সম্পাদনী কলা বলতে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে কোনও শিল্পী, শিল্পীদল এমনকি শিল্পী নন এমন এক বা একাধিক অংশগ্রহণকারীদের দ্বারা ধারাবাহিকভাবে কিছু কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে সৃষ্ট ও পরিবেশিত ক্ষণস্থায়ী শৈল্পিক অনুষ্ঠানকে বোঝায়, যা সাধারণত দর্শকদের জন্য সরাসরি পরিবেশন করা হয়।[১] এটি শৈল্পিক ক্রিয়া (Artistic action) নামেও পরিচিত এই শিল্পকলাটি বহু বছর ধরে বিকাশ লাভ নিজেই শিল্পকলার একটি স্বতন্ত্র শাখায় পরিণত হয়েছে। ২০শ শতাব্দীর আভঁ-গার্দ শিল্পকলার (অগ্রসৈনিক শিল্পকলা) ক্ষেত্রটিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক ভূমিকা পালন করে।[২][৩] এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে করা হতে পারে বা আগে থেকে রচিত হতে পারে। ঐতিহ্যগতভাবে একটি চারুকলা-সংশ্লিষ্ট পরিবেশে যেমন শিল্প জাদুঘর বা প্রদর্শনীশালাতে বিকশিত করা হলেও এটিকে জনসাধারণের জন্য অভিগম্য যেকোনও স্থানে যেমন উদ্যানে বা সড়কের পার্শ্বে এবং যেকোনও সময়ে পরিবেশন করা হতে পারে।[৪] এটিতে অন্যান্য শিল্পকলা যেমন অভিনয়, কাব্য, সঙ্গীত, নৃত্য, রঙচিত্র অঙ্কন, ইত্যাদির আশ্রয় নেয়া হয়ে থাকে। এই অনুষ্ঠানগুলিকে প্রায়শই স্থির আলোকচিত্র বা চলমান ভিডিওর মাধ্যমে যন্ত্রে ধারণ করা হয়ে থাকে।
সম্পাদনী কলার পাঁচটি মৌলিক উপাদান হল সময়, স্থান, শিল্পীর দেহ ও উপস্থিতি এবং স্রষ্টা ও দর্শক-শ্রোতার মধ্যবর্তী সম্পর্ক। এই কলার উদ্দেশ্য হল দর্শকের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করা, যাতে কদাচিৎ তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনশীলতা ও নান্দনিক রসের সাহায্য নেয়া হতে পারে। সম্পাদনী কলার বিষয়বস্তু সাধারণত শিল্পীর জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত কিছু হয়ে থাকে, তবে সামাজিক সমালোচনা, নিন্দাজ্ঞাপন অথবা সমাজকে রূপান্তরের অভিলাষ থেকেও এগুলি পরিবেশন করা হতে পারে।[৫] সম্পাদনী কলা শাখাটিকে ফ্লুক্সুস শিল্পকলা আন্দোলনের হ্যাপেনিং ও "ইভেন্ট"গুলি, ভিয়েনীয় কর্মসম্পাদনবাদ (Viennese Actionism), দেহ কলা (body art) ও ধারণাগত কলার (conceptual art) সাথে তুলনা করা হয়েছে।[৬]
"সম্পাদনী কলা" (পারফর্মেন্স আর্ট) ও "সম্পাদন" (পারফরমেন্স) পরিভাষাগুলি ১৯৭০-এর দশক থেকে শিল্পকলার জগতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে ১৯১০-এর দশক থেকেই ভবিষ্যৎবাদী শিল্পপ্রযোজনা ও ক্যাবারেগুলিতে দৃশ্যকলা ক্ষেত্রে সম্পাদনী কলার সমৃদ্ধ ইতিহাস বিদ্যমান।[৭][১] শিল্পকলা সমালোচক ও সম্পাদনী শিল্পী জন পেরোর (John Perreault) মতে মার্জোরি স্ট্রাইডার সর্বপ্রথম ১৯৬৯ সালে সম্পাদনী কলার ইংরেজি পরিভাষা "পারফর্মেন্স আর্ট" কথাটি উদ্ভাবন করেন।[৮] পাশ্চাত্যে সম্পাদনী কলার অগ্রণী ব্যক্তিত্বের মধ্যে আছেন ক্যারোলি শ্নেমান,[৯] মারিনা আব্রামোভিচ,[১০] আনা মেন্দিয়েতা,[১১] ক্রিস বার্ডেন,[১২] হেরমান নিচ, জোসেফ বয়েস], নাম জুন পাইক, তেচিং সিয়ে, ইভ ক্লাইন ও ভিতো আকোঞ্চি।[১৩] সাম্প্রতিককালের বড় শিল্পীদের মধ্যে আছেন তানিয়া ব্রুগুয়েরা,[১৪] আবেল আসকোনা,[১৫] রেজিনা জোযে গালিন্দু,[১৬] মার্তা মিনুহিন,[১৭] মেলাতি সুরিয়োদার্মো ও পেতর পাভলেনস্কি। মার্কিন ব্লু ম্যান গ্রুপ শিল্পীদলটি তাদের সম্পাদনী কলার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি লাভ করেছে। প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডার বার্নিং ম্যান উৎসবটিও সম্পাদনী কলার এক মহা-উদযাপন।