সাকিউবাস এক প্রকার লোককাহিনীর মহিলা দানব চরিত্র যা প্রাচীন কাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত কিংবদন্তি হয়ে আছে যে মেয়ে মানুষের রূপ ধারণ করে পুরুষদের ফুসলিয়ে যৌন সংগমের দিকে নিয়ে যেতে পারে। [১] আধুনিক কালে স্বপ্নে সাকিউবাসকে দেখা নাও যেতে পারে তবে একে বরঞ্চ চিত্রিত করা হচ্ছে আরো আকর্ষণীয় ও উত্তেজক হিসেবে, অথচ প্রাচীনকালে একে ভীতিকর দানবীয় চরিত্র হিসেবে দেখা যেত। [২] সাকিউবাসের পুরুষ চরিত্র হিসেবে দেখা যায় ইনকুবাসকে।ধর্মীয়ভাবে দেখা যায় যে সাকিউবাস বা ইনকুবাসের সাথে বারবার যৌন সংগম মানুষের স্বাস্থ্যহানী কারণ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।
ভ্যাম্পায়ারের মতোই সাকিউবাসকে দেখা হয় লিলথ, লিলিন বা বেলিলির মতো চরিত্র হিসেবে যে মানুষ থেকে শক্তি নিয়ে বেঁচে থাকে।ঐতিহ্যগতভাবে তাদের ডানা ও লেজ সহকারে চিত্রিত করা হয়ে থাকে।তাদের ডানা হয় বাঁদুড় বা পাখির মতো আর লেজটা সাপের মতো হয়ে থাকে।মাঝে মাঝে অবশ্য মৎস্যকন্যাদের মতোও হয়ে থাকে।
ল্যাটিন শব্দ সাকিউবাস থেকে যা অতিপ্রাকৃতিক বস্তুকে ব্যাখা করতে ব্যবহৃত হয়। সাক্কুবা শব্দটা আবার এসেছে সাক্কুবার যার মানে নিচে অবস্থান। এই শব্দ প্রথম ১৩৮৭ সালে ব্যবহৃত হয়। [৩]
জোহার ও বেনসিরা বর্ণমালা অনুযায়ী লিলথ আদম-এর প্রথম স্ত্রী যে পরে সাকিউবাসে পরিণত হয়। [৪] আর্চ এ্যাঞ্জেল স্যামায়েলের সহচর হওয়ার পর সে আর আদমের কাছে ইডেন গার্ডেনে আর ফিরে যায়নি। [৫] জোহারিস্টিক কাব্বালায় আমরা দেখতে পাই যে চারজন সাকিউবাস আর্চ এ্যাঞ্জেল স্যামায়েলের সাথে সহচর হিসেবে থেকেছে তারা হলেন লিলথ, নামাহ, ইশেথ জেনুনিম ও আগ্রাত ভাত মাহালাট।পরবর্তীতে আমরা লোককাহিনীতে দেখতে পাই যে সাকিউবাস সিরেনের রূপ ধারণ করেছে।ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই ধর্মযাজক ও গুরুরা যেমন-হানিনা বেন দোসা ও আবেয়ি সাকিউবাসের মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা দমন করার চেষ্টা করেছেন। [৬] সব সাকিউবাসই আবার পরশ্রীকাতর নয়। ওয়াল্টার মাপিসের মতে পোপ সাইল্ভেস্টার দ্বিতীয় একজন সাকিউবাস মেরিডিয়ানার সাহায্য নিয়ে ক্যাথোলিক চার্চ-এ সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন।পরে তিনি মৃত্যুর আগে পাপ স্বীকার করেন ও অনুশোচনা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। [৭]
ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই যে সাক্কুবি একটি জনপ্রিয় চরিত্র টেলিভিশনে, চলচ্চিত্রে, সংগীতে, সাহিত্যে ও বিশেষ করে ভিডিও গেমে এবং অ্যাানিম চরিত্রে।
কাব্বালাহ ও রাশবাহ বিদ্যালয়ের মতে তিনটি দানবদের রাণী লিলথ বাদে নামাহ,ইশেথ জেনুনিম ও আগ্রাত ভাত মাহালাট প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন।[৮] তবে অন্য কিংবদন্তি মতে লিলথ-এর মেয়ে হলো লিলিন। হেনরিক কামারের লেখা ১৪৮৭ সালের ডাইনীর হাতুড়ি গ্রন্থে আমরা দেখতে পাই যে সাক্কুবাস তার বশে আনা পুরুষ থেকে বীর্য সংগ্রহ করে প্রজননের জন্য।তারপর পুরুষ সাক্কুবাস সেই বীর্যকে মেয়েদের আনুপ্রাণিত করতে ব্যবহার করে। [৯] এটাই হলো ব্যাখা যে দানবেরা প্রজনন ক্ষমতাহীন হলেও কীভাবে শিশু উৎপাদন করে।এভাবে উৎপাদিত শিশুরা অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতার প্রভাবে অধিক প্রভাবিত হয়, সাধারণত ধারণা করা হয় যে জন্মগত কদাকার শিশুরাই এমন হয়ে থাকে।[১০] এই বইটি অবশ্য ব্যাখা করেনি যে কেন ঐসব মহিলারা স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দেয় না যদিও তারা মানব বীর্য দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে থাকে।