সরফরাজ নওয়াজ

সরফরাজ নওয়াজ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
সরফরাজ নওয়াজ মালিক
জন্ম (1948-12-01) ১ ডিসেম্বর ১৯৪৮ (বয়স ৭৬)
লাহোর, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
উচ্চতা৬ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৯৮ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৯)
৬ মার্চ ১৯৬৯ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৯ মার্চ ১৯৮৪ বনাম ইংল্যান্ড
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ )
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ বনাম নিউজিল্যান্ড
শেষ ওডিআই১২ নভেম্বর ১৯৮৪ বনাম নিউজিল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৮০-১৯৮৪লাহোর
১৯৬৯-১৯৮২নর্দাম্পটনশায়ার
১৯৭৬-১৯৭৭ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড
১৯৭৫-১৯৭৬পাকিস্তান রেলওয়েজ
১৯৭৫পাঞ্জাব এ
১৯৬৮-১৯৭২পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৬৭-১৯৬৮লাহোর
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৫৫ ৪৫ ২৯৯ ২২৮
রানের সংখ্যা ১,০৪৫ ২২১ ৫,৭০৯ ১,৭২১
ব্যাটিং গড় ১৭.৭১ ৯.৬০ ১৯.৩৫ ১৫.৩৬
১০০/৫০ ০/৪ ০/০ ০/১৭ ০/৩
সর্বোচ্চ রান ৯০ ৩৪* ৯০ ৯২
বল করেছে ১৩,৯৫১ ২,৪১২ ৫৫,৬৯২ ১১,৫৩৭
উইকেট ১৭৭ ৬৩ ১,০০৫ ৩১৯
বোলিং গড় ৩২.৭৫ ২৩.২২ ২৪.৬২ ২০.৮৮
ইনিংসে ৫ উইকেট ৪৬
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৯/৮৬ ৪/২৭ ৯/৮৬ ৫/১৫
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২৬/– ৮/– ১৬৩/– ৪৩/–
উৎস: ক্রিকইনফো, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

সরফরাজ নওয়াজ মালিক (উর্দু: سرفراز نواز ملک‎‎; জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৯৪৮) লাহোরে জন্মগ্রহণকারী পাকিস্তানের সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। রিভার্স সুইংয়ের প্রবর্তক সরফরাজ নওয়াজ ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম বিজয়ে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন।[]

১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে তিনি ৫৫ টেস্ট ও ৪৫টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে ৩২.৭৫ গড়ে ১৭৭ টেস্ট উইকেট লাভ করেন তিনি।

খেলোয়াড়ী জীবন

[সম্পাদনা]

১৯৬৯ সালে করাচীতে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্টে অংশ নেন বাইশ বছর বয়সী সরফরাজ।[] কিন্তু ঐ টেস্টে তিনি কোন উইকেট পাননি এবং ব্যাটিংয়েরও সুযোগ পাননি। ফলশ্রুতিতে পরবর্তী তিন বছর দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৪/৫৩ ও ৪/৫৬ লাভ করলেও স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার ৫৬ রানের বিজয়ে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেননি।[] ১৯৭৪ সালে হেডিংলিতে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৪ বলে ৫৩ রান তুলেছিলেন। নিম্নমুখী রানের খেলায় তিনি জিওফ আর্নল্ড, ক্রিস ওল্ড, মাইক হেনড্রিক, টনি গ্রেগডেরেক আন্ডারউডের বল মোকাবেলা করে এ রান সংগ্রহ করেন।[] ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টেস্টে ৬/৮৯ লাভ করে ২১৪ রানে অল-আউট করেন। কিন্তু ঐ টেস্টসহ সিরিজটি ড্রয়ে পরিণত হয়।

১৯৭৮ সালে লর্ডসে ৫/৩৯ নিয়ে ইংল্যান্ডের সংগ্রহকে ১১৯/৭ করেন। কিন্তু বৃষ্টি আঘাত হানায় টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়।[] একই মৌসুমে করাচীতে ভারতের বিপক্ষে ৪/৮৯ ও ৫/৭০ করলে তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়লাভে সক্ষম হয়। সিরিজে তিনি ২৫.০০ গড়ে ১৭ উইকেট পান যা পাকিস্তানিদের মধ্যে সর্বাধিকসংখ্যক ছিল। এরফলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ১৯৫২ সালের পর প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে সক্ষম হয়।[]

অস্ট্রেলিয়া গমন, ১৯৭৮-৭৯

[সম্পাদনা]

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে সফরকারী পাকিস্তান স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টেস্টের সিরিজ খেলতে আসে। মেলবোর্নে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রানের ইনিংস খেলা অবস্থায় সরফরাজ নওয়াজ অ্যান্ড্রু হিলডিচকে আউট করেন।[] পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক দল দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৬ রানের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হবার প্রাক্কালে ২৯ রানে থাকাকালে পিচে বল লাফানো অবস্থায় বল ধরে সরফরাজ নওয়াজের কাছে দেন। কিন্তু, সরফরাজ আম্পায়ারের কাছে আউটের আবেদন করলে হিলডিচকে মাঠ ত্যাগ করতে হয়। এরফলে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় ও প্রথম নন-স্ট্রাইকার হিসেবে হ্যান্ডল্ড দ্য বল হিসেবে আউট হন[][] ও টেস্টে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান।

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে মেলবোর্নে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯/৮৬ পেয়েছিলেন। একপর্যায়ে তিনি ৩৩ বলে ৭/১ লাভে সক্ষমতা দেখান ও দলকে নাটকীয় বিজয় এনে দেন।[] ঐ সময়ে তার ৯/৮৬ অস্ট্রেলিয়ায় সেরা ইনিংস পরিসংখ্যান ছিল, যে-কোন পাকিস্তানির সেরা ও টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পঞ্চম সেরা ছিল।[১০]

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে করাচীতে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪/৪২ ও ২/২৭ লাভ করেন। এরপর জয়সূচক রান তুলে পাকিস্তানকে ৬৬/৭ নিয়ে যান।[১১] বেশ কয়েকবার অবসরের সিদ্ধান্ত নেবার পর গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪/৪৯ করেন ও নিজস্ব সর্বোচ্চ ৯০ রান তুলেন যা তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এসময় তিনি দলীয় অধিনায়ক জহির আব্বাসের সাথে ১৬১ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু ডেভিড গাওয়ার অপরাজিত ১৭৩* তুললে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১০* করে টেস্টটি ড্রয়ের দিকে নিয়ে যান। এরফলে পাকিস্তান দল প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করতে সক্ষম হয়।[১২]

দুই মেয়াদে নর্দাম্পটনশায়ারের পক্ষে কাউন্টি ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৮০ সালে বেনসন এন্ড হেজেস কাপে নির্ধারিত ১১ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে ৩/২৩ লাভে সক্ষম হন। এরফলে এসেক্স দল ২০৩/৮ করলে নিজ ক্লাব ছয় রানে জয়লাভ করে।

রিভার্স সুইং

[সম্পাদনা]

বলের অপর প্রান্ত দিয়েও সীম করতে পারতেন ছয় ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী সরফরাজ।[১৩] জেফ থমসনজোয়েল গার্নারের ন্যায় পুনঃপুনঃ বাউন্স প্রদানে সক্ষম ছিলেন।[] পাকিস্তানের নিষ্প্রাণ উইকেটে তার পেস বোলিং কার্যকরী না হলেও বলের সীম, সুইং বা বাউন্সে বেশ হকচকিয়ে যেতেন ব্যাটসম্যানেরা।[] সিকান্দার বখতকে সাথে নিয়ে রিভার্স সুইংয়ের ধারণা প্রবর্তন করেন। ধারাভাষ্যকারগণ ঐ সময়ে রিভার্স সুইং সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। পরবর্তীকালে তার এ জ্ঞান ইমরান খান, ওয়াসিম আকরামওয়াকার ইউনুসের মাঝে বিলিয়ে দেন। এছাড়াও তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেন তিনি ও নতুন ধরনের বোলিং ১৯৮০-এর শেষদিকে ও ১৯৯০-এর দশকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।[][১৪]

বিতর্ক

[সম্পাদনা]

নিয়মিত অধিনায়ক ওয়াসিম বারি’র সহকারী মনোনীত হন ও ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে ইংল্যান্ড সফরে যান। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর পূর্বে লাপাত্তা হয়ে যান। পরে জানা যায় যে, মুসলিম হওয়া স্বত্ত্বেও লন্ডনে তিনি বড়দিনের অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন। এরফলে তৃতীয় টেস্টের পূর্বেই তাকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনা হয়। বিশ্ব সিরিজ চলাকালে কেরি প্যাকারের সাথে আলোচনা করতে দেখা যায়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Sarfraz Nawaz Biography"Yahoo! Cricket। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১০ 
  2. http://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/29/29943.html
  3. "Australia v Pakistan in 1972/73"Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১০ 
  4. p78, Christopher Martin-Jenkins, Cricket Characters, Stanley Paul & Co Ltd, 1987
  5. p132, Peter Arnold, The Illustrated Encyclopedia of World Cricket, W.H. Smith, 1986
  6. p171, Peter Arnold, The Illustrated Encyclopedia of World Cricket, W.H. Smith, 1986
  7. Cricinfo - Test 849
  8. Cricinfo - Test 850
  9. Hit wicket and handled ball - just for interest[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. "Eight or More Wickets in an Innings in Test Cricket"Cricket Archive। ৫ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১০ 
  11. p134, Peter Arnold, The Illustrated Encyclopedia of World Cricket, W.H. Smith, 1986
  12. pp170-171, Peter Arnold, The Illustrated Encyclopedia of World Cricket, W.H. Smith, 1986
  13. "Sarfraz Nawaz"Inside Sport। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  14. "Swing and seam bowling: Reverse Swing"BBC Sport। ১৯ আগস্ট ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১০ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
পূর্বসূরী
ইমরান খান
পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক
১৯৮৩-৮৪
উত্তরসূরী
জহির আব্বাস
পূর্বসূরী
গুলাম আবেদ
পেশাদার নেলসন ক্রিকেট ক্লাব
১৯৭২-১৯৭৩
উত্তরসূরী
কলিস কিং