সাইদ নুরসি | |
---|---|
জন্ম | ১৮৭৭[১] নুরস,[২][৩] বিতলিস ভিলায়েত, উসমানীয় সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | ২৩ মার্চ ১৯৬০ (বয়স ৮২–৮৩)[৪] উরফা, তুরস্ক |
যুগ | ১৯-২০শতক[৫] |
অঞ্চল | আনাতোলিয়া |
শাখা | সুন্নি (শাফি) |
মূল আগ্রহ | ধর্মতত্ত্ব,[৬] ধর্মীয় দর্শন, তাফসির,[৬] বিশ্বাসের পুনরজাগরণ[৭] |
লক্ষণীয় কাজ | রিসালায়ে নুর[৮] |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন | |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন |
সাইদ নুরসি (উসমানীয় তুর্কি: بديع الزّمان سعيد النُّورسی; ১৮৭৬[১] – ২৩ মার্চ ১৯৬০), বদিউজ্জামান নামেও পরিচিত,[১২] ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক। তিনি রিসালায়ে নূর নামক কুরআনের ব্যাখ্যা রচনা করেন। এটির আকার ছয় হাজার পৃষ্ঠার অধিক।[১৩][১৪] আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিকে ভবিষ্যতের পথ বিবেচনা করে তিনি সাধারণ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় জ্ঞান ও ধর্মীয় বিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন।[১৩][১৪][১৫]
নুরসি একটি বিশ্বাসভিত্তিক আন্দোলনের সূত্রপাত করেন।[১৬][১৭] এই আন্দোলন তুরস্কে ইসলামের পুনর্জাগরণে ভূমিকা রাখে। বর্তমানে সারাবিশ্বে এর ব্যাপক অনুসারী রয়েছে।[১৮][১৯] তার অনুসারীদের প্রায় "নুরজু" বা "নুর জামাত" নামে অবিহিত করা হয় এবং তাকে শ্রদ্ধা করে উস্তাদ ডাকা হয়।অনুরক্ত তুর্কি যুবসমাজ তাকে বদিউজ্জামান বা যুগের বিশ্বয় (Wonder of the age) নামে অভিহিত করে।
সাইদ নুরসি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত পূর্ব আনাতোলিয়ার বিতলিস ভিলায়েত প্রদেশের নুরস নামক কুর্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২০] জন্মস্থানের পণ্ডিতদের কাছ থেকে তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করেন। এখানে তিনি ধর্মীয় বিতর্কে পারদর্শিতা দেখান। ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের পর তাকে বদিউজ্জামান নাম প্রদান করা হয় যার অর্থ "সময়ের অদ্বিতীয় ও সবচেয়ে উচ্চ ব্যক্তি"। ভান ভিলায়েতের গভর্নর তাকে তার বাসগৃহে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানান।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] গভর্নরের গ্রন্থাগারে নুরসি বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বই থেকে জ্ঞান আহরণ শুরু করেন। এখানে তিনি উসমানীয় তুর্কি ভাষায় রপ্ত করেন। এসময় তিনি সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল যাতে বৈজ্ঞানিক ও ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে এই অঞ্চলে দার্শনিক চিন্তা অগ্রসর হয়। ১৯০৯ সালে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রোগ্রেসের সংস্কারের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়। কিন্তু পরে তিনি মুক্তি পান।[২১] উসমানীয় খিলাফতের শেষের দিকে তিনি একজন শিক্ষা সংস্কারক হিসেবে সক্রিয় ছিলেন এবং খিলাফতের জনগণের একতার উপর জোর দেন। সুলতান আবদুল হামিদের কাছে তিনি শিক্ষা সংস্কারের আবেদন জানান। মাদ্রাসা ও আধুনিক বিজ্ঞানের সমন্বয়ে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন।[৬][২২]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিশেষ সংগঠনের সদস্য ছিলেন।[২৩] তাকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি দুই বছর অবস্থান করেন। ১৯১৮ সালের বসন্তে তিনি রুশ ক্যাম্প থেকে পালাতে সক্ষম হন এবং ইস্তানবুল চলে আসেন।[২২][২৪] ইস্তানবুলে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখানে তাকে দারুল হিকমা আল ইসলামিয়ার সদস্যপদ দেয়া হয়। এই ইসলামী একাডেমীটি উম্মাহর বর্ধমান সমস্যা সমাধানের উপায় অনুসন্ধানে নিয়োজিত ছিল।[২৫]
তুরস্কের নেতা কামাল আতাতুর্কের জন্য বদিউজ্জামান নুরসি চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ান।[২৬] তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রীর পদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। নুরসি তা প্রত্যাখ্যান করেন।[২৭][২৮] এর মাধ্যমে কামালবাদি আদর্শের সাথে তার বিরোধ শুরু হয়। তবে মতপার্থক্য সত্ত্বেও তার সাথে কুর্দি বংশোদ্ভূত আবদুল্লাহ জেভদেতের সুসম্পর্ক ছিল। আবদুল্লাহ জেভদেত ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থক ছিলেন।[২৯]
ইস্তানবুল ফিরে আসার পর তিনি ঘোষণা করেন, "আমি বিশ্বের কাছে প্রমাণ করে দেখাবো যে কুরআন চিরন্তন"। এরপর তিনি তার রিসালায়ে নুর গ্রন্থ রচনা করেন।ব্রিটিশ কলোনি সচিব গ্ল্যাডস্টোন তুর্কিদের পদানত করার ব্যাপারে বলেছিলেন, 'মুসলমানদের হাতে যদি কুরআন থাকে তবে তাদের পদানত করা যাবে না, তাদের উপর বিজয়ী হতে হলে হয় কুরআন তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে হবে অথবা কুরআনের প্রতি তাদের ভালবাসার বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে।' এ কথার প্রতিউত্তরে নুরসি বলেছিলেন 'কুরআন অমর ও অনস্তমিত সূর্য, যা কখন মুসলমান তথা কল্যাণকামী মানুষ থেকে ছিনিয়ে নেয়া যাবে না।' এরপরই তিনি কুরআন ভিত্তিক আধুনিক, মানবিক ও মরমি ব্যাখ্যায় প্রবৃত হন এবং ছয় হাজার পৃষ্ঠার বিশাল গবেষণা ভান্ডার গড়ে তুলেন। যা 'রেসালা-ই-নুর' নামে পরিচিত। 'রেসালা-ই-নুর' তাকে তুর্কিদের কাছে তো বটেই পুরো পৃথিবীতে অমর করে রেখেছে।
আরবিতে আজানের পক্ষাবলম্বন ও অন্যান্য কারণে সাইদ নুরসিকে ইসপারতা প্রদেশে নির্বাসন দেয়া হয়।[৩০] এই অঞ্চলের জনসাধারণের মধ্যে তার শিক্ষা জনপ্রিয় হয়ে পড়ায় ইসপারতার গভর্নর তাকে বারলা নামক গ্রামে পাঠিয়ে দেন। তার পান্ডুলিপিগুলো সাভ নামক একটি গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়।[৩১] সেখানকার লোকেরা তা আরবি হরফে কপি করে যা ১৯২৮ সালে সরকারিভাবে তুর্কি বর্ণমালার মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।[৩০] সমাপ্ত হওয়ার পর বইগুলো তুরস্কজুড়ে নুরসির অনুসারীদের মধ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার কাজের ধারা ছিল পাশ্চাত্যকরণ ও ধর্মনিরপেক্ষকরণের জবাবে ইসলামী উত্তর উপস্থাপন করা। কামাল আতাতুর্কের তুরস্কের ক্ষমতা লাভ ও ১৯২৩ সালে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর পাশ্চাত্যকরণ ভালোভাবে গতিলাভ করে।
শক্তিশালী লেখনী ছাড়াও তার অনুসৃত পন্থার কারণেও তার আন্দোলন দ্রুত সাফল্য লাভ করে।[৩২][৩৩] তিনি বস্তুবাদ ও নাস্তিকতাকে বিজ্ঞান, যুক্তি ও সত্যতার যুগের শত্রু বিবেচনা করতেন এবং এগুলোর উৎস বস্তুবাদী দর্শনকে দায়ী করেন।[৩৪] তিনি এগুলোর বিরুদ্ধে রিসালায়ে নুরে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি তার ছাত্রদের শক্তিপ্রয়োগ জাতীয় কাজ থেকে দূরে থাকতে বলেন। ধর্মীয় পুনর্জাগরণে ভূমিকা রাখায় ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের কারণে তাকে তার জীবনের অধিকাংশ সময় বন্দীদশা বা নির্বাসনে কাটাতে হয়।[৩৫] তার সমাজমুখি ও জনপ্রিয় কর্মকাণ্ডে সমাজের অবস্থা দ্রুতই বদলাতে থাকে। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি। যে কারণে তাকে ১৯৩০-১৯৫০ এর মধ্যে কয়েকবার জেলে যেতে হয়। সারা বিশ্বে বর্তমানে সভ্যতার যে সঙ্ঘাতের পদধ্বনি দেখা যাচ্ছে এর ব্যাপারে তিনি প্রায় সিকি শতাব্দী আগেই মুসলমান তথা সমগ্র বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছিলেন এবং এ থেকে উত্তরণের অন্যতম পথ হিসেবে ‘ডায়ালগ’ এবং ‘কো-একজিস্টেন্স’কে অন্যতম সমাধান বলে অভিহিত করেছিলেন।তিনি নাস্তিক্যতাকে তুরস্কে ঠেকানোর জন্য পশ্চিমা পাদ্রিদের সাথে ঐক্যের চেষ্টা করেছিলেন। তার ঐতিহাসিক ‘দামাস্কাস সেরমন’ জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবার সাথে সৌহার্দ্য রক্ষার অন্যতম নীতিনির্ধারণী বক্তৃতা বলে অনেকেই অভিহিত করেছেন।
জীবনের শেষ দশকে সাইদ নুরসি ইসপারতা শহরে অবস্থান করেন। বহুদলীয় ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর আদনান মেন্দেরেসের ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ভোট দেয়ার জন্য তিনি তার অনুসারীদের আহ্বান জানান। প্রান্তিক ও রক্ষণশীল জনসাধারণের মধ্যে এই দল সমর্থন করেছিল। সাইদ নুরসি কঠোরভাবে কমুনিস্ট বিরোধী ছিলেন। তিনি একে সময়ের সবচেয়ে বড় ভয়াবহতা বলে উল্লেখ করে। ১৯৫৬ সালে তাকে তার লেখা প্রকাশের অনুমতি দেয়া হয়। তার বইগুলো রিসালায়ে নুর নামে সংকলিত হয়।
১৯৬০ সালে উরফা ভ্রমণের পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৩৬] সেখানে তাকে দাফন করা হয়। কিচনু মুসলিমের মতে স্থানটিতে ইব্রাহিম (আ) এর মাজার রয়েছে।[৩৭][৩৮] ১৯৬০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পরবর্তীকালে চরম ডানপন্থি রাজনীতিবিদ আল্প আরসালান তুরকসের নেতৃত্বাধীন সৈনিকদের একটি দল জনপ্রিয়তা হ্রাসের জন্য কবর থেকে তার দেহাবশেষ উত্তোলন করে ইসপারতার কাছে অজ্ঞাত স্থানে দাফন করে।[৩৯][৪০] বলা হয় যে পরবর্তীতে তার সমর্থকরা কয়েক বছর অনুসন্ধানের পর তার কবর খুজে পায় এবং আর কোনো ব্যাঘাত না ঘটার জন্য দেহাবশেষ গোপন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।জীবনের শেষ প্রান্তে তার জনপ্রিয়তায় সামরিক সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যায়। যে কারণে তার মৃত্যুর পরও তাকে অত্যন্ত গোপন স্থানে দাফন করা হয় যেন অনুসারীরা তার সমাধিস্থলে একত্র হতে না পারেন।
অনেকে সাইদ নুরসির শিক্ষার সমালোচনা করেন। বিজ্ঞান শিক্ষার পৃষ্ঠপোষক হওয়া সত্ত্বেও কুরআনবাদী লেখক এদিপ ইউকসেল বৈজ্ঞানিক শিক্ষার ঘাটতির জন্য তার সমালোচনা করেন।[৪১][৪২][৪৩] অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা দর্শনের দাবি করেও তার সমালোচনা করা হয়।[কার মতে?][৪৪][৪৫]
নুরসির জীবনী নিয়ে ২০১১ সালে তৈরী হয়েছে তুর্কী চলচ্চিত্র হুর আদম।[৪৬]
They [Said Nursî's parents] were among the settled Kurdish population of the geographical region the Ottomans called Kurdistan.
He offered Nursi Shaikh Sanusi’s post as ‘general preacher’ in the Eastern Provinces with a salary of 300 liras, a deputyship in the Assembly, and a post equivalent to that he had held in the Darü’l-Hikmeti’l-Islamiye, together with various perks such as a residence. Part 1;Childhood and Early Life,chapter 8