সাংস্কৃতিক বিলম্বনা হল সংস্কৃতি অধ্যয়ন ও সামাজিক নৃবিজ্ঞানের একটি ধারণা। সাংস্কৃতিক হীনম্মন্যতা বলতে বোঝায় নিজ শ্রেণী, জাতি ও দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে এক ধরনের আত্তীকৃত হীনম্মন্যতাবোধ যার ফলে একজন ব্যক্তি নিজ শ্রেণী, দেশ, ও জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির চেয়ে ভিন দেশ, জাতি, শ্রেণীর ভাষা ও সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দেয়। এই ধারণাটির সাথে উপনিবেশী মানসিকতা ও চিন্তাশূন্য বুদ্ধিবৃত্তিবিরোধিতার সম্পর্ক রয়েছে। সাংস্কৃতিক বিলম্বনা সাধারণত নিজ দেশ ও অন্যান্য উপনিবেশিত দেশগুলো থেকে আগত চিন্তাবিদ, বিজ্ঞানী, শিল্পীদের গুরুত্ব দেয় না, এবং সব কিছুতেই পশ্চিমাদের অনুকরণ করে। সাংস্কৃতিক হীনম্মন্যদের মাঝে নিজ দেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে বিচ্ছিন্নতাও দেখা দেয় যাকে সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাবোধ বলে।
সাংস্কৃতিক হীনম্মন্যতার সাথে সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা্র নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে কেননা নিজ সংস্কৃতির সাথে বিচ্ছিন্নতার ফলে একজন ব্যক্তি নিজস্ব শ্রেণী, সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা বা অবমূল্যায়ন তথা পরিত্যাগ করে। সাংস্কৃতিক ভাবে একজন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি নিজ সংস্কৃতিকে অবমূল্যায়ন করে কিন্তু উপনিবেশক দেশের সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দেয় তথা উপনিবেশক দেশের সংস্কৃতির জন্য ক্ষুধাতুর থাকে।[১][২] উত্তর-উপনিবেশবাদ তত্ত্ববিদ বিল অ্যাশক্রফ্ট, গেরেথ গ্রিফিথস এবং হেলেন টিফিন মনে করেন সাংস্কৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন একজন ব্যক্তি নিজ দেশে পরদেশি হয়ে থাকে, নিজেকে দেশচ্যুত মনে করে। ফলত তারা ভিন্ন কোন দেশ, সাধারণত পশ্চিমা কোন দেশের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং সেখানকার সামাজিক মূল্যবোধকে নিজের মূল্যবোধ বলে মনে করে।[১][৩] সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাবোধে সংক্রমিত সমাজগুলির সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় সাধারণত দুর্বল হয়ে থাকে এবং নিজেদের নিজেরাই মূল্য দেয় না।
সাংস্কৃতিক হীনম্মন্যতাবোধের সবচেয়ে বড় প্রকাশ হল আমেরিকান সব জিনিসের প্রতি আদেখলা ভাব; আমেরিকান চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, সংগীত, পোশাক, ইংরেজি অপশব্দ (স্ল্যাংস), এমনকি নামগুলির জন্য সাংস্কৃতিক হীনম্মন্যরা অপরিসীম তৃষ্ণা দেখিয়ে থাকে। সাংস্কৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা তাদের নিজ সমাজের সংস্কৃতি বা ইতিহাসে তেমন আগ্রহও প্রদর্শন করে না এবং মূল্য দেয় না।[১]