্য)
|তারিখ=
(সাহায্য)
|note=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য);